Alapon

মানুষের চূড়ান্ত কুৎসিত রূপ...



এখানে উপস্থিত অনেক যুবক ছেলের জন্য সিয়াম পালন কঠিন মনে হয়। কারণ, সে নিজে নিজে প্রতিজ্ঞা করেছে রামাদানে কোনো মুভি দেখবে না। ওরা আপনাকে মুভি দেখার জন্য কীভাবে প্ররোচিত করে? ওরা ট্রেইলার বানায়। আর এই ট্রেইলারগুলোতে কী দেখানো হয়? হয়তো এটি কোনো একশন মুভির ট্রেইলার। বিস্ফোরণ হচ্ছে, একটি গাড়ি আরেকটিকে ধাওয়া করছে, ফাইট হচ্ছে, কিছু লোকের মুখে লাথি মারা হচ্ছে, যেটাই হোক, ঠিক মাঝখানে কোথাও তারা উলঙ্গ একটি দৃশ্য যোগ করে দিবে কয়েক সেকেন্ডের জন্য। মুভির গল্পের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। তারা এটা দিয়ে লোভ দেখায় যেন আপনি বলে উঠেন "ওহ, আমাকে এখন এটা দেখতে হবে।" তারা এভাবে আপনাকে আটকে ফেলে। তারা বেহায়াপনাকে উৎযাপন করে। তারা এমন জিনিস উদযাপন করে যা মানব জাতির দৃষ্টির আড়ালে লুকিয়ে রাখার কথা ছিল।


এরপর আছে অন্য প্রান্তের কিছু লোক। " আমাদের সবসময় শালীন থাকতে হবে। আমাদের লজ্জা থাকতে হবে। আমাদেরকে নিজেদের হায়া-সরমের সংরক্ষণ করতে হবে। আস্তাগফিরুল্লাহ।" এখন, আপনি সারাজীবন ধরে সবসময় চোখ নিচু করে রাখেন। জীবনে মাটি আর ঘাস ছাড়া কোনো কিছু আপনার চোখে পড়েনি। যে মেয়েকে বিয়ে করবেন এমনকি তার দিকেও চোখ তুলে তাকান না। এমনকি বিয়ে হওয়ার পরেও...কিছু কিছু মুসলিম সংস্কৃতিতে আমরা এতোই ধার্মিক যে, আমরা কুরআনের চেয়েও বেশি ধার্মিক। আমরা রাসূল (স) এর সুন্নাহ থেকেও বেশি ধার্মিক। স্ত্রী সবসময় জিল্বাব এবং হিজাব পরে থাকে এমনকি ঘরের ভেতরেও। সে এমনকি তার স্বামীর জন্যকেও সাজে না। সে এমনকি তার স্বামীর জন্যেও সুন্দর পোশাক পরে না। সে কখনো তার স্বামীকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে না। যদি জিজ্ঞেস করেন কেন এমনটা করো না? সে বলবে, “আস্তাগফিরুল্লাহ! আস্তাগফিরুল্লাহ!” এটা আস্তাগফিরুল্লাহ নয়। তুমি যে স্বামীর কাছেও নিজেকে ঢেকে রাখো এটাই আস্তাগফিরুল্লাহ। কারণ, নারী-পুরুষের সম্পর্ক যদি সৌন্দর্যমণ্ডিত না হয়, হালাল সীমার ভেতরে, সম্পর্ক যদি হালালের ভেতরে সুন্দর না হয়, তখন শয়তান পুরুষ মানুষটির অন্তরে কুমন্ত্রণা দেওয়ার সুযোগ পেয়ে যায়। সে বলবে, "তুমি যা চাচ্ছ তা বিয়ের সীমার বাহিরে পাবে। বাহিরে পাবে।" বুঝতে পারছেন?


আল্লাহ্‌ আজ্জা ওয়া জাল্লা কুরআনে এই সুন্দর সম্পর্কের সংরক্ষণ করেছেন। যেন বিয়ের ভেতর সম্পর্কটা সুন্দর এবং রোমান্টিক থাকে। কীভাবে তিনি এটা করেছেন? আল্লাহ্‌ আজ্জা ওয়া জাল্লা একই সূরায় বলেন, তিনি বর্ণনা করেন, يَا بَنِي آدَمَ خُذُوا زِينَتَكُمْ عِندَ كُلِّ مَسْجِدٍ - "হে বনী-আদম! তোমরা প্রত্যেক নামাযের সময় সাজসজ্জা পরিধান করে নাও।" (7:31) আল্লাহ্‌র সামনে দাঁড়ানোর পূর্বে সুন্দর করে সেজে নাও। পরবর্তী আয়াতে তিনি বলেন, قُلْ مَنْ حَرَّمَ زِينَةَ اللَّهِ - “বল, ‘কে হারাম করেছে আল্লাহর সৌন্দর্যোপকরণ?”


