Alapon

আফগানিস্তান চলে যাচ্ছে তালিবানদের নিয়ন্ত্রণে, বিপদে ভারত!



ইতিহাস বলে, কোনো পরাশক্তিই আফগানিস্তানকে জয় করতে পারেনি। ব্রিটিশরা যেমন আফগানিস্তান দখল করতে গিয়ে বারবার মার খেয়ে ফিরে এসেছে, তেমনি পৃথিবীর অন্যতম পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নকেও তল্পিতল্পা গুটিয়ে আফগানিস্তান থেকে পলায়ন করতে হয়েছে। আর সেই পরাজয়ই সোভিয়েত ইউনিয়নের কফিনে শেষ পেরেগ বসিয়ে দিয়েছে। এবার আফগানদের দ্বারা পরাজয়ের স্বীকার হলো মার্কিন পরাশক্তি।

মার্কিনিরা যে আফগানিস্তানে খুব একটা সুবিধা করতে পারছে না, তা বিগত বেশ কয়েকবছর ধরেই বোঝা যাচ্ছিল। আফগানিস্তান নিয়ে মার্কিন জেনারেলদের মুখে সর্বদাই হতাশার বাণী শোনা গেছে। কিন্তু পরাশক্তিদের পরাজয় নাকি স্বীকার করতে হয় না। আর সে কারণেই মার্কিন পরাশক্তি আফগানিস্তান থেকে ‘সেইফ এক্সিট’ খুঁজতেছিল। কিন্তু এই পরাজয়কে যতোই ‘সেইফ এক্সিট’ নাম দিক না কেন, বিশ্বের বুঝতে বাকি নেই, মার্কিনিরাও আফগান মুজাহিদদের হাতে পরাজয় বরণ করে পলায়ন করছে। রেখে গেছে পুতুল সরকার। কিন্তু সেই পুতুল সরকার এখন তালিবান মুজাহিদদের সামনে অসহায় হয়ে পড়ছে।

মূলত, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সমস্ত বিদেশি সৈন্য প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা। সেই চুক্তি অনুসারে ইতোমধ্যেই সিংহভাগ বিদেশি সৈন্য আফগানিস্তান ত্যাগ করেছে। আর চলতি মাসেই মার্কিন সৈন্যরা বাগরাম বিমানবন্দর আফগান সরকারের হাতে হস্তান্তর করেছে।

মার্কিন সৈন্যরা যখন একে একে আফগানিস্তান ছেড়ে যেতে শুরু করেছে, তখন একের পর এক সমস্ত জেলার নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করেছে আফগান মুজাহিদরা। তালিবানরা দাবি করছে, তারা ইতিমধ্যেই আফগানিস্তানের দুই-তৃতীয়াংশ দখল করে নিয়েছে। এমনকি তারা বেশ কয়েকটি সীমান্তবর্তি অঞ্চলও দখল করে নিয়েছে। সর্বশেষ তারা পাকিস্তান সাথে লাগোয়া সীমান্তবর্তি এলাকাও দখল করে নিয়েছে। আর এই সীমান্ত দিয়েই পাকিস্তানের সাথে সবচেয়ে বেশি বাণিজ্যিক পরিবহণ যাতায়াত করে থাকে।

তালিবানরা যখন একের পর এক জেলা নিয়ন্ত্রণে নিচ্ছে, তখন পশ্চিমা মিডিয়ারা কান্না শুরু করে দিয়েছে। আর সেই কান্নার সাথে সামিল হয়েছে আমাদের দেশের ‘প্রথম আলো’ পত্রিকা। যদিও প্রথম আলোর স্লোগান হলো, ‘যা কিছু ভালো তার সাথে প্রথম আলো।’ কিন্তু আমি বলি, ‘যা কিছু কালো তার সাথে প্রথম আলো।’

প্রথম কথা হচ্ছে, যুদ্ধ কোনো সহজ বিষয় নয়। যুদ্ধে যদি জনগণের সমর্থন না থাকে, তারপরও যুদ্ধফ্রন্টে জয়লাভ করা সম্ভব হয়। কিন্তু জনগণের সমর্থন ছাড়া কোনো এলাকা দখল করা বা নিয়ন্ত্রণে নেওয়া সম্ভব নয়। ফলে তালিবানরা যে একের পর এক আফগান অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে নিচ্ছে, এটা সম্ভবই হচ্ছে জনগণের সমর্থনের কারণে। আর আফগান জনগণ যেখানে তালিবানদের স্বাগতম জানাচ্ছে, সেখানে গাত্রদাহ হচ্ছে পশ্চিমা মিডিয়ার!

