Alapon

||ইমাম মওদূদী রহঃ: কালোত্তীর্ণ চিন্তা নায়ক||


বিগত শতাব্দীর অন্যতম আলোচিত-পর্যালোচিত-সমালোচিত গুরুত্বপূর্ণ মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদ, আলিমেদ্বীন ইমাম সাঈয়িদ আবুল আ'লা মওদূদী (রহঃ) আজকের এই দিনে (২২ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৯) মৃত্যু বরণ করেন।
একটা চমকিত বিষয় হচ্ছে সাঈয়িদ মওদূদী (রহঃ) এই একই মাসের ২৫ তারিখেই জন্ম গ্রহণ করেন ভারতের হায়দারাবাদে। ওনার বাবা মাওলানা আহমদ হাসান। ভারতে তাঁর পূর্বপুরুষেরা আসেন আফগানিস্তান থেকে। পরিবারেই ওনার প্রাথমিক শিক্ষা।
উস্তাদ মওদূদী রাহিমাহুল্লাহ ছিলেন অত্যন্ত ধীমান। মেধাবী। প্রখর-শাণিত-ধারালো এবং খুবই সুগভীর স্বচ্ছ চিন্তার অধিকারী। তিনি মাত্র পনেরো বছর বয়সে বিজনোর পত্রিকায় সাংবাদিক হিশেবে কাজ শুরু করেন। ১৯২০ মাত্র সতেরো বছর বয়সেই তিনি সম্পাদক হন তাজ পত্রিকার।
ভারতের জগদ্বিখ্যাত ইসলামি বিদ্যাপিঠ দারুলউলুম দেওবন্দের মুখপাত্র 'আল জামিয়াহ' পত্রিকার সম্পাদক হিশেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েছিলেন ১৯২৫ সালে। ১৯৩৩ সালে তিনি নিজেই “তরজুমানুল কুরআন” নামক পত্রিকা প্রকাশ শুরু করেন। সেই পত্রিকার পাতায় তাঁর ক্ষুরধার লেখনীর সাথে পরিচিত হন দক্ষিণ এশিয়ার কিংবদন্তিতুল্য মুসলিম কবি ও দার্শনিক আল্লামা ইকবাল (রহঃ) ।
চৌধুরী নিয়াজ আলী খান তাঁর ৬৬ একর জমি আল্লাহর দ্বীনের জন্য ওয়াকফ করেন। এই জমিকে যথাযথভাবে ইসলামের চাষের উপযোগিতা দিতে আল্লামা ইকবাল ইমাম মওদূদী (রহঃ) -কে যথাযথ ব্যক্তি মনে করেন।
সে কারণেই ১৯৩৮ সালে মাত্র ৩৫ বছর বয়সী টগবগে যুবক মওদূদীকে হায়দারাবাদ( ভারত) থেকে পঠানকোট ( পাকিস্তান) আমন্ত্রণ জানান আল্লামা ইকবাল। আল্লামা ইকবালের ডাকে সাড়া দিয়ে সাঈয়িদ মওদূদীও সেখানে হিজরত করেন। দারুল ইসলাম ট্রাস্টে (পাঠানকোট) যোগদান করেন।
ইমাম মওদূদী (রহঃ) -এর ওপর নানাবিধ বর্বর মিথ্যাচার আর জুলম রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে তিনি আলিম না। তাঁর ইসলামি শিক্ষার কোনো সার্টিফিকেট নেই। তিনি সাহাবী বিদ্বেষী, হাদিস অস্বীকারকারী ইত্যাদি। অথচ তিনি হাদীস অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে হাদিসের সত্যতা আর কার্যকারিতা প্রমাণে একটা অসাধারণ অনবদ্য গ্রন্থ রচনা করেছেন “সুন্নাতে রাসুলের আইনগত মর্যদা”নামে। আসহাবে রাসুলকে তিনি কতোটা মর্যদার আসনে দেখেন তা তাঁর “সাহাবায়ে কেরামের মর্যদা” নামক গ্রন্থে প্রমাণ মেলে।
হিন্দুস্থানের একজন শায়খ , যিনি সৌদির দাম্মামে আলে সৌদের বেতনভুক্ত দা'ঈ হিশেবে কাজ করেন, তিনি সেখানে বসে বসে উপমহাদেশের সকল ধারার আলিমদের নিয়ে মিথ্যাচার আর প্রপাগাণ্ডা চালাচ্ছেন, তারই ধারাবাহিকতায় তিনি ইমাম মওদূদী (রহঃ) -এর সম্পর্কেও বর্বর ফতোয়া হামলায় সহীহ্ ডাহামিথ্যে অভিযোগ করেন যে, মওদূদী কোনো আলিম না। তিনি আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জেনারেল শিক্ষায় অনার্স-মাস্টার্স করেছেন। কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো ইমাম সাঈয়িদ মওদূদী (রহঃ) কখনোই আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন না।
