Alapon

\ \জুলুমের স্বীকৃতি—ক্ষমা পাবার পূর্ব শর্ত-০২\\


আল্লাহর হুকুমে ইউনুস আলাইহিস স্বলাতু আসসালাম সেই বিরাটাকার মাছের পেট থেকে নদীতীরে নিক্ষিপ্ত হন। যেহেতু তিনি মাছের পেটে ছিলেন, সেহেতু স্বাভাবিকভাবেই তিনি রুগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। ঐ অবস্থায় যেখানে তিনি নিক্ষিপ্ত হয়েছেন, সেখানটায় ছিলো না কোনো তরুলতা। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে—
অতঃপর আমি তাকে নিক্ষিপ্ত করলাম এক তৃণহীন প্রান্তরে, এবং সে ছিলো রুগ্ন। [ কুরআন-৩৭/১৪৫]

এরপর আল্লাহর রহমতে সেখানে একটি লাউ জাতীয় গাছের জন্ম হয়। তিনি সে গাছের পাতা খেয়েছিলেন, যা ছিলো প্রবল পুষ্টিসমৃদ্ধ।
ধীরে ধীরে তিনি সুস্থ সুস্থ হয়ে ওঠেন। আল্লাহর হুকুমে প্রত্যাবর্তন করেন নিজ কওমের নিকট। তারা তাঁকে পেয়ে ভীষণ খুশি হলো। তাঁর ওপর ঈমান আনলো। যার ফলে আল্লাহ তাঁর নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে দুনিয়াতে ধন্য করেন। এবং দুনিয়াকে বৈধভাবে ভোগ-বিলাসের সুযোগ দেন। পুনরায় শিরকী কর্মকাণ্ডে আবার লিপ্ত হলে তাদের পতন হয়।

আল্লাহর দুনিয়ায় এই জাতি-ই একমাত্র জাতি; যারা আজাব আসার পূর্বক্ষণে ঈমান আনে, এবং আল্লাহ রব্বুল আলামিন-ও তাদের সেই ঈমান এবং তাওবা কবুল করেন। এই বিষয়ে আল্লাহ সুবহানাহু ও’তাআলা বলেন—
“এমন কোনো দৃষ্টান্ত আছে কি যে, একটি জনবসতি চাক্ষুষ আজাব দেখে ঈমান এনেছে, আর সে ঈমান তাদের উপকারে আসছে? কেবল ইউনুসের কওম ব্যতীত। যখন তারা ঈমান আনলো, তখন আমরা তাদের উপর থেকে পার্থিব জীবনের অপমানজনক আজাব তুলে নিলাম এবং তাদেরকে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত জীবনোপকরণ ভোগ করার অবকাশ দিলাম” (আল-কুরআন- ১০/৯৮)।


