Alapon

ভালোবাসা




জীবনের আঁকেবাঁকে অসংখ্য-অগণিত কষ্ট পাই। ব্যথা পাই। ব্যথার বিন্ধ্যাচলে বিদ্ধ হয় হৃদয়। জীবনের পরতে পরতে ফুটে ওঠে ব্যথার কাঁটা। মাঝেমধ্যে মনে হয় শজারুর গায়ের শাণিত শলাকা কেউ বিঁধিয়ে দেয় আমাদের বক্ষপিঞ্জরে।

সেই যে একটা পৈশাচিক নিষ্ঠুরতম আচরণ — সেই নিঠুরতম আচরণের যেই ব্যথা, সেই ব্যথার কথা আমি কার কাছে বলি? সেই ব্যথা নিয়ে কার কাছে গিয়ে কাঁদি? কোথায় কার তরে বসে বসে রাজ্যের হ্যাপিত্যেশ করি? আমি আমার মতোই আরেকজন মানুষের কাছে গিয়ে ব্যথার কথা বলি। বেদনার অশ্রু ঢালি। এই মানুষ-ই তো তার অন্যায় আচরণ, অমূলক কথাবার্তা দিয়ে আমাকে ঘায়েল করেছে। তিক্ত কথার তীক্ষ্ণ তীরে আমার বক্ষকে দীর্ণ-বিদীর্ণ করেছে তো এই মানুষগুলোর মতোই অন্যান্য মানুষগুলো । সুযোগ পেলে, একটু এদিক-ওদিক হলে, মতের অমিল হলে, স্বার্থের ভুল চালাচালি হলে এই মানুষেরা-ই যে পুনরায় আমাকে এ-সব বিষয় তুলে, এ-সব স্মৃতি সম্মুখে এনে খোটা দেবে না, ব্যথার পালে হাওয়া দিবে না —তার নিশ্চয়তা কী? কোনো নিশ্চয়তা আছে কি? নিশ্চয়ই নেই। অথচ আমি কান্নার স্রোত নামাই এখন এখানেই —মানুষের কাছে ।

আমার হৃদয় যখন ব্যথার ভারে নুয়ে পড়ে, তখন অধিকাংশ সময় এই ব্যথা আর নিজের ভেতর রাখা যায় না। যায় না বলতে রাখতে পারি না। কারো না কারো কাছে প্রকাশ করি, কারো না কারো কাছে বলি। বলতে বলতে কখনো কখনো আমার চোখে অশ্রুর বন্যা নামে। দুচোখ বেয়ে বেয়ে নেমে পড়ে অশ্রুর বারিধারা। মনে হয় প্রতিটি ফোঁটা অশ্রুর নির্গমনের সাথে সাথে ব্যথার উপশম ঘটে, মগজ দিয়ে ব্যথার ধোঁয়া বেরিয়ে গিয়ে মাথার ওপর উড়োউড়ি করে। এরপর কলিজাপোড়া গন্ধগুলো মনে হয় যেনো হাওয়ার তালে মিলিয়ে যায়!
এই যে আমার হিমালয়সম হতাশাগুলো, কলিজা পোড়া কষ্টগুলো, বুকভরা ব্যথাগুলো —এই কষ্টগুলো তো আল্লাহর কাছেই বলা উচিত। সেই কষ্টগুলো নিয়ে আমাকে তো কাঁদা উচিত আমার মহান রব্বের তরেই। আল্লাহ আমাকে তো তাঁর কাছেই চাইতে বলেছেন। সে জন্যে আমি তো চাবো আল্লাহর কাছেই। দু'হাত তুলে। শেষ রাতে। তাহাজ্জুদে। স্বলাতের জায়নামাজে। যখন যেখানে সুযোগ হয় —তখন সেখানেই। আমি সৃষ্টি। আমি চাবো তো স্রেফ স্রষ্টার কাছেই। বলবো তাঁকেই মনের কথা। পেশ করবো হৃদয়ের আকুল আকুতি। কিন্তু আমি তাঁর কাছে চাই না। তাঁর কাছে চাইতে গেলে আমার কন্ঠ ছিঁড়ে আসেনা কান্নাও। আমি কাঁদি ফেসবুকে। হৃদয়ের ব্যথা ঢেলে দিই মানুষের কাছে। আমার কান্না দরকার রব্বুল আলামিনের দরবারে। আমি কাঁদি ফেসবুকের দরবারে। মানুষের দরবারে।
আল্লাহ কতো সুন্দর করেই না আমাদের বলেছেন — আমাকে ডাকো, আমি তোমার ডাকে সাড়া দেবো। এরকম কথা কয়জন বলে আমাকে, কয়জন? আজ অবধি কেউ আমাকে বলেছে? মানুষের মধ্যে দুয়েকজন যদিও বলে, বললে তার কাছেই ছুটে যাই। কিন্তু যিনি আমার স্রষ্টা, তিনিই আমাকে বলেছেন তাঁর কাছে চাইতে, তার কাছে বলতে। আমি তাঁর কাছে চাই না। তাঁর কাছে বলি না। আল্লাহ সুরা মু'মিনে কতো সুন্দর ও সুস্পষ্ট করেই না বলেছেন যে,
‘‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেবো।’’ (সূরা আল মু’মিন/গাফির ৪০ : ৬০)

