Alapon

মরতে যখন হবেই, গরু গোশত খেয়েই মরি! (রম্য রচনা)



গতমাসের কোনো এক সোমবার ছিলো অফিসের মাওলানা সাহেবের বিবাহ! সকাল সকাল মাওলানা সাহেবের বাড়িতে চলে গেলাম। মাওলানা সাহেব আগেই বলে দিয়েছিলেন, ‘সকালে আমার বাড়িতে নাস্তা করবেন।’

সেই কথামত আমরা সকাল সকাল পৌঁছাই গেলাম। হাত-টাত ধুঁয়ে মুখে পানি দিতে দিতে মাওলানা সাহেব গরম গরম ভাত নিয়ে আসলেন। ভাতের সাথে নিয়ে আসলেন কয়েক পদের শুটকি ভর্তা আর শুটকি মাছের ভুনা। বিসমিল্লাহ পড়ে একটা ভর্তা দিয়ে খাওয়া শুরু করলাম। তারপর একে একে ৫ পদের শুটকি ভর্তা খাইলাম। খাওয়ার একদম শেষের দিকে শুটকি মাছের ভুনাটা নিলাম। মুখে দেওয়ার সাথে সাথেই বুঝে গেলাম, এই জিনিস ইউনিক! এমন টেস্টি শুকটি ভুনা আমি আর কখনোই খাইনি। ভর্তা দিয়েই এক প্লেট ভাত খেয়ে ফেলেছি। এখন বিরাট আফসোস হচ্ছে! আহারে, ভর্তা না খেয়ে যদি শুধু ভুনাটা দিয়েই খেতাম।

খালি প্লেট নিয়ে কয়েক মুহুর্ত ভেবে সিদ্ধান্ত নিলাম, শুটকির এই ভুনা দিয়ে আমাকে আরও এক প্লেট ভাত খাইতে হবে! আল্লাহর নাম নিয়া শুরু করলাম। এক প্লেট শেষ করার পর মনে হলো আরও খাই। কিন্তু পেটে তো আর সয় না। তারপর খানিকটা শুটকি ভুনা প্লেটে নিয়ে খাইলাম। আহ! সেই স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে।

তারপর যোহরের নামাজ পড়ে বরের সাথে বিয়ে বাড়িতে গেলাম। বিয়ে বাড়িতে হাফপ্লেট পোলাও নিলাম, একটা চিকেন ফ্রাই নিলাম, আর গরু গোশত নিলাম। এরপর আবার গরু গোশত নিলাম। মোটামুটি গরু দিয়েই ভোজনটা শেষ করলাম। আর রান্নাটাও বেশ দারুণ হয়েছিল।

রাতের বেলা বাসায় ফিরে দেখি, ভাইয়া গরু গোশত রান্না করেছে। গরু গোশত দেখে যদিও চোখ জ্বল জ্বল করে উঠল, কিন্তু মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম খাবো না। কিন্তু ভাইয়া বলল, ঠিক আছে, বেশি খাইতে হবে না। আমার সাথে বসে অল্প খাও! কিন্তু গরু তো আর অল্প খাওয়ার জিনিস না। ভরপেট খেয়ে নিলাম!

পরের দিন বাংলাবাজার গেলাম। আবু সুফিয়ান ভাই বললেন, ‘দুপুরে আপনার গরু গোশতের দাওয়াত। কোনো আপত্তি?’
আমি হারেরেরে রব তুলে বললাম, ‘গরু গোশতে আপত্তি করবে কোন বেকুবে!’
দুপুরবেলা আবার ভরপেট গরু গোশত খেয়ে নিলাম।

রাতে বাসায় ফিরে দেখি ফ্রিজে গত রাতের রান্না করা গরু গোশত আছে। নতুন করে আর রান্নার ঝামেলায় না গিয়ে সেগুলো গরম করে দুই ভাই খেয়ে নিলাম। পরেরদিন অফিস শেষে বাসায় ফিরে দেখি, ভাইয়া আবার গরু গোশত রান্না করতেছে। দু’ভাই মিলে রান্না করে আল্লাহর নাম নিয়ে খেয়ে নিলাম।

