Alapon

মোহাম্মদ মুরসি : যিনি নবিজিকে ভালোবাসতেন...



মোহাম্মদ মুরসি মিসরের জালিম হোসনি মোবারককে পরাজিত করে প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। রুটিন দায়িত্ব পালন করতে ২০১২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর হাজির হয়েছেন জাতিসংঘের সাধারণ এসেম্বলিতে। রাজনৈতিক বিপ্লবের মাধ্যমে কিংবা পলিটিক্যাল টারময়েলে অতিক্রম করে কেউ কোনো দেশে ক্ষমতায় আসলে বিশ্বনেতাদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার একটা বাড়তি প্রবণতা তাঁর মধ্যে থাকে। সে চায় দেশ বিক্রি করে হলেও নিজের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে, আন্তর্যাতিক সমর্থন পেতে। কিন্তু মুরসি এর ব্যতিক্রম। তাঁর লক্ষ্য তৎকালে সিরিয়া ও ফিলিস্তিন ইস্যুতে বিশ্বেনেতাদের সতর্ক করে দেয়া।

এক্ষেত্রে বক্তব্যের ভূমিকাতেই তিনি এমন কথামালার সন্নিবেশ ঘটালেন, যেটি নবিজির প্রতি তাঁর একনিষ্ঠ ভালোবাসার সাক্ষ্য বহন করে। এ কথামালার শুনার জন্য ব্যক্তিস্বাধীনতা, ফ্রিডম অফ স্পিচ, লিবারেলিজম ইত্যাদি মুনাফেকি মতাদর্শের ধারক বাহক পশ্চিমা শাসক ও মিডিয়াশ্রেণি প্রস্তুত ছিল না–
“সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর। সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর, যাকে আমরা ভালোবাসি।”

এরপরেই তিনি একটা মাপকাঠি ঘোষনা করলেন। সুস্পষ্টভাষায়, সুদৃঢ়কন্ঠে বললেন –
“আমরা তাঁকে সম্মান করি যে আমাদের প্রিয় নবিকে সম্মান করে। আর আমরা তাঁর সাথে শ্ত্রুতা পোষণ করি যে তাঁকে কথা বা কাজের মাধ্যমে আঘাত করে।”

মোহাম্মদ মুরসি এখানে ইসলাম অবমাননাকারীদের সাথে শত্রুতা পোষণের ঘোষণা দিলেন। কথা বা কাজের মাধ্যমের যারা আল্লাহর রাসূলের সম্মান ও ইজ্জতের উপর আঘাত করবে, তারা আমাদের শত্রু। মোহাম্মদ মুরসি যখন এ ভাষণ জাতিসংঘে দেন, সে সময়কালে নবিজি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অবমাননা করে আমেরিকায় একটি ভিডিও বানানো হয়েছিল। কিন্তু তথাকথিত ‘বাকস্বাধীনতা’ রক্ষার নামে সে বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছিল না আমেরিকা।

মুলতঃ এই বিষয়টা মোহাম্মদ মুরসিকে নাড়া দিয়েছিল, তাঁর হৃদয়ে দারুণভাবে আঘাত করেছিল। তাই তিনি এসমস্ত ক্রিয়াকলাপকারী ব্যক্তিদের সাথে শত্রুতা ঘোষণা করলেন –
“আমরা তাঁকে সম্মান করি যে আমাদের প্রিয় নবিকে সম্মান করে। আর আমরা তাঁর সাথে শ্ত্রুতা পোষণ করি যে তাঁকে কথা বা কাজের মাধ্যমে আঘাত করে।”

জাতিসংঘে একজন মুসলিম নেতার এভাবে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সম্মান রক্ষার বিষয়টি গুরুত্বসহ উল্লেখ করা বিশ্বমুসলিমদের অন্তরে প্রভাব ফেলার মত ঘটনা। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সম্মান ও ইজ্জতের ব্যাপারে ‘জিরো টলারেন্স’ দেখানোর শিক্ষাই যেন মোহাম্মদ মুরসি সেদিন দিলেন।

মোহাম্মদ মুরসি সেদিন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ভালোবাসার কারণও বর্ণনা করেছেন। নবিজিকে দেয়া মহান আল্লাহর সুমহান মর্যাদার বিষয় উল্লেখ করেছেন পবিত্র কুরআনের আলোকে। তিনি পবিত্র কুরআনের আলোকে বলেন, “কুরআনে আযীমে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর রাসূলের গুণাবলী বর্ণনা করে বলেছেন- নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী।” [1]

এ আয়াত উল্লেখ করে জাতিসংঘে উপস্থিত বিশ্বনেতাদের জানালেন, মহান চরিত্রের অধিকারী আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অবমাননা নিঃসন্দেহে জুলুম। তিনি এক্ষেত্রে পবিত্র কুরআনের আরেকটি আয়াতের উল্লেখ করেন,
“(হে রাসূল!) নিশ্চয়ই আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি জগতসমূহের প্রতি রহমত হিসেবে।” [2]

আল্লাহ যাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছেন। সেই রহমতকে অবজ্ঞা করার দুঃসাহস? তিনি তো শুধু মুসলিমদের জন্য রহমত নন, জগতসমূহের জন্যও। এরপরও তোমরা তাঁর অবমাননাকে প্রশ্রয় দিচ্ছো? তাঁকে অবজ্ঞা করছো? এটা তো চরম জুলুম ও নির্বুদ্ধিতা! এমন জালিম ও নির্বোধদের সাথে কিসের সম্মানজনক সম্পর্ক ও বন্ধুত্ব?
“আমরা তাঁকে সম্মান করি যে আমাদের প্রিয় নবিকে সম্মান করে। আর আমরা তাঁর সাথে শ্ত্রুতা পোষণ করি যে তাঁকে কথা বা কাজের মাধ্যমে আঘাত করে।” [3]

নিখাদ নবিপ্রেমিক মোহাম্মদ মুরসি রাহিমাহুল্লাহর এই মূলনীতি প্রতিটি মুসলিমের লালন করা উচিত। তাদের সম্মান পাওয়ার কোনোই অধিকার নেই, যারা আমাদের নবিজি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কথা ও কাজের মাধ্যমে আঘাত করে। তারা আমাদের শ্ত্রু, কিয়ামত পর্যন্ত তাদের সাথে আমাদের শত্রুতার সম্পর্ক চলমান থাকবে।

~মুহাম্মদ খালিদ সাইফুল্লাহ

রেফারেন্স:
[1] সূরা ক্বলম: ৪
[2] সূরা আম্বিয়া: ১০৭
[3] জাতিসংঘে মুরসির ভাষণ, ২০১২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর

পঠিত : ৩৯১ বার

মন্তব্য: ০