D-8: ইসলামী বিশ্বব্যবস্থার প্রথম প্রস্তাবনা
তারিখঃ ১৫ জুন, ২০২১, ১৫:১৭
বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে পৃথিবীর মানুষ দু-দুটি ভয়াবহ বিশ্বযুদ্ধের সম্মুখীন হয়েছিল। কোটি কোটি মানুষের প্রাণহানী ঘটে এই দুই বিশ্বযুদ্ধের দরুন। বিশ্বযুদ্ধের কারণ নিয়ে অনেক বিশ্লেষণ পাওয়া যায়। তবে পাওয়ার শিফট ছিল মূল লক্ষ্য।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফলে অটোমান সাম্রাজ্যের বিলুপ্তি, জার সাম্রাজ্যের পতন, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সংকুচিতকরণ এবং অস্ট্রিয়ান-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের মূলোৎপাটন করা হল। এদের পরিবর্তে ব্রিটিশ বাদে অন্যান্য দেশে ফ্যাসিস্ট সরকারকে প্রতিস্থাপিত করা হল।
অতঃপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাধ্যেম একনায়ক হিটলার, স্ট্যালিন, মুসোলিনি, ফ্রাঙ্কো কে বিলুপ্ত করা হয়েছে।
বিশ্বে শান্তি স্থাপনের জন্য দ্বিতীয় বিশযুদ্ধের পর ইয়াল্টা কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। যার উদ্দেশ্য ছিল পৃথিবীতে শান্তি স্বাধীনতা, মানবাধিকার, গনতন্ত্র স্থাপন করা।
কিন্তু মেকি এই স্বাধীনতাকে একটি বৃত্তের মধ্যে আবদ্ধ করে দেয়া হয়েছিল, মানবাধিকার শুধুমাত্র নির্দিষ্ট একটি দেশ, সমাজ বা গোষ্ঠীর জন্য নির্ধারিত করা হয়েছিল, যা তাদের বাইরে কারও জন্য প্রযোজ্য ছিল না। সেই সাথে ডেমোক্রাসির এর নামে ডেমোক্রেটোর ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়েছে।
সকলেই জানি যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর রাশিয়ায় স্ট্যালিন ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার কারণে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে আমেরিকা ও তার মিত্রদের Cold War চলতে থাকে।
এরপরেই জায়োনিজম এবং সাম্রাজ্যবাদী দুনিয়া নতুন যে বিশ্বব্যবস্থা দাঁড় করায়। যে সভ্যতা রক্ত ও সমাধির উপর প্রতিষ্ঠিত। নতুন এই সিস্টেমের মূল বুনিয়াদ হচ্ছে ঘৃণা ও শত্রুতা।
আমার ভষায়-
'সেই সভ্যতার পূজারী তুমি, যা করেছে তোমাকে বধির-অন্ধ,
পাথরে পাথরে আজো খোঁজ, পাবে রক্তের সোঁদা গন্ধ।'
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর NATO কে বিলুপ্ত করার দাবী উঠলে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার এর বিপক্ষে মত দেন। যখন প্রশ্ন করা হয়- 'তাহলে ন্যাটোকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন একটি কমন শ্ত্রু, যার বিরুদ্ধে সকলে একত্রে লড়াই করতে সম্মত হবে?' মার্গারেট বলেন- 'ইসলাম।'
তার এ উক্তি থেকে সহজেই অনুধাবন করা সম্ভব যে- জেব বুশ কর্তৃক New World Order কাদের জন্য এবং কীসের জন্য...
সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিপরীতে D-8 প্রতিষ্ঠাঃ
তুরস্কের ইসলামী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা প্রফে.ড.নাজমুদ্দিন এরবাকান ১৯৬৯ সাল থেকে মিল্লি গুরুশ আন্দোলন যখন শুরু করেছিলেন তখন থেকেই তার স্বপ্ন ছিল, জায়োনিজম ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিপরীতে একটি ইসলামী ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করা।
১৯৭৬ সাল!!
