Alapon

|| এক মহাবিস্ময়কর কুরবানির গল্প ||



ফিলিস্তিনের মানুষ তিনি। বয়স তাঁর বেড়েই চলেছে। কিন্তু আজ অবধি একজন সন্তান নেই। অথচ স্ত্রী আছে। সংসার আছে। একজন সন্তানের জন্য তাঁর বুকেজুড়ে চলছে প্রবল হাহাকার। তাই তো আল্লাহর কাছে তিনি কাতর কন্ঠে মিনতি করলেন একজন সন্তানের জন্য। স্বলিহিন সন্তান। আল্লাহ তাঁর দু’আ কবুল করলেন। একজন সন্তানের শুভ সংবাদ দিলেন। অবশেষে একদিন ওনার স্ত্রীর কোলজুড়ে দুনিয়ায় এলো ফুটফুটে এক পুত্র সন্তান। এই বৃদ্ধ বয়সে সন্তান পেয়ে তাঁর মনের ইথারে ইথারে আনন্দের ফল্গুধারা ছড়িয়ে যেতে লাগলো। খুব খুশি হলেন তিনি। ছেলের একটি সুন্দর নামও রাখলেন— ইসমাঈল।

কিছুদিন যেতেই তিনি মুখোমুখি হলেন এক কঠিন পরীক্ষার। আল্লাহ রব্বুল আলামিন তাঁকে আদেশ দিলেন যে, তিনি যেনো তাঁর স্ত্রীকে শিশু সন্তানসমেত রেখে আসেন মক্কার জনমানবহীন এক মরুপ্রান্তরে। আল্লাহর আদেশ পাবার সাথে সাথেই তিনি বুকের ভেতর জমে থাকা মমতার বহরকে চাপিয়ে সেই প্রবল আকাঙ্ক্ষিত শিশুপুত্র আর স্ত্রীকে নিয়ে রেখে এলেন জনমানবহীন মক্কার একটি গাছের নিচে। হ্যাঁ, আল্লাহর এই কঠিন আদেশের কাজটি অতি সহজে যিনি সম্ভব করলেন, তিনি হলেন আমাদের জাতির পিতা, মুসলিম মিল্লাতের পিতা সাঈয়েদুনা ইবরাহিম আলাইহিস সালাম। তিনি তাঁর স্ত্রী হাজেরা, এবং শিশু সন্তান ইসমাঈল আলাইহিস সালামকে মক্কায় রাখার আগ পর্যন্ত এখানে কোনো মানব-মানবীর বসবাস ছিলো না। এই প্রথম মক্কায় কোনো মানবের বসবাস শুরু হলো।

