Alapon

পূণ্যবানের প্রার্থনা(পর্ব-২)



" প্রভুর দুয়ার থাকে সদা উন্মুক্ত"

আজকে আমরা এমন একটি দু'আর কথা বলবো যা পড়তে কিছুটা সময় লাগলেও এটি অত্যন্ত চমৎকার অর্থ বহন করে। একান্তভাবে মনের গভীর হতে উৎসারিত কিছু মিনতি ব্যক্ত করা হয়েছে এ দু'আর মাধ্যমে।

এ দু’আটি এক জন সম্মানিতা নারী, হাবিবা আল আদাউয়ীয়া-র(রাহিমাহুল্লাহ) জীবনী থেকে বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি নারী সাহাবী না হলেও ছিলেন তাদের পরবর্তী প্রজন্ম। আবদুল্লাহ ইবন মাক্কী এবং আরো বর্ণনাকারী থেকে পাওয়া যায়, তাঁর অভ্যাস ছিলো রাত্রির আঁধার ঘনিয়ে আসার পর তিনি নিরিবিলিতে চলে যেতেন এবং আল্লাহর প্রার্থনায় নিমগ্ন হতেন।

তাঁর দু’আটি ছিলো,

إِلَهِي غَارَت النُّجُوْمُ، وَنَامَت العُيُوْنُ وَغَلَّقَت المُلُوْكُ أَبْوَابَهَا، وَبَابُكَ مَفْتُوْحٌ، وَخَلا كُلُ حَبِيْبٍ بِحَبِيْبِهِ، وَهَذَا مَقَامِي بَيْنَ يَدَيْكَ
অর্থঃ

হে আমার প্রভু! রাত্রির তারকারাজি বিলীন হয়ে গেছে। চক্ষুদ্বয় নিদ্রামগ্ন। দুনিয়ার রাজা বাদশাহের দরোজা বন্ধ। এবং তোমার দুয়ার রয়েছে উন্মুক্ত। প্রত্যেকে ই তাদের আপনজনের সান্নিধ্যে রয়েছে। আর আমি আছি, তোমার সামনে দন্ডায়মান।

এ সম্পর্কে একজন বলেছেন,
“দিবসকালে তুমি রাজা রাজড়াদের দুয়ারে ধরণা দাও। কিন্তু যখন রাত্রি নেমে আসে, সর্বশক্তিমান রাজাধিরাজ, প্রভু মহান আল্লাহ তোমাকে ডাকতে থাকেন, তাঁর ডাকে সাড়া দিতে তুমি ব্যর্থ হও। তুমি তখন ঘুমিয়ে থাকো। তাঁর সামনে দন্ডায়মান হবার সুযোগটি তুমি কাজে লাগাতে পারো না, যদিও কিনা তিনি তোমাকে আহ্বান করছেন কেবল তোমার ই প্রয়োজন মেটাবার জন্য।”

কিয়ামুল লাইলের মাঝে তিনি বারবার এ দু’আটি ই পড়তেন। ধীরে ধীরে ভোর হতে শুরু করতো। তখন তিনি বলতেন,
“হে আল্লাহ! রাত্রির কালো চাদর সরে যাচ্ছে এবং দিনের আলো উদিত হচ্ছে। আমি কিভাবে জানবো যে আমার আজকের এই রাত্রির ইবাদাত কি তুমি কবুল করেছো কিনা যাতে আমি নিজেকে অভিনন্দন জানাতে পারি। অথবা এ রাতের রহমত থেকে তুমি আমাকে বঞ্চিত করেছো কিনা, যাতে আমি নিজেকে স্বান্তনা দিতে পারি। আমি প্রতিজ্ঞা করছি যে, যতদিন তুমি আমাকে হায়াত দান করবে, যদি তুমি আমাকে তিরস্কৃত ও করো, তোমার দুয়ারে ধরণা দেয়া হতে আমি বিরত থাকবো না। আমার অন্তর দিয়ে আমি কেবল তোমার রহমত ও দয়া ই অনুভব করবো।”

নিশ্চয়ই এটি আল্লাহর কাছে চাইবার একটি অভাবনীয় পন্থা। আমরা সর্বাত্মক আশা নিয়ে তাঁর কাছে প্রার্থনা করবো। এবং পরক্ষণেই তাঁর প্রতি আমাদের যে শ্রদ্ধামিশ্রিত ভয় রয়েছে সে কথাও স্মরণ করবো। ঠিক যেমনটা আমাদের পিতা ইব্রাহীম(আঃ) করেছিলেন। এবং দেখুন এই দু’আতে কি সুন্দর সমন্বয় করা হয়েছে, আশা এবং ভীতির মাঝে। তিনি আল্লাহর কাছে কতোই না সুন্দরভাবে একান্তে কথোপকথনের মাধ্যমে নিজেকে সমর্পিত করলেন, দু’আ করলেন। এবং রাত্রি শেষ হবার সময় সে আল্লাহর কাছে আরজ করলো, যদি এ দু’আ আল্লাহ্‌র পছন্দনীয় হয়ে থাকে, সে এতে আনন্দিত হবে, আর যদি এটি রিজেক্ট হয়ে থাকে তাহলে সে নিজেকে স্বান্তনা দিবে। এবং সেইসাথে দু’আ করা জারি রাখবো। কোনকিছুই আমাকে তোমার দুয়ারে হাজির হওয়া থেকে বিরত করতে পারবেনা। অন্য কোন কিছুই আমাকে তোমার ক্ষমা ও রহমত থেকে নিরাশ করতে পারবে না।

আমরা যখন আল্লাহর কাছে কোন একটি রাতে, খুব আকুল হয়ে, বিনীতভাবে কোন কিছুর জন্য দু’আ করি, সাধারণত কি হয়ে থাকে? আমরা হয় অনেক বেশি আত্মতুষ্টিতে পরিপূর্ণ হয়ে যাই, যে আমি খুব সমর্পিত চিত্তে আল্লাহর কাছে চেয়েছি, এবার অপ্রত্যাশিত ভাবে দু’আ কবুলের জন্য অপেক্ষা করা যাক। অথবা, আমরা খুব হতাশ হয়ে পড়ি, পরবর্তী দিনেই এমন কিছু আলামত দেখে যা দু’আ রিজেক্ট হওয়া টা নির্দেশ করছে।

আল্লাহ আমাদের তাদের দলে শামিল হবার তাওফিক্ব দান করুন, যেসব বান্দারা কখনো তাঁর রহমত থেকে নিরাশ হয়না এবং তাঁর দুয়ারে ধরণা দিতে থাকে, যতোক্ষণ না আল্লাহর পছন্দনীয় বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। আমীন।

পুণ্যবানের প্রার্থনা
পর্ব-২

মূলঃ ওমর সুলাইমান
ভাবানুবাদঃ সাবিহা সাবা


#দুআ_সিরিজ

পঠিত : ৩৬৬ বার

মন্তব্য: ০