Alapon

টিনএজার এবং সমকামিতা



[১]
বয়সটা সবে ৭। দুরন্ত বাল্যকাল। গ্রামের আর ১০ টা বালকের মতোই আমার দিন কাটতো ছোটাছুটি, খেলাধুলা সাথে একটু আধটু শাসনের মধ্য দিয়ে। আমার আর আমার বন্ধুদের জ্বালায় পুরো গ্রাম অতিষ্ট। কারো গাছে বরই পেকেছে, কোথায় আতা পেকেছে, কোন গাছের খেঁজুর বেশি মিষ্টি, কোথাকার তেঁতুল গাছ থেকে তেঁতুল পাড়লে ধরা পড়ার সম্ভাবনা কম, কোন গাছের তালের শাস খাওয়ার উপযোগী, কার বাগানে কাঁচামিঠা আম পাওয়া যাবে এসব ছিলো আমাদের নখদর্পণে। অত ছোট বয়সে ধর্মকর্মে তেমন জ্ঞান না থাকলেও ঝরঝরিয়ে কুরআন পড়তে পারতাম। ছোট ছিলাম বলে মা বাবাও ধর্মকর্মে তেমন জোর করতেন না। কিন্তু শুক্রবার ছিলো ইদের দিনের মতো। আজানের আগেই সব বন্ধুরা মসজিদে চলে আসতাম, যদিও আমাদের একসাথে দেখলে মুরুব্বিরা খুব বিরক্ত হতেন।

[২]

ছোটবেলা থেকে আমি খুবই নাদুসনুদুস হওয়ায় সকলে আদর করতে পছন্দ করত। আম্মুর সাথে স্কুলে গেলে বড়ো ভাই/আপুদের কোলে কোলেই কাটিয়ে দিতাম।
হঠাৎই একদিন আমার জীবনের কাল হয়ে আসে আমার এক কাজিন। তখন ব্যাড টাচ সম্পর্কে কোনো আইডিয়া ছিলো না। মা-বাবাও কখনো আমাদের শেখাননি এগুলো। সেই কাজিনের খারাপ উদ্দেশ্য বুঝে ওঠার আগেই তার দ্বারা নির্যাতিত হই। ভয়ে মা-বাবাকেও কিছু বলতে পারিনি, কারণ তারা আমার কোনো কথাই বিশ্বাস করতেন না। শক্তি সামর্থ্যে কম হওয়ায় প্রায় দ্বিগুণ বয়সী কাজিনকে বাঁধা দিতে পারতাম না। বাঁধা দিতে গেলে আরোও রাফ বিহেভ কর‍ত, বেশি কষ্ট দিতো। তাই মুখ বুঝে সহ্য করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলোনা। কিন্তু এভাবে আর কতদিন চলে? সবসময় এড়িয়ে চলতাম ওকে। এভাবে ২-৩ বছর কেটে গেলো। পিইসি শেষে শহরের হোস্টেলে চলে আসি। ৫-৬ বছর কেটে গেছে। বছরান্তে সেই ভাইয়ের সাথে দেখা হলেও সৌজন্যতার আলাপ হয় কখনো সেটাও এড়িয়ে চলি। আল্লাহর প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতা, তিনি আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন।

[৩]

উপরের ঘটনাটা কাল্পনিক। তবে সত্য হতে কতক্ষণ? প্রতিমুহূর্তে দেশেবিদেশে হাজার হাজার বালক নির্যাতিত হচ্ছে। বেশিরভাগই প্রতিবাদ করতে পারেনা, ভয়ে, লজ্জায়, ঘৃণায়।
অনেকেই হয়ত সৃষ্টিকর্তার অসীম কৃপায় বেঁচে ফিরে। আর বেশিরভাগই জড়িয়ে পড়ে এই বিকৃত অজাচারে যা তরুণপ্রজন্মের মধ্যে সমকামিতার বিস্তৃতি লাভের অন্যতম কারণ।

[৪]