জাতির পিতা ইবরাহিম আলাইহিস সালাম তাঁর স্ত্রীকে এমন-ই একটি নির্জন জায়গায় রেখে গেলেন, যেখানে নেই কো্নো মানুষ, নেই কোনো প্রকার পানির ব্যবস্থা। শুধু ইবরাহিম আলাইহিস সালাম তাঁদের নিকট দিয়ে গেলেন কিছু খেজুর আর একটি মশকে কিছু পানি। অতঃপর ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ফিরে চললেন। তখন শিশু ইসমাঈল (আঃ)-এর মা তথা তাঁর স্ত্রী পিছু পিছু ছুটে আসলেন, এবং বলতে লাগলেন—
হে ইবরাহীম! আপনি কোথায় যাচ্ছেন? আমাদেরকে এমন এক ময়দানে রেখে যাচ্ছেন, যেখানে না আছে কোনো ধরনের সাহায্যকারী আর না আছে কোনো ব্যবস্থা। তিনি এ কথা তাঁকে অসংখ্যবার বললেন। কিন্তু ইবরাহিম আলাইহিস সালাম তাঁর দিকে ফিরে তাকালেন না। তখন হাজেরা তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন; এই আদেশ কি আপনাকে আল্লাহ দিয়েছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। হাজেরা তাঁকে বললেন, তাহলে আল্লাহ আমাদেরকে ধ্বংস করবেন না। অতঃপর তিনি ফিরে আসলেন। আর ইবরাহিম আলাইহিস সালাম-ও সামনে চললেন। চলতে চলতে যখন তিনি গিরিপথের বাঁকে পৌঁছলেন— যেখানে স্ত্রী ও সন্তান তাঁকে আর দেখতে পাচ্ছে না—তখন তিনি কা‘বা ঘরের দিকে মুখ করে দাঁড়ালেন। অতঃপর তিনি দু’হাত তুলে এ দু‘আ করলেন , ‘‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমি আমার বংশধরদের একাংশকে তৃণ-পানিহীন উপত্যকায় তোমার সম্মানিত ঘরের নিকট পুনর্বাসিত করলাম। হে আমার প্রতিপালক! এটা আমি এজন্য করেছি যে, তাঁরা স্বএখানে লাত কায়িম করবে। কাজেই তুমি মানুষের অন্তরকে তাদের প্রতি অনুরাগী করে দাও আর ফল-ফলাদি দিয়ে তাদের জীবিকার ব্যবস্থা করে দাও। হয়তো এরা শোকরগুজার হবে”।(আল-কুরআন : ১৪/৩৭) [ ০১]
মুসলিম মিল্লাতের পিতা ইবরাহিম তাঁর স্ত্রী-সন্তানকে সেখানে রেখে অবশেষে চলে এলেন ফিলিস্তিনে। কিন্তু মাঝেমধ্যে তাঁদের গিয়ে দেখে আসতেন। এদিকে সেখানে আল্লাহর অশেষ রহমের পানি এলো। সৃষ্টি হলো একটি কূপ। সেই কূপ আমাদের কাছে জমজম কূপ নামে পরিচিত।
ধীরে ধীরে শিশু ইসমাঈলও বড়ো হতে লাগলেন। সেখানে পানির সন্ধান পেয়ে মক্কাতুল মুকাররামার আকাশে পাখিদের আনাগোনা শুরু হলো। শুরু হলো তাদের কিচিরমিচির ডাক সমেত ওড়াউড়ি। এই পানির সন্ধান পেলেন ইয়েমেনের জুরহুম গোত্রের একদল লোক। তাঁরা সেখানে বসবাসের জন্য মা হাজেরার নিকট অনুমতি চাইলো। দিলেন তিনি তাঁদের সেখানে থাকবার অনুমতি। কিন্তু সেখানকার কর্তৃত্ব থাকলো তাঁর হাতেই। এভাবে সেখানে ধীরে ধীরে একটি জনপদও অবশেষে গড়ে উঠলো। ফল-ফলাদির চাষাবাদ হতে শুরু হলো। রইলো না তাঁদের আর কোনো প্রকারের কষ্ট-দুর্ভোগ। [ ০২ ]

