Alapon

আফগানে সোভিয়তে ইয়নিয়নের যুদ্ধ ও আহমেদ শাহ মাসুদের শাহাদাত



সোভিয়েতরা কাবুলে লজিস্টিক সাপোর্ট ও যাবতীয় রসদ পাঠাতো সালাং পাস দিয়ে। রাশিয়া থেকে মধ্য এশিয়া হয়ে স্থলপথে এগুলো প্রবেশ করতো আফগানিস্তানে। সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্যক্রমে এই সালাং পাস ছিলো বারজাক জেলার খুব কাছেই ও পাঞ্জশীর উপত্যকার নিকটবর্তী। ফলে আহমেদ শাহ মাসুদের চোখ ফাকি দিয়ে একটা পিপড়াও এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে পারতো না। এই রাস্তার উপর ছিলো তার একচ্ছত্র আধিপত্য। সোভিয়েত রশদ আর লজিস্টিক্স কাবুলে পৌছবে কি পৌছবেনা সেটা নির্ভর করতো আহমেদ শাহ মাসুদের দয়ার উপর। যখনই পাঞ্জশীরে কোন কিছুর ঘাটতি দেখা দিতো তখনই সে সদলবলে হামলা চালিয়ে রাশিয়ার বহরগুলো ইচ্ছামতো লুট করতো। সালাং পাসের এক পাশে ছিলো খাড়া পাহাড় অন্য পাশে গভীর গিরিখাদ। পাহাড় কেটে বানানো এই রাস্তায় মাসুদের এম্বুসের সামনে পালানোর কোন পথ না পেয়ে নির্মমভাবে নিহত হতো রুশ সৈন্যরা। কাবুলে রুশ সমর্থিত সরকারকে টিকিয়ে রাখতে সালাং পাসকে নিরাপদ রাখা ছিলো অপরিহার্য। এর সাথে জড়িয়ে পরেছিলো রুশ সমর্থিত সরকারের ভাগ্য। ফলে এই মহাসড়ককে নিরাপদ রাখতে রাশিয়ার হাতে একটি মাত্রই উপায়ই অবশিষ্ট ছিলো সেটা আহমেদ শাহ মাসুদকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়া। আফগানিস্তানে রাশিয়ার অবস্থান তখন নির্ভর করছিলো মাসুদের জীবন বা মৃত্যুর উপর।
.
কিন্তু মাসুদও রাশিয়ার সমানে সমান লড়াই করছিলো। মাসুদের বাবা ছিলেন আফগানিস্তান সেনাবাহিনীর সাবেক অফিসার। ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে বেড়ে ওঠায় মিলিটারীর অনেকের সাথেই মাসুদের খুব ভালো যোগাযোগ ছিলো। মাসুদ লেখাপড়াও করেছে আফগানিস্তানের অন্যতম এলিট মিলিটারি স্কুলে। ফলে সেনাবাহিনীতে কর্মরত ও মাসুদের প্রতি অনুগত পরিচিত সেনাদের নিয়ে তিনি গঠন করেন আলাদা ডিটেক্টিভ নেটওয়ার্ক। রাশিয়া থেকে আফগানিস্তানে কারা যাতায়াত করতো সে খবর মাসুদের কাছে পৌছতে সময় নিতো না। মাসুদের কাছে খবর আসে কেজিবির একটি বিশেষ গোয়েন্দা দল এক বিশেষ মিশনে আফগানিস্তানে এসেছে কিন্তু মাসুদ জানতো না কি সেই বিশেষ মিশন।
.
আফগানিস্তানে রুশ সাপ্লাই লাইনের প্রতি একমাত্র হুমকি মাসুদ তখন পরাশক্তি রাশিয়ার প্রথম ও প্রধান টার্গেট। মাসুদকে হত্যা করতে বেশ কয়েকবার পাঞ্জশীরে আক্রমণ চালিয়ে ব্যর্থ হয় রাশিয়া। রাশিয়ার বোমা হামলা ও স্থল অভিযান থেকে বাচতে পাঞ্জশির ঘেষে দাঁড়িয়ে থাকা হিন্দুকুশ পর্বতমালায় শত শত গুহা ও ট্রেঞ্চ নির্মাণ করে মাসুদের বাহিনী। গোলকধাধার মতো ছড়িয়ে থাকা এসব গুহা থেকে মাসুদকে খোজে বের করে হত্যা করা রাশিয়ার পক্ষে অসম্ভব ছিলো।
.
কিন্তু মাসুদকে হত্যার জন্য কেজিবি কয়েক বছর ধরে চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে এবং একটা সময় তারা মাসুদের চাচাতো ভাই যে তার বাহিনীর উচ্চপদস্থ এক অফিসার ছিলো তাকে তাদের দলে ভেরায়। মাসুদকে এসাসিনেট করতে কেজিবির প্রশিক্ষিত একদল কমান্ডো পাঞ্জশির ভ্যালিতে যায় ও মাসুদকে খুজে বের করে। কিন্তু সেদিন মাসুদের অস্বাভাবিক কর্মব্যস্ততার কারণে তারা মাসুদের কাছে ঘেষতে না পারলেও তাদের হাতে সময় ছিলো খুবই কম। তাদের প্রতি নির্দেশ ছিলো মাসুদকে দেখা মাত্রই হত্যা করার। ফলে তারা ত্রিশ ফুট দূর থেকে মাসুদকে গুলি করে কিন্তু তা লক্ষ্য ভেদ করতে ব্যর্থ হয়। সেই চেষ্টায় প্রাণে বেচে যায় মাসুদ একই সাথে ধরা পড়ে বিশ্বাসঘাতকরা। মাসুদকে হত্যার সেই ব্যর্থতার খেসারত সোভিয়েতদেরকে দিতে হয় আফগানিস্তান ত্যাগ করার মাধ্যমে।
.
কেজিবির প্রশিক্ষিত দল মহান সেনাপতি আহমেদ শাহ মাসুদকে হত্যা করতে না পারলেও একদল বিপথগামী মুনাফেক আত্মঘাতী বোমা হামলায় তাকে হত্যা করতে পেরেছে। এভাবেই মুহাম্মদ বিন কাসেম, মুসা বিন নুসায়ের থেকে শুরু করে ইসলামের মহান সেনাপতিরা যুগে যুগে মুনাফেকদের হাতে নিহত হয়েছেন । আল্লাহ শহীদ আহমেদ শাহ মাসুদের উপর রহম করুন,তাকে ক্ষমা করে দিন।

~আহমেদ ইশতিয়াক মাসুদ

পঠিত : ৪৩২ বার

মন্তব্য: ০