Alapon

নাস্তিকতা রোধে করণীয় :



নাস্তিকতা রোধে করণীয় :-
--------------------------------------------

যেখানে আলো আছে সেখানেই আসবে আঁধার। আলোর উপস্থিতিতেই আঁধার টুটে যায়, যাবে। সত্য-মিথ্যার দ্বন্ধ-সংঘাত অনিবার্য। এই সংঘাত চিরস্থায়ী। তাই বিশ্বাসী মানুষের সাথে আল্লাহ দ্রোহীদের চিরায়ত সংগ্রামের সমাপ্তি পশ্চিমাকাশে সূর্যোদয় হওয়া অবধি চলতে থাকবেই। এটাই বাস্তবতা। তবে মোটের ওপর উপরের আলোচনায় সমস্যাগুলোর পাশাপাশি করণীয় তথা সমাধানের ইঙ্গিতও করা হয়েছে। এখানে কয়েকটা পয়েন্ট তুলে ধরবো শুধু। ইন শা আল্লাহ!

⛔ প্রথমত এই নাস্তিকতার বিষবৃক্ষ আর যেনো আমাদের তরুণ-তরুণীদের ওপর ডালপালা না মেলে সেজন্যে যা করতে হবে, তা হলো গণহারে ইসলামের দাওয়াত সুন্দর-যুক্তিগ্রাহ্য পন্থায় তুলে ধরতে হবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা আমাদের এটাই বলেছেন আলকুরআনে [০১]। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লামও বলেছেন যে, তাঁর পক্ষ থেকে দ্বীনের একটি বাণী হলেও অপরের নিকট পৌঁছে দিতে [০২]। ইসলামের শিক্ষা সঠিকভাবে পৌঁছালে নাস্তিক- ধর্মবিদ্বেষীদের ভুল ব্যাখ্যা, অপপ্রচার রোধ করা সম্ভব হবে। আমরা আলো নিয়ে এগোলে আঁধার টুটবেই। ইন শা আল্লাহ!

⛔দ্বিতীয়ত হলো জ্ঞানার্জন, ইসলামের বিধিবিধান সমূহ জানতে এবং মানতে চেষ্টা করা। মূলত জানলেই মানার স্পীড জাগে। আমাদের প্রতিটি মুসলিমের জন্য জানা ফরজ [০৩]। রাসুলে করিম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সীরাহ পড়লে, ইসলাম ঠিকঠাক ভাবে জানলেই নাস্তিকতার কোমর ভেঙে যাবে।

⛔তৃতীয়ত হলো গিয়ে ইসলামপন্থীদের পারস্পরিক দূরত্ব, দ্বন্দ্ব-সংঘাত ঝেটিয়ে বিদেয় করে দিতে হবে। পারতপক্ষে কমিয়ে আনা। একাডেমিকলি যেসব বিষয় আলোচনার মতো সেগুলো পাবলিক প্লেসে না আনা। ছোটো খাটো বিবেদ মতবিরোধ সমূহকে উস্কে না দেয়া। সামনে না আনা। যেমন রাফঊল ইয়াদাঈন, জোরে আমীন আস্তে আমীন, সুরা ফাতিহা পড়বো কী পড়বো না ইমামের পেছনে --এই ধাঁচের যা আছে সব।

⛔চতুর্থত হলো গিয়ে উলামায়ে কেরামকে গণমানুষের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসা। সুখে-দুঃখে পাশে থাকা। তারুণ্যের সমস্যা-সমাধান নিয়ে এবং তাদের উপযোগী কথাবার্তা বলা। তেমন কাজবাজ হাতে নেয়া। ইসলামপন্থীদেরও যুবকদের ব্যাকারত্বের সমস্যা, তরুণদের ক্যারিয়ার গাইডলাইন দেয়া। তরুণরা যেনো আলিমদের কাছে আসতে পারে, কাছে আসে সে মেজাজ অর্জন করা। সহজ করে ফুটিয়ে তোলা। কাঠিন্য পরিহার করা।

