Alapon

মানুষের চূড়ান্ত কুৎসিত রূপ...



আজকের খুৎবায় আমার নিয়ত হল, ইনশাআল্লাহ, কুরআনের ৭ম সূরার কয়েকটি আয়াতের উপর কিছু ভাবনা শেয়ার করা। সূরাটি হলো, সূরাতুল আ'রাফ। সুরাতুল আ'রাফের শুরুর দিকে আল্লাহ্‌ আজ্জা ওয়া জাল্লা আদম আলাইহিস সালামের ঘটনা তুলে ধরেন। এই ঘটনার কিছু কিছু বিবরণ কুরআনের বেশ কয়েক জায়গায় পাওয়া যায়, সর্বমোট সাত জায়গায়। প্রতি বার ঘটনার নতুন কিছু দিক তুলে ধরা হয়েছে। সুতরাং, এটা ঘটনাটির পুনরাবৃত্তি নয় বরং একই ঘটনার ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি। তাই, সুরাতুল আ'রাফে ঘটনাটির নির্দিষ্ট একটি দৃষ্টিভঙ্গি বর্ণনা করা হয়েছে। এখান থেকে যে শিক্ষা আমরা লাভ করবো তা একেবারেই অনন্য। আপনি এ শিক্ষা বাকারায় পাবেন না, পরের দিকের সূরা সফফাত বা অন্য সকল স্থানে ঘটনাটির যে বিবরণ দেয়া হয়েছে সেখানেও এই শিক্ষা পাবেন না।


এটা কুরআন অধ্যয়নের মূলনীতির অংশ। কেউ হয়তো বলতে পারে, আমি তো নবীদের ঘটনা জানি। আমি ইতোমধ্যে আদম আলাইহিস সালামের ঘটনা জানি বা মুসা আলাইহিস সালামের ঘটনা প্রভৃতি জানি। প্রকৃতপক্ষে, প্রতিবার আল্লাহ্‌ যখন কোনো ঘটনা বর্ণনা করেন তিনি আসলে আপনাকে ভিন্ন ভিন্ন কিছু পাঠ শিক্ষা দিচ্ছেন এবং পৃথক পৃথক প্রজ্ঞা শিক্ষা দিচ্ছেন।


আজকে আপনাদের জন্য সে প্রজ্ঞাগুলোর একটির উপর গুরুত্ব দিবো। আর তা হলো, শুরু থেকে আল্লাহ্‌ কীভাবে মানব জাতির সৃষ্টি নিয়ে কথা বলেছেন। খুৎবার শুরুতে আমি আয়াতটি তিলাওয়াত করেছি। আল্লাহ্‌ আজ্জা ওয়া জাল্লা বলেন, وَلَقَدْ خَلَقْنَاكُمْ - আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, ثُمَّ صَوَّرْنَاكُمْ - অধিকন্তু, আমি শুধু তোমাদের সৃষ্টি করিনি, আমি তোমাদের রূপও দান করেছি।


আল্লাহ্‌ আকাশসমূহ এবং পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ্‌ পর্বত সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ্‌ সৃষ্টি করেছেন অনিন্দ্য সুন্দর ঝর্ণাধারা। আল্লাহ্‌ সৃষ্টি করেছেন সম্প্রসারিত মহাবিশ্ব। আল্লাহ্‌ সৃষ্টি করেছেন ঝিকমিক করা তুষার কণা, বরফ কণা। আল্লাহর সৃষ্টি সবকিছুতেই আছে মনকাড়া সৌন্দর্য।


আল্লাহ্‌ স্বাভাবিক বর্ণনাভঙ্গির বাহিরে গিয়ে কোনো কিছুর সৌন্দর্য বর্ণনা করেন না, শুধু এটা বলেন যে, তিনি অমুক জিনিস সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু, যখন আমাদের কথা আসে, তিনি বলেন, তিনি শুধু আমাদের সৃষ্টি করেননি; অধিকন্তু তিনি আমাদের রূপ দান করেছেন। আমাদের তিনি শৈল্পিক নিপুণতায় তৈরি করেছেন।


'রূপ দান' করার ব্যাপারটা হলো, আরবি ভাষায় تصوير …. উর্দুতেও শব্দটি আছে। অর্থ হলো, ছবি। আরবিতে অবশ্য এর জন্য ব্যবহৃত শব্দ হল, صوره কিন্তু تصوير মানে, আকৃতি দান করা, শৈল্পিক সৌন্দর্য দিয়ে কোনো কিছুর রূপ দান করা। এখানে যে ব্যাপারটা বোঝানো হচ্ছে— এটা করা হয়েছে এক ধরণের শৈল্পিক চেতনা থেকে। প্রয়োজন থেকে করা হয়নি। যদি প্রয়োজন থেকে কিছু তৈরি করতে হয়, বাল খালাকতাহু। কিন্তু কোনো কিছু তৈরি করার পর যদি আপনি একে সাজাতে চান, সৌন্দর্য মণ্ডিত করতে চান, নিখুঁত করতে চান— তখন পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আপনি এর তাসউইর করেন। আপনি এর সুন্দর রূপ দান করেন, শৈল্পিক নৈপুণ্য দান করেন। আল্লাহ্‌ আজ্জা ওয়া জাল্লা বর্ণনা করেন— মানুষকে সুন্দর আকৃতি দান করা হয়েছে, শৈল্পিক নৈপুণ্য দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।


কুরআনে অন্য স্থানে আল্লাহ্‌ এর মূল শব্দ 'হুসন' ব্যবহার করেছেন। অতএব, আল্লাহ্‌ আজ্জা ওয়া জাল্লা বলেন, لَقَدۡ خَلَقۡنَا الۡاِنۡسَانَ فِیۡۤ اَحۡسَنِ تَقۡوِیۡمٍ - সুরাতুত তীনের বিখ্যাত আয়াত। “অবশ্যই আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সর্বোত্তম গঠনে, সুন্দরতম আকার আকৃতি দিয়ে।” (95:4) আল্লাহ্‌ আজ্জা ওয়া জাল্লা সূরা গাফিরে বলেন, وَّ صَوَّرَکُمۡ فَاَحۡسَنَ صُوَرَکُمۡ - "আর তিনি তোমাদেরকে আকৃতি দিয়েছেন, অতঃপর তোমাদের আকৃতিকে সুন্দর করেছেন।" (৪০:৬৪) তিনি এখানে পরবর্তী পদক্ষেপর কথা বলেছেন। শুধু আকৃতি দান নয়, যা নিজেই সুন্দর। তিনি এর সাথে আরেক ধাপ সৌন্দর্য যোগ করলেন।


