Alapon

ফিরে দেখাঃ পলাশীর প্রেক্ষাপট সৃষ্টি




প্রায় দু'শো বছর ধরে শোষণ করে যাওয়া ইংরেজ বেনিয়ারা আমাদের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়ে গিয়েছিলো। বাঙালি জাতির মাঝে মানসিক গোলামীর বীজ বুনে দিতে তারা হয়েছিলো পরিপূর্ণ সফল। তাই এখনো পর্যন্ত আমরা চিন্তা চেতনায় পশ্চিমাদের অনুকরণ করতে পারলে নিজেকে স্ট্যান্ডার্ড, মডার্ন মনে করি। রন্ধ্রে রন্ধ্রে পশ্চিমা সংস্কৃতি ধারণ করে চলছি দিনের পর দিন। নিজস্ব চেতনা, বিবেকের যেনো নেই কোন ই অস্তিত্ব। ধার করে নেয়া সংস্কৃতি লালন করে চলছি। এই ইংরেজদের আগমন ঘটলো কেমন করে? প্রেক্ষাপট কি ছিলো? ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৭৫৭ সালের ২৩শে জুন পলাশীর আম্রকাননে নবাব সিরাজদ্দৌলার পরাজয়ের মাধ্যমে ই বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিলো। পতনের ঘন্টা বেজে উঠেছিলো তখন ই। কিন্তু সেদিনের সেই পরাজয়ের ছক কবে আঁকা হয়েছিলো? কেবল তরুণ সিরাজদ্দৌলার অনভিজ্ঞতা ই কি এর জন্য দায়ী ছিলো? আমরা জানি যেকোন জাতির মানসিক অবক্ষয় তাদের আত্মপরিচয়, শেকড়, চেতনা ভুলিয়ে দিতে সক্ষম। এ অবক্ষয় বিভিন্ন ধরণের হতে পারে। ধর্মীয় বোধের বিলুপ্তি, নৈতিকতা হ্রাস সহ আরো অনেক ধরণের হয়ে থাকে।

প্রকৃতপক্ষে বাংলার মুসলমানদের মূল বিশ্বাস, চেতনায় পৌত্তলিকতার অনুপ্রবেশ ঘটেছিলো বাংলার শাসনকর্তা আলাউদ্দিন হোসেইন শাহ-র আমলে। এখানে আরেকটি বিষয়ও লক্ষণীয়, যার দিকে গুরুত্ব দেয়া আবশ্যক। তা হলো, উপমহাদেশে ইসলামের আগমন ঘটে বাহির থেকে আসা আউলিয়া, ব্যবসায়ী, মুসলিম ধর্মপ্রচারকদের মাধ্যমে। তখন সমাজে প্রচলিত বর্ণবৈষম্য, শোষণের বিপরীতে ইসলামের উদারতা, সৌন্দর্যে অভিভূত হয়েই বেশিরভাগ মানুষ ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নেয়। কিন্তু তারা ইসলামী সংস্কৃতি, অনুশাসনের সাথে ব্যাপক পরিচিত ছিলো না। ফলে, তারা অনেকটা পৌত্তলিক ধর্ম থেকে আধা মুসলমানে রূপান্তরিত হয়েছিলো। যারা নিজস্ব চিন্তার পরিশুদ্ধি ঘটানোর অবকাশ পায় নি। এতোদিন ধরে অভ্যস্ত হওয়া হৈ হুল্লোড়ের আনন্দ এক লহমায় ছেড়ে দেবার জন্য যে ঈমান প্রয়োজন, তার যথাযথ বুঝ তাদের মাঝে ছিলো না। একারণে পৌত্তলিক উৎসবের আদলে নানা ধর্মীয় উৎসবের প্রচলন ঘটায়। এ সম্পর্কে ঐতিহাসিক ড.জেমস ওয়াইজ মহররমের দশদিন ধরে চলা উৎসবকে দুর্গাপূজার সাথে তুলনা করেছেন। অবশ্য সমগ্র মুসলিম সমাজের অবস্থা ই যে এতোটা নাজুক ছিলো তা না, তবে সমাজে পৌত্তলিকতাবাদ ও বৈষ্ণববাদের যে প্রবল বন্যা, তার অবাধ প্রচলন ছিলো স্বীকৃত। কেননা মুসলিম শাসকগণ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এদের সমর্থন করতেন।

