Alapon

বাম পাশ থেকে শয়তানের প্রথম আক্রমণ কৌশল। — নোমান আলী খান



বাম পাশ থেকে শয়তানের প্রথম আক্রমণ কৌশল।
— নোমান আলী খান

ইবাদাত সম্পর্কে একটি বিষয় হলো, বিশেষ করে উপাসনার ব্যাপারে...ভালকাজ বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। মানুষকে সাহায্য করা, দান করা প্রভৃতি এক ধরণের ভালকাজ। চলুন, এমন কাজগুলো সম্পর্কে কথা বলি যা আমাদের অন্তরকে প্রশান্ত রাখে। আর তা হলো— আল্লাহর উপাসনা। কুরআন তিলাওয়াত, সালাত, দুয়া— এই ধরণের কাজগুলো আমাদেরকে আল্লাহর সাথে সংযুক্ত রাখে এবং এগুলোর মাধ্যমে আমরা সরাসরি আল্লাহকে স্মরণ করি। এগুলো আমাদের আধ্যাত্মিক অপরিহার্যতা। প্রতিবার যেমন আমাকে শ্বাস নিতে হয় আবার শ্বাস ফেলতে হয়, কয়েক ঘন্টা পর পর আমাকে যেমন পানি পান করতে হয়, আমার শরীরের এগুলোর প্রয়োজন হয়। ঠিক তেমনিভাবে আমাদের অন্তরেরও আল্লাহর জিকিরের প্রয়োজন হয়।

তাই শয়তান যদি আমাদের থেকে আল্লাহর সক্রিয় স্মরণকে কমিয়ে দিতে পারে, আমাদের জীবন থেকে এটা দূর করে দিতে পারে, অল্প অল্প করে। সে যত বেশি এটা আমাদের থেকে দূর করে দিতে পারবে... ঠিক যেমন, আপনার যদি একটি চারাগাছ থাকে, যদি একে আহার না করান, এটি তখন শুকিয়ে যায় এবং ধীরে ধীরে মৃত্যু মুখে পতিত হয়। ঠিক একইভাবে, আপনার যদি আল্লাহর জিকিরের জন্য সময় না থাকে, অন্তর তখন শক্ত হতে শুরু করে। অন্তর কঠিন হতে শুরু করে এবং তা দুর্বল হতে শুরু করে। এর কর্মশক্তি হ্রাস পেতে শুরু করে।


এর অর্থ কী? এর অর্থ হলো, আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়ার ইচ্ছে, আল্লাহর নিকট তাওবা করার ইচ্ছে হ্রাস পেতে শুরু করে।

আপনার এলার্ম... খারাপ কিছু ঘটলে অন্তর সাবধান হয়ে যায়— "আমার তো এটার দিকে তাকানো উচিত নয়। আমার তো এভাবে কথা বলা উচিত নয়। আমার তো এমন কাজ করা শোভা পায় না।" অন্তরে স্বয়ংক্রিয় একটি এলার্ম আছে। ব্যাটারি যদি ভাল থাকে, যথেষ্ট চার্জ যদি থাকে তাহলে অ্যালার্ম বেজে উঠবে। কিন্তু এলার্মটি যদি দুর্বল হয়ে পড়ে এটি তখন আর বেজে ওঠে না।

তাই বাম পাশ থেকে শয়তানের এই কৌশল অবলম্বন করার ফলে... খারাপ কিছু ঘটলে, মন্দ কিছু ঘটতে আরম্ভ করলে আপনার তো নিজেকে বলতে পারার কথা যে, আমার এটা করা উচিত নয়। কিন্তু সে যেহেতু আপনার জীবন থাকে আল্লাহ্‌র জিকির দূর করে দিয়েছে তাই ঐ এলার্মগুলো এখন আর বেজে ওঠে না। তাই আপনার অন্তর এমনকি আপনাকে এই সাবধানতাও প্রদান করে না যে, এই কাজটি করা ভুল।

অবস্থা এই পর্যায়ে এসে পৌঁছলে হতাশা শুরু হয়। "আমি এমনকি খারাপও ফিল করি না। আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না।" এর পরবর্তী ধাপ হলো... কারণ তার নাম হলো ইবলিশ। যা 'আবলাসা' থেকে এসেছে। যার একটি অর্থ হলো, আশা হারিয়ে ফেলা। আরবি ভাষার দৃষ্টিতে এর একটি অর্থ হলো, নিরাশ হয়ে পড়া। সে আমাকে এবং আপনাকে হতাশ করে দেয়। "আরে ভাই, আমি যখন নামাজ পড়ি আমি তো কিচ্ছু অনুভব করি না।" কারণ, অন্তর এতটাই শক্ত হয়ে গেছে!!

আল্লাহ সম্পর্কে চিন্তা করা থেকে যদি বহুদিন দূরে থাকেন, যদি নামাজটা কোনোমতে শেষ করেই আবার দুনিয়ার কাজে জড়িয়ে পড়েন, আপনার অন্তর যদি নামাজে না থাকে, তখন আপনি নিজেকে বলতে শুরু করেন— "আমি নামাজ পড়লেও তো কিছু অনুভব করি না। এই নামাজ পড়ার অর্থ কী। আমি কেনই বা নামাজ পড়ছি।"

ব্যাপারটা হলো— যদি একটি চারাগাছ দুর্বল হয়ে পড়ে, আপনি আবার একে সতেজ করে তুলতে চান, তখন আপনি এর উপর কিছু পানি ঢালবেন। পানি ঢালার সাথে সাথেই তো আর দেখতে পান না যে, ফল ধরা শুরু করেছে। আপনাকে নিয়মিত পানি দিতে হবে, অল্প অল্প করে। এরপর এটি আবার সতেজ হতে শুরু করবে। ব্যাপারটা তাৎক্ষণিক ঘটবে না।

তাই, অনেকদিন থেকে আপনি যদি আল্লাহর সাথে সম্পর্কহীন অবস্থায় থাকেন, এখন সেই সম্পর্কটা আবার তৈরি করার চেষ্টা করছেন, আপনাকে তখন নিজের ব্যাপারে ধৈর্যশীল হতে হবে। কিন্তু শয়তান কী চায়? শয়তান চায় 'আজিলা।' সে চায় মানুষ যেন তাড়াহুড়ো করে। তারা যদি সাথে সাথে রেজাল্ট না দেখে, তখন সে তাদের হতাশ করে দিতে চায়।

তাই, আপনার ভালো হওয়ার প্রচেষ্টায়, আপনার উত্তম হওয়ার সংগ্রামে, আপনি আল্লাহর সাথে আবার সম্পর্ক তৈরি করতে চাচ্ছেন... যদিও এটা একটা প্রক্রিয়া। এটা এক রাতে ঘটবে না। এক নামাজ বা দুই নামাজে এটা ঘটবে না। এর জন্য কিছুটা সময় ব্যয় করতে হবে এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকতে হবে। আপনি যদি তাৎক্ষণিক উন্নতি না দেখেন, সে চায় আপনি যেন হাল ছেড়ে দেন। "এসব করার কি-বা মানে আছে। আমি কিছুই অনুভব করি না।"

তো, এটা হলো প্রথম পথ যা দিয়ে সে বাম দিক থেকে আমাদের আক্রমণ করে।

পঠিত : ৯৬৯ বার

মন্তব্য: ০