এটা জানা জরুরী। কারণ, আল্লাহ্‌ আজ্জা ওয়া জাল্লা কুরআনে বিশেষ মনোযোগ আকর্ষণ করছেন মানুষের সৌন্দর্য এবং আকর্ষণীয়তার প্রতি। মানুষ আকর্ষণীয় এক সৃষ্টি। মানুষ আল্লাহর অনিন্দ্য সুন্দর এক সৃষ্টি। আর এটি মানব জাতির খুবই শক্তিশালী একটি দিক।


বস্তুত, আজকের বিশ্বে মানুষের সৌন্দর্যকে ঘিরে যে ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠেছে তা সবচেয়ে বেশি লাভজনক ইন্ডাস্ট্রিগুলোর মাঝে অন্যতম। কস্মেটিক শিল্প থেকে শুরু করে, ফ্যাশন শিল্প, পোশাক শিল্প, ফিল্ম শিল্প সবকিছুতে সৌন্দর্যকে পুঁজি করে তারা ব্যবসা করে। কীসের ভিত্তিতে তারা অভিনেতা, অভিনেত্রী, মডেল ইত্যাদি নির্বাচন করে। এমনকি কিছু কিছু নোংরা শিল্পেও তারা এই ধারণাকে কাজে লাগায় যে, মানুষ সহজাতভাবে সুন্দর এবং নিজেরা অন্য মানুষের সৌন্দর্যের প্রতি আকর্ষিত। তারা এটাকে পুঁজি করে ব্যবসা করে এবং অগণিত টাকা-পয়সা উপার্জন করে। অতএব, এটি খুবই শক্তিশালী একটি জিনিস যা আল্লাহ্‌ মানবজাতিকে দিয়ে অলঙ্কৃত করেছেন, নারী পুরুষ সবাইকে দিয়েছেন।


এখন এটা বলার পর...আমি আপনাদের বলেছিলাম এই খুতবা আদম (আ) এর ঘটনা নিয়ে। আমি মনে করি, এখানে উপবিষ্ট সবাই ঘটনাটি জানেন বা অন্তত এই ঘটনার কিছুটা বিস্তারিত বিবরণ আপনাদের সবার জানা আছে। জান্নাতে আমাদের পিতামাতাকে একমাত্র যে নির্দেশনাটি প্রদান হয় তা ছিল, এই গাছের নিকটে যেও না। "লা তাকরাবা হা-জিহিস সাজারা"। তোমরা দুজনে এই গাছ থেকে দূরে থাকো। এই গাছের ধারে কাছেও যেও না। এটাই ছিল একমাত্র নির্দেশ।


যদি কুরআনের টেক্সট ভালভাবে খেয়াল না করেন, তাহলে আপনার মনে হবে, শয়তানের লক্ষ্য ছিল আমাদের পিতামাতাকে ঐ গাছের ফল আহার করানো। এটাই ছিল তার লক্ষ্য। আল্লাহ্‌ আজ্জা ওয়া জাল্লা এটাকে শয়তানের লক্ষ্য হিসেবে বর্ণনা করেননি। এটা আমার আশা ছিল। আমি আশা করেছিলাম শয়তানের উদ্দেশ্য ছিল...। আল্লাহ্‌ বলেছেন, এই গাছের নিকটে যেও না। আর শয়তানের লক্ষ্য হবে তাদেরকে গাছের নিকটবর্তী করা এবং গাছ থেকে আহার করানো। সূরা বাকারায় আল্লাহ্‌ বলেছেন, আজাল্লাহুমাশ শাইতান। "শয়তান তাদের পদস্খলন ঘটালো।" (২:৩৬) শয়তান তাদের উভয়ের দ্বারা সামান্য ভুল করাল। আমরা এখনো জানি না সে পদস্খলনটি আসলে কী। কিন্তু, সুরাতুল আ'রাফে আল্লাহ্‌ শুধু আমাদের বলেননি শয়তান কী করেছে, আল্লাহ্‌ আমাদেরকে তার উদ্দেশ্যের কথাও বলেছেন। তো, কেন সে তাদেরকে গাছের নিকটবর্তী করতে চেয়েছিল। গাছ থেকে নিষিদ্ধ ফল আহার করানোই কি তার লক্ষ্য ছিল? নাকি তার মাথায় অন্য আরও উদ্দেশ্য ছিল যা মানবজাতিকে ধ্বংস করে ছাড়বে।


আমাদের একটি ব্যাপার বুঝতে হবে। এমনকি দিনশেষে, আদম আলাইহিস সালামকে একটি নির্দিষ্ট গাছ সম্পর্কে বলা হলো, এই গাছের ফল তোমার জন্য হারাম, এই গাছের ফল খাওয়া তোমার জন্য নিষিদ্ধ। তিনি এবং আমাদের মা সে ঐতিহাসিক ভুলটি করলো এবং আমরা সেই গাছের ফল আহার করলাম।

কিন্তু ব্যাপারটা নিয়ে যদি যৌক্তিক দৃষ্টিতে চিন্তা করেন... আমরা জীবনে অসংখ্য ভুল করে থাকি। আর মানুষ এই দুনিয়াতে আসার পর মারাত্মক সব অপরাধ করে থাকে। মানুষ খুন করে, ধর্ষণ করে, লুটতরাজ চালায়, ডাকাতি করে, চুরি করে, অন্য দেশে আক্রমণ চালায়, অন্য মানুষের সম্পদ দখল করে নেয়, অন্যদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে। আমরা সবধরনের ভয়ংকর সব অপরাধ করে থাকি।

এখন, যদি এই সমস্ত অপরাধকে একটি গাছের ফল ভক্ষণ করার অপরাধের সাথে তুলনা করেন; এটাকে তেমন বড় অপরাধ বলে মনে হয় না। এমনকি কুরআনেও আল্লাহ্‌ বলেছেন, 'আজাল্লাহুমা- সে তাদের পদস্খলন ঘটাল'। সে তাদের দ্বারা সামান্য ভুল করালো। আপনাদের মনে হতে পারে, এটা তো মানব জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ভুল। আর আল্লাহ্‌ আজ্জা ওয়া জাল্লা এর মাত্রা কমিয়ে একে সামান্য ভুল বলে আখ্যায়িত করলেন!


