Alapon

শহীদ ত্রিপুরা: গহীন পাহাড়ে জ্বালিয়ে গেলেন ইসলামের আলো...



নাম পুর্নেন্দু ত্রিপুরা। উত্তরাধিকার ‍সূত্রে জন্ম থেকেই বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী ছিলেন। কিন্তু যৌবনে পদার্পন করার পর তিনি আর বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী হিসেবে সন্তুষ্ট থাকতে পারেননি। বৌদ্ধ ধর্ম থেকে খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেন। কিন্তু খ্রিস্টান ধর্মও তাকে তার কাঙ্গিত প্রশান্তি দান করতে সক্ষম হচ্ছিল না।

২০১৪ সালে থানচিতে এক উপজাতীয় মুসলিম বন্ধুর কাছে প্রথম ইসলামের দাওয়াত পান পুর্নেন্দু ত্রিপুরা। ইসলামের দাওয়াত তার ভালো লেগে যায়। তারপর শাহাদা উচ্চারণ করে মুসলিম হয়ে ইসলামের ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করেন। ইসলাম গ্রহণ করে তিনি নতুন নাম নেন ওমর ফারুক ত্রিপুরা। ওমর ফারুক ত্রিপুরা ইসলাম গ্রহণ করে তাবলীগ জামায়াতের সাথে দ্বীনের কাজে শরীক হোন। তারপর তাবলীগ জামায়াতের সাথে এক চিল্লা দেওয়ার পর পরিবারের কাছে ফিরে যান। ততোদিনে তার পরিবারও ইসলাম গ্রহণ করেছে।

ওমর ফারুক ত্রিপুরার স্বপরিবারের ইসলাম গ্রহণ করার কথা পাহাড়ে চাউর হয়ে যায়। এই সংবাদ পৌঁছে যায় শান্তি বাহিনীর কানে; যাদের নাম শান্তি বাহিনী কিন্তু একমাত্র কর্ম পাহাড়ে অশান্তি লাগিয়ে রাখা।

একদিন সন্ধ্যায় শান্তি বাহিনীর সন্ত্রাসীরা ওমর ফারুক ত্রিপুরার পথ আগলে দাড়ায়। তারপর তাকে ইসলাম ধর্ম পরিত্যাগ করার হুমকি প্রদান করে। তখন ওমর ফারুক ত্রিপুরা বলেন, ‘আর যদি না করি? হত্যা করবে? গুলি করবে? করো গুলি। এই যে বুক পেতে দিলাম। চালাও গুলি। আমি তোমাদের গুলি খেয়ে ইসলামের জন্য শহীদ হতে চাই। কিন্তু তারপরও ইসলাম ত্যাগ করবো না।’
ওমর ফারুক ত্রিপুরার এই অকুতোভয় মনোভাব দেখে শান্তি বাহিনীর সদস্যরা ঘাবড়ে যায়। তারপর তারা চলে যায়।

এরপর ওমর ফারুক ত্রিপুরা পাহাড়ে তার প্রতিবেশীদের মাঝে ইসলামের দাওয়াত দেওয়া শুরু করেন। আল্লাহর মেহেরবাণীতে তার দাওয়াত পাহাড়ের মানুষেরা গ্রহণ করতে শুরু করে। বেশ কয়েকটি পরিবার স্বপরিবারে ইসলাম গ্রহণ করে। যখন মুসলিমদের সংখ্যা বাড়তে থাকলো, তখন ওমর ফারুক ত্রিপুরা তার ১ একর জমিতে একটি মসজিদ স্থাপন করেন। আর সেই মসজিদের ইমাম হন স্বয়ং ওমর ফারুক ত্রিপুরা।

এরপর ২০১৮ সালে ওমর ফারুক ত্রিপুরা মসজিদে মাইকের ব্যবস্থা করেন এবং মাইকে আজান দিয়ে মুসল্লিদের নামাজের জন্য আহব্বান করতে থাকেন। মসজিদে মাইক লাগানোর পরপরই ওমর ফারুক ত্রিপুরাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু তিনি সেসব হুমকি কর্ণপাত না করে ইসলাম প্রচারের কাজ করে যাচ্ছিলেন।

এমন একদিন এশার নামাজ শেষে ওমর ফারুক ত্রিপুরা ঘরে বসে ছিলেন। আর তার স্ত্রী খাবারের ব্যবস্থা করছিলেন। এমন সময় বাড়ির বাহির থেকে কেউ একজন তার পূর্বের নাম পুর্নেন্দু ত্রিপুরা ধরে ডাক দেয়। এই ডাক শোনার সাথে সাথে ওমর ফারুক ত্রিপুরার পরিবার বুঝতে পারেন, তাদের উপর কী ঘটতে যাচ্ছে! তারা সঙ্গে সঙ্গে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেন। কিন্তু শান্তি বাহিনীর সন্ত্রাসীরা দরজা ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করে। ওমর ফারুক ত্রিপুরার স্ত্রী স্বামীকে বাঁচানোর জন্য সামনে ঢাল হয়ে দাড়ান। কিন্তু সন্ত্রাসীরা তার বুকে লাত্থি মেরে ফেলে দেন। তারপর ওমর ফারুক ত্রিপুরার বুকে ২ রাউন্ড গুলি চালায়। আর ওমর ফারুক ত্রিপুরা সঙ্গে সঙ্গে শাহাদাত বরণ করেন।

শান্তি বাহিনীর সন্ত্রাসীরা ভেবেছিলো, ওমর ফারুক ত্রিপুরাকে হত্যা করলেই বুঝি গহীণ পাহাড়ে ইসলামের আলো নিভে যাবে। কিন্তু ওমর ফারুক ত্রিপুরা শহীদ হয়ে যেন গহীণ পাহাড়ে দ্বীনের মশাল জ্বালিয়ে গেলেন। তার শাহাদাতের পরপরই আরও অনেক উপজাতি আত্ম প্রকাশ করতে শুরু করেছে, যারা গোপনে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। সেখানে প্রায় ৩০ টি পরিবার ইসলাম গ্রহণ করেছে।

ইসলামের ইতিহাস বলে, যে মাটিতে শহীদের রক্ত ঝরে, সেখানে ইসলাম আরও উর্বর হয়। ইনশাআল্লাহ একদিন সমগ্র পাহাড় ইসলামের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠবে। আর সেই আলোয় পাহাড় কেন্দ্রীক চলমান সকল অন্ধকার ষড়যন্ত্র বিলীণ হয়ে যাবে।

পঠিত : ৩০৩ বার

মন্তব্য: ০