Alapon

টেলিগ্রামের যেসব সুবিধা হোয়াটসঅ্যাপে পাবেন না...



মেসেজিং অ্যাপগুলোর মধ্যে কোনটা রেখে কোনটা ব্যবহার করব- এই নিয়ে দ্বিধার শেষ নেই। হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রাম বর্তমানে বহুল প্রচলিত দুটি সিকিউরড মেসেজিং অ্যাপ। কাজেই যার যার সুবিধামত যেকোনো একটা ব্যবহার করাই যথেষ্ট। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে যাদের সাথে যোগাযোগ করবেন তাদেরকে সহজেই খুঁজে পাওয়ার জন্য দুটোই ব্যবহার করা লাগতে পারে।

আজকে টেলিগ্রামের কয়েকটা সুবিধার কথা বলি যেগুলো হোয়াটসঅ্যাপে পাবেন না।

১. পুরাতন মেসেজ ডিলিট: যেকোনো সময় কারো সাথে করা মেসেজ দুইজনের জন্যই ডিলিট করা যায়। সেটা আপনার পাঠানো হোক, বা অপরপক্ষের পাঠানো হোক। যদিও কিছু ক্ষেত্রে আরেকজনের বা নিজের মেসেজ/ফাইল ডিলিট করলে সম্পর্কে ভুল বোঝাবুঝি বা অবনতি হতে পারে, তবু আমার কাছে ফিচারটা ভালো লেগেছে।

হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ ডিলিট করার ব্যাপারটা মেসেঞ্জারের মতোই। একটু দেরি হলেই আর ডিলিট/আনসেন্ট করা যাবে না।

২. স্টিকার চ্যাট: বর্তমানে ফেসবুকে বহুল প্রচলিত কথাগুলো যদি হাতে না লিখে স্টিকারে প্রেস করেই পাঠানো যায়, তাহলে কেমন লাগবে? টেলিগ্রামে এই সুবিধাটা আপনি পাবেন, ব্যবহার করাও একদম ডালভাত!

সেদিন অবশ্য হোয়াটসঅ্যাপেও এই ফিচারটা দেখলাম। তবে এর জন্য আলাদা সাপোর্টিং অ্যাপ লাগে, এমনিতে হয় না। আর কোয়ালিটিও আমার কাছে সন্তোষজনক মনে হয়নি।

আরেকটা কথা, আমরা মেসেঞ্জারে বা কমেন্টে যে ইমোজিগুলো ব্যবহার করি, টেলিগ্রামে পাঠালে (একবারে কেবল একটা) সেগুলো 'জীবন্ত' দেখতে পাবেন। তাই যাকে তাকে যে সে ইমোজি পাঠাবেন না, তাহলে বিপদে পড়বেন। হিহিহি!!

৩. প্লেব্যাক স্পিড: ভয়েস চ্যাট এখানে দ্রুত শোনা যায়। স্পিড বাড়ানো যায় শতভাগ। অর্থাৎ, আপনি দ্বিগুণ গতিতেও শুনতে পারবেন।

৪. পার্সোনাল ইউজারনেম: ধরেন, আপনার কাছে কেউ আপনার টেলিগ্রাম আইডি চাচ্ছে, কিন্তু তাকে আপনি আপনার মোবাইল নাম্বার দিতে চান না। তখন আপনার টেলিগ্রাম আইডির ইউজারনেমটা তাকে পাঠালে সেখানে ক্লিক করেই তিনি আপনাকে মেসেজ দিতে পারবেন। ফেসবুক আইডির লিংক থেকে যেভাবে কাউকে ফেসবুকে খুঁজে পাওয়া যায়, এই জিনিসটাও তা-ই।

কিন্তু ধরেন, কাউকে আপনি হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দেবেন। সেক্ষেত্রে তার মোবাইল নাম্বার আপনাকে সেভ করতে হবে (এটা আমার কাছে অনেক বিরক্তিকর। অনেকের কাছেও তা-ই), তারপর হোয়াটসঅ্যাপে তাকে পাবেন। টেলিগ্রামে এই ঝামেলা নাই। সেখানে আপনি চাইলে অন্যদের থেকে আপনার মোবাইল নাম্বার হাইড করে রাখতে পারবেন।

৫. একজনের মাধ্যমে আরেকজনকে খুঁজে পাওয়া: ধরেন, টেলিগ্রামে আমি আপনাকে একটা মেসেজ/ফাইল দিলাম। সেটা যদি আপনি কাউকে ফরোয়ার্ড করেন, তাহলে সেই মেসেজের সাথে তিনি আমার নামও দেখতে পাবেন। এবং আমাকে মেসেজও দিতে পারবেন। আমি চাইলে অবশ্য সেটিং থেকে এটা বন্ধও করে রাখতে পারি। যার প্রাইভেসি পলিসি যেরকম আর কী!

