Alapon

❝প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও আধুনিক মুসলিম বিশ্বের রূপায়ন❞



.

এছাড়াও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফলাফল হিসেবে পুরো বিশ্বজুড়ে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়। এক্ষেত্রে সবচাইতে বড় উদাহরণ হিসেবে ফেমিনিজমের উদ্ভাবনের ইতিহাস উল্লেখ করা যায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বিশ্ব যখন তার ২০% জনসংখ্যা হারিয়ে ফেললো, তখন কর্মক্ষেত্রে এ অভাব পূরণের জন্য নারীকে তারা ঘর থেকে বের হতে উদ্বুদ্ধ করলো। যে পরিবারের পুরুষ সদস্যরা প্রাণ হারিয়েছিলো যুদ্ধে, সে পরিবারের গৃহকর্ত্রী কে একপ্রকার বাধ্য হয়েই গৃহের শান্ত পরিবেশ ছেড়ে বৃহত্তর কর্মযজ্ঞে প্রবেশ করতে হলো। এ যুদ্ধের আগে প্রাকৃতিক নিয়মে ই নারী পুরুষ তার নিজস্ব কাজের ফিল্ড নিয়ে সন্তুষ্ট এবং অভ্যস্ত ছিলো। যেমনটা আল্লাহ নারীদের জন্য কর্মক্ষেত্র হিসেবে গৃহ, পুরুষদের জন্য কাজের ক্ষেত্র হিসেবে ঘরের বাইরে নানা কাজের সংস্থান করে দিয়েছেন। এটা মানব ইতিহাসের শুরু থেকেই নির্ধারিত নিয়মে চলছে। কিন্তু যখন ই নারীর ঘরের বাইরে কাজ করবার পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো, তখন থেকেই ফেমিনিজম বা নারী অধিকার নিয়ে আলাপ আলোচনার জন্ম হলো। পরবর্তীতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হবার পর আরো বৃহৎ আকারে এর প্রসার ঘটে। একারণেই ফার্স্ট ওয়েভ ফেমিনিজম, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সেকেন্ড ওয়েভ এবং পরবর্তীতে নানা প্রেক্ষাপটে আরো ওয়েভের জন্ম হয়।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আসা যাক। ১৯১৯ সালে সব বিজয়ী জাতি একত্রিত হলো রুটিটি ভাগাভাগি করে নেয়ার জন্য। তারা প্রায় এক বছর সময় জুড়ে প্যারিসে নানা আলোচনা, গোলটেবিলে ব্যস্ত থাকে, যা প্যারিস শান্তি চুক্তি ১৯১৯ নামে পরিচিত। সুপারপাওয়ারে থাকা দেশগুলো নিজেদের মাঝে ভূমি বন্টনের উদ্দেশ্যে ঘনঘন কনফারেন্সে বসতে থাকে। এসময় বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে ছোট বড় দেশগুলো প্যারিসে তাদের প্রতিনিধি প্রেরণ করে। কেননা তাদের অধিকার গুলো নিয়ে কথা বলার এটাই উপযুক্ত সময় ছিলো। এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা উচিত, তা হলো এই যে, জার্মানিকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের জন্য দায়ী বিবেচনা করে তাদের উপর অবিশ্বাস্য পরিমাণে ট্যাক্স চাপিয়ে দেয়া হয়। সে সমস্ত দেশ যারা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে ক্ষতির স্বীকার হয়েছে, তাদের ক্ষতিপূরণ জার্মানীকে আদায় করতে বলা হয়। ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার এর মামলা! যা জার্মানীর জন্য অসম্ভব ছিলো! এরকম পরিস্থিতিতে ই এডলফ হিটলারের আগমন ঘটে এবং তার কার্যক্রম জার্মানদের কাছে হৃত সম্মান পুনরুদ্ধারে সহায়ক বলে মনে হয়, জাতি তাকে বীরের আসনে সমাসীন করে। যার ফলশ্রুতিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবতারণা হয় এবং ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমেরিকা বিশ্বের প্রধান পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। এ প্রত্যেকটি ঘটনা একে অপরের সাথে সম্পর্কযুক্ত!

