Alapon

আশুরা কারবালা মুহাররম —যে আলোচনা থাকে উপেক্ষিত!




শুক্রবার। জুম'আর দিন। কিন্তু আমাদের অধিকাংশ আলিমদের জুম'আর খুতবাগুলো কেনো যেনো আমাকে খুব একটা টানে না। কী ঢাকায়, কী গ্রামে। দূর-দূরান্তে যাই মাঝেমধ্যে স্বলাতুল জুম'আর আলোচনা শুনতে। এবারও তাই হলো।

আমি বাড়িতে আজ দুই-তিনদিন থেকে। গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন আজ। দশ-ই মুহাররাম। আশুরার বিশেষ ফজিলত এবং বরকতময় আলোচনা চলতে থাকে সব মাসজিদে। কিন্তু আমি আজো আশেপাশের মাসজিদে না গিয়ে দূরের একটি মাসজিদে গেলাম। একজন প্রিয় উস্তায সেখানের খতীব। খুব চমৎকার আর প্রাঞ্জল ওনার আলোচনা। ওনার খুতবায় জ্ঞানের গভীরতা আছে। সহীহ্ আমলের প্রাণপ্রবাহ বয়ে বেড়ায় ওনার সবটুকুন বক্তৃতায়। তন্ময় হয়ে সবাই শুনে। আমিও শুনি। সবসময়ই শুনি।

তিনি আশুরা-মুহাররাম নিয়ে সামাজের অতি বাড়াবাড়ি আর মর্সিয়া ক্রন্দনের অসরতা নিয়ে খুব সাবলীল আলোচনা করেছেন। কিন্তু বিপত্তি সৃষ্টি হয়েছে ভিন্ন জায়গায়। তিনি জালিম ইয়াজিদের নির্দেশে উবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদের আজকের আক্রমণে বিশ্বনবি মুহাম্মাদ স্বল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রাণপ্রিয় নাতি, ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদাতের বিষয়টিকে একপ্রকার গুরুত্বহীনই করে ফেলেছেন। গিয়েছেন প্রায় এড়িয়েই। এদিনে ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদাতের বিষয়টিকে তিনি তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে এড়িয়ে গেছেন।

ওনার সহীহ্ আমলের সাবলীল বয়ান খুবই প্রশংসার দাবি রাখে। তিনি সহীহ্ আকিদা-আমল-ইতিহাসের বয়ানের সাথে এই সত্যটাও স্পষ্ট বলে দিতে পারতেন যে, বিখ্যাত সাহাবি আমিরে মুয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর ছেলে ইয়াজিদ যে হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর হন্তারক ছিলেন। বলপ্রয়োগ করে ইসলামি খিলাফত তার কুক্ষিগত করেছেন। জ্বোরপূর্বক মু'মিনদের বাইয়াত আদায় করেছেন। ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তার এসব ইসলাম বিরোধী কার্যক্রম সমর্থন না করে প্রকৃত ইসলামি খিলাফতের দিকে উম্মাহকে ফিরিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। সে জন্য তিনি এবং আবু বকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর নাতি ইবনে যুবাইর অভিশপ্ত জালিম ইয়াজিদের হাতে বাইয়াত নেন নি।

তারা জণগণের সমর্থিত, প্রকৃত ইসলামি খিলাফাহ পুনরুদ্ধারের জন্য কাজ অব্যাহত রেখেছেন। মুসলিম উম্মাহ যেনো জবরদখলকারী ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়ার আনুগত্যের শপথ না করে, সে লক্ষ্যে অবিরত সফর-সংগ্রাম করেন ইসলামি সাম্রাজ্যের নাগরিকদের দ্বারেদ্বারে। অনেক মু'মিন-মুসলিম স্বৈরাচারী ইয়াজিদের হাতে বাইয়াত না নিয়ে ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর হাতে বাইয়াত নিতে নিরন্তর পত্র লিখে চলেছেন তাঁর কাছে। সে হিসেবে ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুও তাঁদের কাছে প্রতিনিধি পাঠিয়েছেন বাইয়াত আদায় করতে। মুসলিম বিন আকিলকে পাঠিয়েছেন তিনি কুফায়। কুফা বাসীর কাছ থেকে বাইয়াত আদায় করতে। কুফা বাসীর সে বাইয়াত ছিলো স্বেচ্ছায়, স্বপ্রণোদিত। বলপ্রয়োগকারী ইয়াজিদের কাছে তাঁরা বাইয়াত করতে ইচ্ছুক ছিলো না। কিন্তু ইয়াজিদের স্বৈরাচারী জুলুমবাজি নীতি তাঁদের ওপর চাপিয়ে দিলো। কুফায় রাসুলুল্লাহ স্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাতি ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর পক্ষে বাইয়াত আদায়কারী মুসলিম বিন আকিলকে খুন করে ফেলেছে ইয়াজিদের নিষ্ঠুর বাহিনী। শুধু তাই নয়। এক সময় আসে মুহাররম মাস। এই ইয়াজিইদ বিন মুয়াবিয়া আহলে বাইতের একে একে ২৩ জন পুরুষকে হত্যা করায়। তাঁদের মাথাগুলো নিয়ে তারা পৈশাচিক উল্লাস করে। তাদের এমন নারকীয় তাণ্ডবের প্রতিবাদ যে করেছে তাকেও খুন করে। এই ছিলো নির্মম সত্যতা। এই ছিলো আসল কাহিনি।