মোগল সম্রাট আকবরের নাম কমবেশি আমরা সবাই ই জানি। ভারতে নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য তিনি এতোটা ই মরিয়া হয়ে ওঠেন যে, হিন্দুদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করেই ক্ষান্ত হন নি। হিন্দুদের সন্তুষ্ট রাখার জন্য “দ্বীন ই এলাহী” নামক নতুন ধর্মের প্রবর্তন করার চেষ্টা করেন, যা পৌত্তলিকতা ও ইসলাম ধর্মের সমন্বয়ে গড়া এক জগাখিচুড়ি জীবনব্যবস্থা ছিলো! হিন্দুদের ক্রমবর্ধমান শক্তি পরিলক্ষিত করবার পরেও তিনি তাদের বিরুদ্ধে কোন একশন নিতে পারেন নি, কেননা তিনি প্রকৃতপক্ষে তাদের উপর ই নির্ভরশীল ছিলেন। তখন তোষামোদি ই ছিলো তার টিকে থাকার একমাত্র উপায়। তার ‘সুপুত্র’ জাহাঙ্গীর ও পিতার দেখিয়ে যাওয়া পথে ই হেঁটেছেন। তিনি মোঘল সাম্রাজ্যের ধ্বংস তরান্বিত করেন। ১৬০৯ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজ ক্যাপ্টেন হকিন্স বাংলায় এলে সম্রাট তাকে ঘনিষ্ঠ সহচর করে নেন। একের পর এক বিভিন্ন জায়গায় কোম্পানি গড়ে তোলার পারমিশন আদায় করে নেয়া হয়। বাণিজ্যিক কেন্দ্রের আড়ালে শক্তিশালী হতে থাকা ইংরেজদের সামরিক ঘাঁটি গড়ে তোলা হয়। শুধুমাত্র ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য নয়। বরং এ উদ্যোগের পেছনে লুকায়িত ছিলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। ব্যবসা করতে এসে উপনিবেশ গড়ে তোলার সুযোগ লাভ কোন কাকতালীয় বিষয় ছিলো না। বরং তা ছিলো পরিকল্পিত। ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচুর্য পাশ্চাত্যের ক্ষমতাশালী সকল শক্তিকে ই প্রলুব্ধ করেছিলো। দখল করে নেয়ার নোংরা খেলায় মেতে ওঠে ফরাসী, ওলন্দাজ, ইংরেজরা। বারেবারে তারা চেষ্টা চালায়। চাতুর্যতায় বিজয়ী হয়ে শেষ পর্যন্ত ইংরেজরা সফল হয় উপনিবেশ গড়তে। কি দুর্ভাগা জাতি আমরা! দিনের পর দিন আমাদের ভাগ্য নিয়ে খেলতামাশা করা হয়েছে। অথচ আমরা ছিলাম নির্বিকার।