এখন, ১৯১৯ সালের সেই কনফারেন্স গুলোতে আরব এবং জায়োনিস্ট-রা তাদের দাবি নিয়ে বিশ্বের বাঘা বাঘা রাজনৈতিকদের সামনে তর্ক উত্থাপন করে। তারা উভয়েই ফিলিস্তিন কে দাবী করে বসে। উদ্ভট ঠেকলেও এটাই সত্য যে, সেসময় আমেরিকা জায়োনিজম ইস্যুতে নিরপেক্ষ মনোভাব সম্পন্ন ছিলো। আমেরিকান প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন আরব-জায়োনিস্ট ইস্যুতে একটি সুন্দর সিদ্ধান্ত প্রদান করেন। তিনি বলেন, একটি সার্ভে টিম পাঠানো হোক যারা সেখানে গিয়ে সরেজমিনে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে জানাবেন যে সেখানকার ভূমি আসলেই ইহূদীদের অভিবাসনের জন্য উপযুক্ত কিনা। এটি ইতিহাসে ❝কিং-ক্রেন কমিশন❞ নামে পরিচিত। দু'জন আরবী জানা লোককে প্রেরণ করা হয়। সিরিয়া, প্যালেস্টাইন, দামেস্ক, লেবানন ও এর আশেপাশের এলাকাগুলোতে ঘুরে ঘুরে তারা এখানকার স্থানীয়দের মনোভাব, আবহাওয়া, সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে একটি রিপোর্ট তৈরি করেন। যার সারকথা ছিলো এই ই যে, স্থানীয়দের অধিকার কে পুরোমাত্রায় খর্ব করা ব্যতীত আরব ভূমিতে কোনভাবেই ইহুদিদের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গঠন সম্ভব নয়। তারা পরামর্শ দিয়েছিলো, ইহূদীদের অভিবাসনের এ প্রস্তাবনা যেনো বাতিল করে দেয়া হয়। যদিও তাদের এ পরিশ্রমলব্ধ গবেষণার ফলাফল কে বিন্দুমাত্র ও গুরুত্ব না দিয়ে সাইকস-পিকো চুক্তির পরিকল্পনার উপর ই অটল থেকেছিলো “প্যারিস শান্তি চুক্তির” সদস্যগণ! এ গবেষণা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। উড্রো উইলসন কেও অন্যরা কনভিন্স করে ফেলে। সাইকস-পিকো চুক্তির সারকথা ই ফাইনালি বাস্তবায়িত করা হয় “ভার্সাই চুক্তি”-র মাধ্যমে। ভার্সাই চুক্তি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কেননা এটি অটোম্যান সাম্রাজ্যের ভূমি বন্টনের সাথে সম্পর্কযুক্ত।

সিরিয়ার একটি অংশ ফ্রান্সকে দেয়া হয়। এ অংশের কর্তৃত্ব পাবার পর ফ্রেঞ্চরা সর্বপ্রথম যে কাজটি করে তা হচ্ছে, লেবানন নামক একটি রাষ্ট্রের জন্ম দেয়া। কেনো? খ্রিষ্টধর্মী আরবদের জন্য আলাদা জায়গা করে দেয়া। কেননা তারা ফ্রেঞ্চদের যুদ্ধের সময় সহায়তা করেছিলো। এক্ষেত্রে তারা “divide and conquer” নীতি অনুসরণ করে। চারটি অংশে বিভক্ত করে ফেলে। জাবাল আদ দুরুজ, সুন্নীদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র, আলাওয়ী দের জন্য নিবাস এবং লেবানন। প্রত্যেকটি আলাদা আলাদা রাষ্ট্র গড়ে তোলা হয় মুসলমানদের মাঝে বিভক্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত ফ্রেঞ্চরা এ অঞ্চলে শাসন করে।

