Alapon

❝ এ অশ্রু আনন্দের ❞

হুনাইন যুদ্ধে বিজয়ের মুকুট মুসলমানদের মাথায় শোভা পেলো … তায়েফের অবরোধের পালা ও ফুরোলো। এখন সময় গণিমত বন্টনের।

রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পদ বন্টন শুরু করলেন এবং ‘মুওয়াল্লাফাতুল কু'লূব’ ( সেসব নওমুসলিম, যাদের অন্তর- মন জয় ও প্রবোধ দানের জন্য অংশ দেয়া হতো) -দের হক পরিপূর্ণ রূপে আদায় করলেন। একইসাথে কুরায়শ সর্দারদের ও বেশ অনেকাংশে দান করা হলো। কিন্তু আনসারদের দেয়া হলো নিতান্ত ই স্বল্প পরিমাণ! এ নিয়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হলো এবং সাদ ইবন উবাদা (রাঃ) আনসার দের হয়ে কথা বলতে গেলেন রাসূল(সাঃ) এর সাথে। মন দিয়ে তিনি শুনলেন আনসার দের মনে ক্ষুব্ধতা সৃষ্টি হবার কারণ।

রহমতের নবী (সাঃ) আনসার দের এক জায়গায় সমবেত হতে বললেন। এসময় তিনি ভালোবাসায় পূর্ণ যে বক্তৃতা প্রদান করেন, তা জড়ো হওয়া সব আনসারের হৃদয় কন্দরে ভাবাবেগের আলোড়ন তোলে। নিমেষে মনে জমা হওয়া ক্ষোভ তো দূর হয়ে ই গেলো, সেই সাথে অশ্রুসিক্ত চোখে রাসূল (সাঃ) এর প্রতি ভালোবাসায় তাদের অন্তর বিগলিত হয়।

রাসূল(সাঃ) বললেন,
“ আমি কি তোমাদের মাঝে এমন সময় আসিনি, যখন তোমরা পথভ্রষ্ট ছিলে? এবং আল্লাহ তায়ালা আমার মাধ্যমে তোমাদেরকে হিদায়াহ দান করেছিলেন? তোমরা কী গরীব ছিলে না? আল্লাহ তায়ালা আমার মাধ্যমে তোমাদেরকে সম্পদশালী করেছেন। তোমরা পরস্পরের শত্রু ছিলে না? আল্লাহ তোমাদের মাঝে ভালোবাসার বন্ধন তৈরি করে দিয়েছেন। ”

তারা বললেন, ‘হ্যাঁ। ইয়া রাসূলুল্লাহ! আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সাঃ) এর দয়া ও অনুগ্রহ সবচেয়ে বেশি। তিনি আরো বললেন, হে আনসারগণ! তোমরা জবাব দাও না কেন?’

জবাবে আনসারগণ বললেন, ‘আমরা কি জবাব দিবো? নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তার রাসূল আমাদের প্রতি সর্বাধিক অনুগ্রহ করেছেন। ’

তিনি বলে চললেন,
“ তোমরা এ কথা চাইলে বলতে পারো যে, আপনি আমাদের কাছে এসেছিলেন এমন সময়, যখন আপনাকে মিথ্যাবাদী বলা হচ্ছিলো। আমরা আপনার পাশে থেকেছি। আপনার সত্যের সাক্ষী হয়ে, আপনাকে সমর্থন করেছি। আপনাকে আপনার দেশীয় লোকেরা জন্মভূমি থেকে নিরাশ্রয় অবস্থায় বেরিয়ে যেতে বাধ্য করেছিলো, তখন আমরা আপনআকে আশ্রয় দিয়েছি। এ কথাগুলো বললে সেটা সত্য ই হবে। এবং সবাই এ কথার সত্যতার সাক্ষ্য দিবে।”

এরপর তাদের দিকে ফিরে তিনি এমন কথা বললেন, যা তাদের গৌরব বৃদ্ধি করলো এবং বন্টন নীতি এরূপ হবার আসল কারণ তআরা বুঝতে পারলো। তিনি বললেন,
‘ হে আনসারগণ! তোমাদের ঈমান ও ইসলামের উপর আমি পূর্ব থেকেই পরিপূর্ণ আস্থাবান ছিলাম। একদল লোককে ইসলামদরদী করবার জন্য বেশি সম্পদ দান করলাম, তাতে ই কি তোমরা নাখোশ হয়ে গেলে? আমার আস্থা কি তোমাদের পছন্দ হয়নি? ’

রাসূল(সাঃ) এর পরবর্তী কথাগুলো আনসারদের মনে ঈমানী শক্তি এবং আবেগের ধারা বইয়ে দিলো। তারা এতো কাঁদলেন যে তাদের দাঁড়ি অশ্রুজলে সিক্ত হয়ে গেলো। তিনি বললেন,
“ ওহে আনসার সম্প্রদায়! তোমরা কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, লোকেরা দুনিয়াবী তুচ্ছ সম্পদ সাতজে নিয়ে যাক আর তোমরা রাসূল(সাঃ) কে তোমাদের সাথে তাঁবুতে নিয়ে যাও? তাদের প্রাপ্তির চাইতে তোমাদের প্রাপ্তি কতোই না উত্তম! যদি সমস্ত লোক এক রাস্তায় ও এক উপত্যকা দিয়ে পথ চলে এবং আনসারেরা অন্য উপত্যকা দিয়ে যাত্রা করে, তাহলে আমি আনসারদের সাথে সেই রাস্তা ধরেই চলবো। আনসারেরা আমার গায়ে লেগে থাকা অংগাবরণ এবং অন্যান্য লোকেরা তো চাদরতুল্য বহিরাবরণ। হে আল্লাহ! আনসারগণ, তাদের সন্তান, এবং তাদের সন্তানদের সন্তানগণের উপর তুমি রহম করো।”

আনসারেরা আবেগে উদ্বেলিত হয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললেন, “আল্লাহর রাসূল আমাদের সাথে আছেন। আমাদের আর কিছু চাই না।”

এ অশ্রু ভালোবাসার এক অভূতপূর্ব নজিরের। এ অশ্রু আনন্দের।

।। এ অশ্রু আনন্দের…।।
-সাবিহা সাবা

পঠিত : ২৯৯ বার

মন্তব্য: ০