Alapon

জুলুমের স্বীকৃতি—ক্ষমা পাবার পূর্ব শর্ত-০১



তাদের পেছনে এতো এতো পরিশ্রম, এতো এতো দাওয়াত, এতো এতো সতর্ক করার পরেও তারা সু-পথে আসছে না। আল্লাহর দিকে ঝুঁকছে না। মহান মালিক আল্লাহর অবাধ্যতা—শিরক,কুফর পরিত্যাগ করছে না। তা করার কোনো লক্ষণও তাদের মাঝে দেখা যাচ্ছে না। এদের এহেন হঠকারিতায় অন্তরে ভীষণ ব্যথা পেলেন তিনি। হলেন আশাহতও। সর্বশেষ সময়ে তাদেরকে আবারও চিরন্তন মুক্তি ও কল্যাণের পথে আহবান করলেন। এবং বললেন—তিন দিনের ভেতর যদি তারা আল্লাহর আনুগত্যের শামিয়ানায় শামিল না হয়, তা হলে তাদের ওপর আজাব নেমে আসবে। ধব্বংসের দেয়াল তাদের ওপর খসে খসে পড়বে। তারা পর্যুদুস্ত হয়ে যাবে। বিনাশ হয়ে যাবে।

দিনগুলো যাচ্ছে যথারীতি। আর মাত্র একদিন বাকী। তারা তখন অবধি ছাড়েনি কুফুরির পথ। ধব্বংসের দেয়াল তাদের ওপর হুড়মুড় করে পড়া এখন শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র ! তাই তিনি আগের দিন রাত্রিতে ( দুইদিন অতিবাহিত হবার পর) সেই জনপদ ত্যাগ করেন, অন্যত্র পাড়ি জমানোর উদ্দেশ্যে।

যেতে যেতে অনেক দূর গেলেন। সামনেই ফোরাত নদী। উঠতে হবে নৌকায়। উঠলেনও তিনি। চলতে লাগলো নৌকাটি। কিছু দূর যাবার পর প্রবল ঝড়-তুফান আসে। এতে নৌকাটি ডুবে যাবার লক্ষণ প্রকাশ পায়। কী করা যায় এখন— সকলেই ভাবছে। তারা ভীতসন্ত্রস্ত-চিন্তিত। একপর্যায়ে সকলেই মিলে ঐকমত্য হয়ে সিদ্ধান্ত নিলেন যে, নৌকার ভার হালকা করতে একজনকে নৌকা হতে ফেলে দিবে। সেজন্য লটারির আয়োজন করা হলো। লটারিতে বারংবারই তাঁর নামই আসে। বারংবার...। পবিত্র কালামুল্লাহ মাজিদে বিষয়টি এভাবেই এসেছে যে,
“সে লটারিতে যোগদান করলো এবং পরাভূত হলো”।[আল কুরআন-৩৭/১৪১]


অবশেষে তাঁকে নৌকা থেকে নদীতে ফেলে দেওয়া হলো। তিনি নৌকা থেকে নদীতে পতিত হবার সাথে সাথেই একটা বিরাটাকার মাছ এসে তাঁকে গিলে ফেললো। কিন্তু হজম করলো না।

তিনি আল্লাহঁর নির্দেশনা আসার পূর্বেই নিজ জনপদ ছেড়ে চলে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এইজন্য যে— তিনি ভেবেছিলেন তাদের ওপর আল্লাহর যে আজাব আসবে, তাদের সাথে তিনিও আল্লাহর সে আজাবে ঘেরাও হবেন , তাঁর পাকড়াও থেকে তিনি রেহাই পাবেন না; সে কারণে তাঁর কোথাও গিয়ে আশ্রয় নেওয়া উচিত বলে মনে করেই তিনি নিজ জনপদ ছেড়ে চলে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ।

