Alapon

মাওলানা সাইয়েদ মওদূদী (রহ.) ইসলামী অর্থ ব্যবস্থার মূলনীতি ও আমার চিন্তা



সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদূদী(রহ) এর 'ইসলামী অর্থ ব্যবস্থার মূলনীতি' পড়ছিলাম।বইতে মাওলানা মূলত চারটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন বিস্তারিত না কিন্তু ইসলামিক অর্থ ব্যবস্থা সম্পর্কে নূন্যতম ধারনা লাভ করার জন্য হলেও পড়া উচিত।

প্রশ্ন গুলো হলোঃ-

১/ইসলাম কি কোন অর্থনৈতিক বিধান রচনা করেছে?করে থাকলে তার খসড়া কি? ভূমি,শ্রম,পুঁজি ও সংগঠন খসড়ায় কি ধরনের মর্যাদা লাভ করেছে?


২/যাকাত ও সাদাকাহর অর্থ অর্থনৈতিক কল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্য ব্যয় করা যাবে?


৩/আমরা কি সুদবিহীন অর্থব্যবস্থা প্রবর্তন করতে পারি?


৪/ইসলামের দৃষ্টিতে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় ব্যবস্থাগুলোর কি ধরনের পারস্পরিক সম্পর্ক বিদ্যমান?



ছোট একটা বই মাত্র ২৪ পৃষ্ঠা কয়েক পৃষ্টা পড়া শুরু করার পর চিন্তার জগতে হারিয়ে যাই!প্রায়শই এমন হয় পড়ার চেয়ে চিন্তা বেশি করে পড়া বাকী থাকে, চিন্তাগুলোও হারিয়ে যায় সময়ের ব্যবধানে। তাই চিন্তাগুলো সবার মাঝে তুলে ধরার জন্য লিখতে বসলাম। ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করছি।


চিন্তার বিষয় হচ্ছে কেন্দ্রীয় যাকাত ও সাদাকাহ ফান্ডঃ

যাকাত ও সাদাকাহকে অর্থনৈতিক কল্যাণ ও উন্নয়নে ব্যবহার করা যায় কিনা? এর উত্তর হচ্ছে যাকাত ও সাদাকাহর মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে অর্থনৈতিক কল্যাণ সাধন করা।

এখন এখানে অর্থনৈতিক কল্যাণ সাধন বলতে একটি রাষ্ট্রের উন্নয়ন ও কল্যাণ বুঝানো হয়নি বরং মৌলিক মানবিক অধিকার বঞ্চিতদের কল্যান ও উন্নয়নকে বুঝানো হয়েছে এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের করনীয়-


সরকারের যাকাত ফান্ড এর মাধ্যমে দেশের ৬৪ জেলাতেই যাকাত সংগ্রহ করে, সরকারি বিধান অনুযায়ী সংগৃহীত অর্থের ৭০ শতাংশ সংশ্লিষ্ট জেলাতেই ব্যয় করা হয়। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এর যাকাত ফান্ডের মাধ্যমে ১৯৮২ সাল থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে নয় লাখ মানুষকে প্রায় ৩৫ কোটি টাকার যাকাত বণ্টণ করা হয়েছে।


কিন্তু এতে করে নূন্যতম মৌলিক চাহিদার পর্যায়ভুক্তঃ

১. খাদ্য
২. বস্ত্র
৩. বাসস্থান
৪. শিক্ষা ও
৫. চিকিৎসা।


সকল সুবিধা বঞ্চিত মানুষ মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শুধুমাত্র সরকারের যাকাত ফান্ড নয় ব্যক্তিপর্যায়েও যাকাত ও সাদাকাহ করা হয় কিন্তু যারা সুবিধা বঞ্চিত তাদের অবস্থান আগের মতই।তাই কার্যকর যাকাত ফান্ড ও সাদাকার ব্যবস্থাপনা কর‍তে পারলেই সুবিধা বঞ্চিত মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কল্যাণ সাধন করে দেশের সামগ্রিক অগ্রগতি সম্ভব।

তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি যাকাত ও সাদাকাহ ফান্ড একাউন্ট চালু করে তাতে দেশের সমগ্র ব্যাংক থেকে জমা ও উত্তলনের ব্যবস্থা করতে হবে। জমার ক্ষেত্রে যাকাতের শতাংশের উপর সরকার একটি নির্দিষ্ট পরিমান ধার্য্য করে দিবে। সরকারের কাছে সবার অর্থনৈতিক তথ্য রয়েছে বাকি অর্থ ব্যাক্তি তার পরিবার ও সমাজে দিতে পারে ইচ্ছে করলে।