ইবরাহিম আলাইহিস সালাম তাঁর স্ত্রী এবং শিশু পুত্রকে একটুখানি দেখার জন্যে, তাঁদের সাথে সাক্ষাৎ ও খোঁজ খবর নেয়ার জন্য ফিলিস্তিন হতে মাঝেমধ্যে মক্কায় আসেন। যা ইতঃপূর্বে বলা হয়েছে। তো শিশুপুত্র তো আর সব সময় শিশু থাকবে না বা থাকে না। তদ্রূপ ইসমাঈল-ও ছিলো না। বয়স বাড়ে তাঁর। শৈশব-কৈশরে পদার্পণ করে। বাড়ে তাঁর চাঞ্চল্যতা। দুষ্টমি-খুনসুটি। এই বৃদ্ধ বয়সে তিনি এমন মায়াবী এক সন্তানের চাঞ্চল্যতা দেখে মনে জাগে আনন্দ-উদ্দীপনা। আরো একটু বড়ো হলে ইবরাহিম আলাইহিস সালাম তাঁর সন্তানঅকে নিয়ে দ্বীনের দাওয়াতি কাজে, ব্যক্তিগত কাজে সহযোগিতার জন্য সঙে করে নিয়ে যান। নিজের মতো করে এক আদর্শিক সন্তানরূপে গড়ে তোলেন তিনি তাঁকে, তথা ইসমাঈল আলাইহিস সালামকে। তিনিও বাবার সব কথা শুনেন। সব কর্মে সহযোগিতা করেন। করতে চেষ্টা করেন। যার জন্য ছেলের প্রতি বাবার ভালবাসার বন্ধনটা আরো মজবুত হতে লাগলো। এখন বাবার ভালবাসা আর মায়া মমতার কেন্দ্রবিন্দু এই সন্তান-ই। আল্লাহ সুবহানাহু ওতা’আলা তাঁর এই যে নিবিড় ভালোবাসার সন্তান, এই ভালোবাসাকে পরীক্ষার মুখোমুখি করতে চান। এবং এক পর্যায়ে ভালোবাসাকে আল্লাহ রব্বুল আলামিন পরীক্ষা করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন স্বপ্নের মধ্যেই।

