Alapon

ইয়াজিদের পথ ও হুসাইন রা.-এর পথ



একদিন মুয়াবিয়া রা. ইন্তেকাল করলেন। সেসময় ইয়াযিদ ছিল হিমসের হাওয়ারিন দূর্গে। সেখান থেকে মৃত্যুর সংবাদ শুনে দ্রুত রাজধানী দামেশকে চলে আসেন। ইয়াযিদ আসার আগেই মুয়াবিয়া রা.-এর দাফন সম্পন্ন হয়ে যায়।

যেহেতু মুয়াবিয়া রা. আগেই ইয়াজিদের পক্ষে বাইয়াত নিয়ে নিয়েছেন তাই পরবর্তী শাসক নিয়ে কোনো বিশৃঙ্খলা হয়নি দামেশকে। ইয়াজিদ রাষ্ট্রের সভাসদ এবং দামেশকবাসীর উদ্দেশ্যে শোক বক্তব্যে বলেন,
"মুয়াবিয়া নিঃসন্দেহে আল্লাহর বান্দাদের মধ্য থেকে একজন বান্দা ছিলেন। আল্লাহ তাআলা তার উপর অনুগ্রহ বর্ষণ করেছেন। তারপর নিজের কাছে নিয়ে গিছেন। তিনি পূর্ববর্তীদের থেকে মর্যাদার দিক থেকে কম হলেও পরবর্তীদের থেকে উত্তম ছিলেন। আমি আল্লাহর কাছে তাঁর পক্ষে সাফাই গাইছি না। কেননা, আল্লাহ তাআলাই তার ব্যাপারে ভালো জানেন। যদি তার ক্ষমা হয়, তাহলে এটা আল্লাহর রহমাত। আর যদি পাকড়াও হন, তাহলে তা নিজের পদস্খলনের কারণে। তারপর জিম্মাদারী আমাকে দেয়া হয়েছে। কোন কিছুর অন্বেষণে আমি ব্যথিত নই এবং কোন কিছুর বর্জনে আমি কৈফিয়ত দানকারী নই। কিন্তু যা আল্লাহ তাআলা মঞ্জুর করেন, তা’ই হয়"।

রাষ্ট্রের দায়িত্ব নেওয়ার সময়ই ইয়াজিদ নিশ্চিত করেছেন তিনি তার কাজের জন্য কারো কাছে জবাবদিহী করবেন না। এরপর তিনি সারা মুসলিম জাহানে মুয়াবিয়া রা. এর মৃত্যুর খবর ও ইয়াজিদের কাছে বাইয়াত নেওয়ার জন্য দূত পাঠান। তিনটি স্থান থেকে বাধা আসার সম্ভাবনা ছিল। সেগুলো হলো কুফা, বসরা ও মদিনা। এই তিন স্থানে গভর্নর ছিলেন যথাক্রমে নু’মান বিন বশীর রা., উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদ এবং ওলীদ বিন উতবা।

বসরায় উবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদের কঠোর শাসনে কেউ ইয়াজিদের কাছে বাইয়াত নেওয়ার ব্যাপারে বিরত থাকতে পারে নি। তবে কুফা ও মদিনায় বেশিরভাগ মুসলিম ও প্রভাবশালী ব্যাক্তিবর্গ ইয়াজিদের বাইয়াত গ্রহণ করে নি।

মদিনার চারজন গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হুসাইন রা., ইবনে যুবায়ের রা., ইবনে ওমর রা. এবং ইবনে আবু বকর রা. আগে থেকেই অর্থাৎ মুয়াবিয়া রা.-এর সময় থেকেই ইয়াজিদের খলিফার উত্তরাধিকার হওয়ার ব্যাপারে বাধা দিয়েছেন। মুয়াবিয়া রা. তাদেরকে অস্ত্রের মুখে বাইয়াত নিতে বাধ্য করেছেন।

ইয়াযিদ সিংহাসনে আরোহনের পর মুয়াবিয়া রা. এর আযাদকৃত গোলাম রুযাইককে মদিনার গভর্নর ওলীদ বিন উতবার নিকট প্রেরণ করে। এই মর্মে নির্দেশ দেন যে, ওলীদ যেন হুসাইন রা. ও আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের রা.-কে দ্রুত তার নিজের কাছে ডেকে আনে এবং তাদের থেকে বাইয়াত নেয়।

