Alapon

যে পাঁচটি কাজের মাধ্যমে আমরা নিত্যদিন পরিবেশ দূষণ করছি...



কখনো কি ভেবে দেখেছেন, আমরা পরিবেশ সম্পর্কে কতটা জানি? আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছে, যারা মনে করে আমরা পরিবেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং পরিবেশ নষ্ট করার মতো আমরা কিছুই করি না। কিন্তু দৈনন্দিন জীবনে আমরা এমন কিছু কাজ করি, যেগুলো মারাত্মকভাবে পরিবেশ নষ্ট করে। অথচ সে বিষয়ে আমরা তেমন কিছুই জানি না। আজ আমরা তেমনই ৫ টি বিষয় সম্পর্কে জানবো, যেগুলো আমরা নিরাপদ মনে করে নিত্যদিনই ব্যবহার করছি। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সেই ৫ টি জিনিস পরিবেশকে দারুণভাবে নষ্ট করছে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক-

* অতিরিক্ত গোশত, মাছ ও ফল খাওয়া: এই খাবারগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ উপকারী। কিন্তু এগুলো অতিরিক্ত গ্রহণ করা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। ২০১৮ সালেই গ্রীনপিস সতর্ক করে দেয় যে, গ্রীনহাউজ গ্যাস ইমিউশনের ১৪.৫%-ই ইন্ড্রাস্ট্রি থেকে নির্গত হয়। উল্লেখ্য, বিশ্বের প্রায় ৭০-৭৫ শতাংশ জমিই এখন ইন্ডাস্ট্রির কাজে ব্যবহার হচ্ছে। অথচ এই জমিগুলো যদি চাষাবাদ করা যেত, তাহলে এখান থেকে আর ৪ বিলিয়ন মানুষের খাবার উৎপাদন করা যেত। এতে পরিবেশেরও কোনো ক্ষতি হতো না। আর অতিরিক্ত মাছ আহরন শুধু পরিবেশেরই ক্ষতি করে না, একই সাথে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করে।

* কফি পড ও টি ব্যাগের ব্যবহার: ব্রিটিশ প্যাকেজিং কোম্পানী হালো এর হিসাবনুসারে বিশ্বব্যাপী বছরে ৭ বিলিয়ন কফি পড ডাস্টবিনে জমা হয়। আর মিনিটে জমা হয় ১৩৫০০ টি। এই পডগুলোর অধিকাংশই অ্যালুমিনিয়াম আর প্ল্যাস্টিক দিয়ে বানানো হয়। আর অ্যালুমিনিয়াম ও প্ল্যাস্টিক পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কারণ, এগুলো রিসাইকেল করে ব্যবহার করা যায় না, এবং সম্পূর্ণরূপে নষ্টও করা যায় না। যার কারণে এগুলো থেকে নির্গত ক্ষতিকারক উপাদান দিনের পর দিন পরিবেশকে নষ্ট করতে থাকে।

একইসাথে টি ব্যাগও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কারণ, টি ব্যাগ থেকে নাইলন বা পলিথিন টেরিফথালেট (পিইটি) নির্গত হয়- যা পেট্রোলিয়াম সমৃদ্ধ এক ধরণের প্লাস্টিক। এগুলো পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এ কারণে বিশেষজ্ঞরা টি ব্যাগ ব্যাবহার কমিয়ে চা পাতা ব্যবহার করার বাড়িয়ে দেওয়া কথা বলেছে।

* কাগজের ব্যাগ ব্যবহার করা: জাতিসংঘের মতে, সারাবিশ্বে যে বছরে ৫ বিলিয়ন প্ল্যাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহৃত হয়, তার তুলনায় কাগজের ব্যাগ তেমন ক্ষতিকর নয়। কিন্তু বাস্তবতা বলে ভিন্ন কথা। একটি প্ল্যাস্টিকের ব্যাগ তৈরি করতে যে পরিমান অ্যানার্জির প্রয়োজন হয়, কাগজের ব্যাগ তৈরি করতে তার চেয়ে চার গুন বেশি অ্যানার্জির প্রয়োজন হয়। সেইসাথে কাগজ তৈরি করতে প্রচুর পরিমাণে কাঠ ও পানির প্রয়োজন হয়, একইসাথে প্রচুর গ্যাসেরও প্রয়োজন হয়। পরবর্তিতে যেগুলো পরিবেশকে দূষিত করে। তাই বিশেষজ্ঞরা কাগজের ব্যাগ ব্যবহারের পরিবর্তে কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করার পরামর্শ প্রদান করেন। আর কাপড়ের ব্যাগ টিকে বহুদিন এবং পরিষ্কার করে পুনরায় ব্যবহার করা যায়। যার ফলে কাপড়ের ব্যাগ বর্জ কমই তৈরি করে।

* বেশিরভাগ লন্ড্রিসাবান বিষাক্ত: লন্ড্রি সাবান তৈরিতে রং এবং অন্যান্য বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়। যেমন, ফসফেট, সারফেকটেনডস, ১.৪ ডায়োক্সাইন সলফেন্ট, অপটিক্যাল হোয়াইটেনার- যেগুলো কখনোই ভাঙে না। এগুলো শরীরে অ্যালার্জি তৈরি করে এবং সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের ব্যাপক ক্ষতি করে।

*বোতলজাত পানি গ্রহণ: প্ল্যাস্টিকের বোতল পরিবেশ দূষণের একটি পরিষ্কার উদাহরণ। গ্রীনপিসের মতে, একটি প্ল্যাস্টিকের বোতল পঁচতে ৫০০ বছর সময় লাগে। এই বোতলগুলো- যা বছরে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন উৎপাদন হয়- বোতলজাত পানিতে থাকা মাইক্রো পার্টিকেলগুলোর কারণে আমাদের স্বাস্থ্যহানি ঘটতে পারে। যদিও বোতলজাত পানিকে স্বাস্থ্যকর মনে করা হয়, কিন্তু বাস্তবতা হলো প্ল্যাস্টিকের বোতলটাই স্বাস্থ্যকর নয়; আর পানি বিশুদ্ধ থাকা তো পরের কথা। তাই প্ল্যাস্টিকের বোতল আমাদের পরিবেশ নষ্ট করছে, আর প্ল্যাস্টিকের বোতলে থাকা পানি আমাদের স্বাস্থ্যের হানি ঘটাচ্ছে।

উপরের এই ৫ টি কাজের মাধ্যমে আমরা প্রায় প্রতিদিনই পরিবেশের দূষণ ঘটাচ্ছি। আমরা যদি একটু সচেতন হই এবং এগুলোর বিকল্প ব্যবহার করি, তাহলে পরিবেশের দূষণ অনেকটাই কমে আসবে এবং আমরা সুস্থ জীবন যাপন করতে পারবো।

পঠিত : ২৭৯ বার

মন্তব্য: ০