Alapon

যদিও বাংলাদেশ ক্রিকেট দল জয়লাভ করেছে তারপরও কিছু কিন্তু রয়ে যায়...



গতকাল টি ২০ তে বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম জয় পেয়েছে। এই জয়ের জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমকে অবশ্যই ক্রেডিট দিতে হবে। কিন্তু গতকালকের ম্যাচে বিজয় পাওয়া গেছে বলেই অন্যান্য ভুলগুলো এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। বরং সেই ভুলগুলো নিয়ে আরও বেশি মনোযোগি হওয়া দরকার।

যদি সত্য কথা বলি তবে বলতে হয়, ব্যাটিং করার সময় বাংলাদেশ দলের শারীরিক ভাষা বলছিলো, তারা ইতিমধ্যেই পরাজয় বরণ করে নিয়েছে। ব্যাটিং করার সময় তাদের দেখে একবারও মনে হয়নি যে, তারা জয়ের জন্য খেলছে। বিশেষত সৌম্য সরকারের আউট হয়ে যাওয়ার ধরণ দেখে বলতে হয়, রীতিমত উইকেট ছেড়ে পালানো। আর সৌম্য সরকারের আউট হওয়ার পর তার শারীরিক ভাষা বলছিলো, ‘যাক বাবা এই যাত্রায় তো বাঁচা গেল’! কারণ, হ্যাজেলউড আর মিশেল স্টার্ক এর ১৪০ থেকে ১৫০ কি.মি গতির বলগুলো সামলাতে সৌম্যকে রীতিমত হিমশিম খেতে হয়েছে। ভয়ে যেন কুঁকড়ে যাচ্ছিল। এরপর তো যা করল তা রীতিমত হাস্যকর! লেগ স্ট্যাপের অনেক বাহিরের একটি শর্ট বল থার্ড ম্যানে পাঞ্চ করতে গিয়ে নিজের উইকেট হারাতে হলো!

দ্বিতীয় ভুল হলো, নিজেদের উইকেট চিনতে পারা। ক্রিকেটের ভাষায় উইকেট বলতে পিচকে বলা হয়। শেরে বাংলার এই পিচে খেলতে খেলতে সাকিব মাহমুদুল্লাহরা বুড়ো হয়ে গেল, কিন্তু তারপরও অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের সামনে যেন সবকিছু অচেনা হয়ে যায়। নিজেদের চেনা উইকেট, চেনা মাঠ তারপরও সবই অচেনা। এমন স্লো উইকেটে বল যে সহজেই ব্যাটে আসবে না তা বোঝাই যাচ্ছে। এমন উইকেটে স্ট্রাইক রোটেড করে খেলার কোনো বিকল্প নেই। সিঙ্গেল, ডাবল আর সুযোগ পেলে ওভার প্রতি একটা বাউন্ডারি নিয়ে প্রতি ওভারে ৮ রান করে তুলতে পারলেই যথেষ্ট। রান রেট যদি ৮ রাখা যায়, তবে রান হবে ১৬০। আর ১৬০ রান এই উইকেটের জন্য যথেষ্ট। কিন্তু বাংলাদেশের প্রতিটা ব্যাটসম্যানই উইকেটে এসে বিগ শর্ট খেলার চেষ্টা করেছে। ফলাফলস্বরূপ বাংলাদেশ ডট বল দিয়েছে ৪২ টি। যেগুলোর অধিকাংশই বিগ শর্ট খেলতে গিয়ে মিস হয়েছে। একবার চিন্তা করুন, এই ৪২ টি বল যদি ডট না দিয়ে ৪২ টা সিঙ্গেলস নিতো তাহলে বাংলাদেশের রান হতো ১৭০! আর ব্যাটিং করার সময় এতোটা প্রেশারেও পড়তে হতো না। কিন্তু তারপরও কেন যেন সাকিব নুরুলেরা ক্রিজে গিয়েই ছক্কা পেটাতে চায়!

আর সবচেয়ে মজার বিষয় কি জানেন, বাংলাদেশ যদি বোলিং করার সময় প্রথম ওভারেই উইকেট না পেতো, তাহলে বোলিং করার সময়ও তাদের পরাজিত শারীরিক ভাষাই প্রকাশ পেতো। কিন্তু মাহাদির প্রথম ওভারটাই সবকিছু বদলে দিয়েছে। প্রথম ওভারের প্রথম বলেই উইকেট। সত্যিই বলতে এই উইকেটের কারণে পুরো বাংলাদেশ দল যেমন উজ্জিবিত হয়ে উঠেছিলোম, তেমনি আমিও এক বুক আশা নিয়ে খেলা দেখে গিয়েছি। না হলে আমিও হয়তো সম্পূর্ণ খেলাটা দেখতাম না।

জাতিগতভাবেই আমরা পরাজিত মানসিকতা লালন করি। এই মানসিকতা যেমন ক্রিকেটারদের পরিহার করা উচিত, তেমনি দর্শক হিসেবে আমাদেরও পরিহার করা উচিত।

আর অস্ট্রেলিয়ার ভুল নিয়ে যদি বলতে হয়, তবে বলব ওভার কনফিডেন্স! অস্ট্রেলিয়া দলকে শুরু থেকেই ওভার কনফিডেন্ট মনে হচ্ছিলো।

হ্যাজেলউড, স্টার্ক, জেম্পা, মিশেল মার্শদের শারীরিক ভাষা বলছিলো, তারা তো জিতেই গেছে! আর এই ওভার কনফিডেন্সই তাদের দল হিসেবে পারফর্ম করতে দেয়নি। তারা যেহেতু জিতেই গেছে, তাই তারা কেবল ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স নিয়ে চিন্তিত ছিলো। আর এখানে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রিত বোলিং। গতকাল বাংলাদেশ সত্যিই দারুণ বোলিং করেছে। এজন্য পুরো কৃতিত্বই বাংলাদেশ দলের বোলিং ডিপার্টমেন্টকে দিতে হবে।

ওভারঅল বাংলাদেশ যদি তাদের শারীরিক ভাষার দিকটা উন্নতি করতে পারে, তাহলে সিরিজের বাকি ম্যাচগুলোও বাংলাদেশ ভালো রেজাল্ট করবে।

পঠিত : ৫৭৭ বার

মন্তব্য: ০