Alapon

ধৈর্য অর্থ চেষ্টা করা, চুপচাপ বসে থাকা নয়...



আজ আমি আপনাদের দুজন মানুষের জীবনের গল্প বলব। যে দুজন মানুষের গল্প লিখতে বসেছি, তাদের আমি খুব কাছ থেকে থেকেছি।

প্রথমজনের নাম তাজুল ইসলাম। ছাত্র জীবনেই তিনি বিয়ে করেন। ছাত্র জীবন শেষ করার পর তিনি আলুর ব্যবসা শুরু করেন। প্রথমবার আলুর ব্যবসা করার পর তিনি বেশ লাভ করেন। এরপর তিনি আরও বড়ো পরিসরে আলুর ব্যবসা করার চিন্তা করলেন। এজন্য তিনি চেনা পরিচিত বহু মানুষের কাছে ঋণ করলেন এবং ব্যাংক থেকেও ঋণ করলেন।

কয়েক বিঘা জমি বন্ধক নিয়ে তিনি আলু আবাদ করলেন। কিন্তু কপাল খারাপ, সেবার প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় আলুর ফলন ভালো হলো না। এমনকি কতক আলু জমি থেকে তোলার আগেই পঁচে গেল। তাজুল সাহেব আলুর ব্যবসায় বিরাট লস করলেন। কিন্তু তিনি লস করলেও পাওনাদাররা তাদের পাওনা চাইতে দেরি করল না। একের পর এক পাওনাদার এসে তার বাড়িতে ভিড় জমাতে লাগল। তাজুল সাহেব প্রত্যেককেই বিভিন্ন আশ্বাস দিয়ে ঘোরাতে লাগলেন।

একদিন পাওনাদাররা তার বাড়িতে এসে তাকে না পেয়ে তার বাবাকে অপমান করে। একজন নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে তাজুল সাহেবের বাবার কলার চেপে ধরে। এই অপমান সইতে না পেরে তাজুল সাহেবের বাবা হার্টঅ্যাটাক করেন এবং কিছুদিন পর মারা যান। এরপর তাজুল ইসলাম বাধ্য হয়ে বউ বাচ্চা নিয়ে রাতের আধারে পালিয়ে গেলেন। পালিয়ে গিয়ে ঢাকায় একটা ছোট্ট চাকরি নিলেন। এরপর আল্লাহর উপর ভরসা করে এগিয়ে যেতে লাগলেন। আজ তাজুল ইসলাম তার পাওনাদাদের সমস্ত পাওনা মিটিয়ে দিয়েছেন এবং নিজের ফেলে আসা ভিটেতে দুই তলা বিল্ডিং তুলেছেন।

দ্বিতীয় ব্যক্তির নাম আব্দুল। বন্ধুদের নিয়ে তিনি একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের এমডি ছিলেন আব্দুল। সবকিছু ভালোই চলছিল। কিন্তু একদিন হঠাৎ আব্দুল এবং তার বন্ধুদের মধ্যে কথা কাটাকটি হয়। এই কথা কাটাকাটির জেরেই আব্দুল সেই ব্যবসা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেয়।

এরপর আব্দুল তার আত্মীয় স্বজনদের থেকে ঋণ করে এবং ব্যবসায় আরও অংশীদার নিয়ে ব্যবসা শুরু করে। কিন্তু এইবার আর আশান্বরূপ মুনাফা করা সম্ভব হচ্ছিল না। ব্যবসাটা ঠিক জমে উঠতেছিল না। ইতিমধ্যে দুই বছর হয়ে গেছে; কিন্তু এখন পর্যন্ত তেমন কোনো মুনাফা অর্জন করা যায়নি। অন্যদিকে যারা ব্যবসায় ইনভেস্ট করেছে তারা মুনাফার জন্য চাপ দিতে থাকল। এভাবে ক্রমাগতভাবে লসে ব্যবসা করতে করতে একসময় ব্যবসাটা বন্ধই হয়ে গেল।

এরপর আব্দুল চুপচাপ ঘরে বসে থাকতে লাগল। আর তার স্ত্রী স্থানীয় একটি কিন্টার গার্ডেন স্কুলে চাকরি করে সংসার চালাতে লাগল। আব্দুল আজও সেই অবস্থাতেই পড়ে আছে।

দুটো ঘটনার মোরাল স্টোরি হলো, প্রায় প্রত্যেকের জীবনেই বিপদ আপদ আছে। আর আল্লাহপাক তো পবিত্র কুরআনে জানিয়েই দিয়েছেন, মানুষকে বিভিন্ন বিপদ আপদ দিয়ে পরীক্ষা করা হবে; কোনো মানুষই পরীক্ষা থেকে রেহাই পাবে না। আল্লাহপাক আরও বলেছেন, নেক্কার বান্দাদের বিপদ আপদ আরও বেশি হবে। কিন্তু আল্লাহ বলেছেন, যারা বিপদের সময় ধৈর্য ধারণ করবে এবং আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করবে তারাই সফলকাম হবে। আর ধৈর্য ধারণ অর্থ কিন্তু চুপচাপ বসে থাকা নয়। ধৈর্য ধারণ অর্থ চেষ্টা করে যাওয়া। তাজুল সাহেব এই চরম বিপদে ভেঙ্গে না পড়ে চেষ্টা করে গেছেন তাই তার ভাগ্যে পরিবর্তন ঘটেছে। অন্যদিকে আব্দুল চুপচাপ বসে থাকাটাকেই হয়তো ধৈর্যজ্ঞান করছে। কিন্তু ধৈর্য মানে চেষ্টা করে যাওয়া; আল্লাহর উপর ভরসা করে চেষ্টা করে যাওয়া।

পঠিত : ৫১৯ বার

মন্তব্য: ০