একদিন ইবরাহিম আলাহিস সালাম ঘুমোবার উদ্দেশ্যে শুয়ে পড়লেন। এক সময় গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়লেন। ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখলেন। কী স্বপ্নে দেখলেন? স্বপ্নে যা দেখলেন তা হলো তিনি তাঁর প্রাণাধিক প্রিয় কলিজার টুকরো সন্তানের গলায় ছুরি চালিয়ে জবেহ করছেন। নবিদের স্বপ্নও একপ্রকার ওহী। তাঁর মানে আল্লাহ তাঁকে তাঁর এতো প্রিয় সন্তানকে জবেহ করতে বলছেন! তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন আল্লাহর জন্য নিজের ভালোবাসার কুরবানি করবেন। আল্লাহর চাইতে অধিক ভালোবাসা আর কারো জন্য বা কিছুর জন্য হতে পারে না। তাই তিনি স্বপ্নে দেখা বিষয়টি তাঁর সন্তানের সাথে শেয়ার করলেন। বাবা ইবরাহিমের কাছ থেকে বিষয়টি শ্রবণ করার সাথে সাথেই ছেলে ইসমাঈল আল্লাহর জন্য নিজের জান কুরবান করতে রাজি হয়ে গেলেন। বললেন বাবা; আপনার কাছে আল্লাহর তরফ থেকে যে নির্দেশ অবতীর্ণ হয়েছে তা অতি শীঘ্রই বাস্তবায়ন করে ফেলুন। আপনি আমাকে ধৈর্যশীলহিসেবেই দেখতে পাবেন। ছেলের কাছ থেকে আল্লাহর আদেশের প্রতি অবিচল আনুগত্যের এমন অপূর্ব প্রদর্শন দেখে তাঁর মনটা আনন্দের আতিশায্যে উথলে উঠলো। তিনি মনে মনে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলেন এই ভেবে যে—তিনি আল্লাহর কাছে যে স্বলিহীন সন্তান তথা নেক সন্তান প্রার্থনা করেছেন, আল্লাহ তেমনি একজন সৎ-স্বলিহীন সন্তান দান করেছেন। পবিত্র কালামুল্লাহ মাজিদে তাঁর সন্তান চাওয়া আর আল্লাহর দেওয়ার বিষয়টি এভাবেই এসেছে—
"হে আমার পরওয়ারদেগার! আমাকে এক সৎপুত্র দান করো। অতঃপর আমি তাকে এক সহনশীল পুত্রের সুসংবাদ প্রদান করলাম”। [ ০৩ ]
তিনি তাঁর সন্তানকে নিয়ে কুরবানি করার জন্যে রওয়ানা দিলেন। পথিমধ্যে শাই্ত্বন বারবার কুমন্ত্রণা দিয়ে আল্লাহর অবাধ্য করার অপচেষ্টা করেছে তাঁদের। তাঁরা শাঈত্বনের অপচেষ্টা মোকাবিলা করেছেন। তাকে কঙ্কর নিক্ষেপ করে তাড়িয়ে দিয়েছেন। অতঃপর জাতির পিতা ইবরাহিম আলাইহিস সালাম তাঁর সন্তান ইসমাঈলকে উপুড় করে শুইয়ে দিলেন। ইসমাঈল আলাইহিস সালাম গায়ে একটি সাদা চাদর ছিলো। ইসমাঈল আলাইহিস সালাম তাঁর গায়ের চাদরটা খুলে দিলেন যাতে সেই কাপড় দিয়ে কাফনের কাজ সমাধা হয়। [ ০৪-ক ] আর ইবরাহিম আলাইহিস সালাম তাঁর ছেলে ইসমাঈলকে উপুড় করে শুইয়ে দেওয়ার কারণ এই ছিলো যে—তিনি যেনো সন্তনের চেহারাটা দেখে আল্লাহর আদেশ পালনে অন্তরে যেনো কোনো প্রকার মায়া-মুহাব্বাতের উদ্রেক না হয়।
এখন বাপ-বেটা উভয়-ই আল্লাহর নির্দেশের নিকট সমর্পিত। আল্লাহ তো তাঁদের স্রেফ পরীক্ষা করতে চেয়েছে। তাঁরা উভয়েই সেই পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে সফল। ইবরাহিম আলাহিস সালাম যখন তাঁর প্রিয়পুত্রের গলায় ছুরি চালাতে যাবেন, সে সময়-ই আল্লাহ তাঁকে ডেকে বললেন—
“হে ইব্রাহিম, থামো! তুমি স্বপ্নকে সত্য প্রমাণ করে দেখিয়েছো।”[ ০৫]
