Alapon

ইসলামী দণ্ডবিধির উদ্দেশ্য কী?



'ইসলামী শরীয়াহ', 'শরীয়াহ কায়েম' এই শব্দগুলো দুই শ্রেণির মানুষকে দুইভাবে আন্দোলিত করে।

একশ্রেণির মানুষ যারা ইসলাম ফোবিয়ায় আক্রান্ত, ইসলামকে ভয় পায় তারা মনে করে শরীয়াহ কায়েম মানে হলো যেন তেন অপরাধ করলেই হাত কাটা হবে না কল্লা কাটা হবে। এজন্য এই শেণির অনেকে মুসলিম হলেও তারা শরীয়াহ আইন প্রতিষ্ঠার বিরোধী।

তাদের এই অবস্থার জন্য দায়ি আরেকশ্রেণির মানুষ। তারা মনে করে অপরাধের শাস্তি দেওয়ার জন্যই ইসলামের আগমন। তারা ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য তাবলীগ, তারবিয়াতকে উপেক্ষা করে সোজা চলে যায় শরীয়াহ আইন প্রতিষ্ঠায়। তাদের আহ্বানটাই এরকম, আমরা ইসলাম কায়েম করে চোরদের হাত কেটে দেব, ব্যাভচারীদের পাথর মেরে হত্যা করবো।

আসলে মাত্র পাঁচটি অপরাধ ছাড়া শরিয়ত নির্ধারিত শাস্তি নেই। সেগুলোও প্রমাণ ও সাক্ষী সাপেক্ষে। ইসলামী দণ্ডবিধি সম্পর্কে জানলে ও জানালে ইসলামের ব্যাপারে ভুল ধারণা কমে যাবে।

ইসলামে দণ্ডবিধির তিনটি পার্ট আছে
১. হুদুদ ২. কিসাস ৩. তা'জির

হুদুদ মানে হলো যে অপরাধগুলোর শাস্তি আল্লাহ নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এগুলোর কম বা বেশি কেউ করতে পারবে না। এই ধরণের অপরাধ মাত্র ৫ টি।

১. ডাকাতি / ফাসাদ সৃষ্টি করে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও জনগণের জানমালের ক্ষতি সাধন করলে শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। [সূরা মায়িদা ৩৩]

২. পেশাদার চুরি ঠেকাতে ও জনগণের নিরাপত্তা বিধানে চোরের হাত কেটে দেওয়া। [সূরা মায়িদা ৩৮]

৩. কারো ওপর ব্যাভিচারের মিথ্যা অভিযোগ করলে/ অপবাদ দিলে ৮০ বেত্রাঘাত। [সূরা নূর ৪]

৪. অবিবাহিত ব্যভিচারীর জন্য ১০০ বেত্রাঘাত ও বিবাহিত ব্যভিচারীর জন্য রজম (পাথর মেরে হত্যা) [সূরা নূর ২]

৫. মদপানকারীর জন্য ৪০ থেকে ৮০ বেত্রাঘাত।

এখানে এমন না যে, কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ আসলেই সেটা কার্যকর হয়ে যাবে। বরং সেগুলোর তদন্ত হবে এবং সত্যিকারের অপরাধী হলে তাকে শাস্তি দেওয়া হবে। আর স্পেশালি ৪ নং এর ক্ষেত্রে ব্যভিচারীরা স্বীকার না করলে শাস্তি দেওয়াটা কঠিন।

কারণ এখানে চারজন চাক্ষুস সাক্ষী প্রয়োজন শাস্তি দেওয়ার জন্য। আর এটা এমন একটা পাপ যা মানুষের সামনে করা হয় না। হুদুদের শাস্তি তখনই প্রযোজ্য হবে যখন ব্যভিচারের চুড়ান্ত পরিস্থিতি তৈরি হবে তার আগে নয়।

কিসাস মানে হলো কেউ কাউকে অন্যায়ভাবে খুন বা জখম করলে সমপরিমাণ শাস্তি দেওয়া। আমি কাউকে অন্যায়ভাবে দুইটা ঘুষি দিলে আদালত আমাকে দুইটা ঘুষি দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিবে। কিসাসের ক্ষেত্রে দোষী সাব্যস্থ কাউকে বিচারক ক্ষমা করতে পারবে না। এটা তার এখতিয়ারে নেই। এখানে ক্ষমা বা শাস্তি কমানোর কাজটা করতে পারবে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি। খুনের ক্ষেত্রে চাইলে নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকাররা রক্তপণ নিয়ে ক্ষমা করে দিতে পারেন।

এই ছাড়া আর বাকী যত অপরাধ আছে তা সবই তা'জির। এসব ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ইনসাফভিত্তিক আইন তৈরি করবে এবং বিচারক তার বিবেচনা অনুযায়ী শাস্তি নির্ধারণ করতে পারবে।

আল্লাহর রাসূল সা.-এর সময়ে দুজন ব্যক্তির রজম করা হয়েছে তারা নিজে থেকে এসে মুহাম্মদ সা.-এর কাছে শাস্তি চেয়েছেন। আল্লাহর রাসূল সা. তাদের ফিরে গিয়ে তওবা করতে বলেছেন। যেহেতু তারা অনুতপ্ত ছিলেন তাই মুহাম্মদ সা. তাদের শাস্তি দিতে চাননি। কিন্তু তারা ছিল নাছোড়বান্দা। তারা দুনিয়ার শাস্তি গ্রহণ করে আখিরাত পরিষ্কার রাখতে চেয়েছেন।

ব্যাভিচার এমন অপরাধ যা একা করা যায় না। আল্লাহর রাসূল সা. দুইটা কেইসেই তাদের পার্টনারের কথা জানতে চান নি, তাই শাস্তি দেওয়ার সুযোগ হয় নি। ইসলামের দণ্ডবিধির মূল লক্ষ্য সংশোধন, শাস্তি দেওয়া নয়।

পঠিত : ৩২৪ বার

মন্তব্য: ০