Alapon

বিভিন্ন চিকিৎসা ব্যবস্থায় আমার অভিজ্ঞতা



তখন সম্ভবত ক্লাস সিক্সে পড়ি। ক্রিকেট খেলছিলাম। শর্টে ফিল্ডিং করছি। ব্যাটসম্যান আমার মামা। তিনি সজোরে ব্যাট ঘুরালেন। টেপটেনিস বলটি আমি রিসিভ করতে সক্ষম হই নাই। লেগে গেল চোখে। ভীষণ ব্যাথা পেলাম। রক্তপাত হলো।

জরুরি চিকিৎসা হলো। এরপর চোখে উঠে গেল চশমা। একবছরের মাথায় আবার পাওয়ার বাড়লো। মাথা ব্যাথা নিত্য সঙ্গী হিসেবে দেখা দিল।

এদিকে আমি ক্রনিক আমাশয়ে ভুগতেছিলাম বহুদিন ধরে। সমস্যা সারছে না, উপশমও হচ্ছে না। অনেক হাসপাতাল, অনেক ডাক্তার পার হলো। একদিন নানুর পরামর্শে নোয়াখালীর চৌমুহনীতে বাবা-মা আমাকে নিয়ে গেলেন হামদর্দে। হামদর্দ হারবাল চিকিৎসা ব্যবস্থা। ভারতের দিল্লীতে এর উৎপত্তি। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানেও রয়েছে ব্যাপক বিস্তৃতি।

ওখানের ডাক্তারদের হাকিম বলা হয়। হাকিম সাহেব আমার চোখে চশমা দেখে এটি নামিয়ে রেখেছেন। যদিও আমরা চোখের সমস্যা নিয়ে ওনার কাছে যাইনি। তিনি চোখ ও আমাশয় দুটিরই চিকিৎসা করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর ইচ্ছায় মাস দুয়েকের মধ্যে সেরে উঠেছি।

২০১৩ সালে এরেস্ট হই। প্রায় ২০০ দিন কারাগারে থাকতে হয়েছে। এসময় নিচে শোয়ায় সম্ভবত আমার বাত ব্যাথা শুরু হয়। বের হওয়ার পর চট্টগ্রামের ন্যশনাল হাসপাতাল ও আন্তর্জাতিক ইসলামিক হাসপাতালে চিকিৎসা নিই। এছাড়াও পরিচিত ডাক্তার আঙ্কেলদের পরামর্শ নিই। কিন্তু দীর্ঘদিন সুবিধা হচ্ছিল না।

একদিন একটি প্রোগ্রামে ব্যথা বেশি অনুভূত হলে এক জনশক্তি তার হোমিওপ্যাথি ডাক্তার বোনের কাছে আমাকে নিয়ে যায়। তিনি আমাকে প্রায় শ' খানেক প্রশ্ন করে ঔষধ দেন। ঔষধের ফিও নেননি। আলহামদুলিল্লাহ ১৪ দিনের কোর্সেই সুস্থ হই।

১৫ -১৬ সালের দিকে নতুন সমস্যায় পড়ি কাফ মাসল পেইনের। প্রায়ই সকালে ঘুম থেকে উঠতে গিয়ে এই পেইনের শিকার হই। কয়েকজন ডাক্তার দেখিয়েছি সমস্যার সমাধান হয়নি। বন্ধুবর একজন কবি ও ডাক্তার একদিন তার নিজের এই সমস্যার কথা শেয়ার করলেন। তাঁকে বললাম, এর সমাধান কী? আমিও তো বিপদে আছি। তিনি বললেন, এর স্থায়ী সমাধান নেই। ব্যায়াম করুন। সমাধান হতে পারে। পেইন কিলার আর কত খাওয়া যায়!