সাঈয়িদ মওদূদী (রহঃ) ১৯২১ সালে দিল্লিতে মাওলানা আব্দুস সালাম নিয়াজির কাছে আরবি ভাষা ও সাহিত্য শিক্ষা গ্রহণ করেন। ১৯২৬ সালে দিল্লির 'দারুল উলুম ফতেহপুরি' থেকে ‘উলুম-এ-আকালিয়া ওয়া নাকালিয়া’ সনদ লাভ করেন। উক্ত প্রতিষ্ঠান থেকেই তিনি ‘জামে তিরমিজি’ এবং ‘মুয়াত্তা ইমাম মালিক’ সনদ লাভ করেন।
ইমাম মওদূদী (রহঃ)-কে আরো একটা বর্বরতার শিকার হতে হয়। বলা হয় মওদূদীবাদ আর কাদিয়ানীবাদ এক জিনিস, মানে আমরা ছোটো বেলায় আমাদের আকাবিরদের কাছে এমনই শুনতাম। অথচ সেই মওদূদীর বই-ই আছে কাদিয়ানীদের বিরুদ্ধে। সেই বইতে তিনি তাদের অমুসলিম ঘোষণা করেন এবং তা প্রমাণও করেন। মূলত “কাদিয়ানী সমস্যা” নামক সে বই লেখার জন্য ওনাকে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী গ্রেফতার করে এবং মৃত্যুদন্ড প্রদান করে।
ফাঁসিতে ঝুলবার রায় শুনেও তিনি বিন্দুমাত্র বিচলিত হলেন না। ওনাকে অনুরোধ করা হলো যে আপনি ক্ষমা প্রার্থনা করুন, তার দীপ্ত-কঠিন ঘোষণা ছিলো এই যে — আমি মাজলুম হয়ে জালিমের নিকট কেনো ক্ষমা প্রার্থনা করবো? তাঁর ঈমান জাগানিয়া উক্তি ছিলো — “মৃত্যুর ফায়সালা মহান আল্লাহর আসমানে হয়, জমিনে নয়!” তাঁর ঈমানদীপ্ত দৃপ্ত ঘোষণাটি আমাদের জন্য যুগের পর যুগ অনুপ্রেরণা হিশেবে কাজ করে যাবে। আমরা যারা দ্বীনের ওপর সাহসিকতার সাথে পথ চলতে চাই, তাঁর সেই ঘোষণাটি আমাদের ঈমানের সূর্যটাকে আরো তেজদীপ্ত করে তুলবে।
তাঁর পক্ষে তিনি তাঁর সংগঠন, পরিবার সুহৃদ!সকলকে দৃঢ়তার সঙ্গে রাষ্ট্রের কাছে কোনো প্রকার ক্ষমা প্রার্থনা চাইতে নিষেধ করেছেন। পরবর্তীতে মুসলিম বিশ্ব এবং বিশ্বের নেতৃবৃন্দের চাপ ও অনুরোধে তাঁর মৃত্যুদণ্ড বাতিল করে পাকিস্তানি স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠী।
একটা বিষয় লক্ষণীয় হলো যে, পাকিস্তান সৃষ্টিই হয়েছে ইসলামের বিধিবিধানের আলোকে সমাজ- রাষ্ট্র পরিচালিত হয়ে পূর্ণাঙ্গ ইসলামকে ধারণ করার জন্যেই। কিন্তু শাসক শ্রেণি সে বিষয়ে কার্যকরী উদ্যোগ না নেয়ায় ইমাম মওদূদী (রহ.) ১৯৪৮ সালে ‘ইসলামী সংবিধান' ও 'ইসলামী সরকার' প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচারণা শুরু করেন। সে কারণেই পাকিস্তান সরকার তাঁকে কারাগারে বন্দী করে। অতঃপর ১৯৫০ সালে কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন তিনি।
মাওলানার এক অনবদ্য কীর্তি হচ্ছে তাফসীরগ্রন্থ “তাফহীমুল কুরআন”। তাঁর তাফসীরগ্রন্থ তাফহীমুল কুরআন পড়ি আর বিস্ময়ে “থ” হয়ে যাই, একটা মানুষ এতো বিজ্ঞান, ভূগোল, ইতিহাস রাজনীতি ও দর্শনের এতো আপডেট তথ্যসমৃদ্ধ তাফসীর কীভাবে উপহার দিতে পারেন!