⛔ পঞ্চম হলো পশ্চিমা চিন্তা ও তাদের সভ্যতার অসারতা ফুটিয়ে তোলা। তাদের ভন্ডামিপূর্ণ চিন্তা- দর্শনে পাল্টা আঘাত করা। যেমন তারা নারী স্বাধীনতার কথা বলে। কিন্তু আসোলেই কি তারা নারীদের স্বাধীন করে নাকি পরাধীনতার শেকলে আবদ্ধ্য করে? যেমন একটা গাড়ি বিক্রয় হবে। নামি-দামি ব্র্যান্ডের। তো সেখানে গাড়ির পাশেই একজন অর্ধলোঙ্গ নারীকে রাখতেই হবে কেনো? তার সৌন্দর্য প্রদর্শন করে গাড়ির বিজ্ঞাপন করতে হবে কেনো? এটা কি নারীকে স্রেফ একটা পন্যসামগ্রিই করে তুলছে না? আই পি এল/ বিপিএল সহ নানাবিধ খেলা হবে, সেখানে খেলার মাঝে কেনো নারীর নগ্ন-অর্ধনগ্ন দেহ প্রদর্শনী করতে হবে? সেই নগ্ন নারীদের দ্বারা কেনো নাচাতে হবে? মানুষের চোখ রঞ্জন করতে হবে কেনো নারী দেহ দ্বারা? এটা কী করে নারী স্বাধীনতা হলো? নাকি নারীর সম্মান, ইজ্জত আব্রুকে শিকেয়তোলা হলো? এটা তো তাঁর শরীরকে স্রেফ বিনোদনের বিষয় করা হলো

সেক্যুলার আইনে দেশ চালানো, শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালনা করাটা, সে আইন অমান্য করলে শাস্তির দাবি তোলা, শাস্তি দেয়াটা সেক্যুলারন্ধ হয় না, কিন্তু যখনই কেউ ইসলামি আইন-শৃঙ্খলা, ইসলামি শিক্ষা-সমাজ ব্যবস্থার দাবি তোলে তখন বলা হয় ধর্মান্ধ। নাস্তিক-সেক্যুলারদের দাবি হলো তারা সবার চাহিদা সবার দাবির প্রতি শ্রদ্ধাশীল, তো যখন ইসলামি আন্দোলন ইসলামি জীবন বিধান, ইসলামি যুদ্ধনীতি, জিহাদ নিয়ে দাবি তোলা হবে, মতামত তৈরি করা হবে তখন মৌলবাদী উগ্রবাদী ইত্যাদি নানারকম অদ্ভুত কিসিমে’র কথাবার্তা বলা হয় । এভাবেই হাজারো বিষয় আছে যে, সেগুলোতে এমন করে তাদের ভন্ডামি চটুলতা তাদের জীবনবোধের অসরতা তুলে ধরে সাথে সেটার ভিত্তি মূলে আঘাত হানতে হবে। তবে আগে পূর্ণরূপে কুরআন হাদিস ফিকাহ নিয়ে মোটামুটি জানাশোনা, গভীর পড়াশোনা দরকার। তাহলে গিয়ে তারা মানে নাস্তিকতা ধর্মবিরোধিতা সেক্যুলারিজম, সোশ্যালিজম হালে পানি পাবে না। নিজেকে রক্ষায় ব্যতিবস্ত হয়ে পড়লে নাস্তিকতা প্রচারের সুযোগ কোথায়?

⛔ষষ্ঠতম হলো যে বিজ্ঞানের দোহাই দিয়ে নাস্তিকতা, ধর্মবিরোধিতা করা হয়, সে বিজ্ঞান একাডেমি আর তাদের হর্তাকর্তাদের স্বরূপ তুলে ধরা, তাদের জালিয়াতি, তাদের একপেশে চিন্তাভাবনা তাদের ভন্ডামিপূর্ণ চিত্র তুলে ধরা। তারা তাদের প্রকাশিত কোনো গবেষণাপত্রে ভুল হলেও তা এড়িয়ে যায়। পুনরায় খতিয়ে দেখার প্রয়োজনবোধ করে না --দেখে না। [০৪] এবং আবেগী পোলাপানদের যখন ধ্রুব সত্য হিশেবে বিজ্ঞানকে উপস্থাপন করা হয়, তারা যখন দেখে কিছু থিউরি ইসলামের সাথে কন্ট্রাডিক্ট তখন তারা আবেগের বশে নাস্তিক হয়ে যায়। ইসলাম বিরোধী হয়ে ওঠে। কিন্তু দ্বীন-ধর্ম বিরোধী সেই বিবর্তনবাদীরা-ই অকপটে স্বীকার করে যে বৈজ্ঞানিক সত্য কখনো চূড়ান্ত নয়। আজ যা সাইন্টিফিক ফ্যাক্ট তা ক'দিন পরে বাতিলও হতে পারে [০৫]।