ইবরাহিম আলাহিস সালাম থেমে গেলেন। জবাই করা লাগলো না ইসমাঈলকে। মুসলিম মিল্লাতের পিতা ইবরাহিম আলাইহিস সালাম দাঁড়িয়ে পেছনে ফেরে তাকালেন। দেখতে পেলেন অনিন্দ্য সুন্দর চোখওয়ালা এবং বড়ো বড়ো শিং বিশিষ্ট একটি দুম্বা। যে দুম্বা চল্লিশ বছর যাবৎ জান্নাতে প্রতিপালিত হয়েছে। আল্লাহ রব্বুল আলামিন তাঁকে সেই দুম্বা-ই কুরবানি করতে নির্দেশ প্রদান করলেন। [ ০৪-খ] পবিত্র কুর আনুল কারিমে এই বিষয়ে আল্লাহ সুবহানাহু ও’তালা বলেন—
আমরা এভাবেই সৎকর্মশীলগণের প্রতিদান দিয়ে থাকি’ ‘নিশ্চয়ই এটি একটি সুস্পষ্ট পরীক্ষা’ আমরা একটি মহান কুরবানীর বিনিময়ে ইসমাঈলকে ছাড়িয়ে নিলাম।”[ ০৬]
এই যে পিতা-পুত্রের এক মহাবিস্ময়কর কুরবানির গল্প, এ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? কিছু শিক্ষা তো অবশ্যই আছে। তাই না? সেগুলো হলো—
১। আল্লাহ আসোলে কাউকে ভালোবাসলে, তার মর্যদাকে উন্নত তথা চির সমুন্নত করতে হলে পরীক্ষায় ফেলেন। একের পর এক পরীক্ষা দিয়ে যাছাই করেন। এই পরীক্ষার মাধ্যমেই আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদেরকে জাতির নেতৃত্ব প্রদানের উপযোগী করে গড়ে তোলেন। যেমনিভাবে ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে করেছেন আমাদের জাতির পিতা। মুহাম্মাদ স্বল্লালাহু আলাইহি ও’সাল্লামের মতো আখেরি নবি, সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মানুষ তাঁর-ই বংশ থেকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে যে বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে সমাসীন করেছেন, তা কেনো করেছেন, বিষয়ে আল্লাহ রব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনে বলেন—
“ যখন ইবরাহিমকে তাঁর পালনকর্তা কয়েকটি বিষয়ে পরীক্ষা করলেন, অতঃপর তিনি সেসব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন, তখন আল্লাহ তাঁকে বললেন আমি তোমাকে মানবজাতির নেতা বানাবো”। [ ০৭]
০২। আল্লাহ সুবহানাহু ও’তাআলা সর্বদা মানুষের অন্তরটা দেখেন। তাঁর আন্তরিকতা আর আনুগত্যের পরিমাণ কী এবং কতোটুকুন, সেটাই দেখেন কেবল। আমাদের কাজে যদি খুলুসিয়াত রাখতে পারি, তা হলে আল্লাহ আমাদের জন্য জীবনের সব সহজ করে দিবেন। আমরা যা-ই করি বাহ্যিকভাবে, সেসবের কিছুই আল্লাহর কাছে মূল্য নেই—যদি না নিয়তের মাঝে শুদ্ধতার ফুল না ফোটে। প্রতি বছরই তো আমরা ইবরাহিম আলাইহিস সালামের সুন্নাহ অনুসারে সামর্থ্যবানেরা পশু কুরবানি করে থাকি। কিন্তু এর কোনোটা-ই কি আল্লাহর কাছে পৌঁছে? নাহ, অন্তরের যে নিষ্ঠা-তাক্বওয়া, তা ছাড়া আর কিছুই তাঁর কাছে গ্রহণীয় নয়। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে—
“আল্লাহর নিকট তাদের গোশত, রক্ত পৌঁছায় না; বরং পৌঁছায় তাঁর কাছে তোমাদের অন্তরের তাক্বওয়া”। [ ০৮]
আমরা যারা কুরবানি করি , তা যেনো তাক্বওয়া আর খুলুসিয়াতে ভরপুর থাকে। শুধু কুরবানিই নয়, সকল কাজেই যেনো তা বিরাজমান থাকে।