পলাশীর প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করতে গেলে সবসময়ই উঠে আসে মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতা আর ইংরেজদের চাতুর্য। ইতিহাসের পর্যালোচনা করতে গিয়ে নিজ জাতির পতনের জন্য আমরা দোষারোপ করতে থাকি অমুক তমুক শত্রুকে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মেনে নিতে কষ্ট হলেও এ কথা সত্য যে, ভেতরে ভেতরে রাজ্যের মাঝে যে ঘুন ধরে গিয়েছিলো তাতে এ পতন ছিলো সুনিশ্চিত। একটি রাষ্ট্র কখনো একদিনের যুদ্ধের পরাজয়ে নিজ অস্তিত্ব, স্বাধীনতা হারায় না। পরাজয়ের মঞ্চ দীর্ঘদিন ধরে প্রস্তুত করা হচ্ছিলো এদেশের হিন্দু অভিজাত শ্রেণির মুখোশধারীদের দ্বারা। যাদের উপর মুর্শিদাবাদের নবাবগণ ছিলেন মাত্রাতিরিক্ত নির্ভরশীল। সিরাজ যখন নবাবের আসনে আসীন হন, তখন চতুর্দিকে ঘরে বাইরে বহুমুখী ষড়যন্ত্রের সম্মুখীন হন। যার প্লট তৈরি করেছিলো হিন্দু গোষ্ঠী, যারা কখনোই মুসলিম শাসনকে মনেপ্রাণে মেনে নিতে পারে নি। উপরন্তু, এতো সময় ধরে চলা মুসলিম শাসনে ভারতবর্ষে উল্লেখযোগ্য হারে মুসলমান জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায় নি। নেয়া হয়নি শাসক-সূফীদের সম্মিলিত পৃষ্ঠপোষকতায় ইসলাম প্রসারের উদ্যোগ। ফলশ্রুতিতে, সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলো ওই হিন্দু-রা ই, যাদের আজন্ম স্বপ্ন ছিলো ভারতবর্ষে রামরাজত্ব প্রতিষ্ঠা করা। যুগে যুগে বহুবার তারা এ প্রয়াস সাধনে অপচেষ্টা চালিয়েছে, ষড়যন্ত্রের জাল বুনেছে একাধিকবার। রাজা গণেশের কূটচালের ঘটনা আমরা অনেকেই জানি। ঠিক একইভাবে মানিকচাঁদ, রাজবল্লভ-রা ও পূর্বেও চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু সফল না হওয়ায় তারা বুঝতে পারে ইংরেজদের সহায়তা ছাড়া তারা ক্ষমতা লাভ করতে পারবে না। তাই জোট বাঁধে ইংরেজদের সাথে।

এমনকি হিন্দুদের সন্ন্যাসী গোষ্ঠীর লোকেরাও একই কামনা পোষণ করতো এবং সক্রিয়ভাবে এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছিলো। জেনারেল স্কটের নিকট লিখিত এক পত্রে চার্লস এফ.নোবল উল্লেখ করেন যে,

“ সন্ন্যাসী দলকেও আমরা আমাদের কাজে লাগাতে পারি। নিমু গোঁসাই এর দ্বারা এ কাজ হবে বলে আমার বিশ্বাস।”

এই নিমু গোঁসাই জেনারেল স্কট কে খবরাখবর ও পরামর্শ দিতো এবং বলতো যে, প্রয়োজনে চারদিনের মধ্যে সে ইংরেজদের সাহায্যের জন্য এক হাজার লোক জড়ো করতে পারবে।

তরণ সিরাজ! সদ্য কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পা দেয়া এক অনভিজ্ঞ নবাবের জন্য এই চতুর্মুখী ষড়যন্ত্র সামাল দেয়া ছিলো সত্যি ই দুরূহ। অন্যদিকে ঘরের শত্রু হিসেবে খালা ঘষেটি বেগম তো আছেন ই, যিনি নিত্যনতুন নীলনকশা এঁকে চলেছেন। তবু, সিরাজুদ্দৌলা হার মানেন নি। ইংরেজদের অবাধ্যতা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন তখন ই, যখন নিয়মমাফিক তার অভিষেকের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি থেকে উপঢৌকন সহিত কোন প্রতিনিধি পাঠানো হয় নি। তাদের ঔদ্ধত্য এতোটাই বেড়ে গিয়েছিলো যে কৃষ্ণবল্লভকে ফেরত চেয়ে পাঠানো নবাবের পত্রকে তারা গ্রাহ্য ই করে নি। একের পর এক দুঃসাহস সত্ত্বেও নবাব কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পারেন নি। কারণ তিনি ছিলেন একেবারেই একা। গুটিকয়েক দেশপ্রেমিক সাথী ছাড়া তার সাথে আর বিশ্বস্ত কেউ ছিলেন না। অবস্থা তখন এমন ছিলো যে, রাজ্যে কোন অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটলে জগৎশেঠ এর সাহায্য ব্যতীত কোন উপায় ছিলো না। প্রতিটি ক্ষেত্রে হিন্দুরা ই সর্বেসর্বা ছিলো। মানিকচাঁদের একের পর এক মিথ্যে, প্রবঞ্চনামূলক পরামর্শ; অন্যদিকে আহমাদ আলী আফগানের আক্রমণের সম্ভাবনা- সবকিছু মিলিয়ে নবাব একপ্রকার বাধ্য হন ইংরেজদের সাথে “আলীনগর চুক্তি”-তে আবদ্ধ হতে।