এই যে এমন আরো বিষয়াদি আছে বিজ্ঞানের, সোজা কথায় সে বিষয় দিয়ে মানে সাইন্স দিয়ে সাইন্সকেই রেপ করা যায়। যেখানে ইসলাম-বিজ্ঞান হলো একে অপরের পরিপূরক সেখানে পশ্চিমা দুনিয়ার কথিত বিজ্ঞানের ধারকবাহক আর আমাদের বঙ্গীয় কথিত বিজ্ঞান মনস্করা দুটো জিনিশকে পরস্পর মুখোমুখি দাঁড় করাচ্ছে। তো সে জন্য বিজ্ঞানই যে ধ্রুব নয় সেটা বুঝাতেই তাদের বিভিন্ন পরস্পর বিপরীতমুখী বিষয়াদিগুলো সামনে তুলে তাদেরকে বুঝিয়ে দিতে হবে এবং সর্বস্তরে এই বিষয়গুলো জানানো উচিত। যেনো বিজ্ঞান বলেই ঈমান আনলাম এমন না হয়। আর সে কারণে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কিছু আলিমদেরকে বিজ্ঞান-দর্শন নিয়েও পড়াশোনা ও সেসবের ওপর জ্ঞানের গভীরতা অর্জন করা উচিত। সেটা যদি এমন হতো যে জেনারেল ছাত্ররা ইসলামের মৌলিক বিষয়াবলি জানার মতো পরিবেশ আর মাদ্রাসার ছাত্রদের মিনিমাম বিজ্ঞান জানাশোনার ব্যবস্থা করা যেতো তাহলে গিয়ে বিষয়টা দারুণ কাজে লাগতো। নাস্তিকতার বিষবাষ্প কম ছড়াতো তরুণদের মাঝে। আমাদের মাঝে। আমাদের সমাজে। মুসলমানদের ঘরে।

⛔ সপ্তম যে বিষয়টা বলবো তা হলো বয়ানের ইসলামকে বাস্তবের ইসলামে (আমলে) রূপান্তর করা। নিজেই আগে আমল করা। নিজে না আমল করে বয়ান দেয়া, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার অপছন্দও তা-ই [০৫]। কথায় কাজে দা'ঈদের অমিল দেখেও অনেকেই দ্বীন থেকে দূরে সরে যায়। কারণ সবার ঈমান আমান তো আর সমান না।

⛔ এই পয়েন্টে যা বলবো তা হলো যে, ইসলামপন্থীদের সমাজের সর্বস্তরে একটা প্রভাব তৈরি করা। নেতৃত্ব কর্তৃত্ব করা। যেনো কোনো নাস্তিক প্রফেসর, মোটিভেশনাল স্পীকারের কিংবা সাহিত্যিকদের দিকেই হুমড়ি খেয়ে না পড়ে তরুণ-তরুণীরা। আবার যে মিডিয়ার মাধ্যমে রাতকে দিন দিনকে রাত করা হয়, এবং সেটার মাধ্যমে ইসলাম এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কেউ কৌশলে কেউ প্রকাশ্যে ঘৃণা বিদ্বেষ ছড়ায়, বিরোধিতা করে। এরপর ধীরে ধীরে এই সবকে প্রমাণ হিশেবে কাজে লাগিয়ে পুরোদমে নাস্তিকরা তাদের( মুসলীম ঘরের তরুণদের) ঈমানী ইমারাতের ধ্বস নামিয়ে আল্লাহ দ্রোহী নাস্তিক বানিয়ে দেয়। তাই ইসলামের অনুসারীদের উচিত সত্য প্রচার-প্রকাশ করার জন্য নিজস্ব অসংখ্য প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া, সাংবাদিক-সাহিত্যিক-চিন্তক তৈরি করা। অন্ততপক্ষে তাদের মাঝে ইসলাম ও ইসলামি জীবন-বিধানের প্রতি নমনীয়, ইসলামের হিতাকাঙ্খী, ইসলামের প্রতি দরদী, ধর্মবিরোধীদের প্রতি সজাগ সচেতনতা সৃষ্টি করা। এককথায় সবদিকেই লোক তৈরি করা, দাওয়াতি কাজ করা। তাহলে নাস্তিকতা, ধর্মবিরোধিতা হালে পানি পাবে না। ইন শা
আল্লাহ!