ঐতিহাসিক যে স্থানগুলো কুরআনের সাথে সম্পর্কিত, মাওলানা সে-ই স্থানগুলো স্বচক্ষে দর্শন করেছেন। আর মানচিত্র দিয়ে তা পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন। এই ধাঁচের তাফসীর আর দ্বিতীয়টি আছে বলে আমার জানা নেই।
এই যে তাফসীরটা, তিনি তা ১৯৪২ সালে রচনা শুরু করেন আর দীর্ঘ ত্রিশ বছর পরে তা ১৯৭২ সালে তা সমাপ্ত করেন। সেই বছরই তিনি স্বজ্ঞানে স্বেচ্ছায় তাঁর সংগঠনের আমীরের পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। যদিও দীর্ঘদিন থেকে তিনি অবসর চাচ্ছিলেন সাংগঠনিক কাজ থেকে, তবুও মজলিশে শুরার চাপে তিনি অবসর নিতে পারেননি দায়িত্ব থেকে। অবশেষে ৭২ সালে মজলিশে শুরা তাঁর আবেদন মঞ্জুর করে তাঁকে সাংগঠনিক আমীরের দায়িত্ব থেকে অবসর প্রদান করেন।
প্রত্যেকটা মানুষের কাজের জন্য নির্দিষ্ট একটা বিষয়ের ওপর আগ্রহ থাকে ৷ কিন্তু মওদূদী'র আগ্রহ এবং কাজ ছিলো সর্বব্যাপি। তাফসীর, হাদিস, ফিকাহ, ইসলামী আন্দোলন, সংগঠন, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, পাশ্চাত্য সভ্যতা, সাহিত্য-সমালোচনা, ইতিহাসসহ সবদিকেই।
মাওলানাকে কোনো না কোনোদিকে গ্রহণ করতেই পারি আমরা। কোনো না কোনো গ্রন্থ থেকে, কোনো না কোনো সাইট থেকে উপকৃত হতেই পারি। অথচ আমাদের সংকীর্ণতার দরুন কিছু কিছু মানুষ তাঁর ইলম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
ইমাম সাঈয়িদ আবুল আ'লা মওদূদী (রহঃ)-যাদের চিন্তায় প্রভাবিত বা যাঁরা তাঁর ভাবগুরু তারা হলেন— ইমাম আবু হানিফা, ইমাম ইবনে তাইমিয়া, ইবন আল কাইয়িম, মুহাদ্দিস শাহ ওয়ালিউল্লাহ, হাসান আল বান্না, আল্লামা ইকবাল, মাওলানা মুহাম্মাদ আলী জাওহার, জামালুদ্দিন আফগানি প্রমুখ।
ওনার চিন্তায় প্রভাবিত যাঁরা বা যাঁরা তাঁর ভাবশিষ্য, তাঁরা হলেন—সাঈয়িদ কুতুব শহীদ, জালালুদ্দিন উমরি, ইউসুফ ইসলাহী, আমীন আহসান ইসলাহী, ডা: ইসরার আহমেদ, হাফিজ সাঈদ, সাঈয়িদ আলী শাহ গীলানী, জাস্টিস মালিক গোলাম আলী , মিয়া তুফাইল মুহাম্মাদ , শাইখ ইউসূফ আল-কারযাভী, রিসেপ তায়িপ এরদোয়ান, প্রফেসর গোলাম আজম, কাজী হুসেন আহমেদ, মাওলানা আবদুর রহীম, বুরহানুদ্দিন রাব্বানী, গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার প্রমুখ। এবং আজকের দিনের জনপ্রিয় নন্দিত দা'ঈ, একসময়কার কমিউনিস্ট নাস্তিক ড: বিলাল ফিলিপসও ওনার বই পড়ে অনুপ্রাণিত হয়েছেন ইসলামের প্রতি। স্পেশালি মওদূদী (রহঃ) এর ইসলাম পরিচিতি বইটা পড়ে বিস্ময়কর অনুপ্রেরণা পেয়েছেন তিনি। পরবর্তীতে ইসলাম গ্রহণ করেছেন।
ইমাম আবুল আ'লা মওদূদী (রহঃ)-এর চিন্তাধারা সম্পর্কে শাইখ ইউসুফ আল কারজাভীর লিখিত কিছু পয়েন্ট নিয়ে একবার কোথাও পড়লাম। সেখানে দুটো বিষয় আমার হৃদয়ে দারুণ দাগ কেটেছে। সেগুলো হলো :
