আপনার স্ত্রীকে কখনো উপেক্ষা করবেন না...
তারিখঃ ১৮ জুলাই, ২০২১, ০২:২১
বিয়ের আগে কম-বেশি অনেকেই স্বপ্ন দেখে— বিয়ের পর বউকে নিয়ে রোমান্টিক একটা জীবন সাজাবে। যার আগাগোড়াই খাঁটি এবং স্বচ্ছ ভালোবাসা দ্বারা মোড়ানো হবে। এই একটা স্বপ্ন বিয়ের আগে সবার মনে থাকলেও বিয়ের পর বাস্তবে তা অধিকাংশের ক্ষেত্রে উল্টে যায়। কখনও জীবিকার তাগিদে, কখনও-বা অন্যান্য ঝামেলায় বিয়ের ক'মাস পরেই স্ত্রী'র সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়। আস্তে আস্তে দূরত্ব বাড়ে। একসময় স্ত্রীকে সবচেয়ে বেশি যেটা করা হয়, সেটা হচ্ছে ইগনোর।
একজন মানুষ চাই পুরুষ হোক কিংবা নারী, যখন তার সবচাইতে আপনজন তাকে ইগনোর করতে শুরু করে, তখন তার কাছে মনে হয় যেন পৃথিবীতে এরচেয়ে বড়ো জুলুম দ্বিতীয়টি আর হতে পারে না।
আমি আমাদের সমাজে দেখি, একটা পুরুষ যখন স্ত্রী'র কোনো কাজে সাহায্য করে কিংবা স্ত্রী অভিমান করলে স্বামী তার অভিমান ভাঙানোর জন্য ব্যস্ত হয়, তখন আশপাশের কিছু মানুষ এটাকে তামাশা বলে তাচ্ছিল্য করতে চায়। স্বামীকে 'বউ পাগল' বলেও অনেকে হাসাহাসি করে। একশ্রেণির মুরুব্বি মহিলারা আরো আগ বাড়িয়ে লোকটাকে এভাবেও বলে যে,
''জামাইরা এমুন হইতো কেন। আগের যুগে জামাই ঘরে আইলে আমরা বউরা ডরায়া কাঁপতে থাকতাম। ঊন্নিশ তে বিশ হইলেই দুমদাম লাগাইতো। আর তুমি কি-না বউয়ের রাগ ভাঙাইতা যাও? অতো আদর কিনতু ভালা না।"
আমাদের সমাজটাই এমনভাবে গড়ে ওঠেছে যে, স্বামীরা শুধু বাহিরের কাজকর্মই করবে। ঘরে এসে স্ত্রী'র কোনো কাজে সে হাত দিবে, এমনটা হতে পারে না। এমনকি স্ত্রী যদি অসুস্থ হয়, আর এ কারণে যদি স্বামী এসে ঘরের কাজগুলো করে দেয়, কিংবা রান্নাবান্নাটা নিজে করে খেয়ে নেয়, তাহলেও একদল প্রতিবেশী হাসাহাসি করবে। বিষয়টা অনেকটাই এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, অন্ধকারেই শুধুমাত্র স্বামী-স্ত্রী দেখানো যাবে। আলোতে যতো যা-ই হোক দুজনের কাজকর্ম আলাদাই থাকবে। (শহর এবং গ্রামের কিছু পরিবার এখন অনেকটাই এ নীতি থেকে বেরিয়ে এসেছে) কিন্তু এরজন্যে সবচেয়ে বেশি দায় কার? সমাজের? নাকি যে স্বামীরা সমাজের ডরে এমন করে তাদের?
আমি দায়ী করব আমাদের নিজেদেরকেই। কারণ, সমাজের তো আর হাত পা নেই। আমাদের মতো মানুষদের হাত ধরেই সমাজের নীতিমালা তৈরি হয়, যদিও সমাজের চেহারা পাল্টে দেয়া অতটাও সহজ কাজ নয়। কিন্তু সমাজের সঙ্গে গা ভাসিয়ে দেওয়া লোকগুলো আসলে সমাজ ধর্ম ছাড়া আর কোনো ধর্মই পালন করে না!