বর্তমানে কিশোরদের একটা বড়ো অংশ জড়িয়ে পড়ছে সমকামিতায়। আকাশ সংস্কৃতির কুপ্রভাব তাদের দৈনন্দিন জীবনকে বাজে ভাবে প্রতিহত করছে। ফলে সুস্থ্য জীবন থেকে দূরে সরে যাচ্ছে হাজারো সম্ভাবনাময় কিশোর! তবে আকাশ সংস্কৃতি কিংবা পশ্চিমা অপসংস্কৃতি যাই হোক না কেন, ম্যাক্সিমাম কিশোরদের ক্ষেত্রেই ঘনিষ্ট কারো দ্বারা নির্যাতিত হওয়াই সমকামিতার দিকে টেনে আনছে। আর সেই ভিত মজবুত করতে ভূমিকা রাখছে আকাশ সংস্কৃতি।

[৫]

আবার এর ফায়দা লুটতে উন্মুখ হয়ে বসে আছে একদল লোক। কোনো একটা টিভি চ্যানেলের ইউটিউব চ্যানেলে দেখলাম [সঠিক মনে নেই, মাসখানেক আগের কথা] একদল লোক ফেসবুকে বিভিন্ন গে গ্রুপ/পেজ খুলে ব্যবসা শুরু করছে। বিকৃত মস্তিষ্কের কিশোররা (অনেক বয়স্কও) সেই ফাঁদে পা দিয়ে কিডন্যাপড হচ্ছে, ছাড়ানোর জন্য দিতে হচ্ছে লাখ লাখ টাকার মুক্তিপণ। এরকম একটা সংঘ ধরা পড়লেও টিকে আছে শত শত সংঘবদ্ধ চক্রান্তকারী। দেশের বড়ো শহরগুলোতে তারা বেশি এ্যাক্টিভ। যেমন: ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ইত্যাদি।

[৬]

অনেক তো বললাম কিশোরদের কথা। তাহলে কিশোররা কাদের দ্বারা নির্যাতিত হচ্ছে?
এম্নিতে আমি ফেসবুকে তেমন এ্যাক্টিভ না হলেও এই ছুটিতে বেশ সময় দিয়েছি। এর মাঝে বেশ কয়েকজন সমকামিকে সঠিক পথে ফেরাতে সক্ষম হয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ। কিছুদিন আগে এক ভাইয়ের সাথে কথা হয়েছিলো। ভালো চাকরি নেই বলে তিনি বিয়ে করতে পারছেন না। সেজন্যই তিনি সমকামিতায় জড়িয়ে পড়েছেন। সঠিক পথ দেখানোর চেষ্টা করেছিলাম, তবে তিনি ফিরতে আগ্রহী নন। তাই সেখানেই আলাপ শেষ করে দিয়েছি।
মূলত এই বয়সী (২৫-৩২) অবিবাহিত কাজিনদের দ্বারা টিন এজাররা বেশি পরিমাণ নির্যাতিত হয়ে থাকে। যে কয়জন ভাইয়ের জীবনের গল্প শুনেছি এবং ঘাটাঘাটি করে যা কিছু জেনেছি তাতে এই বয়সী কাজিনদের দ্বারা অল্প বয়সে নির্যাতন তাদেরকে এই বিকৃত পথে নিয়ে গিয়েছে।

[৭]

সমস্যা তো অনেক হলো! তাহলে সমাধান কী? স্কুলে পাঠানোর আগে আপনার সন্তানকে খারাপ এবং ভালো টাচ সম্পর্কে জানান। এবং ব্যাড টাচের প্রতিবাদ করতে শেখান। আর সদ্য বালক সন্তানকে অন্তত দাঁড়ি-গোফ গজানোর আগ পর্যন্ত কোনো যুবকের সাথে রাতে/কিংবা একাকী রাখবেন না। সে যতই বিশ্বাসী কিংবা ঘনিষ্ট আত্মীয় হোক না কেন। নিজের সন্তানের সাথে সময় কাটান, চোখে চোখে রাখুন। সর্বোপরি, নিজের সন্তানের বন্ধু হোন। যাতে সে আপনার সাথে সব শেয়ার করার মতো সাহস লালন করতে পারে।

বি.দ্র: উপরের ঘটনা সম্পূর্ণ কাল্পনিক। আমার জীবনের সাথে বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই।

- Mohammad Imran

পঠিত : ৫৫৭ বার

মন্তব্য: ০