Alapon

"একজন মুসলিম দা'ঈ থেকে মুরতাদ : যুক্তি-প্রমাণ এবং আল্লাহর নির্দেশনা"


নাস্তিকতার বিরুদ্ধে কাজ করতো ভাইটি। নাম তার আহমদ আল উবায়দুল্লাহ। ইসলামকে অন্যান্য ধর্মের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্যে পরিশ্রমী লেখাজোঁখাও করতো দেদারছে। আরিফ আজাদ-সামছুল আরেফিন শক্তি ভাইদের সাথে বিভিন্ন পেইজে-ওয়েবসাইট-ব্লগে লেখালেখিও করতো প্রায় নিয়মিতই। এবারে সমকালীন প্রকাশনী থেকে "জবাব" নামক বইতেও তার লেখা ছিলো। আমি নিজেও পড়েছি সে লেখা। কিন্তু এখন জানতে পারলাম সেই মেধাবী লেখক ছেলেটা মুরতাদ হয়ে গেছে। ত্যাগ করেছে ইসলাম। মুসলিম হিসেবে ছেলেটি মাদখালি মাসলাকের ছিলো। সে হিসেবে তার ভেতর নাকি বিনয় ছিলোনা। দেওবন্দিদেরকে তার শায়খদের মতো প্রায় মুশরিকি আকিদার মানুষ হিসেবেও নাকি ট্রিট করতো। বুঝা যাচ্ছে আকিদা-আমলের ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ সহীহই ছিলো।
অথচ এখন সে আজ দ্বীনের আঙিনা থেকে ছিঁটকে গিয়ে এখন সে খ্রিস্টবাদের খপ্পরে পড়েছে। সে কি ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব জানতোনা? বুঝতোনা? না বুঝেই কি খ্রিস্টবাদ-নাস্তিকতাবাদের বিরুদ্ধে লিখেছিলো? অবশ্যই না! কিন্তু তবুও তাকে মুরতাদ হতে উৎসাহ দিয়েছে কিসে? তার অহংকারী উগ্র নফস।

আসলে একজন দা'ঈর, একজন ইসলামি আদর্শ প্রতিষ্ঠাকাঙ্ক্ষি কর্মীর, একজন মুসলিমের এসব অতি-যুক্তিপ্রমাণের দিকে না ঝুঁকে বরং কুরআন-হাদিস এবং সালাফদের কিতাবাদি থেকে পর্যাপ্ত অধ্যয়ন করে ইসলামের মৌলিক জ্ঞানার্জনের দিকেই মনোযোগী হওয়া উচিত। কারণ যে ছেলেটি বা যে মেয়েটি আপনার কাছে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের যৌক্তিকতা খুঁজে ফিরবে, সে যে আসলে আপনার যুক্তিতে, আপনার জবাবে সন্তুষ্ট হয়ে ইসলামের পতাকাতলে আসবে, ইসলাম অনুশীলনের চেষ্টা করবে, তার কি কোনো নিশ্চয়তা আছে? একটা প্রশ্নের উত্তর দেবেন তো আরো হাজারটা প্রশ্ন সে জুড়ে দিবে। এই স্বভাবটা মক্কার কাফির-মুশরিকদেরও ছিলো।

আল্লাহর রাসুলের কাছে যখন তারা একে একে প্রমান চেয়ে হাজারো দাবি পেশ শুরু করেছে, আল্লাহর রাসুল যখন বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে গেছে এদের এমন কথাবার্তায় বা আচরণে, তখন আল্লাহ অনেকগুলো আয়াতে এদের অবস্থা বর্ণনা করেছেন, তাদের স্বরূপ নবিজির কাছে উদঘাটন করে দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ পবিত্র কালামুল্লাহ মাজিদে বলেন;
“আর যদি আমি তাদের ( যারা রাসুল সঃ এর কাছে প্রমাণ চায়, মু'জিজা দেখতে চায়) জন্য আসমানের কোনো দরজা খুলে দিতাম, অতঃপর তারা তাতে দিনে দুপুরে আরোহণ করতে থাকতো, তবুও তারা বলতো, নিশ্চয়ই আমাদের দৃষ্টি কেড়ে নেওয়া হয়েছে, বরং আমাদের ওপর জাদু করা হয়েছে”। [সূরা: আল-হিজর: ১৪-১৫]

