Alapon

তাহলে কি, হাসিনা পাকিস্তানি হানাদারদের চেয়েও বড়ো হানাদার?



কনক সারোওয়ার, একজন নামকরা সাংবাদিক। একটা সময় ছিল, যখন শুধু সাংবাদিকদের নামই শোনা যেন, চেহারা দেখা যেত না। কিন্তু যখন থেকে প্রাইভেট টিভি চ্যানেলগুলো কার্যক্রম শুরু করলো, তখন থেকে সাংবাদিকদের নামের পাশাপাশি চেহারাও দেখা যেতে লাগল। আর এই যাত্রা শুরু হয় একুশে টেলিভিশনের মাধ্যমে। একুশে টেলিভিশনের তৎকালীণ নামকরা সাংবাদিকদের মধ্যে কনক সারোওয়ার ছিলেন অন্যতম।

কনক সারোওয়ার একুশে টেলিভিশন সাত মিনিটের একটি অনুষ্ঠান করতেন নাম ‘জনতার কথা’। মাত্র সাত মিনিটের একটি অনুষ্ঠান হলেও, এই অনুষ্ঠানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। কারণ, সেখানে সাধারণ মানুষের মতামতগুলো তুলে ধরা হয়েছিল। দেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সাধারন মানুষ কী ভাবছে, সেই ভাবনাগুলো তুলে ধরা হতো। এই অনুষ্ঠানের পাশাপাশি কন সারোয়ারও ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন। কিন্তু পরবর্তীতে এই ‘জনতার কথা’ অনুষ্ঠানটিই কানক সারোয়ারের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।

আপনাদের ঠিক স্মরণ আছে কিনা জানি না, ২০১৪ সালে একটি তেলবাহি জাহাজ সুন্দরবনে ডুবে যায়। তখন দেশের একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী বলেছিলেন, ‘তেলবাহি জাহাজ ডুবলেও তাতে সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হবে না।’

জনাব মন্ত্রীর এই কথার বিপরীতে জনগণ কী ভাবছে, তা নিয়ে কনক সারোয়ার তার ‘জনতার কথা’ অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন। সেখানে ৫ ই জানুয়ারীর ভোটারবিহীণ নির্বাচন নিয়েও কেউ কেউ কথা বলেন। মূলত, এই অনুষ্ঠান প্রচার হওয়ার পরপরই কনক সারোয়ারের উপর খড়ক নেমে আসে। এর পরবর্তি সময়ে তার নামে বেশ কয়েকটি মামলা হয় এবং তাকে গ্রেফতার করে দির্ঘদিন জেলে বন্দি রাখা হয়। এরপর কনক সারোয়ার জামিনে মুক্ত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান।

কথায় আছে, ‘ঢেকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে’। তেমনি কনক সারোয়ার যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমালেও তার যে পেশা বা নেশা সাংবাদিকতা তা ছাড়তে পারেননি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েও ইউটিউবে নিজস্ব চ্যানেলের মাধ্যমে সাংবাদিকতা করতে থাকেন।

সাংবাদিকদের বলা হয় জাতির বিবেক। যারা কিনা একটি দেশের ভালো মন্দ, দেশের সরকারের ইতিবাচক নেতিবাচক সার্বিক দিক দেশের জনগণের সামনে নির্মোহভাবে তুলে ধরবে। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে যে সাংবাদিকতার কালচার তৈরি হয়েছে, সেটাকে সাংবাদিকতা না বলে ‘তেলবাজির প্রতিযোগিতা’ বলা উচিত। কারণ, প্রধানমন্ত্রীর এক একটা সাংবাদিক সম্মেলন যে এক একটা কমেডি শো। সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকরা তেলবাজির প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হন; কে কতটা নিবিড়ভাবে তেলবাজি করতে পারে, সেই প্রতিযোগিতায় ঝাপিয়ে পড়ে।

বাংলাদেশের একজন নামকরা সাংবাদিক, ইকবাল সোবহান চৌধুরী। তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিবেরও দায়িত্ব পালন করেছেন। শেখ হাসিনা জাতিসংঘ থেকে ফিরে যে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন, সেখানে ইকবাল সোবহান চৌধুরী এমন একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন, যা শুনে স্বয়ং হাসিনাও অট্টহাসিতে ফেটে পড়েন। সেইসাথে তিনি বলেন, ‘আদার ব্যাপারি হয়ে জাহাজের খবরদারি করতে বলছেন!’ ইকবাল সোবহান চৌধুরীরা যে তেলবাজির প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছেন, তা কিন্তু শেখ হাসিনা বোঝেন এবং জানেন। আর জানেন বলেই, যারা তার কর্মের টু ট্যা পয়েন্ট সমালোচনা করছে, তাদের সাইবার সন্ত্রাসী বলে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। আর সেই চেষ্টার অংশ হিসেবে সাংবাদিক কনক সারোয়ারকে থামিয়ে দেওয়ার জন্য তার বোনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ যেন হীরক রাণীর দেশের পরিণত হয়েছে।

আমার তো সন্দেহ হয়, খোদ পাকিস্তানি স্বৈরাচার সরকারের আমলেও হয়তো সাংবাদিকদের এভাবে হেনস্থা করা হয়নি; যতোটা হাসিনা সরকারের আমলে করা হচ্ছে। তাহলে কি হাসিনা পাকিস্তানি হানাদারদের চেয়েও বড়ো হানাদার?

পঠিত : ৩৫৫ বার

মন্তব্য: ১

২০২১-১০-০৯ ২২:১৯

User
অভিনিবেশ

আমলা আর কামলা যা শুরু করেছে তাতে বোধ হতেই পারে যে, হাসিনা পাকিস্তানি হানাদারদের চেয়েও বড়ো হানাদার।

submit