Alapon

''পই পই করে হিসেব ও উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু"



উমার রাদ্বিয়াল্লাহু তায়া’লা আনহু কিন্তু পই পই করে কাফিরদের থেকে হিসেব গ্রহণ করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতেন। যেমন আল্লাহর রাসুল স্বল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুনাফিক নেতা আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের জানাজা পড়াতে গেলে তিনি রাসুলুল্লাহ স্বল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মুনাফিকটির অতীত ইতিহাস পই পই করে স্মরণ করিয়ে দিতে লাগলেন। তার জানাজা পড়াতে আল্লাহর রাসুলকে নিষেধ করলেন। মক্কা বিজয়ের দিনও তিনি আবু সুফিয়ানকে মস্তিষ্ক দ্বিখণ্ডিত করতে উদ্যোগ নিয়েছেন। কেনো নিয়েছেন? তিনি পই পই করে হিসেব রেখেছে রেখেছেন আল্লাহ দ্রোহীদের আচরণ আর কুফুরিকে।

বদর যুদ্ধের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে আমাদের। তাই না? যুদ্ধ বিজয়ের পরে যুদ্ধাপরাধীদের যখন বন্দী করা হলো তখন আল্লাহর রাসুল স্বল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই কাফির যুদ্ধাপরাধীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যখন পরামর্শ চাইলেন, তখন আবু বকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু তায়া’লা আনহু বলেছেন মুক্তিপণের বিনিময়ে তাদের মুক্ত করে দেওয়া হোক। কিন্তু উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তাদের থেকে পই পই করে হিসেব নিকেশ করার পক্ষপাতি ছিলেন। তিনি আবু বকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর সাথে প্রচণ্ডরকম দ্বিমত করে বলেন হে আল্লাহর রাসুল! এরা ছিলো সবাই ইসলামের জঘন্যতম দুশমন। এরা আমাদের মধ্যে যার যার আত্মীয়-স্বজন, তার তার কাছে এদেরকে তুলে দিন। প্রত্যেকেই নিজ নিজ ইসলামের দুশমন স্বজনদের নিজ হাতেই হত্যা করে জাহান্নামে পাঠিয়ে দিক!

আল্লাহর রাসুল স্বল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিন্তু উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর পরামর্শ গ্রহণ করলেন না। তিনি পরামর্শ গ্রহণ করলেন আবু বকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুরটা। অতঃপর আল্লাহ রব্বুল আলামিনের তরফ থেকে উমরের মতামতকে সমর্থন করে সুরা আনফালের ৬৭ এবং ৬৮ নং আয়াতদ্বয় নাজিল করলেন। সেখানে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন ; "কোনো নবীর জন্য সঙ্গত নয় যে, তার নিকট যুদ্ধবন্দি থাকবে (এবং পণের বিনিময়ে তিনি তাদেরকে মুক্ত করবেন) যতক্ষণ না তিনি যমীনে (তাদের) রক্ত প্রবাহিত করেন। তোমরা দুনিয়ার সম্পদ কামনা করছ, অথচ আল্লাহ চাচ্ছেন আখিরাত। আর আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাবান।"

বদর যুদ্ধের আরো এক মুশরিক বন্দী হলো সুহাইল ইবনে আমর। দারুণ একজন বাগ্মী ছিলো তিনি। তার বাক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে তিনি ইসলামের বিরুদ্ধে কাফির কুরাইশদের উস্কে দিতো। উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু সে জন্য সেদিন আল্লাহর রাসুলের কাছে আবেদন করলেন এই বলে যে, হে আল্লাহর রাসুল! এর সামনের দাঁত দুটো ভেঙে দেওয়া হোক। যেনো সে কখখনো আপনার বিরুদ্ধে কোথাও বক্তৃতা দিতে না পারে। কিন্তু আল্লাহর রাসুল তা-ও নিষেধ করলেন।

যাইহোক, এখন আপনি যদি অতীতের কোনো কিছুকে মনে রেখে পই পই করে চান, কিংবা কারো থেকে পই পই করে হিসেব রাখতেই চান, তা হলে সাঈয়িদুনা উমারের মতো দ্বীনের শত্রুদের বিরুদ্ধে রাখুন ইসলামের দুশমনদের বিরুদ্ধে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রাখুন। কারণ উমরই একমাত্র মানুষ, যার সীদ্ধান্তের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ওহী পর্যন্ত অবতীর্ণ করেছেন! এছাড়া বাকি সবাইকে এবং সবকিছুকেই আল্লাহর জন্য ক্ষমা করে দিন। হ্যাঁ, সবকিছুকে এবং সবাইকে......

~রেদওয়ান রাওয়াহা
০৩। ০৯। ২১ ইং

পঠিত : ৩১৫ বার

মন্তব্য: ০