এখান থেকে আমরা শিখতে পারি— আল্লাহ্‌ এই সৌন্দর্য সবসময় ঢেকে রাখার কথা বলছেন না। আল্লাহ্‌ বলছেন এই সৌন্দর্য প্রদর্শন করার জন্য উপযুক্ত জায়গা আছে; এর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে। তিনি আপনার এই সৌন্দর্যকে অস্বীকার করছেন না। তিনি এটা তৈরি করেছেন যেন আপনি এর প্রতি আকৃষ্ট হোন। কিন্তু, উপযুক্ত মাধ্যমে এটা পেতে হবে, যথাযথ উপায়ে এটা পেতে হবে। এ জন্যই তিনি এই সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছেন।


তিনি আরও বলেছেন, قَدۡ اَنۡزَلۡنَا عَلَیۡکُمۡ لِبَاسًا یُّوَارِیۡ سَوۡاٰتِکُمۡ وَ رِیۡشًا - সুবহানাল্লাহ! "আমি তোমাদের জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছি..." আমি পোশাক নাজিল করেছি। আল্লাহ্‌ এই আয়াতে বলছেন পোশাকও কুরআনের মত, ওহীর মত আল্লাহর নাজিলকৃত একটি উপহার। যেভাবে আমরা কুরআনকে সাজাই সেভাবে আমাদের সুন্দর পোশাক পরিধান করার কথা। শালীন কিন্তু সুন্দর পোশাক। যেন এটি আমাদের কদর্যতাকে ঢেকে রাখে। এরপর তিনি বলেছেন, وَ رِیۡشًا - পোশাক দিয়েছি তোমাদের শোভা বর্ধনের জন্য।


প্রসঙ্গত, আরবিতে ريشة এর শাব্দিক অর্থ হলো পাখির পালক। আরবিতে একটি কথা আছে- “قبلَ الرمي يُراشُ السَّهم - কাব্লার রামি ইউরাসুস সাহামু”। অর্থাৎ, তীর নিক্ষেপ করার আগে তীরের মধ্যে পালক লাগিয়ে নাও। তো, পালকের ব্যাপারটা হলো আগের দিনে মেয়েরা তাদের জামায় পালক লাগিয়ে সাজাত। এখানে মূল ব্যাপারটা হলো সৌন্দর্যমণ্ডিত করা, শোভা বর্ধন।


আল্লাহ্‌ আজ্জা ওয়া জাল্লা আসলে আমাদের গভীর প্রজ্ঞাপূর্ণ একটি ভারসাম্য দান করছেন।


আমাদের আজকের বিশ্ব— মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ আধুনিক বিশ্ব এবং মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ অঞ্চল যা ভ্রান্ত উপায়ে আধুনিক হচ্ছে, এর দিকে তাকালে আপনি কী দেখতে পান? আপনি দেখতে পান সুন্দর সুন্দর রাস্তাঘাট, আধুনিক সব দালান কোঠা, সরকার ব্যবস্থা, টেকনোলোজি— ভালো ভালো কত কিছু ঘটছে সমাজে! কিন্তু একটি ক্ষেত্রে মানবতা তার স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলছে। আর তা হলো আমরা নির্লজ্জতা এবং বেহায়াপনা উদযাপন করছি। আমরা উলঙ্গপনা উদযাপন করছি। আমরা অশ্লীলতা উদযাপন করছি। কিশোর ছেলে মেয়েরা বড়দের চেয়েও বেশি নোংরা শব্দ জানে। তারা স্কুলে পরস্পরের কাছ থেকে শিখছে। মোবাইল ডিভাইসের মাধ্যমে এমনসব জিনিসের দ্বার আপনার নিকট উন্মোচিত হচ্ছে যা আপনার আত্মাকে একেবারে ধ্বংস করে ছাড়বে।


এখন এসব জিনিস আপনার চোখের সামনে প্রতি মুহূর্তে, সবসময়। এসব ছবি দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছেন প্রতি নিয়ত। এসব শব্দ দ্বারা, এসব মেসেজ দ্বারা। একদিকে আমাদের নিজেদের রক্ষা করতে হবে। যে সৌন্দর্য আল্লাহ্‌ আমাদের ভেতরে দান করছেন, সারা জীবনের জন্য তা ঢেকে রাখা সম্ভব নয় এবং আশা করা যে এটা আমাদের উপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। এর জন্য দরকার উপযুক্ত একটি রাস্তা। উপযুক্ত একটি উপায় দরকার। অর্থপূর্ণ এবং উদ্দেশ্যপূর্ণ উপায়ে এর মুক্তি দরকার। আর তা হল বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠান। এটাই সেই প্রতিষ্ঠান। আল্লাহ্‌ আজ্জা ওয়া জাল্লা আমাদের খুব সুন্দর প্র্যাক্টিক্যাল একটি ধর্ম দান করেছেন। তিনি আমাদের থেকে সাধু সন্ন্যাসী হওয়া আশা করেন না। তিনি এমনটা আশা করেন না।


