Alapon

যুগে যুগে মুনাফিক মার্কা মুসলিমদের ষড়যন্ত্রঃ



ইসলাম ও মুসলিম জাতির পতন ঘটাতে যুগে যুগে মুনাফিক মার্কা মুসলিম যত ভয়ংকর ভূমিকা পালন করছে, ততটা কাফিরগণও পারেনি। এদের মুনাফিক হিসাবে চিহ্নিত করা খুবই কঠিন। কারণ এদের লেবাস সুরাত ও বাহ্যিক আমল দেখে সাধারণ মুমিন তাদের খাঁটি মুসলিম বলে মনে করে। এরা তাদের ইমাম অর্থাৎ মুনাফিক সর্দার আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই আল মাদানী থেকেও বেশি ধূর্ত। এরা সর্বদা মুসলিমদের মাঝে এমন ভাবে লুকিয়ে থাকে যে, সাধারণ মানুষ এদের মুসলিম বলে মনে করতে বাধ্য হয়। স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাঃ এর সাহাবীদের মধ্যে কতিপয় মুনাফিক মার্কা মুসলিমও ছিল। যাদেরকে রাসুলুল্লাহ সাঃ নিজেও সঠিকভাবে মুনাফিক হিসাবে জানতেন না। তবে কিছু লক্ষণ দেখে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাদের কয়েক জনকে চিনতে পারেন। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন,
وَمِمَّنْ حَوْلَكُمْ مِنَ الْأَعْرَابِ مُنَافِقُونَ ۖ وَمِنْ أَهْلِ الْمَدِينَةِ ۖ مَرَدُوا عَلَى النِّفَاقِ لَا تَعْلَمُهُمْ ۖ نَحْنُ نَعْلَمُهُمْ ۚ سَنُعَذِّبُهُمْ مَرَّتَيْنِ ثُمَّ يُرَدُّونَ إِلَىٰ عَذَابٍ عَظِيمٍ
আর তোমাদের আশপাশের মরুবাসীদের মধ্যে কিছু লোক মুনাফিক এবং মদীনাবাসীদের মধ্যেও কিছু লোক অতিমাত্রায় মুনাফিকীতে লিপ্ত আছে। তুমি তাদেরকে জান না। আমি তাদেরকে জানি। অচিরে আমি তাদেরকে দু’বার আযাব দেব তারপর তাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে মহা আযাবের দিকে। (সূরা তাওবাঃ ৯/১০১)

অন্য আয়াতে আল্লাহ তা'য়ালা আরো বলেন,
وَلَوْ نَشَاءُ لَأَرَيْنَاكَهُمْ فَلَعَرَفْتَهُمْ بِسِيمَاهُمْ ۚ وَلَتَعْرِفَنَّهُمْ فِي لَحْنِ الْقَوْلِ ۚ وَاللَّهُ يَعْلَمُ أَعْمَالَكُمْ.
আর যদি আমি চাইতাম তবে আমি তোমাকে এদের দেখিয়ে দিতে পারতাম। ফলে লক্ষণ দেখেই তুমি তাদের চিনতে পারতে। তবে তুমি অবশ্যই কথার ভঙ্গিতে তাদের চিনতে পারবে। আল্লাহ তোমাদের আমলসমূহ জানেন। (সূরা মুহাম্মদঃ ৪৭/৩০)

আল্লামা ইবনে কাসীর রাহঃ বলেন, এ উক্তি (সূরা মুহাম্মদঃ ৪৭/৩০) এর মধ্যে (সূরা তাওবাঃ ৯/১০১ এর) কোন বৈপরীত্য নেই। কেননা, এটা এই প্রকারের জিনিস যে, এর মাধ্যমে মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য পেশ করা হয়েছে, যেন তাদের চেনা যায়। এর অর্থ এটা নয় যে, নবী (সাঃ) নির্দিষ্টভাবে সমস্ত মুনাফিকদের চিনতেন। তিনি মদীনাবাসীদের মধ্যে শুধুমাত্র ঐ কতিপয় মুনাফিকদের চিনতেন, যারা রাত দিন তাঁর সাথে ওঠা বসা করতো এবং সকাল সন্ধ্যায় তিনি তাদের দেখতেন। ইমাম আহমদ রাহঃ সনদসহ জুবায়ের ইবনে মুতঈম (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,... রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমার দিকে মাথা ঝুঁকিয়ে গোপনীয় ভাবে বললেন, "আমার সাহাবীদের মধ্যে কিছু মুনাফিকও আছে।"
বিভিন্ন হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুযইফা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে কয়েক জনের নাম জানিয়ে , যারা প্রকৃতপক্ষে মুনাফিক ছিল। এই বিশিষ্টকরণ এটা দাবী করে না যে, তিনি সমস্ত মুনাফিকদেরই নাম জানতেন। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'য়ালাই সবচেয়ে ভালো জানেন। (তাফসীরে ইবনে কাসীর; সূরা তাওবাঃ ৯/১০১)