⛔ শেষে একটা বাস্তব গল্প দিয়ে লেখার পয়েন্টগুলো শেষ করছি। তা হলো এই, সাবিত ( ছদ্মনাম) ঢাকা সিটি কলেজের ছাত্র। ঢাকার সামছুল হক খান স্কুলে পড়তো আগে। সেখানের এক মেয়েকে ভালো লেগেছে। তার সাথে প্রেম করার জন্যে আল্লাহর কাছে দু'য়া করেছে। অনেক সাধনার পর এসএসসি পরীক্ষার কিছুদিন আগে রিলেশন হলো। তো যখন কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে উঠলো, তখন পরিবার জানার পর বাঁধ সেধে বসলো। ফলাফল তাদের রিলেশন ভেঙে গেলো। আর সে হতাশা থেকে ধীরেধীরে মুরতাদ এখন।

তো এই গল্প দিয়ে যা বুঝাতে চেয়েছি তা হলো ---ইসলামি জ্ঞান তার কতো নিচু লেভেলের হলে সে হারাম সম্পর্কের (প্রেমের জন্য) আল্লাহর কাছে চাইতে পারে! অথচ সে শহরের সেরা একটা প্রতিষ্ঠানে পড়ে। যেখানে ইসলামের ন্যূনতম শিক্ষাটা পর্যন্ত পাচ্ছে না। পরিবারে যতোটুকুন ইসলাম আছে তা-ও সে ব্যস্ত জীবনের ক্যারিয়ার গড়ার মন্ত্রে ডুবে পরে শিখতে পারে নি, শিখে নি। আমার সাথে যে কোনো কারণেই হোক পরিচয় হলো বিধায় আমি বললাম বিয়ে করে নাও, বাসায় বলে। অথচ বাসায় বলেছে, তারা মানবে না। মানে নি। এখন তারা যদি বিয়েটা সহজ করতো তাহলে হারাম রিলেশন থাকতো না, আবার সে যদি ইসলামের শিক্ষাটা পেতো তাহলে সে এই হারামের জন্য এমনটাও করতো না। আমরা ইসলামের কোনো শিক্ষাটাই কাজে লাগাই না। এটাও একটা বাস্তব প্রমাণ। এভাবে কিন্তু অনেক পোলাপান প্রেমে ব্যর্থ হলে পরীক্ষায় খারাপ হলে পরে আত্মহত্যা, ঈমান হত্যা করার অসংখ্য নযীর আছে।

শেষ পর্যায়ে যা বলতে চাই, সেটা হলো আমি নিজেও সংশয়ের আবর্তে ঈমান হারা হবার যোগাড় হয়েছে ১৭ সালের শেষ দিকে , এবং ১৮ সালের বিরাট একটা অংশজুড়ে ছিলো তা । টুকটাক ইসলাম সম্পর্কে কিছু জানতে চাই বলে আজো ঈমানের ওপর কিঞ্চিৎ হলেও অবশিষ্ট আছি। কিন্তু আমার পরিচিত এবং আমার খুব নিকটতম এক ভাই হারিয়ে গেছে, যে আজো ফিরে নি। তো আমি তার মাঝে নাস্তিক হবার যে কারণগুলো পেয়েছি এবং আমি নিজের জীবনে যা মোকাবিলা করলাম সেগুলোর আলোকে কিছু লেখতে চেষ্টা করেছি। আর হ্যাঁ আরো বেশি জানা বা অভিজ্ঞতার জন্য এমন কিছু তরুণ ভাইদের সাথে মেসেঞ্জারে চ্যাট করেছি যারা বিষয়টা কিছুটা হলেও মোকাবিলা করেছে। আল্লাহ আমাদের ঈমানকে হেফাজত করুন। আমীন!

|| নাস্তিকতা রোধে করণীয় ||
-রেদওয়ান রাওয়াহা
২৭.০৭.২০

রেফারেন্স
-----------------
[০১] আল-কুরআন-১৬/১২৫
[০২]সহীহ্ বুখারী : হাদিস নং-৩২৭৪
[০৩] ইবনু মাজাহ হা/২২৪
[০৪] হোমোস্যাপিয়েন্স: ডাঃ রাফান আহমেদ-পৃষ্ঠা নং-৫৫
[০৫] হোমোস্যাপিয়েন্স: ডাঃ রাফান আহমেদ-পৃষ্ঠা নং-৫৬
[০৬] আল-কুরআন-৬১/০৩।
[০৭] এই লেখা আরো যেসব বই হতে অনুপ্রাণিত হয়ে লেখেছি। তা হলো:- চিন্তাপরাধ -আসিফ আদনান, ডাবল স্টান্ডার্ড-০২ - ডাঃ শামসুল আরেফিন শক্তি, ইসলাম ও পাশ্চাত্য সভ্যতার দ্বন্ধ- সাঈয়িদ আবুল আ'লা মওদূদী রহঃ।

পঠিত : ৫৪২ বার

মন্তব্য: ০