আজ থেকে ৫৫ বছর পূর্বে মুসলিম রাষ্ট্র প্রধানদের সামনে কিছু প্রস্তাবনা রেখেছিলেন তুরস্কের প্রখ্যাত এই বিজ্ঞানী। তার মধ্যে তিনি যেটিকে সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছিলেন তা হচ্ছে #ইসলামিক_দিনার। সেসময় পর্যন্ত জায়োনিজম পুরোপুরিভাবে গ্রাস করে নিতে পারেনি বিশ্বকে। সকল কিছু পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণের পরও তাতে সাড়া দেয় নি একটি মুসলিম দেশও।
১৯৬৭ সালে OIC যখন গঠন হয় তখন তিনি বলেছিলেন- "আমাদের সকলের উচিত এই সংগঠনের ছায়ায় থেকে একে অপরের সাথে বাণিজ্যিক চুক্তি সম্পাদন করা। কারণ ব্যবসায়িক সম্পর্ক বৃদ্ধি ব্যতিরেকে আমরা এই সংস্থাকে কার্যকর করতে পারব না। আমরা যদি তা না করি তাহলে আমাদের মধ্যকার যে সম্পর্ক তার উদাহরণ হবে একটা সুতার মতো। যা টান দেয়া মাত্রই ছিড়ে যাবে। সামান্য উত্তাপে পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে।"
হয়েছেও তাই!!!
বেশি দিন যায় নাই... সকলেই এখন এই সংগঠনকে
'Oh I See' বলেই সম্বোধন করে।
তিনি কিছু প্রস্তাবনা দিয়েছিলেন মুসলিম উম্মাহকে। তিনি চাইলে পাশ্চাত্যের দাবী মেনে সর্বোচ্চকাল ক্ষমতায় থাকতে পারতেন। কিন্তু তিনি তার দাওয়াহ ও লক্ষ্য ছাড়া দ্বিতীয় কিছু ভাবেন নি..
প্রস্তাবনাগুলো ছিল--
১- একটি ইসলামী ইউনিয়ন প্রতিষ্টাঃ
মুসলিম দেশসমূহ নিয়ে এ ইউনিয়ন গঠিত হবে। মুসলিম বিশ্বে সমস্যা নিজেরা টেবিলে বসে সমাধান করবে। আমেরিকা বা রাশিয়াকে দুই পয়সার দামও দেয়া হবে না নিজেদের সমস্যা সমাধানে। প্রত্যেকের সমান মর্যাদা থাকবে। একজনের সমস্যা মোকাবেলায় সবাই একসাথে কাজ করবে।
২- অর্থনৈতিক বিনিময়ঃ
এই ইউনিয়নের ভেতরে যেসকল সদস্য আছে তারা সর্বপ্রথম একে অন্যের অর্থনৈতিক চাহিদা পূরন করবে। নিজেদের মধ্যে সর্বোচ্চ বাণিজ্য করাত পর ইউনিয়নের বাইরে কোন মুসলিম দেশ থেকে থাকলে তাদের সাথে বাণিজ্য বৃদ্ধি করা এবং সর্বশেষে এরপরে যদি সম্ভব হয় তাহলে ইউরোপ বা পশ্চিমা বিশ্বের সাথে বাণিজ্য করা।
তেল এর বিনিয়ময়ে স্বর্ণ হবে বিনিময়ের মাধ্যম এবং ইসলামিক দিনারকে ডলার ব্যাবস্থার বিপরীতে দাড় করিয়ে অর্থনীতিতে ভারসাম্য রক্ষা করা।
৩- মুদ্রা বা ইসলামিক দিনারঃ
শুধুমাত্র মুসলিম দেশসমূহ অর্থাৎ যারা এই ইউনিয়নের সাথে সংযুক্ত তারা এই মুদ্রা ব্যাবহার করতে পারবে। নিজেদের মধ্যকার ব্যবসা-বাণিজ্যে, এমনকি প্রত্যেক দেশের অভ্যন্তরেও এই মুদ্রা ব্যবহারযোগ্য হবে।...
দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য ১৯৭৬ সালে তার এই ফর্মুলা এখন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ব্যাবহার করছে ইউরো নামে নিজেদের মধ্যে আর আমরা তা বাস্তবায়নের বদলে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছি।
৪- এই ইউনিয়নের নিজস্ব মিলিটারী প্রতিষ্ঠাঃ
যা মুসলমান ও বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়াবে। কোন দেশ আক্রান্ত হলে বা কোথাও মুসলমান নির্যাতিত হলে এই বাহিনী তার দায়িত্ব পালন করবে। নিজস্ব ট্যাংক ফ্যাক্টরী, নিজস্ব নিউক্লিয়ার ফ্যাক্টরী সোজা কথায়, নিজস্ব অস্র ফ্যাক্টরী গড়ে তুলতে হবে দেশে দেশে। নিজেদের মধ্যে অস্ত্র বিনিময়ের মধ্যে অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা।
৫- সাংস্কৃতি ও শিক্ষা বিনিময় প্রতিটি দেশের সাথে নিজেদেরঃ
প্রতিটি মুসলিম দেশের শিক্ষার্থীরা অন্য দেশে পড়াশোনার সুযোগ পাবে নির্দ্বিধায়। প্রতিটি দেশের সার্টিফিকেট প্রত্যেকটি মুসলিম দেশে গ্রহণযোগ্য হবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য। সম্মিলিত গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা করা, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক কেন্দ্র তৈরী করা যেন প্রতিটি মুসলিম দেশের মানুষ বিশ্বের ৬০ টি মুসলিম দেশের সাংস্কৃতিক বিষয়াবলী সম্পর্কে অবহিত হতে পারে এবং প্রত্যেকেই নিজেদেরকে এক উম্মাহর অংশ হিসেবে চিহ্নিত করতে পারে।
প্রফেসর এরবাকান সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে আজীবন লড়াই করে গিয়েছেন সাম্রাজ্যবাদী জায়োনিস্টদের বিরুদ্ধে। ইহুদীবাদী ইসরাঈল খুব ভালোভাবেই তাকে চিনে নিয়েছিল। তাইতো তার ৪০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে ১৫ বছরই রাজনীতি থেকে বিরত রাখা হয় তার্কি সরকার কর্তৃক।
কিন্তু তাকে দাবায়ে রাখতে সক্ষম হয় নি। তিনি তার কাজ সম্পন্ন করে গিয়েছেন। দ্বিতীয়বার কোয়ালিশনের মাধ্যমে ক্ষমতায় গিয়েই পূর্বের সেই প্রস্তাবনার আলোকে একটি ইসলামী বিশ্বব্যস্থার স্বপ্নকে সামনে রেখে তার স্বপ্নের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ১৯৯৭ সালের ১৫ই জুন Developing-8 অর্থাৎ D-8 প্রতিষ্ঠা করেন।
সাম্রাজ্যবাদী দুনিয়ার মূলমন্ত্র যেখানে "শক্তিই সকল কিছু" সেখানে তার প্রতিষ্ঠিত D-8 এর মূল লক্ষ্য নির্ধারণ করেন "সবার উপরে হক্ব"। তিনি D-8 গঠন করেছিলেন। কিন্তু তিনি ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পর তুর্কি সরকার সেই D-8 কে সামনে নিয়ে যাওয়া তো দূরে থাক চেষ্টা পর্যন্ত করে নি। বর্তমানে D-8 এর প্রধান হয়েছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী।
