Alapon

যে জীবন ফড়িঙের যে জীবন জোনাকির

কিছুদিন আগে #গাজীপুরে একই পরিবারের চার জনকে গলা কেটে #হত্যা করার একটা ঘটনা ঘটে। জবাই করে হত্যার আগে মা এবং দুই স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে #গণধর্ষণও করা হয়। এক প্রতিবন্ধী বাচ্চা ছেলে, তাকেও জবাই করা হয়। ভয়াবহ ঘটনা। এর কয়েকদিনের মধ্যে পুলিশ এক কিশোরকে(!) গ্রেফতার করে, সে ঘটনার দায়ও স্বীকার করে। পুলিশ জানায় মোবাইল চুরি করতে গিয়ে চিনে ফেলায় কিশোর সবাইকে হত্যা করে। কিন্তু এরপর র‍্যাব আরও ছয় জনকে গ্রেফতার করে। এরপর আসল ঘটনা বেরিয়ে আসে। ঐ কিশোর (!) ঘটনায় জড়িত ঠিক আছে, কিন্তু সে একা এই কাজ করেনি, সাথে এই ছয়জনও ছিল এবং এদের মধ্যে তার নিজের পিতাও আছে। অর্থাৎ #বাপ আর তার #কিশোর (!) ছেলে একসাথে গণধর্ষণ আর হত্যার মতো কাজ করেছে। ছেলে বাথরুমের ভেন্টিলেটর কেটে ঘরে ঢুকেছে, ভেতর থেকে দরজা খুলে বাকি সবাইকে ঘরে ঢুকতে দিয়েছে।
.
ঘটনার বিবরণ দেওয়া এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। আমার মূল উদ্দেশ্য ঐ কিশোরকে (!) নিয়ে কিছু কথা বলা—এই আশ্চর্যবোধক চিহ্ন এই কারণেই। এত ভয়াবহ একটা জঘন্য কাজের মূল হোতা হওয়ার পরও, ধর্ষণ, হত্যার মতো কাজে জড়িত থাকার পরও পুলিশ তাকে কিশোর #সংশোধনাগারে পাঠিয়েছে। কেন জানেন? কারণ তার বয়স নাকি ১৭ বছর। তারচেয়েও বড় কথা, ২০১৮ সালে এক শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে সে আগেও একবার গ্রেফতার হয়েছিল, ‘#অপ্রাপ্তবয়স্ক’(!) হওয়ায় ৯ মাস কিশোর রিহ্যাবে আদর যত্ন খেয়ে বাইরে এসে, আবার এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। এবং এটাই অন্যতম কারণ যে সে শুরুতেই সব দায় স্বীকার করে নিয়েছে, বলেছে সে একাই এই কাজ করেছে। কারণ সে জানে তার বয়স এখনো ১৮ হয়নি। তাকে বড়জোর কিশোর রিহ্যাব সেন্টারে পাঠাবে। তাই সে তার পিতা আর পিতার সাঙ্গপাঙ্গদের বাঁচানোর জন্য, নিজেই সব দোষ স্বীকার করে নেয়।
.
রাষ্ট্রযন্ত্রের এই ‘প্রাপ্তবয়স্ক’ আর ‘অপ্রাপ্তবয়স্ক’ নির্ধারণের ব্যাপারটায় সবচেয়ে হাস্যকর বিষয় কী জানেন? এই ছেলেটা যে অপরাধ করেছে সেটা যদি ১৭ বছর ৩৬৪ দিন ২৩ ঘন্টাতে করে তবে অপ্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে তার বিচার হবে। তেমন কঠিন কোনো শাস্তি না। কয়েক বছর জেল হতে পারে, সেটাও জেলে নয়, রিহ্যাব সেন্টারে। খেলাধুলা করবে, পড়ালেখা করবে, তারপর সুবোধ বালকের মতো বের হয়ে আসবে। কিন্তু একই অপরাধটা যদি সে ১ ঘন্টা পরে করে, মানে যখন তার বয়স ১৮ হবে, তাহলে সে প্রাপ্তবয়স্ক, আর এই অপরাধে তার কঠিন শাস্তি হতে পারে। তাহলে ১ ঘন্টায় তার শারীরিক, মানসিক কী এমন পরিবর্তন হলো যে, এই আকাশ পাতাল তফাৎ শাস্তিতে?
.
এভাবে একজন মযলুম কখনও ন্যায়বিচার পেতে পারে না। চিন্তা করে দেখুন, যে চার জনকে খুবই নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে, তাদের পরিবার কি #ন্যায়বিচার পাবে? এরা দেখবে কয়দিন পর তাদের প্রিয় মানুষগুলোকে এভাবে হত্যা করা ছেলেটা বুক ফুলিয়ে বাইরে ঘুরছে। ভারতের কুখ্যাত দিল্লী বাসের ধর্ষণ ও হত্যাকান্ডে জড়িতদের ফাঁসি হলো সেদিন। কিন্তু তাদের সাথে আরও একজন ছিল যার বয়স তখন ১৮ হয়নি। অথচ সেও ধর্ষণ করেছে, হত্যায় অংশ নিয়েছে। কিন্তু তার বড় কোনো শাস্তি হয়নি, তার পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি, তাকে মুক্তি দিয়ে সরকার ক্যাশ টাকা দিয়েছে এবং দর্জির দোকান বানিয়ে দিয়েছে। অদ্ভুত না?
.
#ইসলামে তাই কাকে কেমন #শাস্তি দেওয়া হবে সেটার #মানদণ্ড দিন তারিখ দিয়ে হয় না। এখানে মানদণ্ড হলো শারীরিকভাবে তার #বালেগ হওয়া না হওয়া। সাধারণভাবে তিনটা সাইন দেখে ইসলামে বালেগ হয়েছে কি না সেটা নির্ধারণ করা হয়,

১। স্বপ্নদোষ
২। প্রাইভেট পার্টে চুল গজানো
৩। ১৫ বছর বয়স হওয়া।
মেয়েদের ক্ষেত্রে একটা এক্সট্রা সাইন হলো ঋতুস্রাব।
.
একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও মহিলার উপর তখন থেকেই শরিয়ার নিয়মনীতি, শাস্তি আরোপিত হয়। তখন থেকেই দুই ফেরেশতা তার ভালোমন্দ আমল লিখতে থাকে।

অথচ আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্রগুলো যে #সিস্টেম বানিয়েছে, এতে কত হাজার #অপরাধী যে পার পেয়ে যাচ্ছে, কত ভুক্তভোগী যে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
.
'কিশোর অপরাধ'
বই : যে জীবন ফড়িঙের যে জীবন জোনাকির
Bookmark Publication

পঠিত : ২৭৬ বার

মন্তব্য: ০