কিন্তু শয়তান এখানে শুধু ফল খাওয়ার চেয়েও বড় কিছু দেখল। শুধু গাছটির নিকটবর্তী হওয়ার চেয়েও সে এখানে বড় কিছু দেখল। তার ছিল খুবই সুনির্দিষ্ট একটি উদ্দেশ্য। এ ব্যাপারটার উপরেই আজকে গুরুত্ব দিতে চাই।

আমার খুৎবার প্রথম অংশ এই অংশের সাথে সম্পর্কহীন মনে হতে পারে। প্রথম অংশে আমি বলেছি আল্লাহ্‌ মানুষকে খুব সুন্দর অবয়বে সৃষ্টি করেছেন এবং খুব আকর্ষণীয় করে তৈরি করেছেন।


এখন শুনুন, আল্লাহ্‌ আজ্জা ওয়া জাল্লা শয়তানের মনের ভেতর থেকে কী বর্ণনা করছেন। আল্লাহ্‌ আমাদেরকে শয়তানের মনের ভেতর নিয়ে যাচ্ছেন। فَوَسۡوَسَ لَهُمَا الشَّیۡطٰنُ - “শয়তান অবিরত তাদের কুমন্ত্রণা দিল এবং দূরে সরে গেল।” ওয়াসওয়াসা মানে, হামাসা ওয়া গা-বা। সে তাদের কাছে যেতো কুমন্ত্রণা দিতো এবং অদৃশ্য হয়ে যেতো। এরপর আবার কুমন্ত্রণা দিতো এবং আবার অদৃশ্য হয়ে যেতো।


ব্যাপারটা হলো, ক্রমাগত কারো কাছে একই বার্তা বার বার প্রচার করা, যতক্ষণ না সে তা গ্রহণ করে নেয়। প্রোপাগান্ডা এভাবেই কাজ করে। আপনাদের কী মনে হয়? কেন তারা একই অ্যাড বার বার প্রচার করে? যেন আপনার তা একেবারে মুখস্ত হয়ে যায়। যদি ওয়াস ওয়াসা বার বার দেওয়া না হয়, তবে এটি আপনার চিন্তার অংশ হবে না। কোকের একটি বিজ্ঞাপন দশ-পনের বার দেখার পর হঠাৎ করেই আপনার ইফতারিতে কোকের প্রয়োজন হয়। ভাবছেন- “কিরে কোকের চিন্তা কোত্থেকে মাথায় এলো?” এটা আপনার মাথায় গেঁথে দেওয়া হয়েছে। তাহলে, ওয়াসওয়াসা মানে, মনের মধ্যে কোনো কিছুর ধারণা বার বার প্রবেশ করিয়ে দেওয়া।


এখন, তার উদ্দেশ্য কী ছিল? আল্লাহ্‌ বলেন- لِیُبۡدِیَ لَهُمَا مَا وٗرِیَ عَنۡهُمَا مِنۡ سَوۡاٰتِهِمَا - তিনি এখানে গাছের কথা উল্লেখ করেননি। শয়তান তাদের বার বার কুমন্ত্রণা দিতে লাগলো— এই অংশটি মনোযোগ দিয়ে শুনুন— "তাদের কুৎসিত অংশ থেকে যা ঢাকা ছিল, যাতে সে তাদের জন্য তা প্রকাশ করে দেয়" অর্থাৎ তাদের উলঙ্গ শরীর।


এখন, এই অংশটি বুঝা একটু কঠিন। কারণ, ঠিক কয়েক মুহূর্ত আগে একই সূরার আরেকটি আয়াতে আল্লাহ্‌ বলেন, তিনি আমাদের সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন। এখন, আল্লাহ্‌ বলছেন শয়তান চেয়েছিল আমাদের পিতামাতা যেন কুৎসিতরূপে একে অপরের নিকট প্রকাশিত হয়ে পড়ে। অর্থাৎ, উলঙ্গ অবস্থায়। সে চেয়েছিল তাঁদের নিকট থেকে তাঁদের জামা-কাপড় খুলে ফেলতে। এটাই ছিল তার লক্ষ্য।

এখানে দুইটি প্রশ্ন দেখা দেয়। প্রথমতঃ আল্লাহ্‌ কেন বলেনেনি যে, শয়তান তাদেরকে গাছের ফল আহার করাতে চেয়েছিল? দ্বিতীয়তঃ হঠাৎ করে কেন— যে শরীর আল্লাহ্‌ সুন্দর আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন এখন তা কুৎসিত? আল্লাহ্‌ কোন কারণে এই কথা বলেছেন?


এই সমস্যাটি মানব জাতিকে বিশেষ করে ঈমানদারদের অবশ্যই বুঝতে হবে। আল্লাহ্‌ আজ্জা ওয়া জাল্লা এই শরীরকে সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন। প্রকৃতপক্ষে, একজন পুরুষের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হল একজন নারী। زُیِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوٰتِ مِنَ النِّسَآءِ - মানুষের কাছে সবচেয়ে বেশি সুশোভিত করা হয়েছে নারী। (৩:১৪) এটি খুবই প্রভাব বিস্তারকারী শক্তি। এটি এতোই শক্তিশালী যে, কুরআনে গাছটির জন্য যে ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে সে একই ভাষা ব্যভিচারের জন্যেও ব্যবহার করা হয়েছে। "লা তাকরাবা হা-জিহিস সাজারা", "লা তাকরাবুজ জিনা"। "লা তাকরাবুল ফাওয়াহিশ।" ব্যভিচারের কাছেও যেও না। কোনো নারীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক তৈরি করার কাছেও যেও না। কোনো ধরণের নির্লজ্জতা এবং বেহায়াপনার ধারে কাছেও যেও না। অতএব, এটি খুবই ভয়ংকর।


আর এটা এমন কিছু ঠিক গাছের নিকটবর্তী হওয়ার মত, কাছে গেলেই এটা আপনাকে টেনে ধরবে। বুঝতেও পারবেন কখন যে কতদূর চলে গেছেন। ভেবেছিলেন, এটা তো শুধু দৃষ্টি বিনিময়। তাকে দেখে পছন্দ হয়ে গিয়েছিল। এরপর আবার তাকালেন। সে মুচকি হাসি দিলো। আপনিও হাসলেন। এখান থেকে ধীরে ধীরে একটা চক্রের মধ্যে আটকে গেলেন। এরপর সবকিছু সীমার বাহিরে চলে গেল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই এমন কিছুতে আটকে গেলেন বুঝতেও পারছেন না কীভাবে বের হবেন।


সুতরাং, কাছে না যাওয়ার উপদেশটি উত্তম একটি উপদেশ। কারণ, আপনি জানেন না কোথায় থামতে হবে। কিছুদূর অগ্রসর হওয়ার পর, পরে আর থামতে পারেন না। আপনি আটকে গেছেন। তো, আল্লাহ্‌ আজ্জা ওয়া জাল্লা বর্ণনা করছেন- যখন মানুষ আল্লাহর অনুমোদিত পথের বাহিরে গিয়ে একে অন্যের নিকট লজ্জাস্থান প্রকাশ করে দেয়, এটাই তখন চূড়ান্ত কদর্যতা, এটাই তখন মানুষের চূড়ান্ত কুৎসিত রূপ।


পুরুষ এবং নারীর সুন্দর একটি ভালোবাসার সম্পর্ক থাকার কথা। আল্লাহ্‌ আমাদের সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন একটি কারণে। যেন আমরা একে অন্যের প্রতি আকৃষ্ট হই। এরপর তিনি একটি ব্যবস্থাপনা তৈরি করলেন যার মাধ্যমে এই সম্পর্কটি বৈধতা পাবে। বিয়ের মাধ্যমে এই সম্পর্কটি বৈধতা পাবে।


