Alapon

চীন ও পাকিস্তানের পর ভারতের নতুন মাথাব্যথার নাম আফগানিস্তান!



আফগানিস্তান এখন তালিবানদের নিয়ন্ত্রণে। তালিবানদের আফগানিস্তানের অন্যান্যভাগ দখলে নিতে রক্ত ঝরাতে হলেও রাজধানী কাবুল দখলে নিতে তাদের রক্ত ঝরাতে হয়নি। অনেকটা বিনা বাধায় রাজধানী দখলে নিয়েছে তালিবান। এটাকে ঠিক দখল বলা যায় না, পুনরুদ্ধার বলা যায়।

২০০১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালিয়ে তালিবান সরকারের হাত থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয়। দীর্ঘ ২০ বছর যুদ্ধ করার পর তালিবানরা তাদের সেই ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। মার্কিনীদের এই পরাজয়কে অনেকে ভিয়েতনামের পরাজয়ের সাথে তুলনা করছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকাকে কোনো আলোচনা ছাড়াই যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করতে হয়েছে। আর আফগানিস্তানে আলোচনার মাধ্যমে পরাজয় বরণ করে নিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তবে এই পরাজয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যতোটা ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে, ততোটা ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে ভারত!

ভারত ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে দুই দিক থেকে। প্রথমত তারা অর্থনৈতিক দিক থেকে ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে। দ্বিতীয়ত তারা নিরাপত্তার দিক থেকে ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে।

চলুন প্রথমেই জেনে নেই, ভারত অর্থনৈতিকভাবে কতোটা ক্ষতির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত ভারত আফগানিস্তানে প্রায় ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। তারা যেসব ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করেছে-

কাবুলে আফগান পার্লামেন্ট ভারত তৈরি করেছিল। এতে আনুমানিক ৯ কোটি ডলার বিনিয়োগ হয়।

আফগানিস্তানে ইরান সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় ২১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণ করেছে ভারতের বর্ডার রোড অর্গানাইজেশন। কান্দাহার, গজনি, কাবুল, মাজহর-ই-শরিফ ও হেরাত শহরকে ছুঁয়ে গেছে এ রাস্তা। পাকিস্তানকে এড়িয়ে এ রাস্তা দিয়ে ইরানের চাবাহার বন্দর ব্যবহার করতে পারে নয়াদিল্লি। জরঞ্জ-দেলারাম নামের এই সড়ক তৈরিতে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ১৫ কোটি ডলার। এটি তৈরি করেছিলেন ৩০০ ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ার। কাজ চলাকালীন তাঁদের মধ্যে ১১ জনের মৃত্যুও হয়।

ভারত আফগানিস্তানে সালমা বাঁধ নির্মাণ করে দেয়। এছাড়াও ভারত সরকার আফগানিস্তানকে ২০০ মিনিবাস, ৪০০ বাস, ১০৫ সরকারি গাড়ি, ২৮৫টি সেনার গাড়ি, ৫টি শহরে ১০টি অ্যাম্বুলেন্স, ৩টি এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান উপহার হিসেবে দিয়েছিল।

এসব ছাড়াও আরও বিভিন্ন সেক্টরে ভারত বিনিয়োগ করে রেখেছে। এখন ভারতের পররাষ্ট্রনীতি যদি তালিবান সরকারের সাথে মানিয়ে চলতে না পারে, তবে বিনিয়োগ পুরোটাই জলাঞ্জলি হবে।

নিরাপত্তার দিক থেকে ভারত কিছুদিন পূর্ব পর্যন্ত কেবল পাকিস্তান ও চীনকে হুমকি মনে করতো। আফগান সরকারের সাথে ভালো সম্পর্কের দরুন ভারত সরকারকে বিগত ১০ বছরের মতো আফগানিস্তান নিয়ে তেমন একটা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হয়নি। কাবুল পতনের পর থেকেই ভারত নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে শুরু করেছে। কারণ, ভারত প্রেসিডেন্ট আশরাফের সাহায্যে আফগানিস্তানে ভারতীয় সৈন্য প্রেরণ করতে চেয়েছিল। সেসময় তালিবান ভারতকে হুশিয়ার করে দিয়ে বলে, এর পরিণতি ভারতের জন্য মোটও সুখকর হবে না। তালিবানদের এই হুমকি বেশ ভালোই কাজে লেগেছিলো। যার কারণে পরবর্তিতে ভারত আর আফগানিস্তানে সৈন্য প্রেরণ করেনি।

ভারত যদিও আফগানিস্তানে সৈন্য প্রেরণ করেনি, কিন্তু আফগান বাহিনীর সহযোগিতায় তারা সামরিক যান ও হেলিকপ্টার প্রদান করেছিলো। সেসব এখন তালিবান বাহিনীর দখলে। সেইসাথে এটাও শোনা যাচ্ছে, আফগান বাহিনীকে অস্ত্র দিয়েও সহযোগিতা করেছে ভারত! এ কারণে তালিবানরা যে ভারতের উপর মোটেও সন্তুষ্ট নয়, তা সহজেই অনুমেয়।

অন্যদিকে আরও চিন্তার বিষয় হলো পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। তালিবানদের সাথে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এর যে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে, সে কথা ওপেন সিক্রেট। আইএসআই এর সাবেক মহাপরিচালকের ভাষ্যমতে তালিবানদের তৈরিই করেছিলো আইএসআই। আর যেখানে আইএসআই সম্পৃক্ত রয়েছে, সেখানে ভারত যে নিশ্চিন্তে কোনোভাবেই থাকতে পারছে না, তা তাদের অবস্থা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। আর ভারতের মিডিয়াগুলোর ভূমিকা দেখে মনে হচ্ছে, যেন কাবুল দখল হয়নি নয়াদিল্লি দখল হয়েছে।

এতোদিন ভারতের মাথাব্যথা ছিলো পাকিস্তান আর চীন। এখন থেকে নতুন একটি মাথাব্যথা যুক্ত হলো, সেই ব্যথার নাম আফগানিস্তান।

পঠিত : ৪৬৭ বার

মন্তব্য: ০