মার্কিনিরা যখন আফগানিস্তান ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন কিন্তু তারা তালিবানদের সাথেই আলোচনায় বসেছিলো। কারণ, মার্কিন সরকারও জানতো, তারা আফগান ছাড়ার সাথে সাথেই তালিবান পুরো দেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিবে। কিন্তু তালিবানরা যে এতো দ্রুতই অগ্রসর হবে তা হয়তো ভাবতে পারেনি। যার কারণে তাদের যেমন গাত্রদাহ হচ্ছে, তেমনি মাথা ব্যাথাও হচ্ছে।

কূটনৈতিক দিক থেকে গতবারের চেয়ে এইবার তালিবানদের অনেক বেশি পরিপক্ক মনে হচ্ছে। যেমন, তালিবানরা ইতিমধ্যেই রাশিয়া এবং চীনের সাথে সমঝোতা করে ফেলছে। তালিবানদের উপর বহিঃবিশ্বের যেসব চাপ আসতে পারে, তারা প্রথমে সেগুলোই বন্ধ করতেছে। যেমন তারা বলছে, তালিবানরা আল কায়েদার মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠিকে আশ্রয় দিবে না। আইএস ইসলামের শত্রু, তালিবানদের শত্রু। একইসাথে চীনকে সন্তুষ্ট করতে তালিবান বলছে, তারা কোনো উইঘুর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয় দিবে না। তার মানে বোঝাই যাচ্ছে, নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থা চাঙ্গা করতে তালিবানরা আগে থেকেই চীনের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের পথে হাটছে। আর চীনের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে পিছন থেকে যাবতীয় কলকাঠি যে পাকিস্তান চালাচ্ছে, তা সহজেই অনুমেয়।

তালিবানরা যতো দ্রুত কাবুলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, পাকিস্তানের মুখের হাসি ততোই প্রসারিত হচ্ছে, আর ভারতের কপালে চিন্তার ভাজ ততোই স্পষ্ট হচ্ছে। কারণ, ভারত আফগান সরকারের সাথে চুক্তিবদ্ধ। আর সেই চুক্তির জেরে তারা আফগানিস্তানে কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। এখন সেসব বিনিয়োগ সবই জলে যাওয়ার পথে। আফগানিস্তান তালিবানদের হাতে চলে গেলে যদি ভারতের শুধু টাকা নষ্ট হতো, তারপরও হয়তো ভারত খুব একটা ভাবতো না। কিন্তু এখন তাদের কাশ্মির নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। আর সেই ভাবনার বাস্তবতাও দেখা যাচ্ছে। যে মোদি সরকার কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা রোহিত করেছে, সেই মোদি সরকার আবারও কাশ্মিরকে রাজ্যের মর্যাদা দিতে চাচ্ছে। আর এই সিদ্ধান্ত যে সীমান্তের চর্তুমখি চাপের কারণেই ভারত সরকার নিতে বাধ্য হচ্ছে, তা সহজেই অনুমেয়।

এ কথা স্পষ্ট আফগানিস্তান তালিবান মুজাহিদদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে চলে আসলে, এই অঞ্চলের রাজনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। এই পরিবর্তন কারও জন্য কাল হতে পারে, আর কারও জন্য হবে অর্জনের। দেখা যাক, কার কপাল পোড়ে, আর কার মুখে হাসি ফোটে!

পঠিত : ৩৬১ বার

মন্তব্য: ০