Alapon

|| ভালো কাজের সংজ্ঞা ও মানদন্ড নির্ধারণ ||




ভালো কাজের সংজ্ঞা কে নির্ধারণ করবে? এই পৃথিবীতে দুই ধরনের ভাল কাজ আছে। এটা খুব ভালো করে মনে রাখবেন।

এক. নৈতিক ভাল কাজ। আমি প্রতিবেশীর প্রতি ভাল। কর্মক্ষেত্রে সৎ। আমি মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করি। চুরি করি না। আমি মানুষকে ঠকাই না। এগুলো হচ্ছে নৈতিক ভাল কাজ।

দুই. এরপর আছে ধর্মীয় ভাল কাজ। আমি হজ্জে যাই। যাকাত দেই। আমি দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি। রামাদানে রোজা রাখি। এগুলো নৈতিক অর্থে ভালো কাজ না, ধর্মীয় অর্থে ভালো কাজ।

অনেক সময় মুসলিম এবং নন-মুসলিমরা এই দুটো জিনিসের মধ্যে পার্থক্য করে ফেলি। মুসলিম বিশ্বে আপনি এমন মানুষ খুঁজে পাবেন যারা নৈতিকভাবে ভালো। তারা তাদের পরিবারের সাথে ভালো। সন্তানদের যত্ন নেয়। তারা বাড়িতে বেশ দায়িত্বশীল। প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভালো। কর্মক্ষেত্রে তারা সৎ, ভাল মানুষ। কিন্তু তাদের মধ্যে ধর্ম বলতে কিছু নেই। "ভাল হওয়ার জন্য আমার ধর্ম লাগে না" তারা বলে।

অপর মেরুতে আছে এমন মানুষ যারা নামাজ পড়ে, হজ্জে যায়। যাকাত দেয়। লম্বা দাড়ি আছে। খুব ধার্মিক পোশাক পরে। কিন্তু তারপরও তারা তাদের পরিবারের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। ব্যবসায় মানুষকে ধোঁকা দেয়। অত্যন্ত অনৈতিক মানুষ।
তো দেখা যাচ্ছে আমরা ভাল হওয়ার দুইটি মাত্রাকে আলাদা করে ফেলেছি; নৈতিক হিসেবে ভালো, ধার্মিক হিসেবে ভালো। নৈতিকতা এবং ধার্মিকতা।

আল্লাহ তা’আলা কুর’আনে একটি আয়াতে এই দুটিকে একসঙ্গে করে ফেলেন, যেটাকে বলা হয় আয়াতুল বির। সদগুণের আয়াত।
ভাল হওয়ার অর্থ কী? আপনি যদি এই আয়াতটি নিয়ে পড়েন। তাহলে দেখবেন এটা দুটি জিনিসের সমাহার। এটা নৈতিক নীতি ও ধর্মীয় নীতির একটা সমন্বয়; যেমন কথা রাখা, সত্য বলা, কাউকে না ঠকানো, ধৈর্যশীল হওয়া ইত্যাদি নৈতিক নীতি। নামাজ কায়েম করা, যাকাত দেওয়া এগুলো ধর্মীয় নীতি। এটা একইসাথে এই দুটো জিনিসের সমন্বয়।
তো আপনি যদি মনে করেন ভাল হওয়ার সংজ্ঞা আপনি নিজে ব্যাখ্যা করবেন, তখন সম্ভবত আপনি শুধু নৈতিক ভাল কাজের মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ করছেন। আর ধার্মিক ভাল কাজগুলোকে উপেক্ষা করছেন, যে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের কাজগুলো আল্লাহ আমাদের শিখিয়েছেন (নামাজ, হাজ্জ, রোজা ইত্যাদি)। কিন্তু আল্লাহ চান যে আমাদের মধ্যে এই (নৈতিক এবং ধর্মীয়) দুটি গুণই একসাথে থাকুক। আর তখনই একজন মানুষ পরিপূর্ণভাবে একজন ভাল মানুষ হবে। নয়তো আপনি আসলে ভাল নন। কারণ আপনি নিজের থেকে ভাল হওয়ার সংজ্ঞা ব্যাখ্যা করছেন এবং আল্লাহর সংজ্ঞাকে উপেক্ষা করছেন।
আমরা আল্লাহর কাছে নির্দেশনা প্রত্যাশা করি, কারণ আমরা নিজেরা আমাদের প্রত্যেকের সীমিত জ্ঞান দিয়ে সবকিছুর সংজ্ঞা ব্যাখ্যা করতে পারি না। এজন্য আমরা চাই উনি যেন আমাদের সব ব্যাখ্যা করেন, এবং সেগুলো যেন আমরা বুঝতে পারি।

আল্লাহ তা’আলা যে উভয় ধরনের ভালো কাজের কথা বলেছেন, সেই ‘আয়াতুল বির’ হলো:
﴾সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে। বরং বড় সৎকাজ হলো এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর উপর, কিয়ামত দিবসের উপর, ফেরেশতাদের উপর এবং সমস্ত নবী-রসূলগণের উপর। আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই ভালোবাসায় আত্নীয়-স্বজন, এতীম-মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্যে। আর যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দান করে এবং যারা কৃত প্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী। এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য্য ধারণকারী তারাই হল সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই মুত্তাকী।﴿
[সূরা বাকারা: ১৭৭]

- উস্তাদ নোমান আলী খান

পঠিত : ৪৫২ বার

মন্তব্য: ০