পলাশীর সেই প্রান্তরে আসলে ই কি কোন যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিলো? না। বরং তা ছিলো যুদ্ধের নামে এক প্রহসন। সত্যিকারার্থে যুদ্ধের ময়দান এমন হয় না। ইংরেজদের চাইতে পাঁচ গুণ সৈন্য নিয়েও পরাজিত হন নবাব সিরাজদ্দৌলা। পাশের মাঠে কাজ করতে থাকা কৃষকেরা যদি তাদের সাধারণ কাজ করার কাস্তে, ছুরি নিয়েও প্রতিরোধ করতো, তাহলেও হয়তো ইতিহাস ভিন্নভাবে লিখিত হতে পারতো। কিন্তু জনমনে তখন এ সচেতনতা ছিলো না। নবাব সিরাজ ব্যর্থ হন নি। নিজের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত দেশের স্বাধীনতা রক্ষার আকুতি পেশ করে দেশপ্রেমিকের পরিচয় দিয়ে গিয়েছেন। ব্যর্থ হয়েছে এই দেশের বিশ্বাসঘাতক হিন্দু অভিজাত শ্রেণি। যাদের ব্যবহার করে এদেশে নিজস্ব উপনিবেশ তৈরিতে সফল হয়েছিলো ইংরেজরা! যাদের ভুলের মাশুল গুনতে হয়েছিলো এ উপমহাদেশের প্রতিটি জনগণকে প্রায় দু'শো বছর ধরে। যারা এমনকি স্বাধীনতার মতো অমূল্য সম্পদ খুইয়ে হলেও মুসলিম শাসনের অবসান কামনা করতো মনেপ্রাণে।

ইংরেজদের এক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের ফল ছিলো পলাশী প্রান্তরে ঘটে যাওয়া প্রহসন। দু'শো বছরের ঔপনিবেশিক সময়ে লুটপাট আর শোষণের যে ইতিহাস তারা রচনা করেছে, তা অবর্ণনীয়।
Brooks Adams তাঁর The Law Of Civilization and Decay নামক গ্রন্থে বলেন,

১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের পর থেকে বাংলার লুন্ঠিত সম্পদগুলো আসা শুরু হয় আর সত্বর এর ফল প্রকাশ পেতে শুরু করে। এত বড় বিরাট শিল্প বিপ্লব যার প্রভাব পৃথিবীর প্রত্যন্ত কোণে কোণে অনুভূত হচ্ছে, সৃষ্টিই হতো না যদি পলাশীর যুদ্ধ সংঘটিত না হতো। কেননা ভারতবর্ষের সম্পদই এই শিল্প বিপ্লব সৃষ্টির সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করেছিলো। দ্বিতীয়ত, ভারতবর্ষ থেকে সম্পদের পাহাড় যখন লন্ডনে এসে আছড়ে পড়তে শুরু করলো এবং পুঁজি বৃদ্ধি পেল তখন আবিষ্কার উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে এক বিরাট প্রতিযোগিতা শুরু হলো। তৃতীয়ত, পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে টাকা পয়সার দ্বারা আজ পর্যন্ত এত বেশি মুনাফা অর্জিত হয় নি যতটা হয়েছে লুন্ঠিত ভারতীয় সম্পদ দ্বারা! কেননা পঞ্চাশ বছর পর্যন্ত এক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের কোন প্রতিদ্বন্দ্বী ও ছিলো না!!”