কিন্তু, এই কাজটাই যদি আপনি হোয়াটসঅ্যাপে করেন, তাহলে কী করতে হবে দেখেন। আপনি আমার ফোন নাম্বার আপনার বন্ধুকে দেবেন, তিনি কন্টাক্ট লিস্টে সেটা সেভ করবেন। তারপর আমার খোঁজ পাবেন। একটু বিরক্তিকর না?

৬. আনলিমিটেড স্টোরেজ: ধরেন, আপনার কাছে ২ জিবির ১০টা ফাইল আছে, মানে সর্বমোট ৪০ জিবি স্টোর করতে হবে। এত বিশাল পরিমাণ ফাইল গুগল ড্রাইভে রাখতে চাইলে আপনাকে অন্তত ৩টি জিমেইল আইডি খুলতে হবে। কিন্তু টেলিগ্রামে যদি আপনি এই ফাইলগুলো একটা চ্যানেলে রাখেন বা কাউকে সেন্ড করেন, তাহলে সেখানেই থাকবে। আপনার যত ইচ্ছা, তত ফাইল পাঠাতে পারেন। গুগল ড্রাইভের মত ১৫জিবির লিমিট নাই।

৭. ভার্চুয়াল সিনেমা হল: সিনেমা, ওয়েব সিরিজ, নাটক প্রভৃতি আপনি সহজেই টেলিগ্রামে খুঁজে পাবেন, আর ডাউনলোড দেয়াও খুব সহজ। এরজন্য নির্দিষ্ট গ্রুপ বা চ্যানেলে যুক্ত থাকাও বাধ্যতামূলক নয়। ধরেন, আপনি inception ছবিটা দেখবেন। ব্রাউজিং করে বা টরেন্টের মাধ্যমে নামাতে কী পরিমাণ ঝামেলা সেটা আশা করি নতুন করে বলতে হবে না। কিন্তু টেলিগ্রামে কেবল সার্চ দেয়ার বাকি, সংশ্লিষ্ট গ্রুপ বা চ্যানেলে পেয়ে যাবেন সহজেই।

আজকাল মহানগর, রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি কিংবা নেটওয়ার্কের বাইরে'র মত সিরিজগুলোর লিংকের জন্য অনেকেই হাহাকার করেন। ফেসবুকে যেসব পাওয়া যায়, সেগুলোর ভিডিও কোয়ালিটিও খুব বেশি ভালো নয়। কিন্তু টেলিগ্রাম থাকলে কোনো ঝামেলাই নাই। আপনার পরিচিতরা যখন বিভিন্ন পাবলিক পেজের কমেন্ট বক্সে 'লিংক দেন, ভাই' বলে আহাজারি করবেন, ততক্ষণে আপনি পুরো সিরিজ/মুভি দেখে শেষ করতে পারবেন।

(পর্দার পেছনে খ্যাঁক খ্যাঁক খ্যাঁক হাসির শুব্দ শোনা যাবে!)

৮. বটের (bot) ব্যবহার: আপনি বিভিন্ন ধরনের বট দিয়ে অনেক কাজ করতে পারবেন এখানে। কোনো গ্রুপে mcq পরীক্ষা নেওয়া, image to text (ছবি থেকে লেখা), ইউটিউব থেকে ভিডিও ডাউনলোড করাসহ আরও অনেক ধরনের কাজ করতে পারবেন। দরকার শুধু নির্দিষ্ট কাজের জন্য নির্দিষ্ট বট খুঁজে বের করা। অবশ্য সেটাও কঠিন কিছু নয়।

৯. গ্রুপ ও চ্যানেল: হোয়াটসঅ্যাপে গ্রুপ খুললে সর্বোচ্চ ২৫৬ জনকে যুক্ত করতে পারবেন, কিন্তু টেলিগ্রামে পারবেন ২,০০,০০০ (দুই লাখ!) জনকে যুক্ত করতে।

আবার, টেলিগ্রামে যে চ্যানেল আপনি খুলবেন, সেখানে আনলিমিটেড সদস্য যুক্ত করা যায়!! ভাবতে পারেন?

