Alapon

বিপদ যখন নিয়ামত...



মানুষের চলার পথে বিপদ আসবে এটাই স্বাভাবিক। একজন মুমিনকে মহান আল্লাহ বিপদ দিয়ে পরীক্ষা করেন৷ সেই বিপদ হতে পারে আপনার জন্য নিয়ামত। মহান আল্লাহ যা করেন তার বান্দার ভালোর জন্যই করেন৷ আর আমরা বোকার মতো চিন্তা করে বসি। অমুকে এত ভালো চাকরি করে, আমার কেন কোন চাকরি হয় না? তমুকে কত সুখ-শান্তিতে বাস করে, তবে আমার জীবনে কেন এত বিপদ?

"Why always me?" এ প্রশ্নের উত্তর একটাই, "Because Allah loves you." আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাকে দুনিয়ায় পরীক্ষা নেন, আর সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারলে ফলাফলস্বরূপ পরকালে রয়েছে জান্নাত। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন -
"আমি অবশ্যই তোমাদেরকে কিছু না কিছু দিয়ে পরীক্ষায় ফেলবোই। মাঝে মধ্যে তোমাদেরকে বিপদের আতঙ্ক, ক্ষুধার কষ্ট দিয়ে, সম্পদ, জীবন, পণ্য, ফল-ফসল হারানোর মধ্য দিয়ে। আর যারা কষ্টের মধ্যেও ধৈর্য-নিষ্ঠার সাথে চেষ্টা করে, তাদেরকে সুখবর দাও।"[১]

এই আয়াত দ্বারা মানুষকে বোঝানো হয়েছে যে, মানুষের জীবনে অনেক বিপদ আসবে। কিন্তু সেই বিপদে ধৈর্য ধরতে হবে। আল্লাহর উপর তাওয়াককুল করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন -
"পূণ্যময় তিনি, যাঁর হাতে রাজত্ব, তিনি সবকিছুর উপর সর্বশক্তিমান। (তিনি হচ্ছেন আল্লাহ) যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন, যাতে করে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন, কে তোমাদের মাঝে আমলের দিক থেকে শ্রেষ্ঠ? তিনি হচ্ছেন পরাক্রমশালী, অত্যন্ত ক্ষমাশীল।" [২]

মহান আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদত করার জন্য। তিনি আমাদের বিপদ দেন শুধু পরীক্ষা করার জন্য। এই বিপদের মধ্যে লুকিয়ে থাকে নিয়ামত। মহান আল্লাহ আমাদের বিপদ দিবেন, তিনিই আবার রক্ষা করবেন। মহান আল্লাহ বলেন -
" তিনিই হাসান এবং তিনিই কাঁদান।" [৩]

বিপদে ধৈর্যহারা হলে চলবে না। কেননা মহান আল্লাহ ধৈর্যশীলদের ভালোবাসেন। মহান আল্লাহ বলেন -
"আজ আমি তাদেরকে তাদের ধৈর্যের কারণে এমন প্রতিদান দিয়েছি যে তারাই সফলকাম।" [৪]

এই আয়াতের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে, বিপদে ধৈর্য ধরলে লাভবান হওয়া যায়। বিপদ যতই বড় হোক না কেন, আমার রব্বুল আলামীনের ক্ষমা, রহমত, নিয়ামত বিপদের চেয়েও অনেক বড়। নবীজী বলেন, "যে কোনো মুসলমানের উপর কোনো যন্ত্রনা,রোগ-ব্যাধি বা এ ধরনের কিছু আপতিত হলে,তাতে আল্লাহ তার গুনাহগুলো ঝরিয়ে দেন,যেভাবে গাছ থেকে পাতাগুলো ঝরিয়ে ফেলে।"[৫]

তিনিই উত্তম পরিকল্পনাকারী। তিনি জানেন কিসে তার বান্দার ভালো হবে, কিসে মন্দ হবে। যেই বিপদের যন্ত্রণায় আপনি কাতরাচ্ছেন সেই বিপদ-ই আপনার জন্য নিয়ামত। ধরুন আপনার চাকরি চলে গেছে। আপনি বাসার ভাড়া দিতে পারছেন না, তাই আপনি আপনার পরিবার নিয়ে গ্রামে চলে এলেন। কিছুদিন পরে শুনলেন যে বাসায় থাকতেন সে বাসায় আগুন লেগেছে। অথচ আপনি আপনার পরিবার নিয়ে নিরাপদে আছেন। এই যে চাকরি হারানের বিপদ দিয়ে মহান আল্লাহ আপনার জীবন বাচিয়ে দিলেন। এটা কি বিপদ দিয়ে নিয়ামত নয়? মহান আল্লাহ বলেন - "তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি তো কেবল পরীক্ষাস্বরূপ। আর আল্লাহর কাছে রয়েছে মহাপুরস্কার।" [৬]

ধৈর্য ধরার পাশাপাশি মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে বিপদ থেকে মুক্তি পাবার জন্য।রাসূল (সা.) বলেছেন- "দোয়া ছাড়া আর কিছুই আল্লাহর সিদ্ধান্তকে বদলাতে পারে না।"[৭]

দোয়া সব ইবাদতের মূল। ধৈর্য ধরে পরকালে আল্লাহর কাছ থেকে মহাপুরস্কার নেবার জন্য তৈরি থাকুন। আল্লাহ তায়ালা সুখ ও দুঃখের মাধ্যমে পরীক্ষা করে থাকেন। মানুষের উচিত সবসময় মহান আল্লাহর হুকুম পালন করা।

রেফারেন্স
[সুরা আল-বাকারা, ২ : ১৫৫] [১]
[সুরা মুলক, ৬৭ : ১-২] [২]
[সুরা আন-নাজম, ৫৩ : ৪৩] [৩]
[সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ১১১] [৪]
[বুখারী,আস সহীহ হাদীস- ৫৭৫/১১৮] [৫]
[সুরা আত-তাগাবুন, ৬৮ : ১৫] [৬]
[তিরমিজি, হাদিস নম্বর ২১৩৯] [৭]

- মাহিম হাসান নাহিদ

পঠিত : ৭৩৯ বার

মন্তব্য: ০