মানুষ যখন বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণের কারণে এই সম্পর্কটি স্থাপন করতে চায়, কিন্তু এমন পন্থায় চায় যা আল্লাহর নিকট অনুমোদিত নয়, তখন সে একই সম্পর্কটি যা সৌন্দর্যের কারণে তৈরি হয়েছিল, আকর্ষণের কারণে তৈরি হয়েছিল— সেই একই সম্পর্কটি তখন কুৎসিত রূপ ধারণ করে। আর এটা শুধু শারীরিক কদর্যতা নয়। কেউ এটা শোনার পর ভাবতে পারে- আমার একটি মেয়ে বন্ধু আছে। সে সুন্দর। আমি বুঝতে পারছি না কীভাবে সে কুৎসিত হয়ে গেলো, কুরআন নাযিল হওয়ার পর।


না, না, না। আমি এটা নিয়ে কথা বলছি না। আপনার ভেতরে এক ধরণের কদর্যতা আছে। আপনার ভেতরের ভালো সত্ত্বাটি ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয় তখন। মানুষকে শুধু শারীরিক দিক থেকে সুন্দর করে সৃষ্টি করা হয়নি। মানুষকে চরিত্রের দিক থেকে সুন্দর করে সৃষ্টি করা হয়েছে, আধ্যাত্মিক দিক থেকে, নৈতিক দিক থেকে। মানুষকে তার ব্যক্তি সত্ত্বার দিক থেকে সৌন্দর্যময় করে সৃষ্টি করা হয়েছে।


আর আপনি যখন অবৈধ একটি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন, তখন আপনার ভেতরে যে সৌন্দর্যগুলো ছিল তার থেকে কিছু কিছু তখন হারিয়ে যায়। আল্লাহ্‌ আপনাকে যে সৌন্দর্যগুলো দান করেছিলেন তার থেকে কিছু কিছু তখন আপনার কাছ থেকে পালাতে শুরু করে। আপনার ভেতর থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করে ফেলা হয়।


ফলে দেখবেন, কোনো যুবক ছেলে যখন কোনো মেয়ের সাথে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে, বা কোনো মেয়ে কোনো ছেলের সাথে— তখন লক্ষ্য করবেন তারা দিন দিন তাদের পিতামাতার সাথে বদমেজাজি আচরণ থেকে আরও বেশি বদমেজাজি আচরণ করতে থাকে। দিন দিন তাদের রাগ বৃদ্ধি পেতে থাকে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, এই সম্পর্কটি তাদের জীবনের অন্যান্য দিকে কদর্যতা নিয়ে এসেছে। আপনি তখন বুঝতেও পারেন না তার এরকম পরিবর্তনের কারণ কী। এটাই হল, সাওআ বা কদর্যতা।


আরবিতে সাওআ মানে লাশ। লাশ দেখা মানুষের দৃষ্টিতে খুবই অস্বস্তিকর এবং কদর্য। এর দুর্গন্ধ, আকৃতি, গলে যাওয়া মাংস, চামড়া, পোকামাকড়— এর সবকিছুই আমাদের চিন্তায় খুবই অসহ্য।


এই চিত্রটিই আল্লাহ্‌ আজ্জা ওয়া জাল্লা তুলে ধরেছেন। অন্য কথায়, আপনার শরীর জীবনী শক্তিতে পরিপূর্ণ কিন্তু আপনার আত্মার মৃত্যু ঘটছে। আপনার আত্মা একটি লাশে পরিণত হচ্ছে।


আল্লাহ্‌ আজ্জা ওয়া জাল্লা মানব জাতিকে ফেরেশতাদের চেয়েও উত্তম মর্যাদা দিয়েছেন। ইবলিসের চেয়েও তিনি মানুষকে উত্তম মর্যাদা দিয়েছেন। আর শুধু একটি জিনিসের কারণে মানুষ এই উত্তম মর্যাদা লাভ করেছে। وَ نَفَخۡتُ فِیۡهِ مِنۡ رُّوۡحِیۡ فَقَعُوۡا لَهٗ سٰجِدِیۡنَ - “আল্লাহ্‌ যখন মানুষের ভেতর রূহ ফুঁকে দিবেন…।” শরীরকে সুন্দর করে সৃষ্টি করা হয়েছে, কিন্তু যে রূহ আল্লাহ্‌ মানুষের ভেতর ফুঁকে দিয়েছেন, যে আত্মা আল্লাহ্‌ আপনার ভেতর ফুঁকে দিয়েছেন, যে ভালো গুণগুলো তিনি আপনাকে দিয়েছেন — সেটাই আপনাকে বেশি সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছে আল্লাহর যে কোনো সৃষ্টির চেয়ে। সেটাই আপনাকে অন্যদের থেকে পৃথক করেছে।

শয়তান এটা জানে। আর তাই সে মানুষের শারীরিক সৌন্দর্যকে কাজে লাগিয়ে তাদের আত্মিক সৌন্দর্যকে কুৎসিত করতে চাইবে। এটাই তার লক্ষ্য।


এখন, এটা বলার পর, সে কীভাবে আমাদের পিতামাতাকে রাজী করালো? এটা লম্বা একটা ঘটনা, আমি তার একটি সংক্ষিপ্ত রূপ আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি। কারণ, আমাকে এই পয়েন্টে আবার ফিরে আসতে হবে। সংক্ষিপ্ত ভার্শনটি হলো, সে আদম এবং হাওয়া (আ) কে বলেছিল— শোন, তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে পৃথিবীর জন্য। "ইন্নি জা-ইলুন ফিল আরদি খালিফা" আল্লাহর সিদ্ধান্ত হলো তোমাদের দুনিয়ার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। তোমাদের জান্নাত থেকে দুনিয়াতে স্থানান্তর করা হবে যে কোনো মুহূর্তে... জান্নাত ছেড়ে পৃথিবীতে কে যেতে চায়? এখন, শোন, শুধু ফেরেশতারা এখানে থাকতে পারবে। সরি, তোমরা ফেরেশতা নও।

অথবা, তোমাদের জন্য আরেকটি উপায় আছে। যদি তোমরা জান্নাতের 'পার্মানেন্ট রেসিডেন্স' কার্ড বা গ্রিন কার্ড পাও। এটাই তোমাদের একমাত্র বিকল্প উপায়।


অতএব, ফেরেশতা হওয়ার একমাত্র উপায় হলো বা জান্নাতের চিরস্থায়ী অধিবাসী হওয়ার একমাত্র উপায় হলো, তোমাদেরকে ঐ গাছের ফল খেতে হবে। এটাই একমাত্র উপায়। তো, সে বলল, أَن تَكُونَا مَلَكَيْنِ أَوْ تَكُونَا مِنَ الْخَالِدِينَ - (৭:২০) এই গাছ থেকে আহার করো, হয় তোমরা ফেরেশতা হয়ে যাবে নতুবা জান্নাতের চিরস্থায়ী অধিবাসী হয়ে যাবে। এ জন্যই আমাদের পিতামাতা ভুলটি করেছিলেন।

