Alapon

মোহরানা নিয়ে প্রতিযোগিতা বর্তমান যুগের নব্য ফিতনা...



দিন কয়েক পূর্বের কথা। এক বড়ো ভাইয়ের বিয়ের কথা হচ্ছিল। পাত্রী পক্ষের পরিবার বিয়ের তারিখ আর মোহরানা ঠিক করার জন্য আসতেছে। সেই মজলিসে উপস্থিত থাকার জন্য বড়ো ভাই অনুরোধ করলেন। তাই আমিও উপস্থিত হলাম।

পাত্রী পক্ষ আসলো, নাস্তাপানি, খাবারদাবার পরিবেশন করা হলো। খাওয়াদাওয়া শেষে বিয়ের আলোচনা শুরু হলো। প্রাথমিক কথাবার্তা শেষে মোহরানার কথা উঠল।

পাত্রী পক্ষ বলল, ‘আমাদের এলাকায় বিয়ের মোহরানা কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা করা হয়। এখন আপনারা কত করবেন বিবেচনা করেন?’
তখন পাত্রের বাবা বললেন, ‘আসলে, মোহরানা তো এলাকা ভেদে ঠিক করার বিষয় নয়। মোহরানা ঠিক করা হয় পাত্রের সামর্থের উপর। পাত্র যে মোহরানা আদায় করতে সক্ষম, সেই পরিমান নির্ধারণ করাই ইসলামের শিক্ষা। তাই পাত্রের সামর্থ্য অনুযায়ী আমরা মোহরানা ৫ লাখ করতে চাই এবং বিয়ের দিন ১ লাখ টাকা উসুল করা হবে এবং বাকিটা খুব শর্ট টাইমের মধ্যে পরিশোধ করা হবে।’

তখন পাত্রী পক্ষের একজন বললেন, ‘গত সপ্তাহে আমাদের এলাকায় একটা বিয়ে হয়েছে। সেই বিয়েতে মোহরানা ধরা হয়েছে ১ কোটি ১ লাখ টাকা। এতো মোহরানা ধার্য করার এলাকায় আলোড়ন পড়ে গেছে। এই টাকা যে পরিশোধ করবে তা কিন্তু না। কিন্তু সমাজ বলে তো একটা ব্যাপার আছে, তাই এতো বেশি পরিমাণ মোহরানা ঠিক করা হয়েছে। তেমনি আমাদেরও তো একটা সমাজ আছে। আপনারা ১০ লাখ টাকাই নির্ধারণ করুন। মানুষ জানলো যে, ১০ লাখ টাকা মোহরানা ধার্য করা হয়েছে। আর বিয়ের দিন ২ লাখ টাকা আদায় করুন। আর বাকিটা পাত্রী মাফ করে দিলেই তো হলো!’

এই কথা শুনে আমি তো রীতিমত অবাক হয়ে গেলাম। মোহরানা আদায় করা ওয়াজিব। আর এই লোক কিনা বলছেন, লোক দেখানোর জন্য বেশি মোহরানা নির্ধারন করে পরে বাসর ঘরে বউয়ের কাছে মাফ চেয়ে নিলেই হলো। এই কথা শুনে বললাম, এটা কী করে সম্ভব! এভাবে মাফ চাওয়া ইসলাম সমর্থন করে না। এই বিষয়ে হজরত আশরাফ আলী থানভি (রহ.) বলেছেন, ‘ মোহরের অর্থ স্ত্রীর হাতে দেওয়ার পর স্ত্রী যদি তা ইচ্ছামতো খরচ করার সুযোগ লাভ করা সত্ত্বেও স্বামীকে দিয়ে দেন, কেবল সে ক্ষেত্রেই তা মাফ বলে গণ্য হবে, অন্যথায় অর্থ নারীর হস্তগত না করে মাফ নিলে এ মাফ গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা দেখা যায়, বাসরঘরে এ প্রক্রিয়ায় ‘মাফ’ করে দেওয়ার পর যদি কোনো কারণে সংসার ভেঙে যায়, ওই নারী মোহরানা দাবি করতে দ্বিধা করেন না, এমনকি নিজের অধিকার আদায়ে মামলাও করে থাকেন। এতে বোঝা যায়, আগে যে তিনি ‘মাফ’ করে দেওয়ার কথা বলেছেন, সেটি ছিল কথার কথা কিংবা সামাজিক প্রথা। এ প্রক্রিয়ায় মূলত মোহরানা মাফ হয় না।’

হজরত আশরাফ আলী থানভি রহ.-এর রেফারেন্স টেনেও খুব একটা লাভ হয়েছে বলে মনে হয় না। পাত্রী পক্ষ তাদের কথাতেই অনড় রইলেন, মোহরানা ১০ লাখ টাকা নির্ধারণ করতে হবে; তবে এই টাকা পরিশোধ না করলেও চলবে।!

এভাবে কথার এক পর্যায়ে পাত্রের মা বললেন, ‘আপনারা তো ইসলামই বোঝেন না দেখছি। মোহরানা আদায় করা যে ওয়াজিব, সেটাই বুঝতেছেন না। মোহরানা আদায় না করলে এটা যে বিয়েই হবে না, সেটাই বুঝতে পারছেন না। আর আপনারা কিনা পড়ে আছেন, সামাজিক লোকদেখানো বিষয় নিয়ে। যারা ইসলামের নুন্যতম বিষয়টাও বোঝে না, তাদের সাথে আত্মিয়তা করার কোনো প্রশ্নেই আসে না।’

আর এভাবেই বিয়েটা ভেঙ্গে গেল।

বর্তমান সময়ে মোহরানা লোক দেখানো বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। লোক দেখানোর জন্য অনেক বেশি মোহরানা ঠিক করা হলেও, তা আর আদায় করতে দেখা যায় না। আর এভাবেই নারীরা অধিকার থেকে বঞ্জিত হচ্ছে; অথচ সেই নারী নিজেই জানে না, সে বঞ্জিত হচ্ছে!

পঠিত : ৩৪৫ বার

মন্তব্য: ০