কী আশ্চর্য! এতো সুন্দর করে বলার পরেও, সাড়া দেবার প্রতিশ্রুতি প্রদান করার পরেও আমি তো তাঁর কাছে চাই না। তাঁকেই ডাকি না ! তাঁর কাছেই যাই না। তাঁর কাছে ভালো হৃদয় নিয়েও যাওয়া যায়। যাওয়া যায় ভাঙ্গা হৃদয় নিয়েও ।

আমি তো মানুষ। আমি ভুল করি। অন্যায় করি। ইচ্ছেয় হোক কিংবা অনিচ্ছায়, অন্যায় করিই। তাই আমি অসংখ্য অন্যায়ে ছেয়ে ফেলেছি আমার আশপাশ। জীবনের উঠোনে এখন আমার শুধু পাপ আর পাপ। যেনো পাপের পাহাড় সব। এই যে এতো এতো পাপ, এতো এতো অন্যায় —এই পাপ, অপরাধ, অন্যায় নিয়েও ডাকা যায়। চাওয়া যায়। তিনিই তো একমাত্র ভরসার জায়গা। তার কাছে সব পাপই গোপন থাকে আমার। তিনি পাপের কথা বলে আমাকে খোটা দিবে না, দেয়ও না। ক্ষমা চাইলে তিনি ক্ষমা করে দেন। তিরস্কারের তীক্ষ্ণ তীরে আমাকে বিদ্ধ করেন না তিনি। কিন্তু এই ছাড়া যে-ই আমার পাপের খবর জানবে, পাপের কথা শুনবে; সে আজ হোক কিংবা কাল —খোটা দিবেই। তিরস্কার করবেই। সে যতোটা আপনই হোক, যতোটা কাছের-ই হোক আর যতোটা ভালোই বাসুক না কেনো! আমার সাথে তার সম্পর্কের অবনতি হলে, কথা-কাটাকাটি হলে, মতের অমিল হলেই আমার কলিজায় আঘাত হানবে, হানবেই! এই বলে যে, তোকে চিনি আমি। তুই তো অমুক, যে ওইটা করেছিস। আজ সুফি সাজিস! বড়ো বড়ো বয়ান জাড়িস !! ইত্যাদি ইত্যাদি বলে বুকের ব্যথা বাড়িয়েই দিবে। বাড়িয়েই যাবে। কিন্তু আল্লাহর কাছে সিজদা'য় লুটিয়ে পড়লে, চোখ থেকে অশ্রু বৃষ্টি ঝরায়ে কান্না করে পাপের পথ থেকে পানাহ চাইলে তিনি ক্ষমা করবেন। আমার পাপ তার কাছে উপস্থাপন করে যতোই বলি, তা ভাইরাল হবার কোনো ভয় নেই। কারণ আমি অনুতপ্ত হৃদয়ে ফিরে আসার প্রতিজ্ঞা করেছি । নিষ্ঠার সাথে এই প্রতিজ্ঞা করা মানেই দুনিয়া-আখিরাত — দো-জাহানেই আমি সেইফ।