পত্রবাহক যখন মদীনায় পৌঁছে, তখন রাত হয়ে গিয়েছিল। সে গভর্নর ওলীদ বিন উতবার সাথে সাক্ষাৎ করে গুরুত্বপূর্ণ সংবাদটি পৌঁছায়। ওলীদ বিন উতবা সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথেই প্রথমে আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের রা. এবং তারপর হুসাইন রা.-কে গভর্নর হাউসে ডেকে আনেন। এরপর বাইয়াত হবার জন্য অনুরোধ করেন।

আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের রা. জবাবে বলেন, “বাইয়াত হবার এটা কোন সময় নয়। তাছাড়া আমার মত ব্যক্তি একাকি লুকিয়ে বাইয়াত হবো না। আপনি কালকে মিম্বরে বসে আমার বাইয়াত গ্রহণ করুন”। এরই মাঝে হুসাইন রা. উপস্থিত হলেন। ওলীদ বিন উতবা ইবনে যুবায়েরের কথাকে যুক্তিযুক্ত মনে করলেন। তাই হুসাইন রা.-কেও বাইয়াত হবার জন্য কোনো চাপ সৃষ্টি করলেন না। উভয়কে বাইয়াত ছাড়াই যাবার অনুমতি দিয়ে দিলেন।

তারা উভয়ে বুঝে গেলেন যে, বাইয়াত না হলে তাদের উপর রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কঠোরতা করা হবে। তা’ই রাতের শেষ প্রহরে আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের রা. বিকল্প একটি রাস্তা দিয়ে মদিনা থেকে বের হয়ে মক্কা রওনা হয়ে গেলেন। ওলীদ যখন সকালে তার অনুপস্থিতির কথা জানতে পারলো, তখন তার খোঁজে ৩০ বা ৮০ জন ঘোরসওয়ার প্রেরণ করল। কিন্তু তারা আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের রা.-কে খুঁজে পেল না। একইভাবে হুসাইন রা.ও তার পরিবারসহ মদিনা থেকে উধাও হয়ে যান।

এদিকে আব্দুল্লাহ বিন উমার রা. ও ইবনে আব্বাস রা. উপয়ান্তর না দেখে বাইয়াত নেন। মুয়াবিয়া রা.-এর সামনে তারা দৃঢ়তা দেখাতে সক্ষম হলেও ইয়াজিদ বাহিনীর সামনে দৃঢ়তা দেখাতে পারেননি। এতে বুঝা যায় ইয়াজিদ ও তার বাহিনীর ফাসেকি আচরণ তাদের দুর্বল করে দিয়েছে। একই কথা হুসাইন রা. ও ইবনে যুবাইর রা.-এর জন্যও সত্য। তারাও ইয়াজিদ বাহিনীর মুখোমুখি হতে চাননি।

তাঁরা মদীনা থেকে মক্কাকে নিরাপদ আশ্রয় মনে করার কারণ এই ছিল যে, মক্কা পবিত্র শহর। রাষ্ট্রপক্ষীয় দায়িত্বশীলরা ক্ষমতা প্রয়োগ করে উক্ত পবিত্র ভূমির পবিত্রতা বিনষ্ট করার সাহস করবে না। দামেশক থেকে মদীনা কাছে। কিন্তু মক্কা বেশ দূরে। তাছাড়া মদীনার তুলনায় মক্কা ছিল পাহাড়ে ঘেরা শহর। যাতে সহজেই রাষ্ট্রীয় সেনাদের থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখা সহজতর ছিল। এসকল কারণে হযরত হুসাইন রা. এবং আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের রা. মদিনা ছেড়ে মক্কায় নিজেদের অধিক নিরাপদ মনে করলেন।