০৩। আল্লাহর ভালোবাসার চেয়ে পৃথিবীর কোনো কিছুর, কোনো ব্যক্তির ভালোবাসা-ই যেনো আমাদের কাছে অধিক প্রাধান্য না পায়। আল্লাহর চেয়ে, তাঁর নির্দেশের চাইতে অধিক প্রিয় আর কিছুই যেনো না হয়। আমাদের পিতা সাঈয়েদুনা ইবরাহিম আলাইহিস সালাম আমাদের সামনে এই বিষয়টিই উপস্থাপন করে গেছেন। অতি প্রিয় সন্তান কিংবা স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসাটিও কিন্তু আল্লাহর চেয়ে বেশি হতে পারে নি তাঁর কাছে। কিন্তু এক্ষেত্রে আমরা, স্পেশালি আমিই অনেক বেশিই পিছিয়ে আছি। সবকিছুর ঊর্ধে আল্লাহর ভালোবাসাকে এখনো প্রাধান্য দিতে পারি নি। আল্লাহ আমাকে এবং সবাইকে তাঁকেই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়ার তাওফিক দান করুন। কাতর কণ্ঠে মালিকের কাছেই ফরিয়াদটুকুনই করি।

০৪। ইবরাহিম আলাইহিস সালাম আল্লাহর কাছে নেক সন্তান চেয়ে ফরিয়াদ করেছেন। আমাদেরও উচিত আল্লাহর কাছে নেক সন্তান এবং উত্তম জীবন সঙী চেয়ে প্রার্থনা করা। কুরআন আমাদের চমৎঅকার দু’আ শিক্ষা দেয় । তা হচ্ছে এই যে—
“হে আমাদের রব্ব! আমাদের জীবন-সঙীদেরকে এবং সন্তানদেরকে তুমি আমাদের চক্ষু শীতলকারী বানিয়ে দাও”। [০৯ ]
০৫। আমরা যাঁরা বাবা আছি, পরিবারের কর্তা আছি, আমাদেরও উচিত হচ্ছে ইবরাহিম আলাইহিস সালামের মতো আমাদের সন্তানদেরকে গড়ে তোলা। পরিবারকে আল্লাহর রঙে রাঙিয়ে তোলা। আর যাঁরা স্ত্রী আর সন্তান আছি, তারাও যেনো আল্লাহর নির্দেশিত সকল কর্মে আমরা আমাদের জীবন সম্পদ সব উৎসর্গ করার মতো দৃঢ় মানসিকতার অধিকারী হতে পারি। আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যেনো আমাদের কর্তৃত্বশীলদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে পারি। দেখুন না ইবরাহিম আলাইহিস সালামের দিকে; তিনি কীভাবে কতো সহজেই না আল্লাহর নির্দেশের সামনে নিজের অতি প্রিয় কলিজার টুকরো সন্তানকে আল্লাহর আদেশে কুরবানি করতে প্রস্তুত হয়ে গিয়েছেন। আর তাঁর সন্তান ইসমাঈল আলাইহিস সালামও কী নির্দিধায়-ই না নিজের প্রাণের মায়াকে তুচ্ছ করে আল্লহর রাহে নিজেকে সঁপে দিয়েছেন। তাঁর মা-ও কী অসীম এক দুর্বিষহ জীবনকে খুব সহজে-ই না আপন করে নিলো। তৃণহীন-জনমানবহীন এক মরু প্রান্তরে শিশু সন্তানকে নিয়ে কতো সহজেই না দুখের শ্রাবণকে বরণ করে নিলো আল্লাহর আদেশে, স্বামীকেও অতি সহজেই আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়নে কী অপরিসীম সহযোগিতা-ই না করেছেন সেই মহিয়সী নারী মা হাজেরা! ভাবতে পারেন, একটা পরিবার কেমন আল্লাহ পাগল হলে পরে এতোগুলো দুঃসাধ্য পরীক্ষাগুলোয় উত্তীর্ণ হতে পারে। আমাদের পরিবারগুলোতেও আমরা এমন অমিততেজা হিম্মত আর সাহসী উপেখ্যান তৈরির প্রচেষ্টা করতে পারি। হয়তো সবটুকুন সম্ভব না, কিন্তু চেষ্টা তো করতে পারি। তাই না? আল্লাহ যেনো আমাদেরকে, সবার আগে আমাকেই তেমন একজন মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার এবং একটা পরিবার গড়ে তুলবার তাওফিক দান করেন। আ-মীন!
সর্বশেষ একটা মাসআলা বলে শেষ করছি, আর তা হচ্ছে এই যে— আমরা তো পূর্বেই পড়ে এসেছি যে ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে আল্লাহ ইসমাঈল আলাইহিস সালামের পরিবর্তে একটা অনিন্দ্য সুন্দর চোখওয়ালা এবং বড়ো বড়ো শিং বিশিষ্ট একটি দুম্বা কুরবানির জন্য পাঠিয়ে দিয়েছেন, আর তিনি সেটা কুরবানিও করেছেন।
সে জন্য সুন্নাহ হচ্ছে আমাদের সামর্থ অনুযাইয়ী সুন্দর হৃষ্ট-পুষ্ট পশু কুরবানি করা।

|| এক মহাবিস্ময়কর কুরবানির গল্প ||
~রেদওয়ান রাওয়াহা
১৭। ০৭। ২১ ইং

[ লেখকের পক্ষ থেকে কপি করার অনুমতি নেই। কপি করা নিষেধ ]

পঠিত : ৫০৯ বার

মন্তব্য: ১

২০২১-০৭-১৭ ২২:৪২

User
আবু আহনাফ

মাশা-আল্লাহ।????????????

submit