এসময়ে তাদের একদল একান্ত অনুগত সেবকের প্রয়োজন ছিলো, যারা কেবল শাসকশ্রেণীর জন্য কাজ করবে। এ চিন্তা মাথায় নিয়ে তারা আলাওয়ীদের টার্গেট করে। ফ্রেঞ্চদের আগমণের পূর্বে এদের কাজ ছিলো সুন্নী এলাকাগুলোতে আক্রমণ করে তাদের জান মালের ক্ষতি সাধন এবং জনমনে আতংক সৃষ্টি। নির্দিষ্ট সীমানায় পাহাড়ি অঞ্চলে তারা বসবাস করতো। এককথায় অশিক্ষিত, বর্বর এক জাতি ছিলো এই আলাওয়ীরা৷ ফ্রেঞ্চ-রা নিজস্ব উদ্দেশ্য সাধনের নিয়তে এদের সভ্যতার সাথে পরিচয় করিয়ে শিক্ষিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। এবং সেনাবাহিনীতে উল্লেখযোগ্য হারে আলাওয়ীদের নিয়োগ দেয়া হয়। কারণ তারা এমন একটি গ্রুপ তৈরি করতে চাচ্ছিলো, যারা হবে বিশ্বস্ত এবং তাদেরকে সুন্নীদের বিপক্ষে কাজে লাগানো যাবে। অর্থাৎ, আলাউয়ী-রা ফ্রেঞ্চদের দ্বারা সভ্য জাতিতে পরিণত হয়। একারণেই ফরাসীদের প্রস্থানের ৩০ বছর পর মিলিটারি থেকে একজন আলাউয়ী ক্ষমতা গ্রহণ করতে পেরেছিলো। হাফিজ আলা আসাদ! ফরাসীরা যদি এ পদক্ষেপগুলো গ্রহণ না করতো, আলাউয়ী-দের কখনোই সেনাবাহিনীতে এত অধিক হারে যুক্ত হবার কথা ছিলো না। হাফিজ আলা আসাদের পুত্র বাশার আল আসাদের কীর্তির কথা ও আমরা সবাই ই জানি। এসব ই ছিলো ফ্রেঞ্চদের সিদ্ধান্তগুলোর দুঃসহ পরিণতি, যা ভোগ করতে হয়েছে সিরিয়াবাসী কে!
.

ব্রিটিশদের কি হলো? ব্রিটিশরা তিনটি অঞ্চল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিলো। বলতে গেলে সিংহভাগ অঞ্চল তাদের করায়ত্ত হয়েছিলো। হবার ই কথা। তারা ই তখন রাজা সেজে বিশ্বের উপর ছড়ি ঘুরাতো নিজেদের ইচ্ছেমতো। তারা জর্ডান ও তার আশেপাশের এলাকা( যা বর্তমানে জর্ডান, ইজরায়েল ও ফিলিস্তিন হিসেবে পরিচিত), ইরাক এবং হেজায সহ আরবের অন্যান্য এলাকার অধিকার নিয়েছিলো। এদিকে শরীফ হুসেইন ইবনু আলী ক্রমাগত চাপ দিয়ে ই যাচ্ছেন যে তোমরা তো আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলে! তাই ইংরেজরা করলো কি, এ তিনটি অঞ্চল শরীফ হুসেইনের তিন ছেলের মাঝে বন্টন করে দিলো! নাও, এবার তোমরা খুশি থাকো- এমন একটা ভাব।