ইয়াজিদের শাসনামলে সাহাবাদের বড় অংশ যারা মদিনায় ছিলেন তারা দুই কারণে বাইয়াত হতে রাজি ছিলেন না। প্রথমত সে মুসলিমদের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য যোগ্য মানুষ ছিল না। নেতা হওয়ার যোগ্যতার ব্যাপারে ইসলামের গাইডলাইন আছে। রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, মানুষের ইমামতি করবে সে-ই, যে কুরআন ভাল জানে। যদি কুরআন জানায় সকলে সমান হয়, তবে যে সুন্নাহ বেশি জানে। যদি সুন্নাহেও সকলে সমান হয়, তবে যে হিজরত করেছে সে। যদি হিজরতেও সকলে সমান হয়, তবে যে বয়সে বেশি। কেউ যেন অপর ব্যক্তির অধিকার ও সেইস্থলে ইমামতি না করে এবং তার বাড়িতে তার সম্মানের স্থলে অনুমতি ব্যতীত না বসে।

আল্লাহর রাসূল সা. যখন এটি বলেছেন তখন ইসলামের জন্য বড় ত্যাগ ছিল হিজরত। তাই হিজরতকে যোগ্যতা হিসেবে ধরা হয়েছে। পরবর্তী যুগে যারা ইসলামের জন্য বেশি ত্যাগ করবে এটি তাদের ৩য় যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হবে। যাই হোক ইয়াজিদের নেতা হওয়ার এই সকল গুণের কোনোটাই ছিল না। উলটো তিনি নামাজ ছেড়ে দিতেন, রেশমি কাপড় পরতেন, মদ্যপায়ী ছিলেন, প্রেমাসক্ত কবিতায় লিখতেন ও মজে থাকতেন। এরকম লোক কীভাবে মুসলিমদের নেতা হয়!

দ্বিতীয়ত নির্বাচন পদ্ধতি। আদর্শ নিয়ম হচ্ছে শুরা কর্তৃক নির্ধারণ করবে কে হবে নেতা। যার কাছে উল্লিখিত গুণাবলী থাকবে এবং যাকে মুসলিমরা ভোট দিবে বা সমর্থন দিবে তিনিই হবেন নেতা। জোর করে নেতা হওয়া অথবা পিতার উত্তরাধিকার হিসেবে মুসলিমদের নেতা হওয়া ইসলামে বৈধতা নেই।

রাসূল সা. বলেন, ইবনে উমর রা. বলেন, রাসূল সা. বলেছেন, তিন ব্যক্তির নামাজ কবুল হবে না। যে কোন গোত্র বা জাতির ইমাম হয়েছে অথচ তারা তাকে পছন্দ করে না, যে নামাজ পড়তে আসে দিবারে। আর দিবার হল- নামাজের উত্তম সময়ের পরের সময়কে এবং যে কোন স্বাধীন নারীকে দাসীতে পরিণত করে। (আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ)।

আবু উমামা রা. বলেন, রাসূল সা. বলেছেন, তিন ব্যক্তির নামাজ তাদের কানের সীমা অতিক্রম করে না (অর্থাৎ কবুল হয় না) পলাতক দাস যতক্ষণ না সে ফিরে আসে, যে নারী রাত্রি যাপন করেছে অথচ তার স্বামী তার ওপর অসন্তুষ্ট এবং গোত্র বা জাতির ইমাম কিন্তু মানুষ তাকে পছন্দ করে না। (তিরমিযী, তবে হাদীসটিকে ইমাম তিরমিযী গরীব বলেছেন)

ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসূল সা. বলেছেন, তিন ব্যক্তির নামাজ তাদের মাথার উপর এক বিঘতও ওঠে না অর্থাৎ কখনই কবুল হয় না। ক. যে ব্যক্তি কোন গোত্র বা জাতির ইমাম হয় কিন্তু তারা তাকে পছন্দ করে না, খ. সেই নারী যে রাত্রি যাপন করেছে অথচ তার স্বামী সঙ্গত কারণে তার ওপর নাখোশ এবং গ. সেই দুই ভাই যারা পরস্পরে বিচ্ছিন্ন। (ইবনে মাজাহ)

