Alapon

আল্লাহর প্রিয়বান্দারা কৃতজ্ঞ হতে ভুলে যায় না...



সুরা কাহাফ পড়তে বসলেই আমি যুলকারনাইন পার্টটা আসার অপেক্ষায় থাকি। ফ্যাসিনেটিং লাগে। মাত্রই বিশাল বিশাল কিছু রহস্যভেদ হল, ব্রেইনটা এখনও প্রসেস করছে আর এমনই মুহূর্তে আল্লাহ যুলকারনাইন এর আবির্ভাব ঘটালেন । উনি সামান্য কোনো মানুষ ছিলেন না। উনি একজন বাদশাহ ছিলেন। যেনতেন বাদশাহ না, আল্লাহ উনাকে দিয়ে বিশাল একটা কাজ করিয়েছিলেন। উনাকে আল্লাহ অঢেল সম্পদ দিয়েছিলেন। এত সম্পদ উনার মনে এতটুকুও সম্পদের প্রতি লোভ আনেনি। উনি ছিলেন আল্লাহর হক্ব আদায়ে খুব সতর্ক। তবুও উনার জাতি উনাকে কপালে আঘাত করে হত্যা করে। আল্লাহ উনাকে আবার জীবিত করেন। এজন্য উনার নাম যুলকারনাইন হতে পারে। [০১]

আবার অনেকে মনে করেন উনি পূর্ব- পশ্চিমের সব দেশ জয় করেছিলেন তাই এটি উনার উপাধি । আবার উনার কপালে শিংয়ের মত দুইটি ক্ষত থাকায় এমন নামকরণ হতে পারে৷ [২] আল্লাহ সঠিক জানেন।

যুলকারনাইন দেশ জয় করতে করতে পশ্চিমের একদম কিনারায় চলে গেলেন। সামনে শুধু সমুদ্র। উনার মনে হচ্ছিল যে সূর্য এখানেই ডুবে যায়। উনি একটি অঞ্চল জয় করলেন। আবার পূর্ব দিকে রওনা করলেন। একবারে শেষ প্রান্তে। এখান দিয়ে সূর্য উঠে। দেখলেন এক জনপদ যারা উত্তপ্ত মরুভূমিতেও কোনো পোষাক পরেনা। এইটুকু বলে আল্লাহ আর কিছু জানাননি। আল্লাহ যা জানান তা আমরা জানি, আর যা জানাবেন না তা জানার সুযোগ আমাদের নেই।

যুলকারনাইন আবার রওনা করলেন অন্য কোনো দিকে। দুই পাহাড়ের মাঝখানে এক গোত্রের সাথে দেখা হল এবার। তারা বিশাল সমস্যায় ছিল। এমন কিছু মানুষ ছিল যারা তাদের খুব জ্বালাতন করত। ইয়াজুজ-মাজুজ। পাহাড় দুইটি তাদের হাত থেকে কিছুটা রক্ষা করলেও গিরিপথ ব্যবহার করে ইয়াজুজ-মাজুজ তাদের উপর আক্রমণ চালাত। [০৩]

জনপদের লোকজন যুলকারনাইন এর কাছে অনুরোধ করলেন যে খরচ আমরাই দেব, আপনি তাদের ও আমাদের মাঝে একটা দেয়াল করে দেন। যুলকারনাইন অর্থ না নিয়ে তাদের শ্রম ও উপকরণ নিলেন। গিরিপথের দুই প্রান্ত লোহার পাত দিয়ে পাহাড় পরিমাণ উঁচু করলেন। আগুন জ্বালিয়ে লোহার পাতগুলো উত্তপ্ত করে গলিত লোহা বা তামা দিয়ে সিলগালা করে দিলেন। ইয়াজুজ-মাজুজ না পারলো দেয়াল টপকাতে, না পারলো খুঁড়ে বের হতে। তারা আটকে রইল। যুলকারনাইন জানালেন যে এমন সময় আসবে যে আল্লাহ এই প্রাচীর মাটির সাথে মিশিয়ে দিবেন। তাদের পথ খুলে যাবে আর যেন তারা ঝাঁকে ঝাঁকে দ্রুতবেগে বের হতে থাকবে। তারা থাকবে প্রচণ্ড শক্তিশালী ।

ঈসা আ. তার সঙ্গীদের নিয়ে তুর পাহাড়ে আশ্রয় নিবেন। বাকি মুসলিমরাও নিরাপদ স্থানে অবস্থান নিবেন। প্রচণ্ড খাদ্য সংকট দেখা দিবে। একসময় ঈসা আ. ও মুসলিমদের দোয়ায় এক মহামারীতে এই ইয়াজুজ-মাজুজ ধ্বংস হবে। পৃথিবী ভরে যাবে তাদের লাশ দিয়ে। আল্লাহ একদল পাখি পাঠাবেন যারা লাশগুলো উঠিয়ে আল্লাহর মর্জিমাফিক জায়গায় ফেলবে। বৃষ্টি এসে পৃথিবী ধুয়েমুছে সাফ করে দিবে। পৃথিবীর জমিনে আল্লাহ এতটাই বরকত দিবেন যে একটি ডালিম একদল লোকের জন্য যথেষ্ট হবে। কিয়ামত নিকটবর্তী হলে আল্লাহ মনোরম এক বাতাস প্রবাহ করবেন। এতে মুসলিমদের বগলে এক ধরনের রোগ হবে যার ফলে সব মুসলিম মারা যাবে। শুধুমাত্র অবিশ্বাসীদের উপর কেয়ামত আসবে। মুসলিমের এক হাদীসে এই নিয়ে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। [০৪]

যুলকারনাইন এত এত সম্পদ লাভ করেও উনি যে আল্লাহর এক বান্দা, এই পরিচয় ভুলে যান নি। এমন এক প্রাচীর গড়েও উনি আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী যে এটি টিকে থাকবে, এটি ভুলে যান নি। অথচ এইটাই সত্য যে আমরা যত যাই করি না কেন, তা যতক্ষণ আল্লাহর ইচ্ছা হবে ততদিন তা আমাদের কাজে দিবে। আমরা আমাদের দিক দিয়ে কাজ করব, সেটা বহাল রাখার মালিক আল্লাহ। আল্লাহর উপর ভরসা করার অর্থ আমার কাছে এইটাই মনে হয়। আল্লাহু আ'লাম।

সুরা কাহাফ (৮৩-৯৯) নং আয়াত ও বিশ্বস্ত তাফসীর থেকে সংকলিত।
[০১] মুখতারাঃ ৫৫৫, ফাত্হুল বারীঃ ৬/৩৮৩],
[০২] [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর],
[০৩] [উসাইমীন, তাফসীরুল কুরআনিল কারাম],
[০৪] [মুসলিমঃ ২৯৩৭]।

- Ibn Musabbir

পঠিত : ২৩৫ বার

মন্তব্য: ০