এখানে একটা বিষয় খুব সুস্পষ্টভাবেই লক্ষণীয় যে, আল্লাহর নবি ইউনুস আলাইহিস সালাম এবং তাঁর জাতি; উভইয়েই কিন্তু আল্লাহর ক্ষমা আর মেহেরবানী পেয়ে ধন্য হয়েছেন। তাঁর জাতি নিজেদের অপরাধ উপলব্ধি করে, নিজেদের ভুল বুঝে, আল্লাহ এবং তাঁর নবির আদেশ লঙণ করার অন্যায়ের অনলে দগ্ধ হলো তাদের নিজেদের বিবেক। তাই তারা ভীতকম্পিত কণ্ঠে খাঁটি দিলে আল্লাহর নিকট তাওবা করলে আল্লাহ তাদের ক্ষমা করেন। মুক্তি দেন। এবং ইউনুস ইবনে মাত্তা আলাইহিস সালামও আল্লাহর আদেশের পূর্বে নিজ কওমকে ছেড়ে চলে যাবার ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে কাতর স্বরে কায়মনোবাক্যে ক্ষমা চান। নিজে নিজের ওপরই জুলুম করেছেন বলে রব্বের দরবারে স্বীকৃতি দেন। কাকুতি-মিনতি করেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁকেও তাঁর অপার করুণায় ক্ষমা করেন। তিনি শুধু একটি ভুল করেছেন। আর সেই ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে কী অপরিসীম বিনয়সহ তাওবা করেছেন যার কারণে পবিত্র কালামুল্লাহতেও বিষয়টার আলোকপাত হয়েছে। আল্লাহর কাছে তাঁর তাওবার বাক্যটি এতো অধিক-ই পছন্দ হয়েছে যে, সে-জন্য এই বাক্য পড়ে যদি কেউ তাওবা করে আল্লাহ তার তাওবা কবুল করবেন। কবুল করবেন তার প্রতিটি নেক দু’আ। আর ইউনুস আলাইহিস সালামের এই দু’আ বিশ্বের সকল বিশ্বাসী বান্দার নিকট দু’আয়ে ইউনুস নামে পরিচিত। আল্লাহর রাসুল মুহাম্মাদ স্বল্লালাহু আলাইহি ও’সাল্লাম বলেন—
‘বিপদগ্রস্ত কোন মুসলমান যদি (নেক লক্ষ্য হাসিলের নিমিত্তে) উক্ত দু‘আ পাঠ করে, তবে আল্লাহ তা কবুল করেন’।[তিরমিযী হা/৩৭৫২]

আমরাও তো ভুল করি। অন্যায় করি। হররোজ আল্লাহর আদেশের অবাধ্যতা করি। আমরাও যদি এভাবেই ভুলের স্বীকৃতি দিয়ে আল্লাহর কাছে কাছে ক্ষমা চাই, অপরাধ হতে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করি; তা হলে আমাদের আল্লাহ আমাদেরকে অবশ্যই ক্ষমা করবেন। তবে শর্ত হলো আমরা আল্লাহর আদেশ ডিঙ্গিয়ে, তাঁর হুকুম লঙ্ঘন করে নিজেদের ওপর যে জুলুমের জোয়াল চাপিয়েছি —সেটার স্বকৃতি দিয়ে ,নফসের ওপর জুলুমের যেই জোয়াল পরেছি ; তা খুলে ফেলে দিয়ে, পাপ থেকে চিরতরে মুখ ফিরিয়ে নেবার সু-দৃঢ় প্রতিজ্ঞা খাঁটি দিলে আল্লাহর কাছে তাওবা করতে হবে। পবিত্র কুরআনুল কারিমের ভাষায় তাওবাতুন নাসুহা তথা তাওবার মতো তাওবা—খাঁটি তাওবা করতে হবে। এই তাওবার ফলাফল কী? তা আল্লহ রব্বুল আলামিন নিজেই বর্ণনা করেছেন তাঁর কালামে পাকে। আল্লাহ পাক বলেন—
“ হে মুমিনগণ ! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কার—প্রকৃত তাওবা; সম্ভবত তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করে দেবেন এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত”। [আল কুরআন-৬৬/৮]

এছাড়াও আরো একটা বিষয় হলো আমরা তো নানাবিধ বিপদ-আপদে নিপতিত হই-ই। নিত্যদিন-ই কোনো না কোনো বিপদের বিমান আমাদের ওপর ক্রাশ হয়। আমরা সেই বিপদ থেকে উদ্ধার হতে আল্লাহর দরবারে দু’আয়ে ইউনুস পড়ে দু’আ করতে পারি। ইন শা আল্লাহ আমাদের কবুল করে তাঁর রহমতের কোলে আশ্রয় দান করবেন।


\ \জুলুমের স্বীকৃতি—ক্ষমা পাবার পূর্ব শর্ত-০২\\
~রেদওয়ান রাওয়াহা
২৯। ০৬। ২১ ইং

পঠিত : ৩৫৮ বার

মন্তব্য: ০