আমার তো জীবনের পরতে পরতে পাপ। পাপে পাপে কলুষিত করেছি অন্তর। তবুও তিনি আমার পাপগুলো গোপন রাখেন। অযুত-নিযুত পাপের থেকে বাছাই করে আমার মাত্র একটা পাপও যদি তিনি ভাইরাল করতেন, তা হলে সমাজের মধ্যে বড়ো বড়ো লেকচার দেয়া লাগতো না আমার। মর্যাদাপূর্ণ আসনে সমাসীন হয়ে আত্মপ্রীতিতে মজে গদগদ কণ্ঠে বক্তৃতা করা লাগতো না! গা এলিয়ে চেয়ারে বসে বসে বসগীরি করা লাগতো না। রাস্তায় মাথা উঁচু করা চলাচল করা লাগতো না! আমার প্রতি তাঁর সে-কি এক অপরিসীম অনুগ্রহ। কী অসাধারণ করুণা ও ভালোবাসা! ভাবতেই চোখদুটো ভিজে আসে। আলহামদুলিল্লাহ ! তিনি আমাদের কী অসাধরণ করে ভালোবাসেন, কিন্তু আমি এবং আমরা সে ভালোবাসার বিনিময়ে কী দিই? শুধুই অবাধ্যতা আর অবাধ্যতা। কখনো বিদ্রোহ আর অবাধ্যতার চূড়ান্ত সীমা-পরিসীমা অতিক্রম করে ফেলি ! আমি-আমরা মুখে যতোই বলি আল্লাহকে ভালোবাসি। তাঁর প্রিয় হতে চাই, তাঁর আপন হতে চাই, কিন্তু বাস্তবে আমরা সেটার কোনো প্রমাণ-ই দিচ্ছি না। আল্লাহ কিন্তু সব-ই দিচ্ছেন আমাদের।

আমরা স্বাভাবিকভাবেও যদি দেখি বিষয়টা, তাহলে দেখবো যে — কেউ কাউকে ভালোবাসলে, কাউকে আপন করতে চাইলে, কারো হৃদয়ের গহীন গহনে আশ্রয় নিতে চাইলে; তার জন্য সব কিছু সঁপে দিতে ইচ্ছে করে। তার কাছে নিজেকে সবভাবে বিলিয়ে দিতে-লুটিয়ে দিতে ইচ্ছে হয়। আমরা তার জন্যে, তার কাছে নিজেকে আপাদমস্তক বিলিন করে দিতে পারি। এটাই ইচ্ছে হয়। সবসময়। সর্বদা...

কীভাবে তার একটু ভালোবাসা পাওয়া যায়, তার আপন হওয়া যায়, নিজের মতো করে তাকে নিয়ে সুখের বাসর সাজনো যায়, কোন উপায়ে তাকে সুখে রাখা যাবে-ভালো রাখা যাবে , একটু আয়েশে রাখা যাবে বা যায় সেটা নিয়ে মগজের ভাঁজে ভাঁজে চলে চিন্তের হিল্লোল! কী করলে সে খুশি হবে, কী বললে সে তুষ্ট হবে — সারাক্ষণ এই ভাবনা, এই চিন্তে! তার কাছে পৃথিবীর সবকিছু অতুলনীয় লাগে। সব বিষয়ে-ই যেনো সে তুলনাহীন। তার জন্য তার কাছে, তার ভালোবাসার কাছে, তার মায়ার কাছে তাবৎ দুনিয়ার সবকিছুই তুচ্ছ হয়ে যায়। নগন্য হয়ে যায়। কোন আচরণে সে কষ্ট পেয়ে যায়, কোন কথায় সে নাখোশ হয়ে যায় — সর্বোচ্চ সচেতন থাকি সে-সব বিষয়ে। নিজের ব্যক্তিত্ব-আত্মসম্মান হয়ে পড়ে গৌণ। তাকে পাবার জন্যে নিজের আত্মসম্মান-আত্মমর্যদাবোধকে পদদলিত করতেও কুণ্ঠিত হই না। ব্যক্তিত্বের সর্বনিম্ন স্থানে নামতেও দ্বিধা লাগে না। নিজেকে তুচ্ছ্ মনে হয়। ক্ষুদ্র মনে হয়। শুধু তার জন্যে। তার ভালোবাসার জন্য! তাকে পাবার জন্য। শুধুই তাকে...
এরপরেও যখন সে বুঝে না, কোনোভাবেই যখন তার কাছে জায়গা হয় না। তার হৃদয়ের অলিন্দে একটুখানি ঠাঁই হয় না, তার মনের কোণে ছোট্ট করেও একটা জায়গা হয় না, তাকে নিজের করে পাওয়া যায় না, তখন জেঁকে বসে মনে অদ্ভুত এক মৌনতা, বিরাটকার এক বিষন্নতা। বুকটা মনে হয় আগুনের ফলা দিয়ে কেউ ক্ষত-বিক্ষত করে দিচ্ছে। পৃথিবীর সবচেয়ে তেজস্বী বুলেট দিয়ে মনে হয় বুকের প্রতিটি জায়গাকে ঝাঁঝরা করে দেয়া হচ্ছে।
সর্বশেষ নিজেকে নীরবে-নিভৃতে, নিঃশব্দে নিঃশেষ করে দিতেও দ্বিধা লাগে না; তার প্রেমে, তার টানে। তার ভালোবাসায়, তার মায়ায় নিজের জানটাও কুরবানি করে দিতে ইচ্ছে হয়। দিয়েও দেয়। এর প্রমাণও আছে, ভুরি ভুরি!