সুরা আন'আমেও এই বিষয় উল্লেখ আছে, তারা এসে আল্লাহর নবিকে কসম করে বলে ওহে মুহাম্মাদ, আমাদের জন্যে কোনো নিদর্শন কেনো পাঠাও না? যা দেখে আমরা ঈমান আনতে পারি? আমাদের সামনে যদি কোনো নিদর্শন এসে যায়, তাহলে আমরা ঈমান আনবো। তখন আল্লাহ তাঁর প্রিয় হাবিবকে জানিয়ে দিয়ে বলেন যে,
"আমি যদি তাদের নিকট ফেরেশতাও নাযিল করতাম এবং মৃতরা তাদের সাথে কথা বলা শুরু করতো, এবং সবকিছু সরাসরি তাদের সামনে সমবেতও করতাম, তবুও তারা ঈমান আনতো না।" [সূরা আল-আন‘আম: ১০৯-১১ ] প্রথমবার এরা যে মানসিকতার জন্যে তোমার ওপর ঈমান আনেনি, এবারেও একই মানসিকতার জন্যে এরা তা-ই করবে, অর্থাৎ ঈমান আনবেনা। [ তাফহীমুল কুরআন ]

একই সূরায় আল্লাহ আরো বলেন; “আর আমি যদি কাগজে লিখিত কিতাব তোমার উপর নাযিল করতাম অতঃপর তারা তা হাত দিয়ে স্পর্শও করতো, তবুও যারা কুফুরি করেছে তারা বলতো, ‘এটা তো প্রকাশ্য জাদু ছাড়া কিছু না”। [সূরা আল-আন‘আম: ৭]
সত্যিই কুরআনের আয়াতগুলো যেনো আমাদের আশপাশের, আমাদের জীবনেরই প্রতিচ্ছবি। ছেলেটার কথা জানার পরে এই আয়াতগুলোই কেবল অন্তরে ভেসে বেড়াচ্ছে। আল্লাহ এইরকম লোকগুলোর জন্যেই তো বলেছেন যে, আমি এদেরকে বিদ্রোহ আর অবাধ্যতার মধ্যে উদ্ভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়ানোর জন্যে ছেড়ে দিচ্ছি। অর্থাৎ যারা কেবল প্রমাণ-যুক্তি আর নিদর্শন চেয়ে বেড়ায়। অথচ ইসলাম আমাদেরকে যুক্তি-প্রমাণ কিংবা নিদর্শনের ওপর ভিত্তি করে ইসলামে প্রবেশ করতে বলেনি। ইসলাম আল্লাহর অসংখ্য নিয়ামাতরাজি আর নিদর্শন নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে বলেছেন। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে বলেছে। আর দ্বীনের বিধানের বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছে সামি'ই না, ও'আত্ব'না ( শুনো এবং প্রশ্নবিহিন আনুগত্য করো)।

সত্যিই, ঈমানের ওপর অবিচল থেকে মৃত্যুর জন্য আমাদেরকে আল্লাহর বিধানের কাছে নিঃশর্তে আত্মসমর্পন করা ছাড়া উপায় নেই। আল্লাহর দ্বীনের ওপর টিকে থাকার জন্যে কুরআন-হাদিস-তাফসীর-মৌলিক ইসলামি সাহিত্য অধ্যয়নের বিকল্প নেই। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন। ঈমানের মতো মূল্যবান সম্পদকে রক্ষা করন। আ-মী-ন।

।। "একজন মুসলিম দা'ঈ থেকে মুরতাদ : যুক্তি-প্রমাণ এবং আল্লাহর নির্দেশনা"।।
~রেদওয়ান রাওয়াহা
২৫.০৯.২১ইং

পঠিত : ৩৯১ বার

মন্তব্য: ০