শরীফ হুসেইনের বড় ছেলে, আলীকে দেয়া হলো হেজায সহ আরবের অবশিষ্ট অঞ্চল। আলী নিজেকে “হেজাযের রাজা” ঘোষণা দিয়ে বসলো। এমনকি পিতার মৃত্যুর পর সে নিজেকে মুসলিম জাহানের খলীফা দাবি করে ও বসে! এবং পরিহাসের বিষয় হলো, তিনি একটি “লম্বা সময়” শাসন ক্ষমতা হাতে রাখতে পেরেছিলেন। অক্টোবর ১৯২৪ থেকে ডিসেম্বর ১৯২৫ পর্যন্ত স্থায়ী ছিলো তার শাসনকাল। কারণ, ইতোমধ্যে ই সেখানে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছিলো আরেক পরাশক্তি। আল সউদ পরিবার! চমৎকার বিষয় হলো, আল সউদ পরিবার ও ব্রিটিশদের অর্থায়নে ই এতোটা সমৃদ্ধ হচ্ছিলো। চতুরতা ও মুনাফেকীর কি অভিনব কায়দা! একদিকে তারা শরীফ পরিবারকেও অর্থের যোগান দিয়ে ক্ষমতায় আনলো, অন্যদিকে আল সউদ পরিবারকেও তারাই আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে যেন তারা ক্ষমতায় আসতে পারে! অবিশ্বাস্য হলেও এটাই সত্য। যাইহোক, সউদ পরিবার ক্ষমতাশালী হবার পর তারা আলী ইবনে শরীফ হুসেইন কে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় এবং ক্ষমতা লাভ করে। ইংরেজরা এবার তাদের একটি একক আরব রাষ্ট্র গড়ার অনুমতি দেয় এবং “সৌদি আরব” এর জন্ম হয়। অন্যদিকে, আলী ইবনে শরীফ হুসেইন নির্বাসনে চলে যান এবং তার করুণ মৃত্যু হয়।

শরীফ আল হুসেইন এর দ্বিতীয় পুত্র আবদুল্লাহকে দেয়া হয় জর্ডান এলাকা। আল্লাহর তাক্বদীরের কি খেলা! তিন ভাইয়ের মধ্যে একমাত্র তিনি ই পেরেছিলেন নিজের রাজত্ব টিকিয়ে রাখতে। তিনি নিজেকে “জর্ডানের হাশেমী রাজা” উপাধিতে অভিষিক্ত করেন। তার নাতি হুসেইন, পরবর্তীতে রাজা হন। তার রাজত্বকাল ছিলো, ১৯৫২ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র আবদুল্লাহ শাসন ক্ষমতায় আসেন, যিনি বর্তমানে জর্ডানের রাজা। অর্থাৎ, জর্ডানের বর্তমান রাজা হলেন, শরীফ হুসেইন এর ডিরেক্ট বংশধর। আল্লাহ ভাগ্যে রেখেছেন বলেই এটি সম্ভব হয়েছিলো। নাহলে তিনি ছিলেন কেবল ই ইংরেজদের দ্বারা রোপণ করা একটি বীজের ন্যায়। যাকে ইংরেজরা যখন ইচ্ছে উপড়ে ফেলতে পারতো।

তৃতীয় পুত্র ফয়সাল, যে টি.ই.লরেন্স এর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলো, তাকে ইরাকের গভর্নর করে দেয়া হয়। তিনিও নিজেকে ইরাকের রাজা দাবি করেন। কিন্তু ইরাকের জনগণ কোনভাবেই তাকে স্বীকৃতি দিতে রাজি ছিলো না। তারা তাকে মেনে নেয় নি এবং তার থেকে ক্ষমতা অপসারণ করে নেয়। পরবর্তীতে তার চাচাতো ভাই, হাশেমী পরিবারের সদস্যরা একে একে ব্রিটিশদের দ্বারা নিযুক্ত হন। ১৯৫৮ সালে, ইরাকী সেনাবাহিনী অভ্যুত্থান সংঘটিত করে। এবং শরীফ হুসেইন এর বংশধর যারা সেখানে বসবাস করছিলো, তাদের করুণ এক পরিণতির সম্মুখীন হতে হয়। পরিবারের নারী-পুরুষ, শিশুদের একটি কক্ষে নিয়ে সবাইকে একইসাথে হত্যা করা হয়। ১৯৫৮ সালে বিদ্রোহ ঘটানো সেই সেনাবাহিনীর ই একজন ক্যাডেট পরবর্তীতে ইরাক্বের ক্ষমতা লাভ করেন। যার নাম ছিলো জেনারেল সাদ্দাম হোসেইন। তাহলে ভেবে দেখুন, খুব বেশি দূরের ইতিহাস কিন্তু নয়। প্রত্যেকটি ঘটনাই ছিলো সম্পর্কযুক্ত।

.