D-8 এর মূলনীতিসমূহঃ
D-8 এর লগোতে ছয়টি তারা সংগঠনটির ৬ টি মূলনীতিকে ইঙ্গিত করে। সেগুলো হল-
যুদ্ধ নয় শান্তি
দ্বন্দ নয় সংলাপ
শোষণ নয় সহযোগীতা
দ্বৈতনীতি নয় আদালত
অহমিকা নয় সমতা
বলপ্রয়োগ ও কর্তৃত্ববাদীতা নয়, মানবাধিকার, স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্র।
D-8 গঠনের জন্য প্রথমে তিনি স্ট্র্যাটেজিক পজিশনে ৮ টি দেশের কথা চিন্তা করেন। সেই সাথে দেশের জনসংখ্যা ও অর্থনৈতিক কত বেশি সেটাকে প্রাধান্য দেন। আর সামরিক শক্তি তো অপরিহার্য একটি বিষয়। D-8 কে তিনি একটি পাওয়ার হাউজে পরিণত করতে চেয়েছিলেন যেন নিম্নোক্ত দেশসমূহের মাধ্যমে পুরো বিশ্বকে মুসলিমরা নিয়ন্ত্রন করতে পারে এবং একই সাথে অর্থনৈতিক বিশ্বে এমন এক শক্তি হয়ে উঠবে যাতে করে মজলুম মুসলিমদের উপর সাম্রাজ্যবাদী পাশ্চাত্য শক্তি কখনো চোখ তুলে তাকাতে সাহস করে না।
যে দেশসমূহ নিয়ে D-8 গঠিত হয়েছিল।
১) তুরস্ক, ২) ইরান, ৩) মিশর, ৪) মালয়শিয়া, ৫) ইন্দোনেশিয়া,
৬) নাইজেরিয়া, ৭) বাংলাদেশ, এবং ৮) পাকিস্তান(পারমাণবিক)
ভৌগলিক দিক দিয়ে এই ৮ দেশের অবস্থান বিবেচনা করলে ডি-৮ এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব কতটুকু তা বুঝা কোন কষ্টসাধ্য ব্যাপার নয়।
অর্থনৈতিক রুটগুলোর উপর একটু চোখ বুলিয়ে আসি।
তুরস্কঃ ইউরোপ এবং এশিয়ার সংযোগস্থল। চানাক্কালের এবং বসফরাস প্রণালী দুটো তুরস্কের সীমানায়। তুরস্কের অধীনেই দু-দুটি প্রণালী। একই সাথে কেরচ প্রণালী তুরস্কের এই দুই প্রণালী ছাড়া অচল। অর্থাৎ তুরস্কের যদি চায় তাহলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৩ টি প্রণালী নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। রাশিয়াকে এ পথেই বাণিজ্য করতে হয়।
মিশর ও ইরানঃ সুয়েজ ক্যানেল, বাব-আল মান্দেব এবং হরমুজ প্রণালী পাশাপাশি তিনটি প্রণালী। ইউরোপ থেকে এশিয়ার বাণিজ্য জাহাজের রুট একমাত্র এটিই।
মালয়শিয়া ও ইন্দোনেশিয়াঃ মালাক্কা প্রণালী হচ্ছে এই দুই দেশের অধীনে। জাপান, চীন, ও কোরিয়া উপদ্বীপের সকল বাণিজ্য এ প্রণালী দিয়েই করতে হয়।
পাকিস্তান-নাইজেরিয়া-বাংলাদেশঃ তিন দেশের সামর্থ্য সম্পর্কে সকলেই জানি। তেলসমৃদ্ধ দেশ নাইজেরিয়া, পারমাণবিক শক্তিসম্পন্ন পাকিস্তান এবং উৎপাদনশীল বাংলাদেশ মুসলিম বিশ্বের অমূল্য সম্পদ।
D-8 প্রতিষ্ঠার পরপরই ৮ টি দেশ নিজেদের মধ্যে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে। প্রথম পদক্ষেপ ছিল, ১৯৯৭ তে তুরস্কে উৎপন্ন হেলিকপ্টার পাকিস্তানে বিক্রি করা। ৮ টি দেশের মধ্যে ৬ টি দেশ ভিসা চুক্তি স্বাক্ষর করে।