১। মাওলানা মওদূদী (রহ.)-এর লেখনীগুলো মনে হয় যেনো এক সাহসী সৈনিকের দ্বিধারী তলোয়ার। তিনি যেটাকে সঠিক মনে করতেন তা কারো পরোয়া না করে লিখে দিতেন। যে ব্যাপারে তিনি সন্তুষ্ট হতেন এবং যেটাকে সত্য বলে মনে করতেন তা তিনি খোলাখুলিভাবে প্রকাশ করে দিতেন। এ ব্যাপারে তিনি কোনো সাবধানীর সাবধানবার্তা কিংবা কোন ফেরাউনের ফেরাউনিয়াতকে ভয় করতেন না।
২। ইসলাম সম্পর্কে মাওলানা মওদূদীর চিন্তাধারা তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের মতো ছিল না। বুদ্ধিজীবীগণ পাশ্চাত্য চিন্তার অনুসারী ও পাশ্চাত্য সভ্যতার দাস ছিল। তারা মক্কা ছেড়ে ইউরোপকে তাদের কা’বা বানিয়ে নিয়েছিলো। তারা ইসলামী সংস্কৃতিকে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির মুখাপেক্ষীতে পরিণত করেছিলো। এ সমস্ত পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত হয়ে মাওলানা মানুষকে বিশুদ্ধ ইসলামের দিকে আহ্বান জানিয়েছিলেন। তাঁর চিন্তার ফসল থেকে সারা বিশ্বের মুসলিমরা উপকৃত হচ্ছে। কারযাভী আরো বলেন, আমি যুবক অবস্থায় তাঁর প্রায় সবগুলো বই অধ্যয়ন করেছি।
আজকের দুনিয়ার অন্যতম একটা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ও কিন্তু মাওলানা মওদূদী (রহঃ)-এর চিন্তার ফসল। ১৯৬০ সালে সৌদি বাদশাহর অনুরোধে বিশ্ববিদ্যালয়টির রূপরেখা তিনিই পেশ করেন।
ইমাম সাঈয়িদ আবুল আ'লা মওদূদী (রহঃ) যখন ইন্তেকাল করেন, তখন বাদশাহ খালিদ চিকিৎসাধীন ছিলেন। বাদশাহ ফাহাদ ছিলেন তখন ক্রাউন প্রিন্স। তিনি হারামাইনে গায়েবানা জানাযার আয়োজন করেন।
ইসলামের খিদমাতে, ইসলামের নানাবিধ বিষয়ে অবদান রাখার জন্যে তাঁকে ১৯৭৯ সালে মুসলিম বিশ্বের নোবেলখ্যাত ‘কিং ফয়সাল ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়।
ইমাম মওদূদী (রহঃ) সম্পর্কে নিম্নের মন্তব্যটা যথেষ্ঠ প্রাসঙ্গিক। বহুদিন পূর্বে কোথাও নিম্নের মন্তব্যটি আমি পেয়েছি। যা স্পষ্টত আমার অন্তরের অভিব্যক্তিই যেনো ফুটিয়ে তোলে। আর সেটা হলো— মাওলানা মওদূদীর অধিকাংশ বই এবং উনার সমালোচকদের আপত্তিসমূহের মনোযোগী পাঠের পর আমার অভিব্যক্তি হলো, মওদূদী (রহঃ) তাঁর মান উপযোগী পাঠক পাননি, যেভাবে শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) তাঁর যুগে পাননি। বিষয়টি মাওলানা মওদূদী (রহঃ)'র দুর্ভাগ্য বলা চলে, আবার সৌভাগ্যও।
দুর্ভাগ্য এজন্য যে, মওদূদী (রহঃ)'র কপালে ভীষণ গালিগালাজ জুটেছে, তাঁকে বলা হয়েছে- রাসূল ও সাহাবী বিদ্ধেষী, কুরআনের ভুল ব্যাখ্যাকার, নতুন ইসলামের প্রবর্তক, হাদিস অস্বীকারকারী ইত্যাদি ইত্যাদি। ওনার একটা বিরাট সৌভাগ্য হচ্ছে, তাঁর মান উপযোগী পাঠক না পাওয়ার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে সাঈয়িদ মওদূদীর চিন্তাধারা তাঁর যুগের চেয়েও বেশি অগ্রসর। তিনি কালোত্তীর্ণ দার্শনিক, আলিমেদ্বীন ও চিন্তানায়ক। তিনি গতানুগতিক কোনো আলিম নন; গতানুগতিকরা তাদের যুগকে সন্তুষ্ট করতে পারে, ভবিষ্যতকে নয়।