যদি করতো, তাহলে নিজ ধর্মের কালচার দেখে সেভাবেই তা পালন করতো। সমাজ ধর্মের পাবন্দি করে নিজের জন্য জীনটাকে সংকুচিত করে আনতো না। আর যদি ইসলাম পালন করতো তাহলে অবশ্যই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখতো, কীভাবে তিনি বিবিদের সঙ্গে জীবন কাটাতেন, বিবিদের মুখে খাবার তুলে দিতেন, পানপাত্রে স্ত্রী'র ঠোঁট লাগা অংশ দিয়ে নিজেও পানি পান করতেন, ঘরের কাজে নিজে এসে স্ত্রীকে সাহায্য করতেন।
কিন্তু আমরা তো পালন করছি সমাজ ধর্ম। সমাজের আলোচনা করতে গেলে চলে যেতে হবে অন্য কোথাও। সমাজ ধর্ম হচ্ছে এমন এক ধর্ম যা হাজার বছর পর্যন্ত কোনো জাতিকে অন্ধ করে একটা কুসংস্কারে বিশ্বাস করিয়ে রাখতে পারে। সে জাতির মাঝে যতো বিদ্যানই থাকুক-না কেন সেও এই কুসংস্কার মেনে নেয়, নয়তো মানতে বাধ্য হয়। কারণ, সমাজ ধর্ম, এ খুবই মারাত্মক এক চিজ!
তাই আগে সমাজ ধর্ম থেকে বের হয়ে এসে নিজের ধর্মকে দেখতে হবে। এতে সমাজ কী বলবে, সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করা চলবে না। আমার ধর্ম কী বললো সেটাই মূল।
আমরা এটা না করে স্ত্রী'দেরকে পরগাছা ভেবে তাদের প্রতি দিনদিন ইগনোর মাইন্ডের আচরণ করছি। এ কারণেই ইদানিং কালের মেয়েরা নিজের পায়ে দাঁড়ানোর এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখছে। তারাও ভাবছে, আমি কেন স্বামীর থেকে টাকা চাইব, তারচেয়ে নিজেই চাকরি করলে সমস্যা কী! এমনকি অনেক মেয়েরা আজকাল এস্টাবলিশ হয়ে একাকী জীবন বেচে নিতে চায়। তাদের মতে বিয়ে হচ্ছে একটা উটকো ঝামেলা। বন্দী জীবন।
কিন্তু সমাজের অধিকাংশ চিত্র যদি হতো এমন, যেখানে স্ত্রী'দের সবগুলো অধিকার আদায় করা হয়,সমঅধিকার নয় বরং অগ্রাধিকারের স্লোগানটা বাস্তবে করে দেখানো হয়, তাহলে অবশ্যই মেয়েরা যে হারে অফিস মুখী হচ্ছে, এরচেয়ে খুব দ্রুত হারে বিয়ে মুখীও হতো।
আমরা যদিও বলি নারীদেরকে ইসলাম অগ্রাধিকার দিয়েছে, কিন্তু এটাকে বলা পর্যন্তই ক্ষান্ত রাখি। বাস্তবে যদি অগ্রাধিকারের চিত্রটা দেখাতে পারতাম, তাহলে মেয়েগুলো চাকরিকে নয় বরং বিয়েকেই ভাবতো নিজের পায়ে দাঁড়ানো।
তাহলে চলুন, স্ত্রী'র প্রতি অবহেলা কিংবা ইগনোর নয়, রাসুলুল্লাহ'র সুন্নাহ অনুযায়ী তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে সুন্দর জীবন উপভোগ করি। সমঅধিকার নয় বরং অগ্রাধিকার, এই কথার বাস্তবতা অন্তত নিজের পরিবারে আগে আনতে চেষ্টা করি। সমাজ কী বলবে, তা আপাতত পিছনে রাখি।
মন্তব্য: ০