সাহাবা রাদিয়াল্লাহুম আজমাইন তথা রাসূল (স) এর সঙ্গীদের ইসলামের পূর্বেও একটি জীবন ছিল। ইসলামের পূর্বেও তাঁদের এক ধরণের জীবন ছিল। আর সে সময় তাঁরা ঠিক এমন ছিলেন না যে- "আস্তাগফিরুল্লাহ! ঐদিকে আপুরা আছেন।" সে সময় তাঁরা এমন জীবন পার করেননি। ইসলামের পূর্বে তাঁদের কারো কারো রোমান্টিক জীবন ছিল। কেউ কেউ এমনই ছিলেন। এমনকি ইসলাম গ্রহণ করার পরেও সেই জীবন থেকে বের হয়ে আসা তাঁদের জন্য কষ্টকর ছিল। একদিন এক সাহাবী রাসূল (স) এর কাছে এসে বলেন, "ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি খুব দুঃখিত। আমি রাস্তায় এক মেয়েকে চুম্বন করে ফেলেছি।"


একজন সাহাবী!! এটা করেছেন! রাস্তায়! রাসূল (স) তাঁকে কয়েক রাকাত নামাজ পড়তে বললেন। কারণ, তিনি ধীরে ধীরে ভালো হচ্ছেন। তিনি আস্তে আস্তে ভালো হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।


আমি বলছি না যে এমনটা করা আপনাদের জন্য বৈধ। কিন্তু, আমি বলছি যারা মাত্র ইসলামে প্রবেশ করেছেন। এটা তাঁদের জন্য একটা জার্নি ছিল। রাসূলুল্লাহ (স) তাঁকে এভাবে ধমক দেননি- তুমি কি আদম আলাইহিস সালামের ঘটনা শোননি? তুমি কি জাননা এই কারণে আমাদেরকে জান্নাত ত্যাগ করতে হয়েছিলো? আর তুমি সেই শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করছ!!


না, তিনি লম্বা কোনো লেকচার দেননি। জাস্ট দুই রাকাত নামাজ পড়। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। এমনটা যেন আর না ঘটে। নিজের উপর এতো কঠোর হবে না।


আপনাদের কেউ কেউ অতীতে ভুল করেছেন। আর কেউ কেউ এখনো করে যাচ্ছেন। আল্লাহর কাছে ফিরে আসার এটাই সেরা সময়। কয়েক রাকাত নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে শক্তি-সামর্থ্য প্রার্থনা করুন যেন আপনি সেই সম্পর্কগুলো থেকে বের হয়ে আসতে পারেন, যেন সেই আসক্তিগুলো থেকে বের হয়ে আসতে পারেন। অন্য কাউকে এ সম্পর্কে জানতে হবে না। আপনাকে আমার কাছে এসে বা অন্য কারো কাছে গিয়ে এ অপরাধগুলো স্বীকার করতে হবে না। আল্লাহ্‌ জানেন আপনি কীসের মধ্যে আটকে আছেন। আল্লাহ্‌ ইতোমধ্যে জানেন। যদি নিজের অন্তরে যথেষ্ট শক্তি না পান এই রমজান মাসে, তবে এ শক্তি আর কখনোই পাবেন না। এ ধরণের সমস্যাগুলো থেকে বের হয়ে আসার এটাই শ্রেষ্ঠ সময়। এর চেয়ে উত্তম কোনো সময় হতে পারে না।


তাই, আমি আল্লাহ্‌ আজ্জা ওয়া জাল্লা এর নিকট প্রার্থনা করছি, আপনাদের মাঝে যারা, আমাদের মাঝে যারা জীবনে ভুল করেছেন বা এখনো করে যাচ্ছেন আল্লাহ্‌ যেন আমাদের এমন ঈমানের শক্তি দান করেন যার ফলে আমরা এ ধরণের ভুলগুলো থেকে বের হয়ে আসতে পারি। এবং আমরা যেন বুঝতে পারি যে এগুলো আসলে শয়তানের চাল, যার মাধ্যেম সে আমাদেরকে তার দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা যেন তার কাছে থেকে সরে আসতে পারি। এবং আল্লাহর অনুমোদিত উপায় অবলম্বন করতে পারি যা অন্যথায় হারাম, আল্লাহ্‌ আমাদের জন্য যে পথ খোলা রেখেছেন সে পথ যেন অবলম্বন করি, হালালের পথ যেন অবলম্বন করি।

- উস্তাদ নোমান আলী খান

পঠিত : ২৬৫ বার

মন্তব্য: ০