এদিকে সমস্যা বেড়েই যাচ্ছে। হাতের পেশী, চোয়াল, পেটের পেশীতে টান পড়ছে প্রায়ই। তারপর হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নিই। আলহামদুলিল্লাহ এখন পর্যন্ত ভালো আছি।

আমি এই ঘটনাগুলো বললাম এই কারণে নয় যে, এলোপ্যাথিক চিকিৎসা সঠিক নয়। বরং এটাই সবচেয়ে বেশি সঠিক। আমিও এখনো যে কোনো রোগে ও সমস্যায় প্রথমে এলোপ্যাথিক চিকিৎসা নিয়ে থাকি। এরপরও সমাধান না হলে বিভিন্ন দিকে ছুটি।

এইগুলো বলা এই কারণে, আমাদের এলোপ্যাথিক ডাক্তাররা অন্য চিকিৎসা পদ্ধতি উড়িয়ে দিতে চান তুড়ি দিয়ে। এটা ঠিক নয়। এগুলো থেকে বহু মানুষ উপকৃত হচ্ছে। সেবা পাচ্ছে। সম্প্রতি জাহাঙ্গীর কবিরের ইস্যুতে তারা এই চেষ্টাই করে যাচ্ছেন।

আমার ডায়াবেটিস ধরা পড়ে ১৭ সালে। ধানমন্ডি ইবনে সিনা, ইসলামী ব্যাংকের কাকরাইল ও মুগধা শাখায় তিনজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়েছি। তাদের পরামর্শ মেনেছি। ঔষধ খেয়েছি। কিন্তু সুগার কন্ট্রোল হতে চায় না। এদিকে ওষধের মাত্রাও দিন দিন বাড়ানো লাগছে।

এর মধ্যেও হাজির হলেন ডা. জাহাঙ্গীর কবির। তার ভিডিওগুলো দেখলাম। বুঝার চেষ্টা করলাম। আলহামদুলিল্লাহ দেখলাম বেশি খেয়েও সুগার কন্ট্রোল করা যায়। আগে ক্ষুদায় কষ্ট পেয়েছি তারপরো সুগার লাইনে আনতে পারিনি।

আমি মনে করি এলোপ্যাথিক চিকিৎসা তো থাকবেই। এর পাশাপাশি অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিও চালু থাকা আবশ্যক। মানুষ উপকার পেলে অন্যদের সমস্যা কোথায়?

আমার বন্ধুতালিকার ডাক্তারদের মধ্যে কয়েকজন বাদে যারা ইস্যুতে পোস্ট করেছে তারা বলতে চেয়েছেন এই দেশের মানুষকে ভুলভাল বুঝিয়ে, ভুল তথ্য দিয়ে জাহাঙ্গীর কবির অপচিকিৎসা করে যাচ্ছেন। মানুষ মুর্খ, তাই সবাই তার মুরিদ হচ্ছে।

না ভাই, এটা মোটেই আসল কথা নয়! আসল কথা হলো, মানুষ জাহাঙ্গীর সাহেবের পরামর্শ থেকে উপকৃত হয়েছেন বলেই তার ভক্ত হয়েছেন। জাহাঙ্গীর তো সরকারি কিছু নয় যে, আপনি তার চিকিৎসা নিতে বাধ্য। আপনার পছন্দ হলে নিবেন, না হলে নিবেন না।

মানুষ উপকার পেলে অবশ্যই তার চিকিৎসা নেবে। একই কথা অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতির জন্যও। হামদর্দ চিকিৎসা ব্যবস্থাও ধীরে ধীরে এত বিকশিত হচ্ছে যে, শুনলাম তাদের নিজস্ব মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ও আছে।

আর আমি আমার পার্সোনাল লাইফে যত অপচিকিৎসার মুখোমুখি হয়েছি, কষ্ট পেয়েছি ও দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছি সব এলোপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে। এর মানে এটা নয় যে, এটা চিকিৎসা পদ্ধতির দোষ। এটা ব্যক্তির দোষ।

আমি জীবনে একবার পিজি হসপিটালের সেবা নিতে গিয়েছি আমার মায়ের জন্য। ইসলামী ব্যাংকের ডাক্তার নির্দিষ্ট করে বলে দিয়েছেন একটি টেস্ট যাতে অবশ্যই পিজি থেকে করিয়ে আনি। এতো অব্যবস্থাপনা, এতো দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছি যে, পিজি থেকে টেস্টের রেজাল্ট নিয়ে বের হওয়ার সময় আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে দোয়া করেছি যেন আমাকে আর কখনো পিজির মুখ না দেখান।

পঠিত : ৬৩৭ বার

মন্তব্য: ০