পাকিস্তানের ইসলামাবাদে ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয় D-8 এর অধীনে। টেক্সটাইল, গার্মেন্টস, লোহা, স্টীল, ফার্মাসিটিকাল এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে খুব দ্রুতই। সেই সাথে Shipping and Maritime Service এর ক্ষেত্রে সকল দেশ চুক্তিবদ্ধ হয়।
D-8 বর্তমানে নিষ্ক্রিয় হলেও কাজ থেমে নেই। তার্কি থেকেই যেহেতু এর উৎপত্তি, তাই তুরস্ককেই ভূমিকা পালন করতে হবে D-8 কে সক্রিয় করার ক্ষেত্রে।
D-8 এর গুরুত্বঃ
তেল- পৃথিবীর ১৪% তেল রিজার্ভ আছে এই ৮ টি দেশে এবং এই ৮ টি দেশ থেকে বাৎসরিক পৃথিবীর ১০% তেল উত্তোলন করা হয়। আবার এই ৮ টি দেশ কর্তৃক পৃথিবীর ৬.৭% তেল ব্যবহৃত হয়।
গ্যাস- বিশ্বের ২৩.২% প্রাকৃতিক গ্যাসের রিজার্ভ আছে D-8 এর দেশসমূহে। সেই সাথে D-8 থেকে বছরে বিশ্বের ১৩.২% গ্যাস উত্তোলন করা হয়। আর D-8 এর দেশসমূহ প্রতিবছর বিশ্বের ১১.২% গ্যাস ব্যবহার করে থাকে।
এছাড়াও বর্তমান বিশ্বের স্ট্র্যাটেজিক পদার্থ বোরন ও ক্রোমিয়াম ব্যাপক পরিমাণে মজুদ রয়েছে D-8 এর ভেতরে।
বিশ্বের তুলা রপ্তানিতে D-8 এর দেশ সমূহের বৃহৎ একটি ভূমিকা এখনো বিদ্যমান।
স্ট্র্যাটেজিক পজিশন ছাড়াও D-8 এর অধীনে পৃথিবীর মধ্যভাগের সর্বোচ্চ এলাকা, সাথে রয়েছে ৮ টি দেশের বিশাল এক জনগোষ্ঠী।
মুসলিম বিশ্বের কথা চিন্তা করলে, মুসলিম দেশ সমূহের মধ্যে ৬০% জিডিপি হচ্ছে D-8 এর, একই সাথে OIC অন্তর্ভুক্ত দেশসমূহের ৬৫% জনশক্তি D-8 এর দেশসমূহ থেকেই।
মুসলিম বিশ্বের বৈদেশিক বাণিজ্যের দিক থেকে D-8 ১০০ ভাগের মধ্যে ৫৮ ভাগ নিয়ন্ত্রণ করছে।
D-8 এর অন্তর্ভুক্ত দেশসমূহের সম্মিলিত জিডিপি ৪.৯ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থাৎ এটি বিশ্ব অর্থনীতির ৫%। অথচ নিজেদের তুলনায় তা কিছুই না। যদি এখনো নিজেদের মধ্যকার সম্পর্ক উন্নয়ন করে এবং এসব প্রণালীতে যথাযথ নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে সক্ষম হয় তাহলে পৃথিবীর ৭০% বাণিজ্য মুসলিমরা নিয়ন্ত্রণ করবে। তার জন্য সকল দেশকে একসাথে কাজ করতে হবে লড়তে হবে।
D-8 এর অন্তর্ভুক্ত ৮ টি দেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১.১ বিলিয়ন অর্থাৎ তা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ১৬%। বর্তমানে D-8 এর দেশ সমূহের নিজেদের মধ্যে ব্যবসার পরিমাণ ১২০ বিলিয়ন। তা আরও উন্নীত করা না হলে মুসলিম বিশ্ব মাথা তুলে দাড়াতে সক্ষম হবে না। জনসংখ্যা একটি শক্তি। এই জনশক্তিকে ঈমানের বলে বলীয়ান করে কাজে লাগাতে পারলে মুসলিম বিশ্বে এমন এক দুর্বার শক্তির সৃষ্টি হবে যাকে মোকাবেলা করার সামর্থ্য পৃথিবীর কোন শক্তির থাকবে না।