এই তিনটি হাদিসে দেখা যায় ইয়াজিদকে লোকজন না চাওয়ার পরও সে জোর করে জাতির নেতা হয়ে বসেছে। এটা ইসলামে অবৈধ। এই অবৈধ শাসকের নেতৃত্ব মেনে নেন নি প্রখ্যাত সাহাবারা। তবে প্রথমে মুয়াবিয়া রা. ও পরে ইয়াজিদ চাপে তারা বাধ্য হয়ে বাইয়াত নেন। ব্যতিক্রম শুধু দুইজন প্রখ্যাত সাহাবী একজন রাসূল সা.-এর নাতি ও অন্যজন আবু বকর রা.-এর নাতি।

ইসলামে শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা মারাত্মক অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। অনেক অর্বাচীন ইয়াজিদের বিরোধীতাকে শাসকের বিরোধীতা হিসেবে বিবেচনা করতে চায়। ইয়াজিদ তো জালিম। সে তো বৈধ শাসকই নয়। যে বৈধ শাসক নয়, জীবন দিয়ে তার বিরোধীতা করার শিক্ষাই হলো কারবালার শিক্ষা। হুসাইন রা. সেই শিক্ষাই আমাদের দিয়ে গেছেন। রাসূল সা. তাঁকে জান্নাতি ও শহীদ হিসেবে আগেই ঘোষণা দিয়ে গেছেন। অতএব হুসাইন রা.-এর পথ ভুল পথ নয়। এটিই সর্বোচ্চ সঠিক পথ। যারা শক্তির অভাবে ইয়াজিদের অনুগত হয়েছেন তাদের পথ ওজরের পথ। এটা আদর্শ পথ নয়। আর ইয়াজিদের পথ তো সঠিক হতে পারে না, এটা অবৈধ পথ, জাহান্নামের পথ।

হুসাইন রা. ও ইবনে যুবায়ের রা.-এর বাইয়াত না নিয়ে মদিনা থেকে চলে যাওয়ার খবরে ইয়াজিদ অত্যন্ত ক্ষেপে যান। তিনি ওলিদকে তাদের অনুসারীদের গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দেন। মদিনার গভর্নর ওলিদ এই দুজনের আত্মীয়দের গণগ্রেপ্তার শুরু করেন। মদিনাবাসী প্রথমে গভর্নরের কাছে যায় তাদের মুক্ত করতে। বিফল হয়ে তারা আব্দুল্লাহ বিন উমর রা.-এর কাছে আবেদন করলেন যে, যেন প্রশাসন এভাবে কঠোরতা করা থেকে বিরত থাকে ও বন্দিদের ছেড়ে দেয়।

ইয়াজিদের বাইয়াত নেওয়া ইবনে উমর রা. পেরেশান হয়ে ওলীদ বিন উতবার সাথে সাক্ষাৎ করেন। বললেন, ‘স্বীয় শাসন প্রতিষ্ঠিত রাখতে হকের উপর অটল থাকো, জুলুম করো না। যাদের গ্রেফতার করেছো তারা নির্দোষ। তাদের ছেড়ে দাও’। ওলিদ জানালেন, তার কিছুই করার নেই। আমীরুল মু’মিনীন ইয়াজিদের আদেশ এমনটাই। তাই লঙ্ঘণ করা তার পক্ষে সম্ভব নয়।

মদীনাবাসী যখন দেখলো আব্দুল্লাহ বিন উমর রা.-এর মতো ব্যক্তিত্ব এর সুপারিশ পর্যন্ত ফিরিয়ে দেয়া হলো। তখন তারা বুঝলো এই জালিমদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধই সমাধান। মদিনাবাসী জেলখানায় হামলা করে বসে ও আটক ব্যাক্তিদের ছাড়িয়ে আনে। আটক ব্যাক্তিরা মুক্ত হওয়ার পর মক্কায় চলে যায়। ইয়াজিদ এতে ক্ষুব্দ হয়ে ওলিদ বিন উতবাকে বরখাস্ত করেন এবং আমর বিন সাঈদকে নতুন গভর্নর হিসেবে মদিনায় পাঠান।

আমর বিন সাঈদ দায়িত্ব নিয়ে মদিনাবাসীদের কঠোরভাবে শাসিয়ে দেন তারা যদি একই কাজ আবারো করে তবে এর চরম মূল্য দিতে হবে। এছাড়া তিনি মক্কায় হামলা করে বিদ্রোহীদের শাস্তি দেওয়ারও সংকল্প করেন।