এবার তুর্কী ভূমি নিয়ে কথা বলা যাক। ১৯২০ সালে “স্যাভ্রে'স চুক্তি” স্বাক্ষরিত হবার মাধ্যমে অফিশিয়ালি তুরস্ক, ব্রিটিশদের অধীনে চলে আসে। কিন্তু জনগণের এক অংশ এ চুক্তির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বসে। তারা উদ্বুদ্ধ হয়েছিলো জেনারেল মোস্তফা কামাল পাশার দ্বারা। এবং ফলস্বরূপ, স্বাধীন তুরস্কের জন্ম হয়। যদিও এর আয়তন, অটোম্যান সাম্রাজ্যের এক ষষ্ঠাংশ ছিলো, তবুও তো স্বাধীন ভূমি! পরের ঘটনা আমরা সবাই মোটামুটি জানি। কামাল আতাতুর্ক ছিলেন একজন সেক্যুলার ধারার শাসক, যিনি ইসলামকে চরম ঘৃণা করতেন। তার শাসনামলে তিনি ইসলামকে অবমাননাকারী অনেক উদ্যোগ নেন। তন্মধ্যে তুর্কী ভাষায় আজান দিতে বাধ্য করা, হিজাব নিষিদ্ধকরণ, আরবীতে কোরআন পাঠ নিষিদ্ধকরণ, ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেয়া- ইত্যাদি অন্যতম। অবশেষে, ৩রা মার্চ ১৯২৪ সালে সর্বশেষ অটোম্যান সুলতান ২য় আবদুল মজিদকে অপসারণ করে নির্বাসনে পাঠান। এর মাধ্যমে মুসলিম খেলাফত, যা আবু বকর রাদ্বি'আল্লাহু আনহু'র সময়কাল থেকে স্বগৌরবে মহীয়ান ছিলো, এমনকি মঙ্গোলদের দুর্ধর্ষ আক্রমণ ও যে চলমান খেলাফতকে নড়বড়ে করতে পারেনি; অবশেষে সেই খেলাফতের ই পতন ঘটলো!

আমরা কোন প্রাচীন, ঐতিহাসিক ঘটনাবলী নিয়ে আলোচনা করছি না। কথা বলছি না বহু আগে ঘটে যাওয়া কোন যুদ্ধ নিয়ে। বরং এই তো, গতো শতাব্দীতেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ হয়েছিলো। এ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী অনেকের পরবর্তী বংশধর ও এখনো আমাদের মাঝে বর্তমান আছেন। তবু আমরা ক'জন ই বা জানি প্রকৃতি ইতিহাস? কেমন করে আমাদের গৌরব খেলাফতের পতন ঘটানো হয়েছিলো, এক খেলাফতের অধীনে থাকা মুসলিম বিশ্ব কেনো আজ এতো এতো মুসলিম রাষ্ট্রের বিভক্তির শিকার? তা আমাদের জানতে হবে। জানতে হবে এজন্য যে, ভবিষ্যতে এ ধরণের কোন ভুল যেনো আমাদের দ্বারা না হয়ে যায়। অতীত ইতিহাস জানার উদ্দেশ্য এটা ই। শিক্ষা গ্রহণ করে পুনরায় একই ভুলের দিকে এগিয়ে না যাওয়া, নিজেকে সংশোধন করা। আলহামদুলিল্লাহ রাজনৈতিক দিকের হতাশাজনক পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তা না করে যদি উম্মাহর সাধারণ জনগণের দিকে দৃষ্টিপাত করা হয় তবে দেখা যায় যে, এখন মুসলিমরা জ্ঞানার্জনের পথে ধাবিত হচ্ছে, নিত্যদিন ই নতুন কিছু জানার প্রতি আগ্রহী হচ্ছে। এটি উম্মাহর জন্য আশাজাগানিয়া চিত্র। ইনশা আল্লাহ অবস্থার পরিবর্তন হবে। হৃত সম্মান পুনরুদ্ধারে সোচ্চার হবে পুরো উম্মাহ। ওয়ামা তাওফিক্বি ইল্লা বিল্লাহ। আমীন!

(শেষ পর্ব)

মূলঃ ড.ইয়াসির ক্বাদি
অনুবাদঃ সাবিহা সাবা

পঠিত : ৩৪৬ বার

মন্তব্য: ০