শুক্রবার সকালবেলা জানতে পারলাম, আমাদের সেই নববিবাহিত মাওলানা সাহেবের বাড়িতে দুপুরে দাওয়াত আছে। আর ঠিক তখনই মাওলানার বাড়ির খাবারের টেস্ট মনে পড়ে গেলো। মনে পড়া মাত্রই ‍মুখটা জলে ভরে গেলো! যাইহোক, এই দাওয়াত কোনোক্রমেই মিস করা যাবে না।

দুপুরবেলা মাওলানা সাহেবের বাড়িতে চলে গেলাম। মাওলানা সাহেব আমাদের জন্য গরু, মুরগী, মাছ ভাজা, শুটকি ভর্তা, শুটকি ভুনা সবই করলেন। কিন্তু আমি শুধু গরু আর শুটকি ভুনাটা খেলাম। আহ! গোশতের টুকরো মুখে দেওয়ার সাথে সাথে মনে হলো যেন মাখন! এমন রান্না সচরাচর খুব একটা দেখা যায় না। রান্নায় মুগ্ধ হয়ে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত খেয়ে ফেললাম। তারপর টানটান হয়ে শুয়ে পড়লাম। যখন চোখ দুটো বন্ধ করলাম তখন মনে পড়লো, রাতে তো ভাবির বাসায় দাওয়াত আছে। আজ না গেলে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে যাবে।

তারপর রাতের দাওয়াতে এটেন্ড করার জন্য খিলগাঁয়ের পথ ধরলাম। ভাবির বাসায় গিয়ে দেখি তিনি এলাহী কাণ্ড ঘটিয়েছেন। আমার পছন্দের ভুনা খিচুড়ি রান্না করেছেন, আবার তেহেরিও রান্না করেছেন। দুটোই বেশ তৃপ্তি নিয়ে, মজা নিয়ে খেলাম। এবারও বোধহয় খানিকটা বেশিই খেয়ে ফেললাম। ভুনা খিচুড়িটা ছিলো মনে রাখার মতো! ভাবির বাসা থেকে ফেরার সময় তিনি আমার হাতে তিনটা বাটি ধরিয়ে দিলেন। একটা বাটিতে ভুনা খিচুড়ি, একটা বাটিতে তেহেরি, আর একটাতে গরু গোশত। বাটি ধরিয়ে দিয়ে বললেন, ‘রাতে যদি ক্ষুধা লাগে তখন খাবেন!’

দুপুরবেলা সাধারণত অফিসেই খাওয়া হয়। রাতের বেলা ফিরে ভাবির দেওয়া খাবারগুলো গরম করে গরুর গোশত দিয়ে খেয়ে নিলাম।

পরেরদিন সকাল থেকেই একটু ঘাড় ব্যথা করছিলো। শরীরটা কেমন কেমন যেন লাগছিলো। বেলা ১ টার সময় অফিসে ফিট লেগে পড়ে গেলাম!

তারপর আমাকে ধরাধরি করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। ডাক্তার প্রেশার মেপে কপাল কুঁচকে বললেন, ‘প্রেশার এতো হাই কেন? ১৫০/১০০। এই বয়সে এতো প্রেশার হওয়া ভালো না!’

ওষুধ খেলাম আর সপ্তাহখানেক গোশত খাওয়া বন্ধ রাখলাম। গতকাল থেকে আবার শুরু করেছি! আলহামদুলিল্লাহ। দুপুর আর রাতে ভরপেট গরু গোশত খেলাম। আজকে রাতেও হয়তো গরু গোশতই খাওয়া হবে।

মরতে তো হবেই। গরু না খেয়ে মরার মাঝে কোনো সুখ নেই। বরং গরু গোশত খেতে খেতে মরার মাঝে একটা আভিজাত্য আছে!

পঠিত : ৭৫২ বার

মন্তব্য: ১

২০২১-১২-০৭ ২২:২০

User
আবু আহনাফ

ভাই রে ভাই, পারেনও বটে আপনি। আমাদের মতো ক্ষীণকায়দের ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য পারলে একটু দোয়া কইরেন।

submit