Alapon

বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের দর্পচূর্ণ করে দিয়েছে...!



প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের একটি নাটক দেখেছিলাম, নাম ‘খেলা’। সেই নাটকে একজন মাস্টার থাকেন-যার নাম হোসেন স্যার। তিনি দাবা খেলায় খুবই উস্তাদ। তিনি তার এক কলিগের সাথে প্রায় প্রতিরাতেই দাবা খেলেন। কিন্তু তার কলিগ হোসেন স্যারের সাথে কখনোই দাবা খেলায় পারে না।

একদিন হোসেন স্যারের স্কুলে একজন ব্যক্তি আসেন, নাম লোকমান হাকিম। তিনি আশেপাশের সমস্ত এলাকার মধ্যে দাবা খেলায় চ্যাম্পিয়ন। হোসেন স্যারের স্কুলে এসে লোকমান হাকিম স্কুলের হেডমাস্টারকে চ্যালেঞ্জ করেন যে, আমি আপনার স্কুলের মাস্টার হোসেন সাহেবকে দাবা খেলায় অনায়াসে হারিয়ে দিবো। এই কথাটা হেড মাস্টারের ইগোতে লাগে। তখন তিনি স্কুলের মাঠে দাবা খেলার আয়োজন করেন। লোকমান হাকিম মুখে পান নিয়ে আয়েশি ভঙ্গিতে খেলতে লাগলেন। বিপরীত দিকে একদম চুপচাপ আর শান্ত ভঙ্গিতে খেলে যেতে লাগলেন হোসেন স্যার। লোকমান হাকিম হোসেন স্যারের একটি করে সৈন্য খান আর মুখে পান গুজে দেন। এভাবে আয়েশি ভঙ্গিতে খেলতে খেলতে লোকমান হাকিম এক পর্যায়ে দেখলেন, তার রাজা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এরপর আর উপায়ন্তর না দেখে শেষ পর্যন্ত লোকমান হাকিম পরাজয় বরণ করে নেয় এবং স্বীকার করে নেয় যে, হোসেন স্যার দাবা খেলায় চ্যাম্পিয়ন। সেই থেকে লোকমান হাকিমের নাম হয়ে যায় দর্পচূর্ণ লোকমান হাকিম।

একইভাবে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট টিম এবং অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ডের দর্পচূর্ণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। মূলত, অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের বাংলাদেশে টেস্ট ম্যাচ খেলতে আসার কথা ছিলো। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া টেস্ট ম্যাচ বাতিল করে এবং টি-টুয়েন্টি ম্যাচ খেলার প্রস্তাব দেয়। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সেই প্রস্তাব মেনে নেয়। এরপর দেখা গেল অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশে তাদের দল পাঠাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু মূল দল পাঠাচ্ছে না। তাদের প্রথম সারির সমস্ত ব্যাটসম্যানকে বিশ্রামে রেখে দল ঘোষণা করা হয়েছে। আর ভাবখানা দেখে মনে হচ্ছিল, বাংলাদেশকে বধ করার জন্য এই দলটাই যথেষ্ট।

প্রথম টি-টুয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের প্লেয়ারদের শারীরিক ভাষাও ছিলো তেমন। যেমন, তারা উইকেট পাওয়ার পর খুব একটা উল্লাস করতো না। ভাবখানা এমন যে, এটা তাদের জানাই ছিলো-এই বলেই উইকেট পাওয়া যাবে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের শারীরিক ভাষা ছিলো হোসেন মাস্টারের মত। একদম চুপ, শান্ত-আন্ডারডগ টিমের যেমনটা হয় আর কি! প্রথম টি টুয়েন্টিতে পরাজয়ের পরপরই অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের শারীরিক ভাষা বদলে যেতে শুরু করলো। দ্বিতীয় টি টুয়েন্টিতে দেখা গেল, তারা উইকেট পাওয়ার সাথে সাথে উল্লাস করছে। এই উল্লাসের মাত্রাটা তৃতীয় টি টুয়েন্টিতে আরও বেশি লক্ষ্য করা গেছে। কারণ, সিরিজ বাঁচানোর জন্য ওই ম্যাচটা ছিলো ডু অর ডাই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই ম্যাচটাও অস্ট্রেলিয়াকে হারতে হয়।

চতুর্থ ম্যাচে এসে অস্ট্রেলিয়া জয় লাভ করলেও, সেই জয় পেতে অস্ট্রেলিয়াকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। আর শেষ টি টুয়েন্টির কথা ভেবে হয়তো অস্ট্রেলিয়ার ক্যাপ্টেন ম্যাথু ওয়েড বহুদিন ঠিকমতো ঘুমাতেই পারবেন না। কারণ, বাংলাদেশ কেন, যেকোনো দলের কাছে মাত্র ৬২ রানে অলআউট হওয়া ভীষণ লজ্জারই বৈকি। আর সেই দলটা যদি হয় অস্ট্রেলিয়া তাহলে তো আরও বেশি লজ্জার।

মোদ্দাকথা, বাংলাদেশ নিজেদের হোম কন্ডিশনটা বেশ ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছে। হোম কন্ডিশন আর সম্মেলিত পারফরম্যান্স দিয়ে বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের দর্পচূর্ণ করে দিয়েছে।

পঠিত : ৫১৯ বার

মন্তব্য: ০