সে যাইহোক, মোটামুটি রকমের একটা বিষয় আমরা নিশ্চিত ; তা হলো ইয়াজিদের বর্বরতা। ইসলাম বিরোধী ঘৃণ্য কার্যকলাপ। আর এহেন ঘৃণ্য কার্যকলাপের বিরোধিতা করেছেন বলেই শাহাদাতের সরাব পান করতে হয়েছিলো মুহাম্মাদ স্বল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাতি হুসাইন ইবনে আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এবং তাঁর অতি প্রিয় বন্ধু আবু বকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর নাতি সাঈদ ইবনে যুবাইর।

এখন আমরা যদি সত্যিকারের হুসাইন প্রেমি হই, নবি-পরিবারের প্রতি ভালোবাসাপ্রবণ হই— তা হলে আমাদের হুসাইন প্রেমের প্রেরণা হবে তাঁর মতো স্বৈরাচারী জুলুমবাজি নীতির বিরুদ্ধে প্রাণপণে লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া। ইয়াজিদের মতো ইসলামের প্রাণসত্তা নস্যাৎকারী শাসকদের হাতে নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও প্রতিবাদ প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়া। খিলাফাত আ'লা মিনহাজুন নুবুওয়্যাকে পুনরুদ্ধারের জন্য প্রয়োজনে শাহাদাতের সরাব পানের মানসিক-শাররীক প্রস্তুতি রাখা।

আর যদি ইয়াজিদ প্রেমি হই, তা হলে ছলেবলে কৌশলে ইয়াজিদকে নির্দোষ প্রমাণ করার চেষ্টা করবো। তার অবৈধ শাসনের পক্ষে সাফাই গেয়ে যাবো। আর ইয়াজিদের পক্ষালম্বন করা মানে প্রকারান্তরে ইমাম হুসাইন ইবনে আলীকে দোষারোপ করা।


দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, আমাদের অধিকাংশ শাইখদের খুতবায় এসব আলোচনা, এর প্রকৃত শিক্ষা ফুটে ওঠে না। বরঞ্চ যে বা যারা ইয়াজিদের জুলুম আর হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর ন্যায় সঙ্গত আন্দোলনের আলোচনা ওঠায়, তাঁকে জঙি-উগ্রবাদী-খারেজি ইত্যাদি উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

সর্বশেষ আল্লাহর কাছে রাসুলে কারিম স্বল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসের আলোকে নিবেদন এই যে, ইয়াজিদ প্রেমিদের হাশর ইয়াজিদের সাথে হোক আর হুসাইন প্রেমিদের হাশর হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর সাথে হোক। দূর হোক আমাদের ভেতর চেপে বসা সকল ধোঁয়াশা!


|| আশুরা কারবালা মুহাররম —যে আলোচনা থাকে উপেক্ষিত! ||
~রেদওয়ান রাওয়াহা

পঠিত : ৪৮০ বার

মন্তব্য: ২

২০২১-০৮-২২ ০৯:০৯

User
Hafej Arman

আসসালামু আলাইকুম
ভাই আপনার লেখাটা পড়ে ভালো লাগলো।
আমি আমার কথা কিছু শেয়ার করি -
১০মুহাররম শুক্রবার আমি যে মাসজিদে নামাজ পড়লাম সেখানে খতিব সাহেব দুই পক্ষকে খুশি রাখার জন্য[ প্রথমে বলেছিলো হোসাইন (রা) মাথা ইয়াজিদের সামনে নিয়ে আসা হলে তিনি কেঁদে উঠেন, পরে বয়ান শেষের দিকে বলে যেহেতু উনার পরোক্ষভাবে হাত আছে এজন্য তিনিও অপরাধি।]
মূল যে আলোচনা তার কোনো খবর নাই।

submit

২০২১-০৮-২৪ ২২:১২

User
ইবনে ইসহাক

Owalaikum Asslam. era gean papi

submit