এখন আমরা কী করলে ভালো থাকবো, কীভাবে আমাদের জীবন সুন্দর হবে, শুধু দুনিয়ায় না— পরকালেও কীভাবে কী করে ভালো থাকবো, সুখ-শান্তিতে ও আনন্দে থাকবো; সে কারণে আমাদের রব্ব আমাদের জন্যে সুখ-শান্তি আর বিপুল আরাম-আয়েশে ভরপুর সুউচ্চ-সুন্দর ও মনোরম প্রশান্তিতে ঘেরা জান্নাতুল ফিরদৌসের ব্যবস্থা করে রেখেছেন । সেই যে প্রবল প্রশান্তিতে ভরপুর নানাবিধ নেয়ামত সম্ভারে পরিপূর্ণ যেই জান্নাত; জান্নাতের সেই সবুজ বাগানে কীভাবে আমাদের ঠাঁই হবে, কীভাবে নিরাপদে সেখানে আশ্রয় হতে পারে — আমাদের আল্লাহ আমাদের সেই পথ-পন্থাও বাতলে দিয়েছেন। আমরা যেনো কোনোভাবেই বিপথগামী না হয়ে যাই, মহা জান্নাতের সে রাজপথ থেকে যেনো বিচ্যুত না হয়ে যাই, সে জন্য তিনি প্রেরণ করেছেন যুগে যুগে অসংখ্য নবি-রাসুল। পৃথিবীতেও ভালো থাকার জন্যে, সুখ-শান্তিতে জীবনকে যাপন করার জন্যে, ক্লান্তি বিদূরিত করার জন্যে সাজিয়েছেন ধরণীকে নানা রূপে, নানা রঙে।

ক্লান্তিমূখর দিনগুলোতে প্রশান্তির নির্মল আবেশে আচ্ছাদিত হয়ে আমি হারিয়ে যেতে পারি রাতের আকাশের স্নিগ্ধ জ্যোন্সার মায়াবী আলোর রাজ্যে, আকাশের বুকে মিটমিটিয়ে জ্বলা অসংখ্য-অগণি সব তারার ভিড়ে। ছুটে যেতে পারি সবুজ প্রকৃতির কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা সবুজ পাহাড়ে-অরন্যে। মিশে যেতে পারি পাহাড়ের বুক থেকে কলকল-ছলছল স্বরে বয়ে যাওয়া মিষ্টি পানির ঝরনাধারায়, ছলাৎ ছলাৎ নদীর ঢেউয়ে। মনের আনন্দে মজে যেতে পারি উত্তাল সাগরের ঊর্মিমালায়। আনমনে হারিয়ে যেতে পারি দূর আকাশের মেঘের ভেলায়!

মানসিক প্রশান্তির জন্যে এদিক-ওদিক ঘুরে-ফিরে যখন ধরার বুকে রাত্রি নেমে এলো; তখন মানসিক অবসাদ থেকে অনেকখানি মুক্তির দেখা মিলেছে ঠিকই, কিন্তু এবার আমার শরীরের ওপর চেপে বসেছে ক্লান্তির কালিমা। এই ক্লান্তি বিদূরিত করতে আমার রব্ব আল্লাহ সুবহানাহু ও’তাআলা দিয়েছেন ঘুমের মতো আরেকটি মহান নিয়ামাহ। আমরা নব উদ্যম-উচ্ছাসে আবার চলাচল করতেই আমার রব্ব আল্লাহ আমার জন্যে এই ঘুমকে আমার চোখের পাতায় এনে দিয়েছেন রাত্রিতে। এই কথাটিই তিনি বলেছেন সুরা নাবায়।
আমি তোমাদের ঘুমকে করেছি শান্তির বাহন। রাতকে করছি আবরণ। আর দিনকে করেছি জীবিকা অর্জনের সময় । ( সুরা নাবা : ০৯-১১)