এখন, এই ভুল করার পর কী ঘটলো? আল্লাহ্‌ বর্ণনা করেছেন, فَدَلَّاهُمَا بِغُرُورٍ - (৭:২২)


এই আয়াতটি ভালোভাবে বুঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, "সে তাদের পদস্খলিত করল ধীরে ধীরে।" "দাল্লাহুমা"। আরবি শব্দ 'দাল্লা' এসেছে دلو থেকে। যার অর্থ, বালতি। আগের দিনে বালতি ব্যবহার করা হতো কুপ থেকে পানি তোলার কাজে। আগেকার দিনে তারা একটি বালতি দড়ি দিয়ে বেঁধে কুপের ভেতর ফেলত, তারপর টেনে টেনে তুলত। এর নাম হল, 'আদলা দালওয়াহু'। বালতি টেনে তোলার নাম 'আদলা দালওয়াহু'। বালতি কি সাথে সাথেই উপরে উঠে আসে নাকি সময় লাগে? সময় লাগে। এটি একটি ধীর প্রক্রিয়া। আর প্রক্রিয়াটি যদি মাত্রাতিরিক্ত ধীর গতির হয়, তখন আপনি 'আদলা দালওয়াহু' বলেন না; আপনি তখন বলেন, দাল্লা দালওয়াহু। এটা অতিরিক্ত লম্বা সময় নেয়।


শয়তানকে বর্ণনা করা হয়েছে— সে তাড়াহুড়ো করে না। সে আপনাকে পথভ্রষ্ট করতে চায়। কিন্তু, সে সময় নিয়ে ধীরে ধীরে করবে। সে আপনার কাছে আসে। আপনি বলবেন, আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতনির রাজিম। সে তখন বলবে, আচ্ছা। আমি একটু পর আবার আসবো। একটু পর তোমাকে ধরব। চিন্তা করো না। আমাদের হাতে সময় আছে। আমাদের হাতে সময় আছে। সে একটু পর আবার আসবে। এরপর আবার আসবে। এরপর আবার আসবে। সে তাড়াহুড়ো করে না আপনাকে অবিশ্বাসী বানানোর জন্য বা আপনাকে দিয়ে পাপ করানোর জন্য। সে আপনার উপর প্রতিবার এক পারসেন্ট করে কাজ করবে।


আর এটা অনুধাবন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মনোবিজ্ঞানে তারা একটি বিষয় পরীক্ষা করে দেখে। এর নাম স্লো- বয়েল। ধীর গতির সিদ্ধ। তারা একটি ব্যাঙকে নিয়ে ফুটানো পানিতে ছেড়ে দেয়। এটি তখন সাথে সাথে লাফ দিয়ে বের হয়ে যায়। এরপর ব্যাঙটাকে নিয়ে স্বাভাবিক পানির একটি পাত্রে ছেড়ে দেয়া হয়। আর তারা পাত্রটির নিচে ধীরে ধীরে তাপ দিতে থাকে। একসময় তাপমাত্রা তীব্র আকার ধারণ করে। কিন্তু ব্যাঙটা কখনোই লাফ দিয়ে বের হয় না। সেখানেই তার মৃত্যু ঘটে। সে এমনকি বুঝতেও পারে না যে, তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে।


শয়তান আপনাকে দিয়ে হারাম কাজ তাৎক্ষণিক করাতে চায় না। কারণ, আপনি বুঝতে পারেন এটা করা ভুল। এবং আপনি আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করেন। তো, সে আপনার কাছে আসবে নির্দোষ সব বিষয় নিয়ে। আপনি তখন ভাববেন, এতে আর কী সমস্যা। মানুষ এটাকে শুধু শুধু খারাপ মনে করে। কিন্তু আপনি বুঝতেও পারবেন না। এরপর সে আপনার কাছে এসে সামান্য একটু পদস্খলন ঘটাবে। আপনার আশে পাশের সবাই বলবে, এটা করো না। আপনি তখন মুখ ঘুরিয়ে বলেন, "এটা কি হারাম? আমি কি এমন করেছি? আমি কি কাউকে খুন করেছি? কী ভুল করেছি আমি? আপনারা এটাকে এতো বড় ব্যাপার মনে করছেন কেন?"

শয়তান ঠিক এ কাজটাই করে। দাল্লাহুমা বি গুরুর। সে আমাদের পিতামাতার সাথেও সব ধরণের প্রতারণার মাধ্যমে এ পদ্ধতি অবলম্বন করেছিল।


ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং যে, আরবিতে 'গুরুর' মানে প্রতারণা; আবার এর দ্বারা অহংকারও বুঝায়। সে মানুষের অহমিকা জাগিয়ে দেয়। মানুষ যখন ছোটো খাটো ভুল করে, আর কেউ সে ভুল ধরিয়ে দিলে বা স্মরণ করিয়ে দিলে, এটা স্বামী হউক বা স্ত্রী হউক, বাবা হউক বা মা হউক, কেউ ভুল ধরিয়ে দিলে সাথে সাথে সে 'মাগরুর' হয়ে উঠে। সাথে সাথে রাগান্বিত হয়ে উঠে। " না। কি বলছ তুমি। তুমি কে আমার ভুল ধরার।" এভাবে তাদের ইগো ভালো হওয়ার পথ বন্ধ করে দেয়।

যে সমস্যাটা শয়তানের নিজের ছিল, অহংকারের সমস্যা, সে মানুষের ভেতরেও তা প্রবেশ করিয়ে দিতে চায়।


যাইহোক, অনেক সময় ধরে চেষ্টা করার পর সে সফল হলো। আমরা এখন শিখছি, সে আমাদের পিতামাতাকে মুহূর্তের মধ্যে গাছের কাছে নিয়ে যেতে পারেনি। আয়াত পড়ে আপনি ভাবতে পারেন, সে তাদেরকে কুমন্ত্রণা দিল আর তারা সাথে সাথে বলে উঠলো- ভালো বুদ্ধি! ঠিকাছে চল।" না, না, না। এতে অনেক লম্বা সময় লেগেছিল, তারা সেখানে যাওয়ার পূর্বে।


অবশেষে তারা তাদের আদি ভুলটি করে ফেলল। আল্লাহ্‌ আজ্জা ওয়া জাল্লা বলেন- بَدَتۡ لَهُمَا سَوۡاٰتُهُمَا - তাদের উলঙ্গতা, তাদের কদর্যতা প্রকাশিত হয়ে পড়লো। (৭:২২) এটা পরস্পরের নিকট প্রকাশিত হয়ে গেল। তাদের জামা-কাপড় খুলে গেলো। এই কাজের ফলস্বরূপ তাদের কাপড় খুলে গেলো।