এদিকে বাইয়াত না নেওয়া হুসাইন রা. ও আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের রা. দফায় দফায় পরামর্শ করতে থাকেন কী করা যায়! অবশেষে তারা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, একটি স্থানকে কেন্দ্র বানিয়ে নিজেদের পক্ষে জনমত আদায় করতে হবে এবং বৈধ খিলাফত প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু কেন্দ্র কোন স্থানকে বানানো হবে? এ বিষয় নিয়ে উভয়ের মাঝে মতভেদ দেখা দেয়।

আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের রা. এর মত ছিল এই যে, মক্কাকে কেন্দ্র বানানো হোক। কারণ, মক্কাই সবচেয়ে নিরাপদ। মক্কা পুরো মুসিলম মিল্লাতের আদি কেন্দ্রভূমি। মক্কায় যেমন সাহায্যকারী নিজেদের গোত্র কোরাইশরা রয়েছে, তেমনি মুত্তাকী পরহেযগারদের এক বড় জামাতও বিদ্যমান। তাই তিনি চাইলেন যে, হযরত হুসাইন রা. যেন মক্কাকেই কেন্দ্র হিসেবে গ্রহণ করেন।

কিন্তু হযরত হুসাইন রা. এর কাছে ইরাক থেকে একের পর এক পত্র এবং প্রতিনিধি দল আসছিল। যারা এখনো ইয়াজিদের হুমকি উপেক্ষা করে বাইয়াত নেওয়া থেকে বিরত রয়েছে। হযরত হুসাইন রা. তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে কুফা তথা ইরাক যাবার দিকেই মনস্থির করছিলেন। ইরাকে যাবার পেছনে হুসাইন রা. এর প্রথম কারণ এই ছিল যে, আন্দোলনে সাধারণ মানুষের জানমাল হেফাজত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হেযাজের তুলনায় ইরাকে তার অনুসারীদের সংখ্যা বেশি থাকায় শক্তিও বেশি থাকবে। ফলে কম ক্ষতির সম্মুখিন হয়ে সফলতার মুখ দেখা সহজ হবে বলেই তিনি মনে করলেন।

এছাড়াও হযরত হুসাইন রা. নিজের জানের চেয়ে পবিত্র নগরীর পবিত্রতা রক্ষা করাকে বেশি জরুরি মনে করলেন। ঠিক একই কারণে হযরত আলী রা. মক্কা মদীনা ছেড়ে কুফাকে রাজধানী বানিয়েছিলেন। হযরত হুসাইন রা. জানতেন যে, এখন হজ্জ চলছে বলে তার উপর হামলা করা বন্ধ আছে। কিন্তু হজ্জ শেষ হলেই তার ওপর আক্রমন করা হবে। তাই তিনি পবিত্র নগরীকে রক্তপাত থেকে রক্ষা করতে মক্কা ছেড়ে দেওয়াকেই প্রাধান্য দিলেন। তবে তিনি আরেকটি কেন্দ্র রাখার জন্য আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের রা.-কে মক্কায় থেকে যেতে ও জনমত গঠন করতে বলেন।

এদিকে হুসাইন রা. কুফায় যাওয়ার ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করেননি। তিনি তার চাচতো ভাই মুসলিম বিন আকিলকে কুফায় পাঠালেন পরিস্থিতি যাচাই করে চিঠি দেওয়ার জন্য। এবং সব ঠিকঠাক থাকলে নতুন খিলাফত গঠনের জিহাদের বাইয়াত নেওয়ার জন্য। মুসলিম বিন আকিল হলেন সে ব্যাক্তির ছেলে যার কর্তিত মাথা মুয়াবিয়া রা. শহরে প্রদর্শন করেছিলেন। যার অপরাধ ছিল জুমুয়ার খুতবায় ইসলামের ৪র্থ খলিফা ও তার ভাই আসাদুল্লাহ আলী রা.-এর বিরুদ্ধে চলা অপপ্রচার ও অভিশম্পাতের বিরোধীতা করা।

পঠিত : ২২৩ বার

মন্তব্য: ০