Alapon

মিশনারিদের থাবায় পার্বত্য চট্টগ্রাম...



পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পাহাড় ও উপাত্যকায় পূর্ণ রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি এই তিন জেলা নিয়ে গঠিত । এই পার্বত্য এলাকার প্রায় ৫৩ শতাংশ বাঙালি এবং বাকি প্রায় অর্ধেক বাসিন্দা ১৩ টি স্বতন্ত্র উপজাতির অন্তর্ভুক্ত । এখানকার প্রধান তিনটি সম্প্রদায় চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরী । চাকমা ও মারমারা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী, ত্রিপুরীরা হিন্দু । এছাড়া মিজো, বম ও খেয়াংরা খ্রিষ্টান । কিছু গোত্র আত্মা, প্রাণী ও উদ্ভিদের পূজারী ।

বর্তমানে এসব ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ তাদের ঐতিহ্য, ধর্ম ও কৃষ্টি হারিয়ে লক্ষণীয়ভাবে পাশ্চাত্য এবং খ্রীষ্টীয় সংস্কৃতি ও ধর্মাচারে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে । এই রূপান্তরের নেপথ্যে রয়েছে প্রধানত খ্রীষ্টান মিশনারীদের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত বেশকিছু বেসরকারি এনজিও সংস্থা । স্বাস্থ্য ও সমাজসেবার আড়ালে তারা পার্বত্য এলাকার দারিদ্র্যপীড়িত জনগোষ্ঠীকে আর্থিক ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধার প্রলোভনের মাধ্যমে খ্রীষ্টান ধর্মে দীক্ষিত করার কর্মসূচি সূক্ষ্ম এবং সফলভাবে সম্পন্ন করে যাচ্ছে ।
১৯৯১ হতে ২০১১ সাল পর্যন্ত সরকারি আদমশুমারি অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামে খ্রীষ্টান জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১৩৪.৭% । স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ২০ বছরে সেখানে ১২ হাজার উপজাতীয় পরিবারকে খ্রিষ্টান বানানো হয়েছে। যেসব উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর লোকসংখ্যা কম, তাদের প্রায় শতভাগই খ্রিষ্টান হয়ে গেছে। তিন পার্বত্য জেলায় বর্তমানে ১৯৪টি গির্জা রয়েছে এবং তা বৃদ্ধি পাচ্ছে ।

যে সাজেক উপাত্যকায় ২০ বছর আগেও খ্রিষ্টধর্মের কোন নামগন্ধ ছিল না, সেখানে বর্তমানে ১০ হাজারের অধিক উপজাতি ধর্মান্তরিত হয়েছে এবং তাদের সাংস্কৃতিক পরিবর্তন হয়েছে । সাজেক ইউনিয়নের ২০টি গ্রামে খেয়াং, বম, পাংখু, লুসাই উপজাতির বাস । এসব উপজাতীয়দের নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি ছিল । কিন্তু পাশ্চাত্য সংস্কৃতির সয়লাবে আজ তার কিছুই নেই । সেখানকার অধিবাসীরা গিটার বাজিয়ে ইংরেজি গান গায়; মেয়েরা পরে প্যান্ট-শার্ট-স্কার্ট। দেখে মনে হয় যেন ‘বাংলার বুকে এক খণ্ড ইউরোপ’। পাংখু উপজাতি পুরোপুরি খ্রিষ্টান হয়ে গেছে; বদলে গেছে তাদের ভাষা; এমনকি তাদের ভাষার হরফও ইংরেজি বর্ণমালায় রূপান্তর করা হয়েছে। উপজাতীয় আদি ভাষা ও সংস্কৃতি এরা হারিয়ে ফেলেছে।

ইউএনডিপি থেকে শুরু করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, উন্নয়নের নামে দেদার বৈদেশিক অর্থ দিয়ে প্রকৃতপক্ষে ধর্মান্তরিত খ্রিষ্টান জনগোষ্ঠীকে পুনর্বাসনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে । নটরডেম-হলিক্রস থেকে শুরু করে তাদের পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ধর্মান্তরিত পরিবারের ছাত্রদেরকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে ভর্তি করা হয় এবং কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট প্ল্যানের অধীনে উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা প্রভৃতি দেশে পাঠানো হয় ।

এ তো গেল পার্বত্য চট্টগ্রাম, সারাদেশে তো তাদের কর্মতৎপরতা আরো ভয়াবহ । বিগত একশ বছরের মধ্যে খাসিয়া সম্প্রদায়ের ৯০% ই খ্রীষ্টান হয়ে গেল, আর একই রাস্তায় এখন আছে সাঁওতাল সম্প্রদায় । দারিদ্রপীড়িত উত্তরাঞ্চল থেকে শুরু করে ময়মনসিংহের অরণ্য কোথাও তাদের চোখ ফেলতে বাকি নেই । এক কোটি খ্রীষ্টান বানানোর যে মিশন নিয়ে তারা নেমেছে, আপাতদৃষ্টিতে আশংকা হয়, সফল হয়ে যায় কিনা ।

বিভিন্ন এনজিও এবং দাতব্য সংস্থার নামের আড়ালে একই ধরণের পলিসি তারা বাস্তবায়ন করছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে, এবং তারা সেখানেও খুব ভালোভাবেই সফল । সেই কথা বলতে গেলে লম্বা হয়ে যাবে ।

মিশনারীরা যেভাবে ধীরে ধীরে পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামকে খ্রীষ্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ বানিয়ে নিচ্ছে এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে, তাতে তারা বিচ্ছিন্নতার ডাক দিলে স্বাধীনতা অথবা স্বায়ত্বশাসন দেয়া ছাড়া উপায় থাকবে না । দেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের এই ধরণের অস্বাভাবিক ডেমোগ্রাফিক পরিবর্তন যথেষ্ট আশংকাজনক।

- নাজমুস সায়াদাত ফাহিম

পঠিত : ৭৮৫ বার

মন্তব্য: ০