Alapon

ফুটবলের ডামাডোলের মাঝে হারিয়ে গেল নিহত ৫২ শ্রমিকের আত্মচিৎকার!



বাংলাদেশের মানুষ নাকি স্বভাবতই ফুটবলপ্রেমি। কিন্তু কোনো এক কারণে আমি ফুটবলের প্রতি তেমন একটা টান অনুভব করি না। হয়তো ফুটবল খেলতে পারতাম না বলেই আগ্রহ পাই না। সেই ছোটবেলা থেকেই ফুটবল খেলতে গেলেই পায়ে ব্যথা পেতাম। তারপর আর খেলতে পারতাম না। সম্ভবত সেই ব্যথার চোটে ফুটবল নিয়ে আমার জানাশোনা একটা শিশুর মতো। কলেজে যখন বন্ধুরা চ্যাম্পিয়ান্স কাপ, লা লিগা আর ইংলিশ লীগ নিয়ে গল্প করতো, তখন আমি তাদের পানে হা করে চেয়ে থাকতাম।

ক্লাস টেনে পড়ার সময়ের ঘটনা। বড়ো ভাইয়া তখন ছুটিতে ক্যাম্পাস থেকে বাড়িতে ছিলো। সে বলছিলো, আজ রাতে একটা দারুণ খেলা আছে; চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনাল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কার কার খেলা?
সে বলল, বার্সালোনা আর রিয়াল মাদ্রিদ!
তখন আমি প্রশ্ন করলাম, এইগুলো কোন দেশ! এরা তো বিশ্বকাপে খেলে না!
ভাইয়া আমার কথা শুনে ফিক করে হাসি দিয়ে বলল, এরা কোনো দেশ নেয়। এরা দেশের দুটো শহরের নাম। আর এগুলোকে ক্লাব ফুটবল বলে।

আমি তখন এই ক্লাব ফুটবলের কথা জানতে পারি। কিন্তু আজ অবধি বার্সালোনা বা রিয়াল মাদ্রিদ কিংবা ম্যান সিটির ৯০ মিনিট ধরে কোনো খেলাই দেখিনি। দেখার আগ্রহ বোধ করিনি। কিন্তু বাংলাদেশের এমন হাজারো তরুণ আছে, যারা এই দলগুলোর একটি খেলাও মিস করে না। আর আমার তাদের কোনো খেলার সাথেই তেমন পরিচয় নেই। তাহলে বুঝতেই পারছেন, ফুটবলের ব্যাপারে আমার জানাশোনা কতটা কম!

এবার আসি আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিলের ব্যাপারটা নিয়ে! সেই ছোটবেলা থেকেই আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিলের কথা শুনে আসছি। আগে বিশ্বকাপ ফুটবল শুরু হলে সিনিয়র ভাইয়েরা আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিল নিয়ে তর্ক করতো। তর্ক করে একজন আরেকজনকে হারিয়ে দিতো। কিন্তু এভাবে তর্ক করে কী মজা পেত তা আজও আমার অজানা। ঠিক যেমনটা অজানা, ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়ার মানুষ ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা দুভাগে ভাগ হয়ে মারামারি করে কী মজা পায়! যদি তাদের মজাটা বুঝতাম তাহলে হয়তো তাদের সাথে আমিও মারামারিতে যোগ দিতাম।

কোপা আমেরিকার ফাইনালের দিনের কথা বলি। ফজরের নামাজ পড়ে আবারো ঘুমিয়েছি। কিন্তু আচমকা চারদিক থেকে এমন চিৎকার শুরু হলো যে, আমি ঘুম থেকে ধড়মড় করে জেগে উঠলাম। ভাবলাম, কোথাও কোনো কিছু ঘটল কিনা। জানালা দিয়ে নিচে তাকিয়ে রইলাম কিছু বোঝা যায় কিনা। ওমা একটু পরই দেখি লোকজন মেসি মেসি মেসি বলে চিৎকার করছে। তখন মনে পড়লো, আজ তো কোপা আমেরিকা ফাইলাল।

আমার তখন মনে পড়লো, একদিকে রূপগঞ্জের আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া শ্রমিকরা ঢাকা মেডিকেলের মর্গে বসে বুক ফাটা কান্না করছে, আর এদিকে বাঙালি ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার জয়ে বুকফাঁটা চিৎকার করছে। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়াও এখন কোপা আমেরিকা নিয়ে মজে আছে। রূপগঞ্জের পুড়ে যাওয়া শ্রমিকদের কথা আর কেউই লিখছে না। এক ফুটবলের ডামাডোলের মাঝে হারিয়ে গেল ৫২ জন শ্রমিকের হাহাকার!

পঠিত : ২৭৬ বার

মন্তব্য: ০