এটি আসলে কুরআনের শক্তিশালী একটি দার্শনিক প্রতীকী শিক্ষা। আমরা শুধু এর ভাবকে আক্ষরিক অর্থকেই গ্রহণ করি না; কিন্তু, এর ভেতরে রয়েছে বহু প্রজ্ঞা।

যখন মানব জাতি হারামের পথ অবলম্বন করে— হোক সেটা হারাম খাদ্য, হারাম উপার্জন, হারাম আচরণ। যখন আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি যে, আমরা আল্লাহর বিধান অমান্য করবো। যখন আল্লাহ্‌ বলেন, অমুক কাজ থেকে দূরে থাকো। কিন্তু, আপনি তার থেকে দূরে থাকেন না। তখন, ধীরে ধীরে কিন্তু নিশ্চিতরূপে আপনি আপনার লজ্জাশীলতা হারিয়ে ফেলবেন। আপনি আপনার হায়া-সরম হারিয়ে ফেলবেন।


নির্লজ্জ কিছুর দিকে তাকাতে আপনার মনে কোনো দ্বিধা আসবে না। চোখ নিচু রাখতে আপনার খুব কষ্ট হবে। জিহ্বা দিয়ে নোংরা শব্দ বের হবে, এর উপর নিজের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। আপনি নির্লজ্জ হয়ে পড়বেন কথায়, নির্লজ্জ হয়ে পড়বেন দৃষ্টিতে, নির্লজ্জ হয়ে পড়বেন কাজের ক্ষেত্রে— এভাবে শুধু পতন হতে থাকবে।


আর এ সবকিছুর শুরু হয়েছিলো আপাতদৃষ্টিতে এর সাথে সম্পর্কহীন একটি ব্যাপার থেকে। আদম হাওয়ার ক্ষেত্রে, একটি গাছের ফল খাওয়া থেকে। আর আমাদের ক্ষেত্রে, যখন কোনো ব্যাপারে আমরা আল্লাহকে অমান্য করবো, তাঁর নিষিদ্ধকৃত বস্তুর নিকটে যাবো​​— আমাদেরকে দেওয়া আল্লাহর শ্রেষ্ঠ উপহার আমাদের হায়া, আমাদের লজ্জা, আমাদের শালীনতা, আমাদের দ্বিধা-দ্বন্দ্বের চেতনা চুরমার হয়ে যাবে। আমরা এর অযোগ্য হয়ে পড়বো।


তারা যখন এই কাজ করলো তাদের কাপড় খুলে গেল। ফলে তারা কী করলো? وَ طَفِقَا یَخۡصِفٰنِ عَلَیۡهِمَا مِنۡ وَّرَقِ الۡجَنَّۃِ - "তাঁরা সাথে সাথে জান্নাতের পাতা দিয়ে নিজেদের ঢাকতে শুরু করলো।" তাঁরা অপমানিত হলো এবং নিজেদের লজ্জা ঢাকতে লাগলো।


আমরা এখান থেকে কী শিখছি? পরস্পরের সম্মুখে উলঙ্গ না হওয়াটা আদম সন্তানের প্রকৃতিতেই আছে। পোশাক-পরিচ্ছদ পরে থাকা, নিজেদের লজ্জা ঢেকে রাখা এটা আদম সন্তানের সহজাত প্রকৃতিতে স্থাপন করে দেওয়া হয়েছে। এ জন্য মানব জাতির সকলে সহজাতভাবে নিজেদের ঢেকে রাখতে পছন্দ করে। বাচ্চা মেয়ে বা বাচ্চা ছেলে, সামান্য বুদ্ধি হলেই... দুই বছর বয়স, তিন বছর বয়স, চার বছর বয়স, খুবই ছোট, তাদেরকে কোনো ভাবেই এখনো বুদ্ধিমান সচেতন প্রাণী বলা যায় না; কিন্তু মা জামা পরানোর সময় বাবা যদি সামনে এসে যায়, তারা লজ্জিত হয়ে পড়ে। তারা কম্বলের নিচে লুকিয়ে পড়ে। আল্লাহ্‌ মানব জাতির ভেতর প্রাকৃতিকভাবে লজ্জার চেতনা স্থাপন করে দিয়েছেন।


কিন্তু তখন কী হয় যখন শয়তান কুমন্ত্রণার পর কুমন্ত্রণা দিতে থাকে? সে কুৎসিত সবকিছুকে মানুষের নিকট সুন্দর হিসেবে উপস্থাপন করে। "ওয়া জাইয়ানা লাহুমুস শাইতানু আ'মালাহুম।" শয়তান তাদের কাজগুলোকে তাদের নিকট সুন্দর হিসেবে উপস্থাপন করে।


ঈমান থাকলে, বিশ্বাস থাকলে আল্লাহ্‌ যাকে কুৎসিত বলেছেন আমরাও তাকে কুৎসিত মনে করি; আল্লাহ্‌ যাকে সুন্দর বলেছেন আমরাও তাকে সুন্দর মনে করি। কিন্তু, যদি শয়তানকে আপনার অন্তরে প্রবেশ করতে দেন, যে জিনিসগুলো কুৎসিত মনে হওয়ার কথা ছিল তাই আপনার কাছে সুন্দর মনে হওয়া শুরু করবে।

এরপর সমাজের অবস্থা এমন পর্যায়ে এসে উপনীত হয়, আপনি যত কম জামা-কাপড় পরবেন, আপনার জামা-কাপড় যত খোলামেলা হবে, রাসূল যেমন বলেছেন, "কা-সিয়াত আ-রিয়াত"। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। একসময় মহিলারা এমনভাবে জামা-কাপড় পরবে, যদিও তাদের শরীরে কাপড় থাকবে কিন্তু দেখতে মনে হবে উলঙ্গ। জামা-কাপড় এমন টাইট হবে, মনে হবে যেন শরীরের উপর রং করা হয়েছে; কোনো কিছু সে পরিধান করেনি। অবস্থা এমনই হবে একসময়। আর এটাই মানব জাতির কাছে সুন্দর মনে হবে।


এটা শয়তানের ফাঁদ। মানবজাতির চূড়ান্ত ব্যর্থতা তখন হবে যখন নির্লজ্জতাকে সুন্দর মনে করা হবে, উদযাপন করা হবে।


