Alapon

প্রকৃত মুমিনের গুণাবলি...



মুসলিম পরিবারে জন্মেছি,তাই আমরা মুসলমান। একজন মুসলিম হিসেবে মাঝে মাঝে নামাজ পড়ি। পুরো রমযান মাসে সিয়ামও পালন করি। মাঝে মাঝে কুরআন তিলাওয়াত করি। এভাবেই চলে আমাদের ধর্মকর্ম।

কিন্তু একজন প্রকৃত মুমিন হতে হলে আপনাকে দ্বীনি ইসলামে পরিপূর্নভাবে প্রবেশ করতে হবে। আল্লাহ্‌র দেয়া বাহ্যিক ইবাদাতের পাশাপাশি নিজের চরিত্র ও মনকে এক আল্লাহ্‌র তরে সপে দিতে হবে। নিজের প্রতিটা পদক্ষেপে এক আল্লাহ্‌র বিধান লঙ্গন হচ্ছে কিনা খেয়াল রাখতে হবে।

সকল মুসলমান মুমিন হয় না। বাস্তব জীবনের কাজে কর্মে আমাদের ঈমানী চেতনা প্রতিফলিত হয় না। বদরের যুদ্ধে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গী ছিল মাত্র ৩১৩ জন। যাদের ঈমানী চেতনা দেখে হাজার হাজার মানুষ ইসলামের ছায়াতলে এসেছিল। তাদের মধ্যে যা ছিল তা হলো তাকওয়া। তাকওয়া এমন একটি গুন যা মানুষ কে আল্লাহর সবচে নিকটবর্তী করে দেয়।

মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন -
বলুন, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। [1]

একটু ভাবুন এই মুহাব্বত, ভালবাসা আমাদের মধ্যে কতটুকু আছে? একটু ভাবুন এই পৃথিবীতে আমরা বেশিদিন থাকতে পারব না। মৃত্যুর পরে আমাদের জন্য অনন্ত কালের একটি জীবন অপেক্ষা করছে। সেই অনন্ত কালের জন্য আমরা কতটুকু পাথেয় সংগ্রহ করেছি? আর সেই অনন্ত কালের পাথেয় হলো তাক্বওয়া। যা মুমিনের সবচে প্রকৃত গুনাবলী। মুমিন ব্যক্তি অবশ্যই মুত্তাক্বী হয়। মুত্তাক্বী মানে হলো ভীরুতা অবলম্বন কারী। যিনি সর্বদা আল্লাহ কে ভয় করেন এবং সকল ধরনের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখে। আর মুত্তাক্বী ব্যক্তি শিরক, কাবীরা গুনাহ সহ সব ধরনের অশ্লীল কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখে।

মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের সূচনালগ্নেই বলেছেন -
الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُونَ - وَالَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ وَبِالْآَخِرَةِ هُمْ يُوقِنُونَ
"যারা অদৃশ্যে বিশ্বাস করে, যথাযথভাবে নামাজ পড়ে ও তাদেরকে যে জীবিকা দান করেছি তা হতে ব্যয় করে।যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে সেসব বিষয়ের ওপর যা কিছু তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং সেসব বিষয়ের ওপর যা তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে। আর (পরকাল) আখেরাতকে যারা নিশ্চিত বলে বিশ্বাস করে।" [2]

ধর্মকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করা যাবে না। অধিকাংশ সময় আল্লাহ্‌র নির্দেশিত বিধান ঠিক ততক্ষণ মেনে চলি যতক্ষণ নিজের সুবিধা মত চলতে পারি। ঠিক যেখানে সুবিধার মনে হয় না,সেখানেই রাব্বি আল্লাহর বিধান ছেড়ে দিয়ে নিজের খেয়াল খুশি মতই চলাফেরা করি।
অথচ রাব্বি আল্লাহ্‌ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করছেন,
‘হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে যেমন ভয় করা দরকার ঠিক তেমন ভয় করতে থাকো এবং পূর্ণ আত্মসমর্পণকারী না হয়ে কোনো অবস্থায় মৃত্যুবরণ করো না।’[3]

ইহকালীন ও পরকালীন জীবনের মূল ভিত্তিই হলো তাকওয়া। তাকওয়া দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জীবনে আমাদের পদমর্যাদা বৃদ্ধি। তাকওয়া মানুষকে আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে সম্মানিত করে। আর আসমানে কোনো ব্যক্তির সম্মান, মর্যাদা বৃদ্ধি পেল দুনিয়ার জীবনেও তাঁর সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। আমার রব বলেছেন-
‘নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই আল্লাহর কাছে বেশি সম্মানিত যে আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভয় করে।’ [4]

কুরআনে আল্লাহ্‌ আরো বলেন,
إن الخير الزاد التقوى
নিশ্চয়ই তাকওয়াই উত্তম পাথেয়। [5]
আর জ্ঞানী ব্যক্তিগণ সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহ তায়ালা কে ভয় করে।
সুফিয়ান আস-সাওরী বলেন, “জ্ঞানের শ্রেষ্ঠত্ব শুধুমাত্র একারণেই যে, তা ব্যক্তিকে আল্লাহর ভয় ও আনুগত্য শেখায়, নয়তো তা (জ্ঞান নয়) অন্যকিছু।”

তথ্যসূত্র
1] সূরা আলে ইমরান। আয়াত - ৩১
2] সূরা বাকারা। আয়াত ৩ ও ৪
3] সূরা আলে ইমরান। আয়াত : ১০২
4] সুরা হুজুরাত। আয়াত : ১৩
5] সূরা বাকারা। আয়াত -১৯৭

- উমাইমা শেইখ

পঠিত : ৩২৯ বার

মন্তব্য: ০