Alapon

হেলমেটবাহিনীর হাতুড়িপেটার চর্চা!

মানুষকে মানুষ হওয়ার জন্য চেষ্টা করতে হয় কিন্তু পশুকে পশু হতে চেষ্টা করতে হয়না। মানুষ ও পশুর দৈহিক বা বাহ্যিক অবয়বের কারণে দেখতে মানুষ কিংবা পশু বলে মনে হলেও আদতে মানুষের "মানুষ''-টা থাকে তার মনুষ্যত্বে।
মানুষের মাঝে মানবীয় গুণগুলি আছে বলেই মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত। কিন্তু এই গুণগুলো কেউ উত্তরসূরীতার সূত্রে বা জন্মসূত্রে অর্জন করে না, নিজেই অর্জন করে নিতে হয়।

সময়ের বিবর্তনে বাংলার ইতিহাসে এক অন্যন ইতিহাসের সৃষ্টি হয়েছে। যা কলুষিত করেছে মানব ইতিহাসের অধ্যায়কে। আদম হত্যার ইতিহাস নতুন নয়, কিন্তু হেলমেটবাহিনী, হাতুড়িবাহিনীদের বর্বতার ইতিহাস নবাগত। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরের যুগসন্ধি ক্ষণে আওয়ামী সরকারের এক নব্য সন্ত্রাসী গ্যাং। নিত্যদিন যাদের চাপাতি হামলা, হাতুড়ি হামলার বর্বচিত ঘটনা খবরের শিরোনাম। ২০০৬ সালের ২৮শে অক্টোবর বাংলার ইতিহাসে কলুষিত অধ্যায়। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বলি হয়েছিল কিছু পরোবাসী যুবক। লগি-বৈঠা, চাপাতি দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করার পর যারা আনন্দ- উল্লাসে মেতে উঠেছিল, নিত্য করেছিল তাদের হাতেই খুন হওয়ার লাশের ওপর। তাদের রোমহষর্ক নিপীড়ন আজো চলছে----


নিকট অতীতে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা নিম্নরূপ-
গত ৩ আগস্ট কুষ্টিয়া শহরে প্রকাশ্যে ঠিকাদার শহিদুর রহমানকে এলজিইডি কার্যালয়ের সামনে হাতুড়িপেটা করা হয়। ঠিকাদারি কাজের দরপত্র বিরোধে এই ন্যক্কারজনক হামলার শিকার হন শহিদুর। এ ঘটনার জন্য তিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে দায়ী করেন।

গত ২ জুলাই ২০১৮ সালে কোটা সংস্কারের দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে শিক্ষার্থীরা পতাকা মিছিল বের করলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রামদা, লোহার রড, হাতুড়ি দিয়ে হামলা করে। এ মিছিলে শিক্ষার্থী তরিকুলকে লাঠি ও হাতুড়ি দিয়ে পেটানো হয়। পিটুনির ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। তাতে দেখা যায় একজন এসে তার কোমরে হাতুড়ি দিয়ে মারছে।

১৯ জানুয়ারি ২০২০ শরীয়তপুর কলেজে জুনিয়র সিনিয়র নিয়ে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে ছাত্রলীগের কলেজ শাখার সভাপতি মেহেদী হাসান ও তার সহপাঠীরা মিলে একাদশ শ্রেণীর ছাত্র দাউদ ইব্রাহিমকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে আহত করে।


২৫ এপ্রিল ২০২১ সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান বিল্লাল হোসেনের নির্দেশে সাংবাদিক সাদ্দাম হোসেনকে হাতুড়িপেটা করার অভিযোগ ওঠে। সাদ্দাম ভোরের দর্পণ পত্রিকার সুনামগঞ্জ জেলার হাওরাঞ্চল প্রতিনিধি।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে গণজাগরণ সবসময় ঘটে না। মাঝে মধ্যে সংঘটিত হয়। যখন হয় তখন নতুন ইতিহাসের অধ্যায় রচিত হয়। গেল কয়েক বছর আগে বাংলাদেশের রাজনীতিতে দু’টি আন্দোলন গড়ে ওঠে। একটি কোটা সংস্কার আন্দোলন। অপরটি নিরাপদ সড়ক আন্দোলন। দু’টি আন্দোলনই ছিল অরাজনৈতিক। অথচ রাজনৈতিক ট্যাগ লাগিয়ে দু’টি আন্দোলনের নেতাকর্মীদের ওপর নিপীড়নের খড়গ প্রয়োগ করা হয়। ২০১৮ সালের এপ্রিলে ১০ দফা দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীরা যখন রাস্তায় তখন এ আন্দোলন দাবানলের মতো সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে সৃষ্টি হয় হেলমেট বাহিনী ও হাতুড়ি বাহিনীর নিষ্ঠুর নিপীড়ন।

নিরাপদ সড়ক আন্দোলন কিংবা কোটা সংস্কার আন্দোলন কোনো রাজনৈতিক ইস্যু ছিল না। শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী আবদুল করিম রাজীব এবং একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী দিয়া খানম মিম বাসচাপায় নিহত হলে শিক্ষার্থীরা ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর রোডে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের দাবি নিয়ে রাস্তায় নামে। তারা সপ্তাহব্যাপী অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করে। এটি নেতাবিহীন একটি আন্দোলন ছিল। তারা রাষ্ট্রের অব্যবস্থাপনা চোখে আঙুল দিয়ে দেশবাসীকে দেখিয়ে দিয়েছে। ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে এ আন্দোলন লিপিব্ধ হয়ে থাকবে।

পঠিত : ২২৯ বার

মন্তব্য: ০