প্রথম পরিকল্পনা ছিল D-8 এর মধ্যকার দেশসমূহের মধ্যে অর্থনৈতিক বিনিয়োগ সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া, পরবর্তীতে একটি কমন কারেন্সী তৈরী করা। এরপর বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশসমূহ নিয়ে D-60 তৈরী করা। সকল দেশ এখানে চুক্তি অনুযায়ী কাজ করবে। এক দেশ আরেক দেশের সাথে অর্থনৈতিকভাবে সম্পৃক্ত হলে এবং এক মুসলিম দেশ অপর মুসলিম দেশের উপর নির্ভরশীল হলে এখানে কেউ নিজেকে আরেকজনের থেকে শ্রেষ্ঠ মনে করবে না এবং ইউরোপ ও পাশ্চাত্যকে গণনাই ধরবে না মুসলিম বিশ্ব।
এখন প্রয়োজন শুধু ঐক্যের। ঐক্য শুধু মুখে বললেই হবে না। এভাবে কাজে প্রমাণ করে দেখাতে হবে। এ ঐক্য হবে অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সকল ক্ষেত্রে।
মুসলিম বিশ্বের প্রতিটি দেশের উচিত একে অপরের সাথে এসকল সম্পর্ক বৃদ্ধি করা।
আজকে পাকিস্তান এবং তার্কির অর্থনৈতিক সম্পর্ক মাত্র ৫ বিলিয়ন ডলার। অথচ জার্মানী আর ফ্রান্সের নিজেদের মধ্যকার অর্থনৈতিক সম্পর্ক ১৮০ বিলিয়ন ডলারের উপরে।
ফ্রান্স এবং জার্মানী কয়েক শতক যুদ্ধ করার পর আজ নিজেদের মধ্য কয়েকশ বিলিয়ন ব্যবসায়িক সম্পর্ক তৈরী করেছে। এরফলে শত বিরোধীতা সত্ত্বেও ওরা আজ এক।
অপরদিকে আমরা মুসলিম জাতি। আমাদের বিশ্বাস এক হওয়ার পরও নিজেরা নিজেদের মধ্যকার সম্পর্ককে ঠুনকো ছুতো দিয়ে উড়িয়ে দিচ্ছি। এক দেশ আরেক দেশের উপর হামলে পড়ছি(সৌদি-ইয়েমেন)। মাঝে মাঝে এক মুসলিম দেশ সামান্য স্বার্থে অপর মুসলিম দেশকে ধ্বংসের জন্য পাশ্চাত্যের সাথে কাধে কাধ মিলিয়ে মুসলিম হত্যাযজ্ঞকে সমর্থন করছে (২০০৩ সালের আমেরিকা তার্কি+কাতারের সহায়তায় ইরাক হামলা)।
নিজেদের মধ্যকার ঐক্যকে নিজেরা ধূলিস্মাত করে দিচ্ছি। আজ হালেপের মতো সভ্যতা আমাদের হাতছাড়া হয়ে গেল। প্রত্যেক প্রতিবেশী দেশ শুধু হা করে দেখলই।
ঐতিহ্যমন্ডিত একটি সভ্যতাকে একদম মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হল অথচ আমরা কিছুই করতে পারি নি।
তাই প্রয়োজন একতার। নিজেদের অর্থনৈতিক মুক্তির পথ অন্য কেউ বাতলে দিবে না। মডেল আমাদের সামনেই আছে। শুধু প্রয়োজন একটু উদ্যোগ।
নিষ্ক্রিয়তাকে সক্রিয়তায় রুপান্তর করা। তুরস্ক ও অন্যান্য মুসলিম দেশ যদি D-8 কে পুনরায় সক্রিয় করে তাহলে হয়তো খুব অল্প সময়ের মধ্যেই মুসলিম বিশ্বের নতুন উত্থানের জয়গান রচিত হবে।
স্বপ্ন দেখি একটি শক্তিশালী উম্মাহর...
সূত্রঃ নাজমুদ্দিন এরবাকান- নতুন বিশ্বব্যবস্থার প্রস্তাবক
~আদিব ইহসান
মন্তব্য: ০