এখানে উপস্থিত অনেক যুবক ছেলের জন্য সিয়াম পালন কঠিন মনে হয়। কারণ, সে নিজে নিজে প্রতিজ্ঞা করেছে রামাদানে কোনো মুভি দেখবে না। ওরা আপনাকে মুভি দেখার জন্য কীভাবে প্ররোচিত করে? ওরা ট্রেইলার বানায়। আর এই ট্রেইলারগুলোতে কী দেখানো হয়? হয়তো এটি কোনো একশন মুভির ট্রেইলার। বিস্ফোরণ হচ্ছে, একটি গাড়ি আরেকটিকে ধাওয়া করছে, ফাইট হচ্ছে, কিছু লোকের মুখে লাথি মারা হচ্ছে, যেটাই হোক, ঠিক মাঝখানে কোথাও তারা উলঙ্গ একটি দৃশ্য যোগ করে দিবে কয়েক সেকেন্ডের জন্য। মুভির গল্পের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। তারা এটা দিয়ে লোভ দেখায় যেন আপনি বলে উঠেন "ওহ, আমাকে এখন এটা দেখতে হবে।" তারা এভাবে আপনাকে আটকে ফেলে। তারা বেহায়াপনাকে উৎযাপন করে। তারা এমন জিনিস উদযাপন করে যা মানব জাতির দৃষ্টির আড়ালে লুকিয়ে রাখার কথা ছিল।


এরপর আছে অন্য প্রান্তের কিছু লোক। " আমাদের সবসময় শালীন থাকতে হবে। আমাদের লজ্জা থাকতে হবে। আমাদেরকে নিজেদের হায়া-সরমের সংরক্ষণ করতে হবে। আস্তাগফিরুল্লাহ।" এখন, আপনি সারাজীবন ধরে সবসময় চোখ নিচু করে রাখেন। জীবনে মাটি আর ঘাস ছাড়া কোনো কিছু আপনার চোখে পড়েনি। যে মেয়েকে বিয়ে করবেন এমনকি তার দিকেও চোখ তুলে তাকান না। এমনকি বিয়ে হওয়ার পরেও...কিছু কিছু মুসলিম সংস্কৃতিতে আমরা এতোই ধার্মিক যে, আমরা কুরআনের চেয়েও বেশি ধার্মিক। আমরা রাসূল (স) এর সুন্নাহ থেকেও বেশি ধার্মিক। স্ত্রী সবসময় জিল্বাব এবং হিজাব পরে থাকে এমনকি ঘরের ভেতরেও। সে এমনকি তার স্বামীর জন্যকেও সাজে না। সে এমনকি তার স্বামীর জন্যেও সুন্দর পোশাক পরে না। সে কখনো তার স্বামীকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে না। যদি জিজ্ঞেস করেন কেন এমনটা করো না? সে বলবে, “আস্তাগফিরুল্লাহ! আস্তাগফিরুল্লাহ!” এটা আস্তাগফিরুল্লাহ নয়। তুমি যে স্বামীর কাছেও নিজেকে ঢেকে রাখো এটাই আস্তাগফিরুল্লাহ। কারণ, নারী-পুরুষের সম্পর্ক যদি সৌন্দর্যমণ্ডিত না হয়, হালাল সীমার ভেতরে, সম্পর্ক যদি হালালের ভেতরে সুন্দর না হয়, তখন শয়তান পুরুষ মানুষটির অন্তরে কুমন্ত্রণা দেওয়ার সুযোগ পেয়ে যায়। সে বলবে, "তুমি যা চাচ্ছ তা বিয়ের সীমার বাহিরে পাবে। বাহিরে পাবে।" বুঝতে পারছেন?


আল্লাহ্‌ আজ্জা ওয়া জাল্লা কুরআনে এই সুন্দর সম্পর্কের সংরক্ষণ করেছেন। যেন বিয়ের ভেতর সম্পর্কটা সুন্দর এবং রোমান্টিক থাকে। কীভাবে তিনি এটা করেছেন? আল্লাহ্‌ আজ্জা ওয়া জাল্লা একই সূরায় বলেন, তিনি বর্ণনা করেন, يَا بَنِي آدَمَ خُذُوا زِينَتَكُمْ عِندَ كُلِّ مَسْجِدٍ - "হে বনী-আদম! তোমরা প্রত্যেক নামাযের সময় সাজসজ্জা পরিধান করে নাও।" (7:31) আল্লাহ্‌র সামনে দাঁড়ানোর পূর্বে সুন্দর করে সেজে নাও। পরবর্তী আয়াতে তিনি বলেন, قُلْ مَنْ حَرَّمَ زِينَةَ اللَّهِ - “বল, ‘কে হারাম করেছে আল্লাহর সৌন্দর্যোপকরণ?”


এখান থেকে আমরা শিখতে পারি— আল্লাহ্‌ এই সৌন্দর্য সবসময় ঢেকে রাখার কথা বলছেন না। আল্লাহ্‌ বলছেন এই সৌন্দর্য প্রদর্শন করার জন্য উপযুক্ত জায়গা আছে; এর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে। তিনি আপনার এই সৌন্দর্যকে অস্বীকার করছেন না। তিনি এটা তৈরি করেছেন যেন আপনি এর প্রতি আকৃষ্ট হোন। কিন্তু, উপযুক্ত মাধ্যমে এটা পেতে হবে, যথাযথ উপায়ে এটা পেতে হবে। এ জন্যই তিনি এই সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছেন।


তিনি আরও বলেছেন, قَدۡ اَنۡزَلۡنَا عَلَیۡکُمۡ لِبَاسًا یُّوَارِیۡ سَوۡاٰتِکُمۡ وَ رِیۡشًا - সুবহানাল্লাহ! "আমি তোমাদের জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছি..." আমি পোশাক নাজিল করেছি। আল্লাহ্‌ এই আয়াতে বলছেন পোশাকও কুরআনের মত, ওহীর মত আল্লাহর নাজিলকৃত একটি উপহার। যেভাবে আমরা কুরআনকে সাজাই সেভাবে আমাদের সুন্দর পোশাক পরিধান করার কথা। শালীন কিন্তু সুন্দর পোশাক। যেন এটি আমাদের কদর্যতাকে ঢেকে রাখে। এরপর তিনি বলেছেন, وَ رِیۡشًا - পোশাক দিয়েছি তোমাদের শোভা বর্ধনের জন্য।


প্রসঙ্গত, আরবিতে ريشة এর শাব্দিক অর্থ হলো পাখির পালক। আরবিতে একটি কথা আছে- “قبلَ الرمي يُراشُ السَّهم - কাব্লার রামি ইউরাসুস সাহামু”। অর্থাৎ, তীর নিক্ষেপ করার আগে তীরের মধ্যে পালক লাগিয়ে নাও। তো, পালকের ব্যাপারটা হলো আগের দিনে মেয়েরা তাদের জামায় পালক লাগিয়ে সাজাত। এখানে মূল ব্যাপারটা হলো সৌন্দর্যমণ্ডিত করা, শোভা বর্ধন।

আল্লাহ্‌ আজ্জা ওয়া জাল্লা আসলে আমাদের গভীর প্রজ্ঞাপূর্ণ একটি ভারসাম্য দান করছেন।


