Alapon

তালেবানরা কি পারবে নতুন আফগানিস্তান গড়তে...?



আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এখন সবচেয়ে হট ইস্যু হলো, আফগানিস্তান ইস্যু। ২০০১ সালে টুইনটাওয়ারে হামলার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে হামলা চালায়। তারপর থেকে আফগানিস্তানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো সদস্যভুক্ত দেশগুলো প্রায় লক্ষাধিক সৈন্য মোতায়েন করে। সর্বশেষ চুক্তি অনুসারে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যেই আফগানিস্তান থেকে সকল বিদেশি সৈন্য প্রত্যাহার করা হবে। তারই অংশ হিসেবে ইতিমধ্যেই আফগানিস্তান থেকে প্রায় ৯০% শতাংশ বিদেশি সৈন্য প্রত্যাহার করা হয়েছে। আর বিশেষ নিরাপত্তার কাজে এখনো ১০% মার্কিন সৈন্য আফগানিস্তানে রয়ে গেছে। আশা করা যাচ্ছে, নির্ধারিত সময়ের আগেই অবশিষ্ট এই ১০% সৈন্যও প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।

আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সৈন্য প্রত্যাহার শুরু সাথে সাথেই আফগানিস্তানে সরকারি বাহিনীর উপর তালেবানদের হামলা জোরদার হতে শুরু করে। আর এটাই হওয়ার কথা ছিল। এ কথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরও অজানা ছিল না। বরঞ্জ, পেন্টাগণ বলেছিলো, এই আফগান সরকার হয়তো তালেবানদের সামনে টিকতে পারবে না। কিন্তু পেন্টাগণের এই বক্তব্য যে এতো তাড়াতাড়ি সত্য হতে যাবে, তা স্বয়ং পেন্টাগণও ভাবেনি। তালেবানরা আফগান সরকারের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে। আফগানিস্তানের অধিকাংশ জেলাই এখন তালেবানদের দখলে। এমনকি সীমান্তবর্তি এলাকাগুলোও তালেবানদের দখলে। এমতাবস্থায় তালেবানকে চাপে ফেলতে যুক্তরাষ্ট্র তালেবানদের উপর বিমান হামলা শুরু করেছে।

অতি সম্প্রতি ফাঁস হওয়া পেন্টাগণের একটি নথি থেকে জানা যায়, তালেবানদের চলমান হামলার গতি রোধ করতে এবং তালেবানকে আলোচনার টেবিলে বসাতে আগামী কয়েকদিন যুক্তরাষ্ট্র তালেবানদের উপর বিমান হামলা চালাবে। আর তালেবানরা যখন বিমান হামলা প্রতিহত করতে ব্যর্থ হবে, তখন বাধ্য হয়েই তারা আলোচনার টেবিলে বসবে। আর আলোচনার টেবিলে বসলেই যুক্তরাষ্ট্র তার প্রয়োজনমতো প্রস্তাব দিয়ে তা আদায় করে নিতে পারবে। কিন্তু যে তালেবানদের উপর বিগত ২০ বছর ধরে বিমান হামলা চালিয়েও সেভাবে আলোচনার টেবিলে বসানো যায়নি, সেই তালেবানদের উপর এখন বিমান হামলা চালিয়ে আলোচনায় বসতে বাধ্য করতে চাওয়াটা চরম বোকামো!

আফগানিস্তানের সার্বিক পরিস্থিতি দেখে সহজেই অনুমান করা যাচ্ছে যে, কাবুল দখল করা তালেবানদের জন্য আর কোনো কঠিন বিষয় নয়; হয়তো কিছু সময়ের ব্যাপার মাত্র! আর এটা তালেবানদের রাজনৈতিক উইংয়ের তৎপরতা দেখে সহজেই অনুমান করা যাচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে তালেবানদের কূটনৈতিক টিম রাশিয়া, কাতার, ইরান, ভারত এবং চীনের সাথে মিটিং করেছে। মূলত, তালেবানরা কাবুল দখল করার আগেই বহিঃবিশ্ব থেকে স্বীকৃতি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে চাচ্ছে। এক্ষেত্রে তালেবানরা চীনকে নিশ্চয়তা দিয়েছে, তারা উইঘুর মুসলিমদের আফগানিস্তানের ভূমি ব্যবহার করতে দিবে না। এমনকি ভারতকেও তারা আশ্বাস দিয়েছে যে, ভারত যে আফগানিস্তানের মাটিতে চার মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে, সেগুলো অক্ষত থাকবে। কিন্তু মূল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে শরীয়াহ আইন। তালেবানরা যদি শরীয়াহ আইনের দ্বারা পুনরায় দেশ পরিচালনা করতে চায়, তাহলে হয়তো আন্তর্জাতিক মহলের স্বীকৃতি আদায় করা তালেবানদের জন্য কঠিন হয়ে যাবে। আর যদি তালেবানরা বহিঃবিশ্বের স্বীকৃতি আদায়ের লক্ষ্যে শরীয়াহ আইনের পরিবর্তে গণতান্ত্রিক পন্থায় ফিরে যায়, তাহলে তালেবানের নিচের সারির নেতারা বিদ্রোহ করতে পারে! তাই তালেবানরাও সংকটের মধ্যে রয়েছে।

আগামীর আফগানিস্তান যে তালেবানদের নিয়ন্ত্রনে যাচ্ছে, এটা মোটামুটি নিশ্চিত। কিন্তু তালেবানরা পূর্বের ভুলগুলো শুধরে নিয়ে নতুন আফগানিস্তান গঠনে কতটা কার্যকর হতে পারবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

পঠিত : ৩৯৫ বার

মন্তব্য: ০