এই যে তিনি আমাকে ভালোবেসে এতো এতো নিয়ামাহ’তে ভরিয়ে রেখেছেন জীবন, এর প্রতিদানে আমরা কী দিচ্ছি? একদিন তাঁর সম্মুখে এই স-অ-ব কিছু সম্পর্কেই আমাকে জবাব দিতে হবে, আমি জিজ্ঞেসিত হবো। এই বিষয়ে আল্লাহ সুবহানাহু ও’তাআলা বলেন,
তারপর অবশ্যই সেদিন তোমাদেরকে নেয়ামত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে। [ সুরা তাকাসুর : ০৮]

এই জিজ্ঞেসার ভয়ও নেই তেমন একটা আমার ভেতর। নেই ভালোবাসার প্রমাণও। আমি আমার মতোই আরেক সৃষ্টি মানুষের জন্যে সব বিলিন করে দেয়ার জন্যে প্রস্তুত থাকলেও আল্লাহর জন্যে, তাঁর ভালোবাসায় এর সিকিভাগও করছি না। মাখলুকের প্রেমে নিজের জীবনকে নিজ হাতে শেষ করতে আমি কুন্ঠিত না হলেও কিন্তু আল্লাহর রাহে জীবন বিলোবার মতো দৃঢ়তা সম্পন্ন ঈমানের অধিকারী হতে পারি নি, আল্লাহর রাহে জানবাজি রেখে সংগ্রাম পরিচালনার ক্ষেত্রে রাজ্যের অনীহা এসে আমাকে চেপে ধরে ঠিকই ! এই যে এমন দৃঢ় ঈমান, দৃঢ়তা সম্পন্ন ঈমান-আমলের অধিকারী না হওয়াটার পেছেনের কার্যকারণটা কী? কারণ হোলো আমি এবং আমরা অনেকেই ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করতে পারি নি। কিন্তু যাঁরা পূর্ণ ঈমানের অধিকারী, তাঁরা ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করতে পারেন। অন্তরে ঈমানের পূর্ণতা না থাকার কারণেই আমার মনে প্রশান্তিময় অনুভূতি দোলা দিয়ে যায় না। আল্লাহর রাসুলের চাচা, প্রখ্যাত সাহাবি আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (স্বল্লালাহু আলাইহি ও’সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি,
“ওই ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করেছে, যে রব হিসেবে আল্লাহকে, দ্বিন হিসেবে ইসলামকে এবং রাসুল হিসেবে মুহাম্মাদ (স্বল্লালাহু আলাইহি ওসাল্লাম.)-কে সন্তুষ্ট চিত্তে গ্রহণ করেছে”। (মুসলিম, হাদিস : ৫৭)

আনাস বিন মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত অন্য আরেকটি হাদিস আছে, যেখানে বলা হয়েছে যে, তিনটি জিনিস যার মধ্যে পাওয়া যাবে, সে ঈমানের স্বাদ উপভোগ করতে পারবে। সেগুলো হোলো :
১) যে ব্যক্তি কোনো মানুষকে একমাত্র আল্লাহর জন্য ভালোবাসবে।
২) যার নিকট আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল অন্য সব কিছু হতে অধিক প্রিয় হবে
৩) এবং আল্লাহ তাকে কুফরি থেকে রক্ষা করার পর পুণরায় কুফরিতে ফিরে যাওয়ার চেয়ে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়া তার নিকট অধিক প্রিয় মনে হবে। [ সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬০৪১ ও সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৪৩, ৬৮ ]

এখন আমার মধ্যে যদি আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (স্বল্লালাহু আলাইহি ও’সাল্লাম )-এর ওপর প্রবল বিশ্বাস ও ভালোবাসা না থাকে , ধরণীর সব কিছুর ওপর আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (স্বল্লালাহু আলাইহি ও’সাল্লাম )-কে প্রাধান্য দেওয়ার মন-মানসিকতা না থাকে, তাহলে আমি কখনোই ঈমানের স্বাদ পাবো না। আল্লাহ সুবহানাহু ও’তাআলার শত-সহস্র নিয়ামাহ পেয়েও তাঁকে ভালোবাসতে পারবো না।

| ভালোবাসা|
~রেদওয়ান রাওয়াহা

( কপি করা নিষেধ)

পঠিত : ১৯১৮ বার

মন্তব্য: ০