কিন্তু আল্লাহর এটা পছন্দ হলো না। তাঁর শান-মানের সাথে এমনটি মানানসই ছিলো না। যার জন্য আল্লাহ তাঁকে মাছের পেটের অন্ধকারে বন্দী করলেন ! এই যে মাছের পেটে বন্দী অবস্থা তাঁর , এটা তাঁকে শাস্তি দানের উদ্দেশ্যে ছিলো না। বরং এর উদ্দ্যশ্য ছিলো আদব শিক্ষাদান। যেমন পিতা তার শিশু সন্তানকে শাসন করে শিক্ষা দিয়ে থাকেন’ [তাফসীরে কুরতুবী, আম্বিয়া ৮৭]। যার কারণে মাছটি তাঁকে খেলো না। ভাঙলো না তাঁর হাড়-ও।
হ্যাঁ, যাঁর এবং যাদের কথা বলেছিলাম তিনি হলেন আল্লাহর নবি ইউনুস বিন মাত্তা আলাইহিস স্বলাতু আসসালাম, ও তাঁর কওম! তিনি জন্মেছেন সিরিয়ায়। কিন্তু নবি হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন আসিরীয়বাসীর নিকট, তথা বর্তমান ইরাকের মুসেল শহরের বিপরীত পাশে নীনওয়া নামক তৎকালীন বিখ্যাত নগরীতে। পবিত্র কুরআনুল কারিমে ওনাকে কখনো
যূন-নুন*, কখনো স্ব-হিবুল হুত* কখনো-বা ইউনুস* নামেই সম্বোধন করা হয়েছে।

যাইহোক, ইউনুস আলাইহিস সালাতু আসসালামের জাতির ওপর আল্লাহ আর আজাব দিলেন না। কারণ তাদের নবি তাদের ছেড়ে চলে যাবার পরে ভীষণ ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। আল্লাহর আজাবের ভয়ে, নবির কথা অমান্য করার অনুতাপে এদিক-সেদিক ছুটোছুটি করতে লাগলো তারা । গবাদি পশু-পাখি নিয়ে কেউ কেউ আশ্রয় নিলো পাহাড়ে। গহীণ জঙ্গলে। তারা সেখানে গিয়ে শিশুদের এবং গবাদিপশুগুলোকে পৃথক করে আল্লাহর কাছে কাঁদতে লাগলো । অনুতাপের অশ্রু ঝরিয়ে ক্ষমাপ্রার্থনা করলো। আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দিলেন। মাফ পেলো তারা।

এদিকে তাদের পয়গম্বর আল্লাহর নবি ইউনুস আলাইহিস স্বলাতু আসসালাম মাছের পেটে। বন্দী তিনি। তাবৎ দুনিয়ার সব আলো বাতাস হতে বঞ্চিত । চরম ঘুটঘুটে অন্ধকারে আবৃত। মাছের পেটের অন্ধকার। গভীর সমুদ্রের তলদেশের অন্ধকার। রাত্রির অন্ধকার —তিনস্তর বিশিষ্ট অন্ধকারের আবরণে আবৃত তিনি। মাছের পেটে থাকাকালীন তিনি বুঝতে পারেন এভাবে নিজ দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত জনপদ ছেড়ে আসা তাঁর ঠিক হয় নি। তিনি আল্লাহর দরবারে কেঁদে কেঁদে ফরিয়াদ করতে লাগলেন। মাছের পেটেই সিজদায় পড়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে চেয়ে অনর্গল অশ্রু ঢালতে লাগলেন। আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করে দিলেন। মাছের পেট থেকে তিনি মুক্তি পেলেন। পবিত্র কালামুল্লাহতে বিষয়টা এভাবেই এসেছে —


“আর মাছওয়ালা (ইউনুস)-এর কথা স্মরণ কর, যখন সে (আল্লাহর অবাধ্যতার কারণে লোকদের উপর) ক্রুদ্ধ হয়ে চলে গিয়েছিল এবং বিশ্বাসী ছিল যে, আমরা তার উপরে কোনরূপ কষ্ট দানের সিদ্ধান্ত নেব না। ‘অতঃপর সে (মাছের পেটে) ঘন অন্ধকারের মধ্যে আহবান করল (হে আল্লাহ!) তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তুমি পবিত্র। আমি সীমা লংঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত’। ‘অতঃপর আমরা তার আহবানে সাড়া দিলাম এবং তাকে দুশ্চিন্তা হ’তে মুক্ত করলাম। আর এভাবেই আমরা বিশ্বাসীদের মুক্তি দিয়ে থাকি” [আম্বিয়া ২১/৮৭-৮৮]


\\জুলুমের স্বীকৃতি—ক্ষমা পাবার পূর্ব শর্ত-০১\\
~রেদওয়ান রাওয়াহা
২৯। ০৬। ২১ ইং

পঠিত : ৩৩৪ বার

মন্তব্য: ১

২০২১-০৬-২৯ ১৯:৪২

User
তেপান্তর

সুন্দর লেখা

submit