স্যার উইলিয়াম ডিগবী বলেন,

❝পলাশীর যুদ্ধের আগে যখন ভারতবর্ষের সম্পদ প্লাবনের বেগে ইংল্যান্ডের বুকে আছড়ে পড়ে নি ততোদিন আমাদের দেশের সৌভাগ্যের সূর্য উদিত হয়নি! প্রকৃত ব্যাপার হলো, ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লব বাংলার বেশুমার সম্পদ এবং কর্ণাটকের বিপুল ভান্ডারের বদৌলতেই সম্ভব হয়েছিলো।❞
(Prosperous India:A revolution, p. 30)

এটা ছিলো আসল ইতিহাস! শিল্প বিপ্লব এমনি এমনি ই হুট করে হয়ে যায় নি। আফ্রিকান উপনিবেশ থেকে ফ্রেঞ্চরা, ভারতীয় উপমহাদেশে থেকে ইংরেজ-রা রক্ত শোষণ করে যেই অর্থসম্পদ লুট করেছিলো, সেই অর্থায়নে তাদের দেশে বিপ্লব হয়েছে। এবং তা ইতিহাস দ্বারা প্রমাণিত!

ইতিহাস পাঠ করবার মূল উদ্দেশ্য ই হচ্ছে, ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষা গ্রহণ। পলাশীর এ দুঃখজনক অধ্যায় থেকে অনেকেই নেয়ার মতো অনেক ধরণের শিক্ষার কথা উল্লেখ করে থাকেন। আমরা বর্তমান সময়ের আলোকে যা শিক্ষা নিতে পারি তা হলোঃ

১. মননে মানসে পশ্চিমা ধারায় আকন্ঠ ডুবে থাকা আমাদের প্রজন্মকে এ দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি হতে উদ্ধার করতে হবে। এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে তাদের মাঝে ইসলামী সংস্কৃতির প্রসার, ইসলামী যেকোন কৃষ্টি কালচারের সৌন্দর্য, ইসলামের গৌরবময় দিনগুলো সামনে নিয়ে আসা- এ কাজগুলো ব্যাপক হারে করতে হবে। যে জাতি নিজেকে চেনে না, নিজের অন্তর্নিহিত শক্তি সম্বন্ধে গাফেল, তাকে ধ্বংস করতে কোন বহিঃশত্রুর প্রয়োজন নেই। সে নিজেই নিজের পতন ডেকে আনে। যার অনেক উদাহরণ পূর্বের ঘটনাবলী পাঠ করলে জানা যায়।

২. ইতিহাস পাঠে উদ্বুদ্ধকরণ। কোন জাতি যদি তার আত্মপরিচয় ভুলে যায়, তা থেকে দূরে সরে আসে- তবে সে হীনমন্যতায় ভোগে। অনেক বেশি আত্মগ্লানি, পরাজিত মন মানসিকতার অধিকারী হয়েই সে বেড়ে ওঠে। যা মনস্তাত্ত্বিক ভাবে তাকে পতনের দিকে ধাবিত করে। পশ্চিমাদের দ্বারা ভ্রান্ত তথ্যে পরিপূর্ণ ইতিহাসের বইগুলোর ত্রুটি, অসারতা আমাদের বুঝতে হবে। সহজ সাবলীল ভাষায় লিখিত মুসলমানদের স্বর্ণালী যুগের ইতিহাস জানতে হবে। এবং অপরকে জানাতে হবে। নিজ শেকড়কে ভুলে কেউ ই সঠিক গন্তব্যে পৌঁছতে সক্ষম হয় না। তাই এ বিষয়ে সবিশেষ গুরুত্বারোপ করা সময়ের দাবী।

একজন সচেতন মুসলমান হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের জন্য উপরিউক্ত শিক্ষা দু'টোর আলোকে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। ওয়ামা তাওফিকি ইল্লা-বিল্লাহ। আমীন!

ফিরে দেখাঃ পলাশী'র প্রেক্ষাপট সৃষ্টি
-সাবিহা সাবা

পঠিত : ৪১৪ বার

মন্তব্য: ০