Alapon

এবার বাংলাদেশ ইস্যুতে চীন ও ভারত মুখোমুখি অবস্থানে!



খুব সম্ভবত, আওয়ামী লীগ ভারতের বলয় থেকে বের হয়ে গেছে। তবে এখনো সম্পূর্ণভাবে বের হতে না পারলেও, বাংলাদেশ এখন আর ভারতের নিয়ন্ত্রণে নেই। বিগত সময়ে যেমনটা মনে হতো, বাংলাদেশের সমস্ত বিষয় দিল্লি থেকে নির্ধারন করা হয়। কিন্তু বর্তমান এসে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ দিল্লির নিয়ন্ত্রণ থেকে নিজেকে মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে।

মূলত, ভারতের সাথে আওয়ামী লীগ সরকারের টানাপোড়ন স্পষ্ট হয় ২০১৬ সালে। ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বাংলাদেশ সফরে আসেন এবং ব্যাপক আকারে বানিজ্য চুক্তি সম্পাদন করে যান। আর এই বাণিজ্যচুক্তি ভারতের সাথে আওয়ামী লীগ সরকারের দূরত্বকে আরও বাড়িয়ে দেয়।

আওয়ামী লীগ ভারতের বলয় থেকে সম্পূর্ণরূপে বেরিয়ে আসে ২০১৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে। ২০১৮ সালের ভোটারবিহিন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ যেমন নিজের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করে, তেমনি বিদেশি প্রভুদের প্রভুত্ব থেকেও নিজেকে মুক্ত করে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে জানা যায়, ২০১৮ সালের নির্বাচন সম্পর্কে ভারত সরকারও খুব একটা ওয়াকিবহাল ছিলো না। আর ২০১৮ সালের নির্বাচনে যে এভাবে দিনে দুপুরে কারচুপি ও ভোট ডাকাতি হবে, তা নাকি খোদ ভারত সরকারও ভাবতে পারেনি। ইন্ডিয়ান টাইমস পত্রিকার একাধিক কলামে এই বিষয়টি বেশ স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে। যখনই আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের কোনো সাহায্য ছাড়াই ভোটারবিহিন নির্বাচন বাস্তবায়ন করতে পারছে, এবং সহজেই বর্হিবিশ্বের সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হচ্ছে, তখনই শেখ হাসিনা ভারতের সঙ্গ ছাড়তে শুরু করেন।

মূলত, শেখ হাসিনা সামনে বিকল্প কোনো পথও ছিলো না। কারণ, ভারতের পররাষ্ট্রনীতি হলো সামন্তবাদী ও কতৃত্ববাদী। যার কারণে ভারত শুধু নিতেই জানে, দিতে জানে না। এই নীতির কারণে ভারত শ্রীলংকার সাথে বন্ধুত্ব হারিয়েছে, ব্যবসা হারিয়েছে, একইভাবে নেপালের উপর থেকেও নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। ভূটানও ভারত বলয় থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ খুঁজছে। একইভাবে ভারত বাংলাদেশের উপরও কতৃত্ববাদী পররাষ্ট্রনীতি চাপিয়ে দিয়েছিলো। যার কারণে দেখা যেত ভারত বাংলাদেশের থেকে ট্রানজিট সুবিধা গ্রহণ করেছে, সমুদ্র বন্দর ব্যবহারের সুযোগ গ্রহণ করেছে, এমনকি ফেনি নদী থেকেও পানি অধিগ্রহণের সুযোগ চেয়ে নিয়েছে। বিনিময়ে তারা বাংলাদেশকে তেমন কিছুই দেয়নি। বরঞ্জ, বারংবার ভারত বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্যচুক্তি লঙ্ঘন করেছে। বাংলাদেশে যখনই পেঁয়াজের সংকট দেখা দিলো, অমনি ভারত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি করা বন্ধ করে দিলো। তাতে বাংলাদেশে পেঁয়াজের সংকট আরও প্রকোপ আকার ধারণ করলো। সবদিক বিবেচনা করলে দেখা যায়, ভারত কেবল বাংলাদেশের থেকে কূটনৈতিক সুবিধাই গ্রহণ করেছে, বিনিময়ে কিছুই দেয়নি। এমনকি তারা আওয়ামী লীগ সরকারকে শর্তহীণ ঋণ সুবিধা দিতেও অস্বীকৃতি জানায়।

ভারত যখন আওয়ামী লীগ সরকারকে শর্তহীণ ঋণ সুবিধা দিতে অস্বীকৃতি জানায়, ঠিক তখনই শর্তহীন ঋণ সুবিধা এবং বাণিজ্যচুক্তির প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে আসে চীন সরকার। আর সেই প্রস্তাব যে কোনো যেন তেন বিষয় ছিলো না, তা বোঝাতে ঢাকায় উড়ে আসেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। সেই থেকে বাংলাদেশে অর্থনীতিতে চীনের প্রভাব বাড়ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চীনের প্রভাব যতো বৃদ্ধি পাচ্ছে, বাংলাদেশের উপর থেকে ভারতের প্রভাব ততোই কমে যাচ্ছে। এর প্রমাণ আমরা মন্ত্রীদের বক্তব্য থেকেও পাই। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের একজন মন্ত্রী বলেছেন, ‘আমরা ভাগ্যবান যে চীনের মতো পরীক্ষিত বন্ধু পেয়েছি!’

তবে আশার দিক হলো, বাংলাদেশ এখনো চীন বলয়ে সম্পূর্ণরূপে ডুবে যায়নি। ডুবে যাওয়া উচিতও হবে না। এই মুহুর্তে বাংলাদেশের সামনে সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশকে নিজেদের দলে ভেড়াতে চীন যেমন একের পর বিনিয়োগ করে যাচ্ছে, তেমনি ভারতও বাংলাদেশকে কোয়াডের অংশ বানাতে বিভিন্নরকম প্রস্তাব দিচ্ছে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশের দুই পক্ষ থেকেই সুবিধা গ্রহণ করা সহজ। কিন্তু কোনো এক পক্ষের ঘরে চলে গেলেই অপরপক্ষ শত্রুতা শুরু করবে; যে শত্রুতা এখন গোপনে গোপনে চলছে। এই ক্ষেত্রে মনে হচ্ছে, শেখ হাসিনা ভারত ও চীনের সাথে ভালোই ডিপ্লোম্যাটিক গেম খেলছেন।

পঠিত : ৩৯৩ বার

মন্তব্য: ০