আমাদের আজকের বিশ্ব— মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ আধুনিক বিশ্ব এবং মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ অঞ্চল যা ভ্রান্ত উপায়ে আধুনিক হচ্ছে, এর দিকে তাকালে আপনি কী দেখতে পান? আপনি দেখতে পান সুন্দর সুন্দর রাস্তাঘাট, আধুনিক সব দালান কোঠা, সরকার ব্যবস্থা, টেকনোলোজি— ভালো ভালো কত কিছু ঘটছে সমাজে! কিন্তু একটি ক্ষেত্রে মানবতা তার স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলছে। আর তা হলো আমরা নির্লজ্জতা এবং বেহায়াপনা উদযাপন করছি। আমরা উলঙ্গপনা উদযাপন করছি। আমরা অশ্লীলতা উদযাপন করছি। কিশোর ছেলে মেয়েরা বড়দের চেয়েও বেশি নোংরা শব্দ জানে। তারা স্কুলে পরস্পরের কাছ থেকে শিখছে। মোবাইল ডিভাইসের মাধ্যমে এমনসব জিনিসের দ্বার আপনার নিকট উন্মোচিত হচ্ছে যা আপনার আত্মাকে একেবারে ধ্বংস করে ছাড়বে।


এখন এসব জিনিস আপনার চোখের সামনে প্রতি মুহূর্তে, সবসময়। এসব ছবি দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছেন প্রতি নিয়ত। এসব শব্দ দ্বারা, এসব মেসেজ দ্বারা। একদিকে আমাদের নিজেদের রক্ষা করতে হবে। যে সৌন্দর্য আল্লাহ্‌ আমাদের ভেতরে দান করছেন, সারা জীবনের জন্য তা ঢেকে রাখা সম্ভব নয় এবং আশা করা যে এটা আমাদের উপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। এর জন্য দরকার উপযুক্ত একটি রাস্তা। উপযুক্ত একটি উপায় দরকার। অর্থপূর্ণ এবং উদ্দেশ্যপূর্ণ উপায়ে এর মুক্তি দরকার। আর তা হল বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠান। এটাই সেই প্রতিষ্ঠান। আল্লাহ্‌ আজ্জা ওয়া জাল্লা আমাদের খুব সুন্দর প্র্যাক্টিক্যাল একটি ধর্ম দান করেছেন। তিনি আমাদের থেকে সাধু সন্ন্যাসী হওয়া আশা করেন না। তিনি এমনটা আশা করেন না।


সাহাবা রাদিয়াল্লাহুম আজমাইন তথা রাসূল (স) এর সঙ্গীদের ইসলামের পূর্বেও একটি জীবন ছিল। ইসলামের পূর্বেও তাঁদের এক ধরণের জীবন ছিল। আর সে সময় তাঁরা ঠিক এমন ছিলেন না যে- "আস্তাগফিরুল্লাহ! ঐদিকে আপুরা আছেন।" সে সময় তাঁরা এমন জীবন পার করেননি। ইসলামের পূর্বে তাঁদের কারো কারো রোমান্টিক জীবন ছিল। কেউ কেউ এমনই ছিলেন। এমনকি ইসলাম গ্রহণ করার পরেও সেই জীবন থেকে বের হয়ে আসা তাঁদের জন্য কষ্টকর ছিল। একদিন এক সাহাবী রাসূল (স) এর কাছে এসে বলেন, "ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি খুব দুঃখিত। আমি রাস্তায় এক মেয়েকে চুম্বন করে ফেলেছি।"


একজন সাহাবী!! এটা করেছেন! রাস্তায়! রাসূল (স) তাঁকে কয়েক রাকাত নামাজ পড়তে বললেন। কারণ, তিনি ধীরে ধীরে ভালো হচ্ছেন। তিনি আস্তে আস্তে ভালো হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।


আমি বলছি না যে এমনটা করা আপনাদের জন্য বৈধ। কিন্তু, আমি বলছি যারা মাত্র ইসলামে প্রবেশ করেছেন। এটা তাঁদের জন্য একটা জার্নি ছিল। রাসূলুল্লাহ (স) তাঁকে এভাবে ধমক দেননি- তুমি কি আদম আলাইহিস সালামের ঘটনা শোননি? তুমি কি জাননা এই কারণে আমাদেরকে জান্নাত ত্যাগ করতে হয়েছিলো? আর তুমি সেই শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করছ!!


না, তিনি লম্বা কোনো লেকচার দেননি। জাস্ট দুই রাকাত নামাজ পড়। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। এমনটা যেন আর না ঘটে। নিজের উপর এতো কঠোর হবে না।

আপনাদের কেউ কেউ অতীতে ভুল করেছেন। আর কেউ কেউ এখনো করে যাচ্ছেন। আল্লাহর কাছে ফিরে আসার এটাই সেরা সময়। কয়েক রাকাত নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে শক্তি-সামর্থ্য প্রার্থনা করুন যেন আপনি সেই সম্পর্কগুলো থেকে বের হয়ে আসতে পারেন, যেন সেই আসক্তিগুলো থেকে বের হয়ে আসতে পারেন। অন্য কাউকে এ সম্পর্কে জানতে হবে না। আপনাকে আমার কাছে এসে বা অন্য কারো কাছে গিয়ে এ অপরাধগুলো স্বীকার করতে হবে না। আল্লাহ্‌ জানেন আপনি কীসের মধ্যে আটকে আছেন। আল্লাহ্‌ ইতোমধ্যে জানেন। যদি নিজের অন্তরে যথেষ্ট শক্তি না পান এই রমজান মাসে, তবে এ শক্তি আর কখনোই পাবেন না। এ ধরণের সমস্যাগুলো থেকে বের হয়ে আসার এটাই শ্রেষ্ঠ সময়। এর চেয়ে উত্তম কোনো সময় হতে পারে না।


তাই, আমি আল্লাহ্‌ আজ্জা ওয়া জাল্লা এর নিকট প্রার্থনা করছি, আপনাদের মাঝে যারা, আমাদের মাঝে যারা জীবনে ভুল করেছেন বা এখনো করে যাচ্ছেন আল্লাহ্‌ যেন আমাদের এমন ঈমানের শক্তি দান করেন যার ফলে আমরা এ ধরণের ভুলগুলো থেকে বের হয়ে আসতে পারি। এবং আমরা যেন বুঝতে পারি যে এগুলো আসলে শয়তানের চাল, যার মাধ্যেম সে আমাদেরকে তার দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা যেন তার কাছে থেকে সরে আসতে পারি। এবং আল্লাহর অনুমোদিত উপায় অবলম্বন করতে পারি যা অন্যথায় হারাম, আল্লাহ্‌ আমাদের জন্য যে পথ খোলা রেখেছেন সে পথ যেন অবলম্বন করি, হালালের পথ যেন অবলম্বন করি।


— নোমান আলী খান

পঠিত : ৭১০ বার

মন্তব্য: ০