তাবেয়ী কায়েস ইবনু উবাদ রাহঃ বলেন,
قُلْتُ لِعَمَّارٍ أَرَأَيْتُمْ صَنِيعَكُمْ هَذَا الَّذِي صَنَعْتُمْ فِي أَمْرِ عَلِيٍّ أَرَأْيًا رَأَيْتُمُوهُ أَوْ شَيْئًا عَهِدَهُ إِلَيْكُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ مَا عَهِدَ إِلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَيْئًا لَمْ يَعْهَدْهُ إِلَى النَّاسِ كَافَّةً وَلَكِنْ حُذَيْفَةُ أَخْبَرَنِي عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي أَصْحَابِي اثْنَا عَشَرَ مُنَافِقًا فِيهِمْ ثَمَانِيَةٌ (لَا يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ حَتَّى يَلِجَ الْجَمَلُ فِي سَمِّ الْخِيَاطِ) ثَمَانِيَةٌ مِنْهُمْ تَكْفِيكَهُمُ الدُّبَيْلَةُ.
আমরা হযরত আম্মার (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনারা যে খলিফাতুল মুসলিমীন হযরত আলী (রাঃ) পক্ষ নিয়ে (হযরত মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে) লড়াই করছেন, তা কি আপনাদের নিজস্ব মতের ভিত্তিতে? নাকি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে বিশেষভাবে আপনাদের নির্দেশ দিয়ে গিয়েছেন? তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বসাধারণকে যে নির্দেশ দেননি, এমন কিছু তিনি বিশেষ ভাবে আমাদেরও দেননি। তবে আমাকে হুযাইফা (রাঃ) জানিয়েছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন, আমার সাহাবীদের মধ্যে বার জন মুনাফিক হবে। তাদের জান্নাতে প্রবেশ এমনই অসম্ভব ব্যাপার যেমন সূঁচের ছিদ্রে উট প্রবেশ করানো অসম্ভব। তাদের মধ্যে আট জন মারা যাবে দুবাইলা (কাঁধ ও বুক দুর্বলকারী এক ধরনের বিষফোঁড়া) রোগে আক্রান্ত হয়ে। (সহীহ মুসলিম হাঃ ২৭৭৯; আরো দেখুন মুসনাদে আহমদ হাঃ ১৮৯০৫, ২২৮০৮; বাইহাকী, দালায়েলুন নুবুওয়াহ ৫/২৬১)

সূরা তাওবার ১০১ নং আয়াতের তাফসীরে ইমাম আবু জাফর তাবারী (রাহঃ) কাতাদা (রাহঃ) এর বরাতে এবং আল্লামা ইবনে কাসীর (রাহঃ) সাঈদ (রাহঃ) এর বরাতে বলেন, "কোনো লোকের মৃত্যু হলে হযরত উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর মনে যদি সন্দেহ দেখা দিত সেই লোক তাদের (মুনাফিকদের) একজন কিনা, তাহলে তিনি হযরত হুযাইফা (রাঃ) এর দিকে লক্ষ্য করতেন। তিনি তার জানাজা পড়লে উমার রাঃ তার জানাজা পড়তেন। অন্যথায় তাকে ত্যাগ করতেন। আমাদের কাছে আরো বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত ওমর (রাঃ) হযরত হুযাইফা (রাঃ) কে একবার কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করেন, বলুনতো আমিও কি তাদের (মুনাফিকদের) একজন? হুজাইফা (রাঃ) বলেন, না, আল্লাহর কসম, আপনি মুনাফিকদের অন্তর্ভুক্ত নন। তবে আপনার পরে আমি আর কারো ব্যাপারে জিম্মাদারি নিচ্ছি না।" (তাফসীরে ইবনে কাসীর, সূরা তাওবাঃ ৯/১০১; তাফসীরে তাবারী, সূরা তাওবাঃ ৯/১০১; হাঃ ১৭১২৯)

এ আলোচনা থেকে তো পরিষ্কার জানা যাচ্ছে, মুনাফিক নির্ণয় করা খুবই কঠিন। মুনাফিকদের বিষয়ে আল্লাহ তা'য়ালা তাঁর রাসুল (সাঃ) কে বলেন,
وَلَوْ نَشَاءُ لَأَرَيْنَاكَهُمْ فَلَعَرَفْتَهُمْ بِسِيمَاهُمْ ۚ وَلَتَعْرِفَنَّهُمْ فِي لَحْنِ الْقَوْلِ ۚ وَاللَّهُ يَعْلَمُ أَعْمَالَكُمْ.
আমি যদি চাইতাম তবে আমি তোমাকে এদের দেখিয়ে দিতে পারতাম। ফলে লক্ষণ দেখেই তুমি তাদের চিনতে পারতে। তবে তুমি অবশ্যই কথার ভঙ্গিতে তাদের চিনতে পারবে। আল্লাহ তোমাদের আমলসমূহ জানেন। (সূরা মুহাম্মদঃ ৪৭/৩০)
এ আয়াত দ্বারা বুঝা যাচ্ছে, তাদের কথার ভঙ্গিতে মুনাফিকদের চেনা সম্ভব। আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর যুগের মুনাফিক ও তাদের নেতা আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই আল মাদানীকে দেখিনি। তবে মতিউর রহমান মাদানীকে দেখেছি। তিনি মুনাফিক কি না, নিশ্চয়তার সাথে তা না বললেও তার কথার ভঙ্গিতে আমি নিশ্চিত হয়েছি যে, তিনি মুনাফিক নেতা আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই আল মাদানীর যোগ্য উত্তরসূরী।

পঠিত : ৭১৪ বার

মন্তব্য: ০