পিস টিভির জনপ্রিয় সীরাত বিষয়ক আলোচক, লন্ডন প্রবাসী দা'ঈ ইলাল্লাহ শায়খ ডঃ আব্দুস সালাম আজাদী স্যার তাঁর একটা লেখায় বলেছেন, যে সাঈয়িদ মওদূদী রহঃ আলিম শব্দটার যথার্থই আলিম ছিলেন।
মওদূদী (রহঃ) উম্মাহ'র চিন্তা-জগতে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টিতত্ত্ব থেকে অর্থনীতি, পরিবারব্যবস্থা থেকে রাষ্ট্রব্যবস্থা, সমাজব্যবস্থা থেকে দর্শন সব জায়গায় চিন্তার খোরাক যুগিয়েছেন। প্রাচীনকে ঝকঝকে নতুন ও স্বচ্ছ করে উপস্থাপন করেছেন। ইসলামকে জাহিলিয়াত থেকে ছেঁকে আলাদা করেছেন।
ইমাম মওদূদী রহঃ এমন সময়ে আর্বিভূত হয়েছেন, এমন একটা সময় কলম তুলে ধরেছেন যখন চারিদিকে সমাজতন্ত্রের নাস্তিক্যবাদের ধূম্রজাল,যখন ইবাদতকে মাসজিদ, মাদরাসা আর খানকায় সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। তাঁর কলমের কালিতে তিনি মুসলিম উম্মাহকে তাঁর হারিয়ে যাওয়া গৌরবকীর্তন ফিরিয়ে আনার, আত্মসচেতনতা সৃষ্টির এক আকুলতা তৈরি করেছেন। জ্ঞানী-বিচক্ষণ মানুষজনের চিন্তাজগতে বিপ্লব সৃষ্টি করেছেন।
সবচেয়ে চমকপ্রদ ব্যাপার হচ্ছে ওনার বিরোধিতাকারীরাই তাঁর চিন্তাধারায় ব্যাপক প্রভাবিত হয়েছেন। তাঁর চিন্তার ভিত্তিতে তারা নিজস্ব অঙ্গন থেকে রাজনীতির মাঠে এসেছেন, সংগঠন গড়ে তুলেছেন, প্রশিক্ষণের প্রগতিশীল পদ্ধতি চালু করেছেন, শিল্প-সাহিত্যের চর্চায় হাত দিয়েছেন। তারা আসলে তাঁকে মুখে এবং বলার মাধ্যমে অস্বীকার করলেও তাঁর চিন্তা ও পদ্ধতির বাইরে নতুন বা ব্যতিক্রম কোন চিন্তা উপস্থাপন করতে পারেননি।
ইমাম সাঈয়িদ মওদূদী (রহঃ)এর খেলাফত ও রাজতন্ত্র', 'রেনেসাঁ আন্দোলন' ইত্যাদির ভুল পাঠ নেয়া হয়েছে। 'সূদ', 'তানকীহাত', 'নৈতিক ভিত্তি', 'হুকুকুজ জাওজাইন', 'রাষ্ট্র ও সংবিধান', ইসলাম পরিচিতি, আল জিহাদু ফিল ইসলাম, রাসায়েল ও মাসায়েল, ইসলামী সংস্কৃতির মর্মকথা, সিরাতে সারওয়ারে আলম ইত্যাদি অসাধারণ-অনবদ্য কীর্তিকে সংকীর্ণরা স্বীকৃতি দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
আল্লাহ সাঈয়িদ মওদূদীর ওপর রহমের বারিধারা বর্ষণ করুন। তিনি যেহেতু মানুষ সেহেতু ত্রুটি-বিচ্যুতি হওয়াটা তো নিতান্তই স্বাভাবিক। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা ইমাম মওদূদী রাহিমাহুল্লাহর ভুলগুলো ক্ষমা করুন। ওনার কাজগুলো কবুল করুন। জান্নাতুল ফেরদৌসের মেহমান বানিয়ে দিক।
||ইমাম মওদূদী রহঃ: কালোত্তীর্ণ চিন্তা নায়ক||
~রেদওয়ান রাওয়াহা

পঠিত : ৪১০ বার

মন্তব্য: ০