Alapon

অনুভূতির রকমফের


১.

জনৈক কবি বলে গিয়েছেন,
‘চান্দ কা হুসন ভি জামিন সে হ্যায়
চান্দ পার চাদনি নেহি হোতি।’

যার বাংলা করলে অনেকটা এমন দাঁড়ায়,
“চাঁদের যা সৌন্দর্য তা জমিন থেকেই
চাঁদের মধ্যে জোছনা বলতে কিছু নেই।”

সমসাময়িক একজন জনপ্রিয় কবি সাহেবের একটি উক্তি আবার আমার ভীষণ পছন্দ, যেখানে তিনি বলেছেন,

❝সবটুকু জানা হয়ে গেলে
সব কথা পড়ে ফেলার পর
পঠিত মানুষ এক পুরনো কবর❞

হরহামেশাই আমরা এমনটা দেখে থাকি যে, একজন ব্যক্তি যাকে হয়তো দূর থেকে ভীষণ শ্রদ্ধা করতাম। তার ব্যক্তিত্ব হয়তো এতোটাই চমৎকার যে সম্মান না করে পারা যায় না। কিছুদিন যাবার পর আমরা তার সাথে মেলামেশার সুযোগ পেলাম, তারপর আরো কিছুটা ঘনিষ্ঠ হলাম। একপর্যায়ে খেয়াল করলাম যে, মুগ্ধতা কেটে গিয়েছে। তার যে গুণ আমাকে আকৃষ্ট করতো, তা ও ভীষণ রকম সাধারণ ঠেকছে। হোক সে আমার একজন প্রিয় বন্ধু, অথবা উস্তাদ অথবা প্রিয়জন- অনেকেই একই মানুষ সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গির এমন আচানক বদলে যাওয়া মেনে নিতে পারেন না। ব্যক্তি সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা জন্ম নিতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ সমস্যাটা ঘটে থাকে যখন আমরা কাউকে তার বাহ্যিকতা দিয়ে বিচার করি।

ভালো এবং মন্দের মিশেলেই সৃষ্টিকর্তা প্রতিটি মানুষের সত্ত্বা গড়ে তুলেছেন। জীবন ত্রুটিহীন- এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া অসম্ভব! তাই কর্তব্য এটাই যে, প্রত্যেককে তার স্বাভাবিক প্রকৃতির উপর থাকা কে সহজভাবে ই গ্রহণ করার মানসিকতা অর্জন করতে হবে। এটি যদি সম্ভব না হয়ে ওঠে, তবে দূর থেকে তারার আলোয় মুগ্ধ হবার মতোই ব্যক্তির কার্যাবলী ও আচরণ থেকে যে সুবাস ছড়িয়ে পড়েছে, তার নির্যাস নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা ই শ্রেয়।
২.

জীবনের ঘূর্ণিপাকে ওলটপালট হয়ে যায় কতোকিছু ই। স্বান্তনার বাণী খুঁজে নিতে ছুটে যাই প্রিয় কোন মানুষের কাছে। হয়তো তার একটু মিষ্টি হাসি দিয়ে বলা অল্প কিছু কথা ই পারতো আপনার ব্যাথা উপশম করতে। কিন্তু ঘটলো বিপরীত। সেই মানুষটা তীক্ষ্ণ কথার বাণ ছুঁড়ে এফোঁড়ওফোঁড় করে দিলো হৃদয়। তখন আপনি কি করবেন? দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে কতো কিছু ই ভেবে বসতে পারেন।

কাম্য কি? আমি, আপনি সকলেই সামান্য সৃষ্টি। সমান সবাই ই। ভগ্ন হৃদয়ের যতো ব্যাথা তার উপশম খুঁজতে তবে কেনো নগণ্য সৃষ্টির উপর নির্ভর হয়ে পড়া? আরশের উপর সমাসীন আছেন তিনি ই যিনি দয়ালু, রহমানুর রহীম, তার কাছে জানান মনের সকল আরজি। না পাওয়ার হাজারো ব্যাথা। তিনিই তো সেই সত্ত্বা যিনি ঐশী গ্রন্থ কোরআনে উল্লেখ করেছেন সেই ম্যাজিক্যাল বাক্যঃ
❝নিশ্চয়ই কষ্টের সাথে ই রয়েছে স্বস্তি। ❞
( সূরা আলাম নাশরাহ, আয়াতঃ৫)

রব্বে কারীমের এই প্রশান্তিময় আশ্বাস কি আপনার জখমী অন্তরে একটুও স্বান্তনার প্রলেপ মেখে দেয় না? অনুভব করুন। জাগতিক দুনিয়ার সব কষ্ট, বেদনা কে তুচ্ছ মনে হবে। ছুটে চলবেন অবিরাম সেই কাঙ্ক্ষিত জান্নাতের পথে, যা হবে মুমিনের চিরস্থায়ী আবাস।

। অনুভূতির রকমফের।
~ সাবিহা সাবা

পঠিত : ৪০৭ বার

মন্তব্য: ০