Alapon

হযরত উসমান রা. যে পদ্ধতিতে দান করতেন...



একদিন হযরত উসমান রা. মসজিদে বসে আছেন। তিনি লক্ষ্য করলেন, তার অদূরে একজন কম বয়স্ক যুবক বসে আছে। তার চেহারা ছিলো মলিন ও ধূসর। চেহারায় হতাশার ছাপ স্পষ্ট। উসমান রা. ছেলেটাকে কাছে ডাকলেন এবং তার হাল হাকিকত জিজ্ঞেস করলেন।

কথা বলতে বলতে উসমান রা. বুঝতে পারলেন, এই যুবক ভীষণ অর্থ কষ্টে ভুগছেন। তখন উসমান রা. সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি এই যুবকে কিছু দান করবেন। কিন্তু কীভাবে দান করবেন, সেটাই ভাবছিলেন। তারপর খেয়াল করলেন যুবকটি যে কাপড় পরিধান করে আছে, সেটি বেশ পুরনো আর ময়লা। তখন তিনি যুবককে বললেন, ‘তোমারা জামাটি অনেক পুরনো হয়ে গেছে। তুমি একটু অপেক্ষা করো, আমি বাড়ি থেকে তোমার জন্য একটি জামা নিয়ে আসতেছি।’

এরপর উসমান রা. বাড়িতে চলে গেলেন, একটি নতুন জামা নিলেন এবং জামার পকেট ভর্তি করে দিরহাম দিলেন। এরপর মসজিদে নববিতে সেই ছেলেকে জামাটা দিয়ে বললেন, ‘তুমি বাড়িতে যাওয়ার পরই জামাটা পরিধান করিও। এর আগে অন্য কোথাও জামাটি প্যাকেট থেকে খোলার দরকার নেই।’

তারপর ছেলেটি বাড়ি ফিরে গিয়ে তার বাবা-মা কে জামাটি দেখিয়ে বলল, ‘এই দেখুন, উসমান রা. আমাকে কতো সুন্দর একটি জামা উপহার দিয়েছেন। আমি জামাটা পরে এসে তোমাদের দেখাচ্ছি, কেমন হয়েছে।’

ছেলেটি জামা পরে এসে তার বাবা মায়ের সামনে পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়ালো। পকেটে হাত দেওয়া মাত্রই বুঝতে পারলো, পকেটে মুদ্রা। হাত বের করতেই থলে ভর্তি মুদ্রা বেরিয়ে এলো। তখন যুবকটি বুঝতে পারলো, উসমান রা. মূলত তাকে কিছু অর্থ দান করতে চেয়েছেন। উসমান রা. এমনভাবে দান করেছেন যে, তৃতীয় ব্যক্তি জানা তো দূরের কথা, যাকে দান করা হয়েছে স্বয়ং সেই ব্যক্তিও জানে না তাকে দান করা হয়েছে।

আর এমন দানের কথাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন। অথচ বর্তমান সময়ে দেখা যায়, ঢাক-ঢোল পিটিয়ে দান করা হচ্ছে। মানুষকে জানান দিয়ে দান তো করাই হচ্ছে, সেই সাথে যাকে দান করা হচ্ছে তাকেও অপমান করা হচ্ছে। আর এ ধরনের দানের ক্ষেত্রে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে সূরা বাকারার ২৬৪ নাম্বার আয়াতে বলেছেন, ‘হে মুমিনগণ! দানের কথা বলে বেড়িয়ে এবং কষ্ট দিয়ে তোমরা তোমাদের দানকে ঐ ব্যাক্তির ন্যায় নিষ্ফল করো না, যে নিজের সম্পদ লোক দেখানোর জন্য ব্যয় করে থাকে এবং আল্লাহ্‌ ও আখিরাতে ঈমান রাখে না। ফলে তার উপমা হল এমন একটি মসৃণ পাথর যার উপর কিছু মাটি থাকে, তারপর প্রবল বৃষ্টিপাত সেটাকে পরিষ্কার করে দেয়। যা তারা উপার্জন করেছে তার কিছুই তারা তাদের কাজে লাগানোর ক্ষমতা রাখে না। আর আল্লাহ্‌ কাফের সম্প্রদায়কে হিদায়াত করে না।’

দান করা ক্ষেত্রে আদর্শ পদ্ধতি হলো, উসমান রা. এর পদ্ধতি। মূলত উসমান রা. মহান আল্লাহর ঘোষণাকৃত দান করার পদ্ধতি পুঙ্খনাপুঙ্খভাবে অনুসরন করে গেছেন। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে সূরা বাকারার ২৭১ নাম্বার আয়াতে বলেছেন, ‘তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান কর তবে তা ভাল; আর যদি গোপনে কর এবং অভাবগ্রস্থকে দাও তা তোমাদের জন্য আরও ভাল এবং এতে তিনি তোমাদের জন্য কিছু পাপ মোচন করবেন। আর তোমরা যে আমল কর আল্লাহ্‌ সে সম্পর্কে সম্মক অবহিত।’

মহান আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন।

পঠিত : ১৮৮৫ বার

মন্তব্য: ০