Alapon

বিশ্ব শিক্ষক দিবস ও তার ইতিহাস

'আজ হতে চির- উন্নত হলো শিক্ষাগুরুর শির'— কাজী কাদের নেওয়াজের উক্তিটি ৫ই অক্টোবর 'বিশ্ব শিক্ষক দিবস'রই ইঙ্গিত বহন করছে। শিক্ষকগণের সুচিন্তিত নির্দেশনায় ছাত্ররা শিক্ষার অভীষ্ট লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার চেষ্টা করেন। শিক্ষকের কল্যাণধর্মী স্নেহচ্ছায়ায় শিক্ষার্থীর জীবন বিকশিত হয়। শিক্ষক ছাত্রদের সামনে জ্ঞানের আলো তুলে ধরেন। শিক্ষকের প্রদর্শিত জ্ঞানসম্পদে ছাত্ররা নতুন জীবন লাভ করে৷ এ জীবনই তার বিকাশের, যোগ্যতা প্রদর্শনের আর গুণাবলি চর্চার।

শিক্ষকদের বলা হয় 'জাতি গড়ার কারিগরি'। বিশ্বব্যাপী তাদের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখতে, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন, তাদের গুরুত্ব অনুধাবন করানো, শিক্ষকদের প্রতি ছাত্রদের আনুগত্য পোষণ, শ্রদ্ধা নিবেদনের লক্ষ্যে ৫'ই অক্টোবর পালিত হয় 'ওয়ার্ল্ড টিচারস ডে'। ১৯৬৬ সালের ৫'ই অক্টোবর ফ্রান্সের প্যারিসে শিক্ষকদের অবস্থা নিয়ে আন্তঃসরকার সম্মেলন হয়েছিল৷ সেখানেই শিক্ষকদের কথা চিন্তা করে ইউনেস্কো এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠন ( আইএলও) কিছু পরামর্শে সাক্ষর করে। প্রথমবারের মতো এসব পরামর্শে শিক্ষকদের অধিকার, দায়িত্ব এবং বিশ্বব্যাপী শিক্ষকতা পেশার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা ছিল।

১৯৯৪ সালে ইউনেস্কোর ২৬ তম অধিবেশনে গৃহীত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ইউনেস্কো মহাপরিচালক ড. ফ্রেডারিক এম মেয়রের যুগান্তকারী ঘোষণার মাধ্যমে ৫ অক্টোবর 'বিশ্ব শিক্ষক দিবস' পালনের শুভ সূচনা হয়। এরপর থেকে ১৯৯৫ সালের ৫ অক্টোবর বাংলাদেশসহ পৃথিবীর শতাধিক রাষ্ট্রে এই দিনটি বিশেষ মর্যাদার সাথে পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি পালনে মূল ভূমিকা রাখে এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল ও তার সহযোগী ৪০১টি সদস্য সংগঠন। দেশভেদে বিশ্বের ১০০টি দেশে শিক্ষক দিবস পালিত হয়ে থাকে। অনেক দেশে দিবসটি ভিন্ন ভিন্ন তারিখে পালিত হয়। যেমন: ভারতে ৫ই সেপ্টেম্বর, ভুটানে ২রা মে শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করা হয়, মালেশিয়ায় ১৬শে মে, ইন্দোনেশিয়ায় ২৫ নভেম্বর, ইরাকে ১লা মার্চ, ইরানে ২রা মে, চীনে ১০ই সেপ্টেম্বর, তাইওয়ান ২৮শে সেপ্টেম্বর, থাইল্যান্ড ১৬ই জানুয়ারি এবং সিঙ্গাপুর সেপ্টেম্বরের প্রথম শুক্রবার দিবসটি পালন করে থাকে।

'বিশ্ব শিক্ষক দিবস' –আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় শিক্ষকের মর্যাদার কথা, শিক্ষকের অবদানের কথা। পন্ডিত চার্ণক্যের মতে– 'গুরু যদি এক বর্ণ শিষ্যেরে শিখায় কোনোদিন/ পৃথিবীতে নাই দ্রব্য যা দিয়ে শোধ দিবে ঋণ'। শিক্ষক এমন একজন যার অকৃত্রিম স্নেহ-ভালোবাসায় আবৃত থাকে শিক্ষার্থীরা। একটা পরিবারের ছাদ কিংবা বটগাছ যেমন পরিবারের কর্তা বা পিতাকে বলা হয় তেমনি শিক্ষককে ছাত্রদের বটগাছ বললেও অযৌক্তিক বলা হবে না। একজন মানুষের জীবনের পরিবর্তন বলতে বোঝায় জীবনের বিকাশ, ব্যক্তিত্বের জাগরণ ও তার সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ। এই সুপ্ত প্রতিভার বিকাশে শিক্ষকের অগ্রণী ভূমিকার কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। এক্ষেত্রে শিক্ষক যথেষ্ট পরিশ্রমী, ধৈর্যশীল ও অধ্যবসায়ী হয়ে শিক্ষার্থীর মনের খোরাক মেটাতে সচেষ্ট হন। শিক্ষক তাঁর মেধা দিয়ে শিক্ষার্থীর মনের প্রচণ্ড কৌতূহল জাগিয়ে তোলেন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, 'কৌতূহল জাগানো ও কৌতূহল নিবৃত্ত করা শিক্ষকের কাজ'।

শিক্ষকের প্রভাব অনন্তকালে গিয়েও শেষ হয় না। একজন ছাত্রের কাছে বাবা-মায়ের পরেই দ্বিতীয় বাবা/মা হলেন শিক্ষক। একজন শিক্ষক শুধুমাত্র শিক্ষকই নন বরং একজন দার্শনিক, একজন ভালো বন্ধু, একজন মনোবিজ্ঞানী। বিশ্ব শিক্ষক দিবসের এই দিনে পৃথিবীর সকল শিক্ষকের প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা ও হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসা। মহান এ পেশাজীবি শিক্ষক যারা চিরকাল শুধু ব্যক্তি নয় জাতি গড়ার নিমিত্তে ব্রতীই রইলেন তাদের সম্মানে গ্রীক দার্শনিক এরিস্টটল বলেগিয়েছেন, "যারা শিশুদের শিক্ষাদানে ব্রত তাঁরা অভিভাবকদের থেকেও অধিক সম্মানীয়"।

পঠিত : ৭১১ বার

মন্তব্য: ০