সাদাকাহর বিষয়ে কোন ধার্য্য থাকবেনা যে কেউ চাইলেই এই ফান্ডে অর্থায়ন করতে পারবে।

এখন এই ফান্ড থেকে কারা টাকা উত্তোলন করবে? যারা মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত, মানুষের কাছে চাইতে পারেনা,অক্ষম কিংবা এতিম রয়েছে তারা।এক্ষেত্রে সরকার জরিপ করে ঐসব সুবিধা বঞ্চিতদের একটি করে পাসবই প্রদান করবে যা থেকে ঐসকল মানুষ যাকাত ফান্ড ও সাদাকাহর সুবিধা প্রাপ্ত হবেন।


উক্ত ফান্ড থেকে সুবিধা বঞ্চিত মানুষ ও সরকারের জরিপের পর পাসবই প্রাপ্ত লোকেরা প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ উত্তোলন করতে পারবেন যেকোন ব্যাংক থেকে।


এইছাড়াও মৌলিক চাহিদা পূরনে যাকাত ও সাদাকাহ ফান্ড যেভাবে ভূমিকা রাখতে পারেঃ

১) খাদ্যঃ খাদ্যের ক্ষেত্রে সরকার বিভিন্ন মেয়াদি কার্ডের মাধ্যমে চাল-গম দিয়ে থাকে এইছাড়াও দূর্যোগ পরিস্থিতিতে বাসস্থান মেরামত করে থাকে কিন্তু এগুলোর মাঝে নানা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দেখা যায় তাই খাদ্য ঘাটতি পূরনে সরকারের পাশাপাশি যাকাত ও সাদাকাহ ফান্ড খাদ্যের ব্যবস্থা করতে পারে।


২)বস্ত্রঃ পোশাক এমন একটি বস্তু যা মানুষের মর্যাদা থেকে বিশ্বাস বৃদ্ধি করে। তাই যাকাত ও সাদাকাহ ফান্ড থেকে পাসবই প্রাপ্ত মানুষের জন্য বাৎসরিক কিংবা উৎসবের উপলক্ষে পোশাক প্রদান করা যেতে পারে এবং শীতের মৌসুমে গরমকাপড় ও কম্বল প্রদান করা যেতে পারে।


৩)বাসস্থানঃ একটা ঘর কার না স্বপ্ন? যদিও মৌলিক চাহিদায় এর অবস্থান তৃতীয় তবুও এর গুরুত্ব অসীম।তাই যাকাত ফান্ড গঠন প্রক্রিয়ার শুরুতেই জরিপকৃত মানুষের বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে হবে সেটা যাকাত ও সাদাকাহ ফান্ড থেকেই হোক কিংবা বাৎসরিক বাজেট থেকে।

৪)শিক্ষাঃ মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষাব্যবস্থা মোটামুটি ফ্রি বললেই চলে, তবে উচ্চ শিক্ষার জন্য সেরকম কাঠামো কিংবা অর্থ সুবিধা বঞ্চিতদের হয়না এক্ষেত্রে যাকাত ও সাদকাহ ফান্ডের পাসবই দিয়ে দেশের যেকোন প্রতিষ্ঠানে সম্পুর্ন বিনা বেতনে পড়ার অধিকার দিতে হবে সরকারের মাধ্যমে।তাহলেই সুবিধা বঞ্চিত মানুষ শিক্ষার আলোয় আলোকিত হবে।

৫)চিকিৎসাঃ এইক্ষেত্রে বিভিন্ন সরকারী হাসপাতাল রয়েছে যেখানে চিকিৎসা লাভ সম্ভব যারা একেবারে অক্ষম তাদের জন্য যাকাত এ সাদাকাহ ফান্ড থেকে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারে।


মৌলিক চাহিদা ছাড়াও যাকাত ও সাদাকাহ ফান্ড যে বিষয়ে কাজ করতে পারে তা হলো বেকারত্ব,কারিগরি শিক্ষা ও নওমুসলিমদের সাহায্য। যারা অর্থের অভাবে কোন উদ্যেগ নিতে পারছেনা সেসকল যুবকদের বিনাসুদে কর্যে হাসনা প্রদান করা যেতে পারে। নারীদের কারিগরি শিক্ষায় দীক্ষিত করা এবং প্রয়োজনীয় উপায় উপকরন প্রদান করা যেতে পারে।

এছাড়াও নওমুসলিমদের জন্য মৌলিক চাহিদা পূরন এবং প্রয়োজনীয় ইবাদতের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা।চাইনা দেখতে আর কোন সুবিধা বঞ্চিত মানুষ কিংবা রক্তাত শহীদ ওমর ফারুক। যাকাত ও সাদাকাহ ফান্ডের স্বপ্ন সত্য হোক।

অনেক কথা লিখে ফেললাম! এরপরেই কল্যানের ডাক দিলেন মুয়াজ্জিন সাহেব তাই চিন্তা ভঙ্গ দিয়ে,একটি সুখী সমৃদ্ধ ইনসাফের বাংলাদেশ গড়ার বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে মসজিদের দিকে রওনা হলাম আজকের চিন্তালাপ এই পর্যন্তই কেমন লাগলো জানাবেন।


মা'আসসালাম


পঠিত : ৭৫০ বার

মন্তব্য: ০