এখন হয়তো প্রশ্ন করতে পারেন- হোয়াটসঅ্যাপের চ্যানেলে কতজন যুক্ত হতে পারবেন? উত্তর হলো- হোয়াটসঅ্যাপে চ্যানেল-ই খোলা যায় না, যুক্ত হইবেন ক্যামনে?

(পর্দার পেছনে স্যাড মিউজিক বাজবে!)

১০. পিসিতে ইনস্টল করতে সুবিধা: একবার আমার ফোন (অ্যান্ড্রয়েড) নষ্ট হয়ে যাওয়ার পরে কোনো একটা কারণে হোয়াটসঅ্যাপ ইনস্টল করার দরকার পড়েছিল। ল্যাপটপে সফটওয়্যার ডাউনলোড করেও লগ ইন করতে পারছিলাম না। কারণ পিসি থেকে লগ ইন করতে হলে মোবাইলে লগ ইন অবস্থায় থাকতে হবে এবং পিসিতে লগ ইনের ব্যাপারটা মোবাইল দিয়ে ভেরিফাই করতে হবে।

অন্যদিকে টেলিগ্রামে এই বিড়ম্বনা নাই। কেবল পিসি ভার্সন সফটওয়্যার ডাউনলোড করলেই যথেষ্ট। তারপর স্বাভাবিক নিয়মে লগ ইন করতে পারবেন।

পোস্টের পর্দা নামার আগে আরেকটা কথা বলে যাই। টেলিগ্রামের চেয়ে হোয়াটসঅ্যাপের দুইটা সুবিধা আছে (এই কথাটা বলে হোয়াটসঅ্যাপপ্রেমী ভাই-বোনদের সান্ত্বনা দিতে চাই)।

সুবিধা নাম্বার-১: টেলিগ্রামের চেয়ে হোয়াটসঅ্যাপের ব্যবহারকারী এখনও বেশি। কাজেই কাউকে খুঁজে পাওয়া এখানেই সহজ। তবে আশংকার (!) কথা হলো, টেলিগ্রামের ব্যবহারকারী এখন বাড়ছে। আমার এই পোস্ট দেখেও হয়তো অনেকেই টেলিগ্রাম ইনস্টল করবেন। খ্যাঁক খ্যাঁক খ্যাঁক!!

সুবিধা নাম্বার-২: টেলিগ্রাম কেবল ভয়েস কলে এবং সিক্রেট চ্যাটে এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন সুবিধা দেয়, সাধারণ মেসেজে দেয় না। কাজেই গোপনীয় কথা বলতে গেলে হয় কল দিতে হবে নতুবা সিক্রেট চ্যাট ট্যাব খুলতে হবে (কঠিন না অবশ্য)।

অন্যদিকে হোয়াটসঅ্যাপের সব কল এবং চ্যাট-ই এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন এর মধ্যে থাকে। মানে আপনি আর তিনি ছাড়া দুনিয়ার অন্য কেউ এসব দেখতে পাবে না।

এখন বিবেচনা আপনার। আপনি যদি সারাদিনই 'বিশেষ' চ্যাটিং করে থাকেন, তাহলে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করবেন কিংবা সিক্রেট ট্যাব খুলে টেলিগ্রামেও করতে পারেন। আর আপনার মেসেজ পুরো দুনিয়া দেখলে বা জানলে যদি কোনো সমস্যা-ই না হয় তাহলে কোনটা চালাবেন? হোয়াটসঅ্যাপ না টেলিগ্রাম?

উত্তর হলো- কোনোটাই না। আপনি বরং মেসেঞ্জার চালান। হেহেহেহে!

আমার কথা শেষ, পোস্টের পর্দা নামলো। টেলিগ্রামের কোন ফিচারটা আপনার বেশি ভালো লেগেছে তা কমেন্টে জানাতে পারেন।

- মুরাদ আহমেদ

পঠিত : ৯৮৫ বার

মন্তব্য: ০